প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ

46/59

৪৫ অধ্যায়—রোম থেকে লেখা

প্রেরিত পৌল তার প্রাথমিক খ্রীষ্টিয় অভিজ্ঞতা অনুসারে যীশুর অনুসারীদের কাছে ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্পর্কে জানাবার বিশেষ সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি “তৃতীয় স্বর্গ পর্যন্ত নীত হইয়াছিলেন।” “পরমদেশে নীত হইয়া অকথনীয় কথা শুনিয়াছিল, তাহা বলা মনুষ্যের বিধেয় নয়।” তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, “প্রভুর” “নানা দর্শন ও প্রত্যাদেশ” তকে দেওয়া হয়েছে। সত্যের সুসমাচারের নীত সম্পর্কে তার জ্ঞানের সঙ্গে “প্রেরিতচুড়ামণির” জ্ঞান সমরূপ ছিল। ২ করিন্থ: ১২:২,৪,১,১১, “জ্ঞানাতীত যে খ্রীষ্টের প্রেম এর প্রশস্ততা, দীর্ঘতা, উচ্চতা ও গভীরতা সম্পর্কে তার স্পষ্ট, পূর্ণ উপলব্ধি ছিল। ইফিসীয় ৩:১৮,১৯। AABen 392.1

পৌল দর্শনে যা কিছু দেখেছিলেন তার সব কিছুই বলেন নি; কারণ তার শ্রোতাদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন যারা তার কথার অপপ্রয়োগ করতে পারতেন। কিন্তু যা তার কাছে প্রকাশ করা হয়েছিল তা পরবর্তী বছর মন্ডলী সমূহে পাঠাবার জন্য তাকে একজন নেতা, জ্ঞনবান শিক্ষক হিসাবে এবং এছাড়াও বাণীকে গড়ে তোলার জন্য সক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল্ মনে হয়, তিনি যখন দর্শনে ছিলেন তখন গ্রহণ করেছিলেন এবং সব সময় তার সঙ্গে ছিল, খ্রীষ্টিয় চরিত্রের সঠিক ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য তাকে সক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল। মুখের কথার দ্বারা এবং পত্রের দ্বারা যে বার্তা বহন করেছিলেন তা তখন থেকে আজ পর্যন্ত ঈশ্বরের মন্ডলীতে সাহায্য এবং শক্তি বলে এনছিল। বর্তমানে বিশ্বাসীদের কাছে এই বার্তা বিপদ সম্পর্কে সুস্পষ্ট কথা বলে যা মন্ডলীকে ভীত করে এবং ভ্রান্ত মতোবাদ যার সম্মুখিন হবেন তারা। AABen 392.2

প্রেরিতের এই আকাঙ্খা ছিল, যাদের উদ্দেশ্য করে তিনি তার এই উপদেশ এবং ভৎর্সনার পত্র লিখেছিলেন, তারা যেন “আর বালক না থাকি, মনুষ্যদের ঠকবাজীতে, ধূর্ততায়, ভ্রান্তির চতুরীক্রমে তরঙ্গহত এবং যে সে বায়ুতে ইতস্তত পরিচালিত না হই; কিন্তু যাতে তারা সকলে “ঈশ্বরের পুত্র বিষয়ক বিশ্বাসের ও তত্বাগুনের ঐক্য পর্যন্ত, সিদ্ধ পুরুষের অবস্থা পর্যন্ত; খ্রীষ্টের পূর্ণতার আকারের পরিমান পর্যন্ত” অগ্রসর হতে পারে। যারা পরজাতীর সমাজ থেকে খ্রীষ্টের অনুসারী হয়েছিল তিনি তাদের কাছে সনিড়ববদ্ধ অনুরোধ জানিয়েছিলেন যে তারা যেন, “পরজাতীয়দের ন্যায় চলিও না, তাহারা আপন আপন মনের অসার ভাবে চলে, তাহারা চিত্তে অন্ধিভূত, ঈশ্বরের জীবনের বহির্ভত হইয়াছে।” “অজ্ঞানের ন্যায় না চলিয়া জ্ঞানবানের ন্যায় চল, সুযোগ কিনিয়া লও।” ইফিসীয় ৪:১৪,১৩,১,১৮; ৫:১৫,১৬। তিনি বিশ্বাসীদের অনুপ্রাণীত করেছেন যেন তারা সামনের সময়ের দিকে তাকায় যখন খ্রীষ্ট, যিনি, “মন্ডলীকে প্রেম করিলেন এবং তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন,” “যেন আপনি আপনার কাছে মন্ডলীতে প্রতাপান্বিত অবস্থায় উপস্থিত করেন, যেন তাহারা কলঙ্ক বা সংকোচ বা এই প্রকার আর কোন কিছুই না থাকে” — মন্ডলী যেন “পবিত্র ও অনিন্দ্রিয় হয়।” ইফিসীয় ৫:২৫; ২৭। AABen 392.3

এই বাণী মানুষের ক্ষমতার লিখিত হয়নি কিন্তু ঈশ্বরের ক্ষমতায় লিখিত হয়েছিল, ধারণ করা শিক্ষা যা সকলের পাঠ করা উচিৎ এবং এটি উপকারের জন্য সব সময় পাঠ করা উচিত। এর মধ্যে বাস্ত ঈশ্বর ভা্িক্ত রূপরেখা রয়েছে, নীতিগুলো রচনা করা হয়েছে যা পরতে মন্ডলীকে অনুসরন করতে হবে, এবং এটি অনন্ত জীবনের পথে খুব সহজে চালিত করে। AABen 393.1

তার পত্রটি “কলসীতে যে সকল পবিত্র লেঅক ও বিশ্বস্ত ভ্রাতা খ্রীষ্টে আছেন তাহাদের সমীপে” লিখেছিলেন যখন তিনি রোগে বন্দী ছিলেন, পৌল তাদের বিশ্বাসে অবিচল থাকার জন্য তার আনন্দকে প্রকাশ করেছেন, ইপাফ্রা যিনি তার কাছে এই সংবাদ বহন করে এনেছিলেন, প্রেরিত তার কাছে লিখেছেন, “আত্মাতে তোমাদের প্রেমের বিষয়ে ও তিনি আমাদিগকে জ্ঞাত করিয়াছেন” তিনি আরো লিখেছেন, “এই কারণ আমরাও যেদিন এই সংবাদ শুনিয়াছি, সেই দিন অব্দি তোমাদের নিমিত্তে প্রার্থনা ও বিনতি করিতে ক্ষ্যন্ত হই নাই। যেন তোমরা সমস্ত আত্মিক জ্ঞানে ও বুদ্ধিতে তাহার ইচ্ছার তত্বজ্ঞানে পূর্ণ হও, আর এ দ্বারা প্রভুর যোগ্যরূপে সর্বতভাবে পীতিজনক আচরণ কর, সমস্ত সৎকর্মে ফলবান ও ঈশ্বরের তত্বজ্ঞানে বধিষ্ণু হও, আনন্দের সহিত সম্পূর্ণ ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা প্রকাশার্ধে তাহার প্রতাপের পরাক্রম অনুসারে সমস্ত শক্তিতে শক্তিবান পৌল এই ভাবে কলসীয়দের জন্য বাক্যের মধ্যে তার ইচ্ছাকে ব্যক্ত করেছেন। কেমন উচ্চ আদর্শ যে খ্রীষ্টের অনুসারীদের সামনে এই কথাগুলো তুলে ধরেছে। তারা খ্রীষ্টিয় জীবনের চমৎকার সম্ভবনা দেখিয়েছেন এবং এটি খুব সহজ করেছেন যে, ঈশ্বরের সন্তানেরা যে আর্শীবাদ গ্রহন করতে পারে তার কোন সীমাবদ্ধতা নেই। ঈশ্বরের জ্ঞানে ক্রমাগত বর্দ্ধিষ্ণু হয়ে তারা শক্তি থেকে আরো শক্তি লাভ করে চলতে পারবে, খ্রীষ্টিয় অভিজ্ঞায় উচ্চ থেকে উচ্চে উঠতে সক্ষম হবে, “কার্য সাধক শক্তির” দ্বারা তারা “দীপ্তিতে পবিত্রগনের অধিকারীর অংশী হইবার উপযুক্ত” হবে। AABen 393.2

পৌল তার ভ্রাতৃবর্গের কাছে এমন একজন হিসাবে তুলে ধরেছেন, যার মধ্য দিয়ে ঈশ্বর জগতের সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং যার মধ্য দিয়ে তার পরিত্রানের কার্য সাধন করেছেন। তিতি প্রকাশ করেছেন যে তার হাত জগতকে শূণ্যে স্থাপন করেছেন এবং তাদের সব কিছুই সুবিন্যস্তভাবে সাজিয়েছেন, এবং ঈশ্বরের বিশ্বব্রক্ষান্ডের মধ্য দিয়ে সব কিছু অক্লান্ত ভাবে কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে, আর সেই হাত তাদের জন্য ক্রুশের উপর প্রেক বিদ্ধ করেছে। “কেননা তাহাতে সকলেই সৃষ্ট হইয়াছে,” পৌল লিখেছেন “স্বর্গে ও পৃথিবীতে, দৃশ্য কি অদৃশ্য যা কিছু আছে, সিংহাসন হউক, কি প্রভুত্ব হউক, কি আধিপত্ব হউক, কি কতৃত্ব হউক, সকলেই তাহার দ্বারা বা তাহার নিমিত্ব সৃষ্টি হইয়াছে: আর তিনিই সকলের অগ্রে আছেন ও তাহাতেই সকলের স্থিত হইতেছে” “আর পূর্বে চিত্তে দু®িঙঊয়াতে বহিঃস্থ ও শত্রু ছিলে যে তোমরা, তোমাদিগকে তিনি এখন খ্রীষ্টের মাংশময় দেহে মৃত্যু দ্বারা সম্মিলিত করিলেন, যেন পবিত্র নিষ্ফলক ও নির্দোষ করিয়া আপনার সাক্ষাতে উপস্থিত করেন।” AABen 394.1

ঈশ্বরের পুত্র পতিত মানবকে উনড়বীত করার জন্য নিজেকে নত করেছিলেন। এই কারণে তিনি ঊর্দ্ধের পাপহীন জগত ত্যাগ করেছিলেন এবং নিরানব্বই জন যারা তাকে ভালবেসেছে এবং এই জগতে এসেছেন “আমাদের অধর্মের নিমিত্ত বিদ্ধ” হতে এবং “আমাদের অপরাধের নিমিত্ত চূর্ণ” হতে। যিশাইয় ৫৩:৫। তিনি তার ভ্রতিৃবর্গের মত হয়ে সব কিছুর মধ্যে ছিলেন। তিনি আমাদের মত করে মাংসে মূর্তিমান হলেন। তিনি জানতেন ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও ক্লান্তির অর্থ কি। তিনি খাদ্য গ্রহন করার জীবন ধারণ করেছিলেন এবং ঘুমানোর মধ্য দিয়ে নিজেকে সতেজ করেছিলেন। তিনি এই পৃথিবীতে এই জগতে তিনি ছিলেন একজন বিদেশী এবং একজন অল্প সময়ের জন্য বাসকারী, তিনি জগতের নয়; বর্তমান দিনে পুরুষ ও স্ত্রীলোকের পরীক্ষা এবং প্রলোভনের মত তিনিও পরীক্ষা এবং প্রলোভনের সম্মুখিন হয়েছিলেন, তথাপি তিনি এই জগতে পাপমুক্ত জীবন যাপন করেছিলেন। অন্যদের প্রতি সব সময় কোমল মনোভাব, দয়া প্রদর্শন এবং সহানুভূতিমূলক আচরণ করার দ্বারা তিনি ঈশ্বরের চরিত্রকে প্রকাশ করেছেন। “সেই বাক্য মাংশে মূর্তিমান হইলেন এবং আমাদের মধ্যে প্রবাশ করিলেন, তিনি অনুগ্রহে ও সত্যে পূর্ণ।” যোহন ১:১৪। পৌত্তলিকতায় কার্যকলাপ এবং প্রভাবের দ্বারা বেষ্টিত থাকার ফলে কলসীয় বিশ্বাসীদের সুসমাচারের সরলতা থেকে সরে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছিল, আর পৌল এর বিরুদ্ধে তাদের সতর্ক করেছিলেন, খ্রীষ্টের দিকে তাদের মনোযোগ আকর্ষন করেছিলেন একমাত্র নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে। “আমার ইচ্ছা এই যে, যেন তোমরা জানিতে পার, তোমাদের ও লায়দিকেয়াস্থ লোকদের জন্য ও যত লোক আমার মাংশময় মুখ দেখে নাই, তাহাদের জন্য আমি কতদূর প্রাণপন করিতেছি; যেন তাহাদের হৃদয় আশ্বাস পায়, তাহারা প্রেমে পরস্পর সংযুক্ত হইয়া জ্ঞানের নিশ্চয়তারূপ সমস্ত ধনে ধনী হইয়া উঠে, যেন ঈশ্বরের নিগুঢ়তত্ব, অর্থাৎ খ্রীষ্টকে জানিতে পায়। ইহার মধ্যে জ্ঞানের ও বিদ্যার সমস্ত নিধে গুপ্ত রহিয়াছে।” AABen 394.2

“এই কথা বলিতেছি, যে কেহ প্ররোচক বাক্যে তোমাদের না ভুলায় অতএব খ্রীষ্ট যীশুকে, প্রভুকে, যেমন গ্রহণ করিয়াছ, তেমনি তাহাতেই চল; তাহাতেই বদ্ধমূল এবং সংগ্রথিত হইয়া প্রাপ্ত শিক্ষানুসারে বিশ্বাসে দৃঢ়ভূত হও এবং ধন্যবাদ সহকারে উপচিয়া রপড়, দেখিও দর্শনবিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণা দ্বারা কেহ যেন তোমাদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া না যায়, তাহা মনুষ্যদের পরম্পরাগত শিক্ষার অনুরূপ, জগতের অক্ষরমালার অনুরূপ, খ্রীষ্টের অনুরূপ নয়; কেননা তাহাতেই ঈশ্বরের সমস্ত পূর্ণতা দৈহিকরূপে বাস করে এবং তোমরা তাহাতে পূর্ণীকৃত হইয়াছে, যিনি সমস্ত অধিপত্যের ও কতৃত্বের মস্তক।” AABen 395.1

খ্রীষ্ট ভবিষ্যতবাণী করেছেন যে, অনেক ভক্ত ভাববাদী উঠবে, যাদের প্ররোচনায় “অধর্মের” “বৃদ্ধি” পাবে এবং “অধিকাংশ লোকের প্রেম” “শীতল হয়ে যাবে।” মথি ২৪:১২। তিনি শিষ্যদের মতর্ক করেছিলেন যে, মন্ডলী তার শত্রুদের কাছ থেকে পাওয়া অত্যাচার নিপীড়নের চেয়ে এই মন্দ আরো বেশি বিপদগ্রস্থ হতে পারে। পৌল বারংবার এই ভক্ত ভাববাদীদের সম্পর্কে বিশ্বাসীদের সতর্ক করেছেন। অন্য সকলের উপরে এই বিপদের ঝুঁকি ছিল, এর বিরুদ্ধে তাদের অবশ্যই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে; ভক্ত ভাববাদীদের গ্রহণ করার দ্বারা ভ্রান্তি প্রবেশের জন্য দরজা খুলে দেবে, যার দ্বারা শত্রুরা আত্মিক উপলব্ধিকে অনুজ্জল করবে এবং যারা সম্প্রতি সুসমাচারের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে তাদের বিশ্বাসকে নাড়া দিতে খ্রীষ্ট ছিলেন আদর্শ, যার শিক্ষার দ্বারা ভক্ত ভাববাদীদের শিক্ষাগুলো পরীক্ষা করে দেখতে পেরেছিলেন। যে সমস্ত শিক্ষা তার শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় তা তারা বর্জন করতে পেরেছিলেন। খ্রীষ্ট মৃত্যু থেকে পূনরূত্থিত হয়েছিলেন, খ্রীষ্ট উর্ধ্বে গমন করেছিলেন এটি ছিল পরিত্রানের চিত্র যা তারা জেনেছিল এবং শিখেছিল। AABen 395.2

খ্রীষ্টিয় মন্ডলীর পরিপার্শি¦ক বিপদজনক অবস্থা সম্পর্ক ঈশ্বরের বাক্যের সতর্কতা বর্তমানে মন্ডলীর জন্যও প্রযোজ্য। পৌরিতিক যুগের মত লোকেরা মানুষের পরস্পরগত শিক্ষা এবং দর্শনবিদ্যা লাভের চেষ্টা করার ফলে পবিত্র বাক্যের প্রতি বিশ্বাসকে ধ্বংশ করেছিল, একইভাবে বর্তমান কালেও উচ্চতর সমালোচনার আনন্দপ্রদ ভাবপ্রবণতা, বিবর্তন, আত্মিকবাদ, দিব্যজ্ঞান এবং সর্বেশ্ববাদ দ্বারা ধার্মিকতার শত্রু বিশ্বাসী মনকে নিষিদ্ধপথে চালিত করার চেষ্টা করে। অনেকের কাছে বাইবেল হল তেলবিহীন বাতির মত কারণ তারা তাদের মনকে কাল্পনিক বিশ্বাসের দিকে ফেরায় যা ভূল বোঝাবুঝি এবং সন্দেহের সৃষ্টি করে। পুংখানুপঙ্খ বিশ্লেষন, অনুমান, পূর্ণগঠন নিয়ে উচ্চতর সমালোচনার কাজ ঐশ্বরিক প্রত্যাদেশ স্বরূপ বাইবেলের উপর বিশ্বাসকে ধ্বংশ করে। এটি আত্মিক উৎকর্ষতা এবং মানব জীবনের অনুপ্রেরণাকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য ঈশ্বরের ক্ষমতার বাক্যকে হরণ করে। আধ্যাত্ববাদের দ্বারা অনেক লোকদের কাছে শিক্ষা দেয় যে, আকাঙ্খা হল সর্বোচ্চ আইন যা স্বাধীনতার অনুমতি দেয় এবং যা মানুষ কেবল নিজের কাছেই কৈফিয়ত দেবার যোগ্য। খ্রীষ্টে অনুসারীরা “প্রতারণার বাক্যের” সম্মুখিন হবেন তার বিরূদ্ধে প্রেরিত কলসীয় বিশ্বাসীদের সতর্ক করেছেন। তিনি পবিত্র শাস্ত্রের আধ্যাত্ববাদ মূলক ব্যাখ্যার সম্মুখিন হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি সেই সব ব্যাখ্যা গ্রহন করেন নি। তিনি এমনভাবে কথা বলেছিলেন যে পবিত্র শাস্রের শ্বাশ্বত সত্যের দৃঢ়তাপূর্ণ স্পষ্ট কথা লোকেরা শুনতে পেরেছিল। খ্রীষ্টের দিকে স্থীর দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে তার নির্দিষ্ট পথে দৃঢ়তা সহকারে অগ্রসর হয়েছেন, যা তার শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না তা তিনি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ঈশ্বর সত্য ছিল তার গভীর চিন্তা এবং ধ্যানের বিষয়। তিনি বাইবেলকে সরাসরি তাকে বলা ঈশ্বরের কন্ঠস্বর বলে বিবেচনা করতেন। এভাবেই তিনি প্রজ্ঞা খুঁজে পেয়েছিলেন যা ঐশ্বরিক। AABen 396.1

ঈশ্বরের জ্ঞান খ্রীষ্টের জ্ঞানের মধ্যে এমনভাবে প্রকাশ পেয়েছিল যে, যারা পরিত্রান লাভ করবে তাদের সবার মধ্যে এই জ্ঞান প্রকাশ পাবে। এই জ্ঞান যা চরিত্রের পরিবর্তনে কাজ করে। জীবনের মধ্যে তা গ্রহন করে আত্মাকে খ্রীষ্টে প্রতিমূর্তিতে নতুন করে সৃষ্টি করে। এই জ্ঞান যা ঈশ্বর তার সন্তানদের গ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রন জানিয়েছিলেন, নচেৎ এবং পাশে অন্য সব কিছুই হবে অন্তসারশূন্য এবং শূণ্যগর্ভতা। AABen 397.1

প্রত্যেক জাতির মধ্যে এবং প্রত্যেক দেশে চরিত্রগঠনের প্রকৃত ভিত্তি একই রকম — ঈশ্বরের বাক্যে নিহিত নীতিসমূহ। ঈশ্বর যা বলেন তা করাই হল একমাত্র নিরাপদ এবং নিশ্চিন্ত নিয়ম। “সদাপ্রভুর বিধি সকল যথার্থ” এবং “এই কর্ম যে করে, সে কখনো বিচলিত হইবে না।” গীতসংহিতা ১৯:৮; ১৫:৫। ঈশ্বরের বাক্য, যার দ্বারা প্রেরিতগণ তাদের সময়ে ভ্রান্ত মতবাদের প্রতিরোধ করেছিলেন। “কেবল যাহা স্থাপিত হইয়াছে, তাহা ব্যাতিত অন্য ভিত্তিমূল কেহ স্থাপন করিতে পারে না।” ১ করিন্থীয় ৩:১১। AABen 397.2

কলসীয় বিশ্বাসীরা যখন খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ করে বাত্মিষ্ম গ্রহণ করেছিলেন তখন তারা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, এই পর্যন্ত যে বিশ্বাস তারা ধারণ করেছিলেন এবং কাজ করেছিলেন তা তারা পরিত্যাগ করেছে, এবং খ্রীষ্টের প্রতি তাদের আনুগত্য অভ্রান্ত থাকবে। পৌল তার পেেত্র তাদের এই সব স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন এবং তাদের সর্নিবদ্ধ অনুরোধ করেছে যেন তারা ভূলে না, যে প্রতিজ্ঞা তারা করেছিলেন তা যেন যথাযথভাবে পালন করেন তাহলে তারা অব্যাহতভাবে শয়তানের বিরুদ্ধে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে পারবে, যে শয়তান তাদের উপর প্রভুত্ব করতে চায়।“অতএব তোমরা যখন খ্রীষ্টের সহিত উত্থাপিত হইয়াছ,” তিনি বলেছেন, “তখন সেই উর্দ্ধস্থানের বিষয় চেষ্টা কর, যেখানে খ্রীষ্ট আছেন, ঈশ্বরের দক্ষিনে বসিয়া আছেন। উর্দ্ধস্থ বিষয় ভার পৃথিবীস্থ বিষয় ভাবিও না।” কেননা তোমরা মরিয়াছ, এবং তোমাদের জীবণ খ্রীষ্টের সহিত ঈশ্বরে গুপ্ত রহিয়াছে।” AABen 397.3

“ফলত কেহ যদি খ্রীষ্টে থাকে, তবে নতুন সৃষ্টি হইল; পুরাতন বিষয় সকল অতীত হইয়াছে, দেখ, সেগুলো নতুন হইয়া উঠিয়াছে।” ২ করিন্থি: ৫:১৭। খ্রীষ্টের শক্তির মাধ্যমে পুরুষ ও স্ত্রীলোকেরা পাপপূর্ণ অভ্যাসের শৃঙ্খল ভেঙ্গে ফেলছে। তারা পাপ পাপপঙ্কিলতা পরিত্যাগ করিয়োছে। ভক্তিহীন ভক্তিমানে পরিনত হয়েছে, মাতাল সংযত হয়েছে, দুঃশ্চরিত্র লোক সৎচরিত্রের অধিকারী হয়েছে। যে মানুষ শয়তাদের সাদৃশ্যে জন্মেছে সে সম্পূর্ণ রূপান্তরিত হয়ে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে এই পরিবর্তন হল অলৌকিক কার্যের অলৌকিক কার্য। বাক্যের দ্বারা পরিবর্তন ঘটেছে, এটি বাক্যের গভীরতম রহস্যের মধ্যে অন্যতম। আমরা এটি বুঝতে অসমর্থ; যে ভাবে পবিত্র শাস্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে আমরা কেবল সে ভাবেই বিশ্বাস করতে পারি, তা হল, “আমাদের জীবন স্বরূপ খ্রীষ্ট যখন প্রকাশিত হইবেন, তখন তোমরাও তাহার সহিত, সপ্রতাপে প্রকাশিত হইবে।” AABen 397.4

যখন ঈশ্বরের আত্মা হৃদয় ও মন নিয়ন্ত্রন করে তখন পরবর্তি মানুষের মধ্য থেকে নতুন সংগীত বের হয়ে আসে; কারণ তার অভিজ্ঞতায় তিনি উপলব্ধি করেন যে ঈশ্বরের প্রজ্ঞিা পূর্ণ হয়েছে, যে, তার পাপ ক্ষমা করা হয়েছে, তার পাপ ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তিনি ঈশ্বরের আজ্ঞা লঙ্ঘনের জন্য ঈশ্বরের কাছে অনুতাপ করেছেন এবং খ্রীষ্টের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছেন, যিনি মানুষের ধার্মিকতার জন্য মৃত্যুবরণ করেছিলেন। “বিশ্বাস হেতু ধার্মিক গণিত হওয়াতে,” তিনি, “আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা সন্ধি লাভ করেছেন।” রোমীয় ৫:১। AABen 398.1

কিন্তু যেহেতু এই অভিজ্ঞতা তার নিজের, তাই খ্রীষ্টিয়াত তার হাত গুটিয়ে রাখে না, তার জন্য যে কার্য সাধন করা হয়েছে তাতে সে সন্তুষ্ট। যিনি আত্মিক রাজ্যে প্রবেশের জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ তিনি দেখতে পাবেন যে নতুনভাবে সৃষ্টি হয়নি এমন স্বভাবের সমস্ত শক্তি এবং আকাঙ্খা অন্ধকার রাজ্যে শক্তির দ্বারা ফিরিয়ে নেবার জন্য তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে দাড়িয়ে আছে। এই জন্য প্রতিদিন তার উৎসর্গীকরণ নবায়ন করতে হবে, প্রতিদিন শয়তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে। পুরাতন স্বভাব, বংশগত পাপ করার প্রবণতা, প্রভুত্ব করার কঠোর চেষ্টা করা, আর এই সব কিছুর বিরুদ্ধে তাকে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে, বিজয়ী হবার জন্য খ্রীষ্টের শক্তি লাভ করতে সচেষ্ট থাকতে হবে। AABen 398.2

“অতএব তোমরা পৃথিবীস্থ আপন আপন অঙ্গসকল মৃত্যুসাধ কর,” পৌল কলসীয়দের কার্যে লিখেছেন, “পূর্বে যখন তোমরা এই সকলে জীবন ধারণ করিতে, তখন তোমরাও এই সকলে চলিতে। কিন্তু তোমরাও এই সকল ত্যাগ কর, ক্রোধ, রাগ, হিংসা নিন্দা ও তোমাদের মুখ নির্গত কুৎসিত আলাপ . . . অতএব তোমরা, ঈশ্বরের মনোনীত লোকদের, পবিত্র ও প্রিয় লোকদের উপযোগী মতে করুনাচিত্তে, মধুর ভার, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা পরিধান কর। পরস্পর ¯েড়বহশীল হও এবং যদি কাহাকও দোষ দেবার কারণ থাকে, তবে পরস্পর ক্ষমা কর, প্রভু যেমন তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন, তোমরাও তদ্রæপ ক্ষমা কর। আর এই সকলের উপরে প্রেম পরিধান কর; তাহাই সিদ্ধির যোগবন্ধন। আর খ্রীষ্টের শান্তি তোমাদের হৃদয়ে কতৃত্ব করুক; তোমরা তো তাহারই নিমিত্ত এক দেহে আহুত হইয়াছ; আর কৃতজ্ঞ হও।” AABen 398.3

যারা খ্রীষ্টের পরিচর্যা কার্যে ব্যাপৃত আছেন তাদের জন্য কলসীয় মন্ডলীর কাছে লেখা পত্রটি অত্যন্ত মূল্যবান শিক্ষায় পূর্ণ একটি পত্র, এই শিক্ষা দেখায় যে, একনিষ্ঠ উদ্দেশ্যে একত্র এবং লক্ষ্যে বিশিষ্টতা যযা তাদের জীবনের মধ্যে দেখা যাবে যারা যথার্থ ভাবে খ্রীষ্টকে প্রকাশ করে। উর্দ্ধমুখী পথে অগ্রসর হতে যা কিছু তাকে বাধা দিয়ে রাখে অথবা সংকীর্ণ পথ থেকে পা অন্য দিকে যা কিছু সরিয়ে নেয় তা অস্বীকার করে বিশ্বাসী তার প্রাত্যাহিক জীবনে করুনা, দয়া, বিনম্রতা, নম্রস্বভাব, ধৌর্যশীলতা এবং খ্রীষ্টের প্রেম প্রকাশ করবে। AABen 399.1

উচ্চতর, খাঁটি, উনড়বত শক্তির জীবন আমাদের অতি আবশ্যক। আমাদের চিন্তায় জগৎ অনেক বিশাল এবং স্বর্গ রাজ্য অনেক ক্ষুদ্র। AABen 399.2

যদি কোন খ্রীষ্টিয়ান নিজ প্রচেষ্টায় তার জন্য ঈশ্বরের আদর্শ লাভ করতে চায় তাহলে তার হতাশ হবার কিছুই নেই। নৈতিক এবং আত্মিক শুদ্ধতা খ্রীষ্টের অনুগ্রহ এবং শক্তির মাধ্যমে আসে, যা সকলের কাছে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে। যীশু হলেন ক্ষমতার উৎস, জীবনের ফোয়ারা। তিনি আমাদের তার বাক্যের কাছে নিয়ে যান এবং পাপ পীড়িত আত্মার আরোগ্য করার জন্য জীবন বৃক্ষ থেকে আমাদেরকে পাতা প্রদান করেন। তিনি আমাদেরকে ঈশ্বরের সিংহাসনের দিকে চালিত করেন এবং তিনি আমাদের মুখের সেই প্রার্থনা প্রদান করেন যার মধ্য দিয়ে আমরা তার সঙ্গে গভীরভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারি। স্বর্গের সমস্ত ক্ষমতার মাধ্যমে তিনি আমাদের পক্ষে কাজ করেন। আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা তার ভালবাসার শক্তি স্পর্ষ অনুভব করে থাকি। AABen 399.3

যারা “আত্মিক জ্ঞানে ও বুদ্ধিতে তাহার ইচ্ছার তত্ব জ্ঞানে পূর্ণ” হবার জন্য আকাঙ্খা করে তাদের উনড়বতিবর্ধনে তিনি কোন সীমাবদ্ধতা রাখেন নি। প্রার্থনার মধ্য দিয়ে, জাগ্রত থাকার মধ্য দিয়ে, জ্ঞান এবং বুদ্ধিতে বৃদ্ধি লাভের মধ্য দিয়ে তারা “তাহার প্রতাপের পরাক্রম অনুসারে সমস্ত শক্তিতে শক্তিমান” হতে পারবে। এই ভাবে তারা অন্যদের জন্য কাজ করার প্রস্তুতি গ্রহন করতে পারবে। এটি হল ত্রানকর্তার উদ্দেশ্য যে মানব জাতি, পরিস্কৃত এবং পবিত্র হয়, যেন তারা তার সাহায্যকারী মাধ্যম হয়। এই বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করার জন্য আসুন আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই যিনি “তোমাদিগকে দিপ্তিতে পবিত্রগনের অধিকারের অংশী হইবার জন্য উপযুক্ত করিয়াছেন। তিনি আমাদিগকে অন্ধকারের কর্তৃত্ব হইতে উদ্ধার করিয়া আপন প্রেমভূমি পুত্রের রাজ্যে আনয়ন করিয়াছেন।” AABen 399.4

পৌল যখন রোমে বন্দী ছিলেন তখন কলসীয়দের কাছে লেখা পত্রের মত ফিলিপীয়দের কাছে পত্র লিখেছিলেন। ফিলিপী মন্ডলী ইপাফ্রদীতের মাধ্যমে পৌলের কাছে দান পাঠিয়েছিলেন, যাকে পৌল সম্বোধন করেছেন, “আমার ভ্রাতা, সহকর্মী ও সহসেনা এবং তোমাদের প্রেরিত ও আমার উপকারার্থক সেবক” বলে। যখন ইপাফ্রদীত রোমে অসুস্থ হয়েছিলেন তখন, “তিনি পীরায় মৃতকল্প হইয়াছিলেন; কিন্তু তাহার প্রতি দয়া করিয়াছেন, আর কেহ তাহার প্রতি নয়, আমার প্রতিও দয়া করিয়াছেন, যেন দূঃখের উপর আমার দুঃখ না হয়।” ফিলিপীয় মন্ডলীর বিশ্বাসীরা যখন ইপাফ্রদীতের অসুস্থতার সংবাদ শুনেছিলেন তারা তার জন্য খুব উদ্বিগড়ব হয়েছিলেন, এই জন্য তিনি তাকে তাদের কাছে পাঠিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। “তিনি তোমাদের সকলকে দেখিবার জন্য আকাঙ্খি ছিলেন,” পৌল লিখেছেন, “এবং তোমরা তাহার পীরার সংবাদ শুনিয়াছ বলিয়া তিনি আকুল হইয়াছিলেন . . . এই জন্য আমি অধিক যত্নপূর্বক তাহাকে পাঠাইলাম, যেন তোমরা তাহাকে দেখিয়া পূনর্বার আনন্দ কর, আমারো দুঃখের লাঘব হয়। অতএব তোমরা তাহাকে প্রভুতে সম্পূর্ণ আনন্দ সহকারে গ্রহন করিও এবং এই প্রকার লোকদিগতেক সমাদর করিও, কেননা খ্রীষ্টের কার্যের নিমিত্তে তিনি মৃত্যুমুখে উপস্থিত হইয়াছিলেন, ফলত: আমার সেবায় তোমাদের ত্রুটি পূরার্থে প্রানপন করিয়াছিলেন। AABen 400.1

পৌল ইপাফ্রদীতের হাতে ফিলিপীর বিশ্বাসীদের কাছে একটি পত্র পাঠিয়েছিলেন, এ পত্রে তিনি তাকে পাঠান, দানের জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছিলেন। ফিলিপীতে অবস্থিত সমস্ত মন্ডলীর বিশ্বাসীরা পৌলের যা কিছু প্রয়োজন ছিল তা সরবারহ করার জন্য উদার হস্ত ছিলেন। “আর হে ফিলিপীয়েরা, তোমরাও জন,” প্রেরিত তার পত্রে লিখেছেন, “সুসমাচারের অদিতে, যখন আমি মাকিদনিয়া হইতে প্রস্থান করিয়াছিলাম, তখন কোন মন্ডলীর দেনা পাওনার বিষয়ে আমার সহভাগী হয় নাই, কেবল তোমরাই হইয়াছিলে। বাস্তবিক থিষলনীকীতেও তোমরা একবার, বরং দুই বার আমার প্রয়োজনীয় উপকার পাঠাইয়াছিলে। আমি দান প্রাপ্তির চেষ্টা করিতেছি না: কিন্তু সেই ফলে চেষ্টা করিতেছি, যাহা তোমাদের হিসাবে বহু লাভজনক হইবে। আমার সকলই আছে, বরং উপচিয়া পরিতেছে: আমি তোমাদের হইতে ইপাফ্রদীতের হাতে যাহা যাহা পাঠাইয়াছি তাহাতে পরিপূর্ণ হইয়াছি, তাহা সৌরভ স্বরূপ ঈশ্বরের প্রতি যেন গ্রাহ্যবলী।” AABen 400.2

“যখনই তোমাদিগকে স্বরণ হয়, সর্বদাই আমি আমার সমস্ত বিনতীতে তোমাদের সকলের জন্য আনন্দ সহকারে বিনতি করত: আমারা ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিয়া থাকি; কারণ প্রথম দিবস অবধী অব্দ পর্যন্ত সুসমাচারের পক্ষে তোমাদের সহভাগীতা আছে। ইহাতেই আমার দৃঢ়প্রত্যয় এই যে, তোদের অন্তরে যিনি উত্তম কার্য আরম্ভ করিয়াছে, তিনি যীশু খ্রীষ্টের দিন পর্যন্ত তাহা সিদ্ধ করিবেন: আর তোমাদের সকলের বিষয়ে এই এই ভাব রাখা ন্যায্য; কেননা আমি তোমাদিগকে হৃদয়ের মধ্যে রাখি; যেহেতুক আমার বন্ধন সম্বন্ধে এবং সুসমাচোরের পক্ষ সমর্থনে ও প্রতিপাদনে সম্বন্ধে তোমরা সকলে আমার সহিত অনুগ্রহের সহভাগী হইয়াছ। কারণ ঈশ্বর আমার সাক্ষী যে, খ্রীষ্ট যীশুর ¯েড়বহে আমি তোমাদের সকলের জন্য কেমন আকাঙ্খী আর আমি এই প্রার্থনা করিয়া থাকি, তোমাদের প্রেম যেন তত্বজ্ঞানে ও সর্ব প্রকার সু² চৈতন্যে উত্তর উত্তর উপচিয়া পরে; এই রূপে তোমরা যেন, যাহা যাহা ভিনড়ব প্রকার, তাহা পরীক্ষা করিয়া চিনতে পার, খ্রীষ্টের দিন পর্যন্ত যেন তোমরা সরল ও বিঘড়ব রহিত থাক, যেন ধার্মিকতার সেই ফলে পূর্ণ হয়, যাহা যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা পাওয়া যায়, এই রূপে যেন ঈশ্বরের গৌরব ও প্রসংসা হয়।” AABen 401.1

পৌল তার বন্দীত্বের সময় ঈশ্বরের অনুগ্রহ ধারন করেছিলেন যা তাকে তার দুঃখ কষ্টের সময় আনন্দ করতে সামর্থ দান করেছিল। বিশ্বাস এবং নিশ্চয়তা নিয়ে তিনি ফিলিপীয় ভ্রতৃবর্গের কাছে লিখেছিলেন যে, তার বন্দিদশার ফলে সুসমাচারের পথ পরিস্কার হয়েছে। “এখন হে আমার ভ্রাতৃগন, আমার বাসনা এই যে,” তিনি লিখেছিলেন “তোমরা জান, আমার সম্বন্ধে যাহা যাহা ঘটিয়াছে, তদ্বারা বরং সুসমাচারের পথ পরিস্কার হইয়াছে; বিশেষত সমস্ত স্কন্ধবারে এবং অন্যান্য সকলের নিকটে আমার বন্ধন খ্রীষ্ট সম্বন্ধীয় বলিয়া প্রকাশ পাইয়াছে এবং প্রভুতে স্থীত অধিকাংশ ভ্রাতা আমার বন্ধন হেতু দৃঢ় প্রত্যয়ী হইয়া নির্ভয়ে ঈশ্বরের বাক্য কহিতে অধিক সাহসী হইয়াছে।” AABen 401.2

পৌলের এই অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য একটি শিক্ষা, কারণ এটি ঈশ্বরের কাজে উপায় প্রকাশ পেয়েছে। প্রভু আমাদের সেই সমস্ত বিষয় থেকে বিজয়ী করতে পারেন, আমাদের কাছে যা মনে হবে বিব্রতকর এবং পরাজিত। যা কিছু অদৃশ্য তা বিশ্বাসের চোখে দেখার পরিবর্তে আমরা যা কিছু দেখতে পাই তার প্রতি দৃষ্টিপাত করে ঈশ্বরকে ভুলে যাওয়ায় বিপদের মধ্যে থাকি। যখন দুর্ঘটনায় কিংবা বিপর্যয় আসে তখন আমরা আমাদের প্রতি অবহেলার জন্য কিংবা তার নিষ্ঠুরতার জন্য ঈশ্বরকে দোষারোপ করতে উদ্যত হই। যদি তিনি দেখেন যে আমাদের অতি প্রয়োজনীয় কোন কোন বিষয় ছেটে ফেলা আবশ্যক তখন আমরা শোকার্ত হয়ে পড়ি, আমরা এই চিন্তা করতে বিরত থাকি না যে, ঈশ্বর এই ভাবেই আমাদের মঙ্গলের জন্য কাজ করতে পারেন। আমাদের এটি জানা আবশ্যক যে, শান্তি প্রদান তার মহা অনুগ্রহের একটি অংশ এবং দুঃখ দুর্দশার মধ্যে থেকেও খ্রীষ্টিয়ানরা কখনো কখনো সক্রীয়ভাবে কার্যে ব্যপৃত থাকার সময়ের চেয়েও প্রভুর জন্য আরো অধিক কাজ করতে সক্ষম হতে পারেন। AABen 402.1

খ্রীষ্টিয় জীবনে তাদের দৃষ্টান্ত স্বরূপ পৌল ফিলিপীয়দের খ্রীষ্টের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন, যিনি “ঈশ্বরের স্বরূপ বিশিষ্ট থাকিতে তিনি ঈশ্বরের সহিত সমান থাকা ধরিয়া লইবার বিষয় জ্ঞান করিলেন না, কিন্তু আপনাকে শূন্য করিলেন, দাসের রূপ ধারণ করিলেন, মনুষ্যদের সাদৃশ্যে জন্মিলেন; এবং আকার প্রকারে মনুষ্যবৎ প্রত্যক্ষ হইয়া আপনাকে অবনত করিলেন, মৃত্যু পর্যন্ত, এমন কি, ক্রুশীয় মৃত্যু পর্যন্ত আজ্ঞাবহ হইল।” AABen 402.2

“অতএব হে আমার প্রিয়তমেরা,” তিনি আরো লিখেছেন, “তোমরা যেন সর্বদা আজ্ঞাবহ হইয়া আসিতেছ, তেমনি আমার সাক্ষাতে যে রূপ, কেবল সেই রূপ নয়, বরং এখন আরো অধিকতর রূপে আমার সাক্ষাতে, সভয়ে ও সকম্পে আপন আপন পরিত্রান সম্পনড়ব কর। কারণ ঈশ্বরই আপন হিতসংকল্পে নিমিত্ত ও তোমাদের অন্তরের ইচ্ছা ও কার্য উভয়ই সাধনকারী। তোমরা বচসা ও তর্ক বিতর্ক বিনা সমস্ত কার্যকর কর: যেন তোমরা অনিন্দনীয় ও অমায়িক হও, এই কালের সেই কুটিল ও বিপদগামী লোকদের মধ্যে ঈশ্বরের নিস্কলঙ্ক সন্তান হও, যাহাদের মধ্যে তোমরা জগতে জ্যোর্তিগনের ন্যায় প্রকাশ পাইতেছ, জীবনের বাক্য ধরিয়া রহিয়াছ, ইহাতে খ্রীষ্টের দিনে আমি এই শ্লাঘা করিবার হেতু পাইব যে, আমি বৃথা দৌড়ি নাই, বৃথা পরিশ্রমও করি নাই।” AABen 402.3

যারা আগ্রহ নিয়ে কঠোরভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের সকলের সাহায্যে জন্য এই কথাগুলো লেখা হয়েছে। পৌল পরিপূর্ণতার পতাকা উর্দ্ধে তুলে ধরেছেন এবং দেখিয়েছেন যে কিভাবে এটি লাভ করা যায়। AABen 403.1

পরিত্রান লাভের কাজ হল অংশীদারীত্বমূলক, এবং যুগড়ব কাজ। এই কাজটি ঈশ্বর এবং অনুতাপকারী পাপীর মধ্যকার কাজ। চরিত্রে সঠিক নীতিগঠনের জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মানুষ আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে যাতে পরিপূর্ণতা লাভ করা থেকে যা তাদের বাধা দিয়ে রাখে, তার উপর বিজয় লাভ করতে পারে। কিন্তু সফলতার জন্য তাকে সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করতে হবে। মানুষের তার নিজের প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়। ঈশ্বরীক ক্ষমতার সাহায্য ছাড়া এটি কোন উপকারে আসবে না। ঈশ্বরের কাজ এবং মানুষের কাজ। প্রলোভনের প্রতিরোধ অবশ্যই মানুষের কাছ থেকে আসবে, আর তাকে অবশ্যই ঈশ্বরের কাছ থেকে শক্তি সংগ্রহ করতে হবে। এক দিকে অসীম প্রজ্ঞা, করুনা এবং ক্ষমতা, আর অন্য দিকে দূর্বলতা, পাপাচার সম্পূর্ণ অসহায়ত্ব। ঈশ্বর আমাদের উপর প্রভুত্ব করতে চান। কিন্তু আমাদের সম্মতি এবং সহযোগীতা ছাড়া তিনি আমাদের সাহায্য করতে পারেন না। মানুষকে শক্তি এবং দক্ষতা প্রদান করার মধ্য দিয়ে পবিত্র আত্মা কাজ করে থাকেন। আমাদের নিজের প্রচেষ্টা দ্বারা আমাদের উদ্দেশ্য, আকাঙ্খা এবং প্রবণতা, ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে এক করতে সক্ষম হবে না। কিন্তু যদি আমরা তার ইচ্ছার সঙ্গে আমাদের ইচ্ছাকে একিভূত করি তাহলে, মুক্তিদাতা আমাদের পক্ষে এই সমস্ত কাজ সম্পনড়ব করবেন, “আমরা বিতর্ক সকল এবং ঈশ্বর জ্ঞানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সমস্ত উচ্চ বস্তু ভাঙ্গিয়া ফেলিতেছি, এবং সমুদয় চিন্তাকে বন্দী করিয়া আজ্ঞাবদ্ধ করিতেছি।” ২ করিন্থিয় ১০:৫। AABen 403.2

যিনি একটি শক্তশালী, সুসামঞ্জস্যপূর্ণ চরিত্র গঠন করতে চান, যিনি একজন বুদ্ধিমান খ্রীষ্টিয়ান হতে চান তিনি নিশ্চয় সবকিছুই খ্রীষ্টকে প্রদান করেছেন এবং তার জন্য সবকিছু করেছেন; কারন মুক্তিদাতা বিভক্ত কাজ গ্রহন করতে সম্মত নন। প্রভুর কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়ার অর্থ কি তা তাকে প্রতিদিন শিখতে হবে। তাকে অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্য অধ্যায়ন করতে হবে, এর অর্থ কি তা তাকে জানতে হবে এবং এর শিক্ষা ও উপদেশগুলো পালন করতে হবে। এভাবেই তিনি উৎকর্ষ খ্রীষ্টিয় পতাকা লাভ করতে পারবেন। প্রতিদিনই ঈশ্বর তার সঙ্গে কাজ করেন, চরিত্রকে বিশুদ্ধ করবেন, যা চুান্ত পরীক্ষার সময় এটি স্থির হয়ে থাকতে পারে। দিনের পর দিন বিশ্বাসীরা মানুষ এবং স্বর্গদূতগনের সামনে উনড়বত পরীক্ষার কাজ করে পতিত মানব জাতির জন্য সুসমাচার কি করতে পারে তা দেখায়। AABen 403.3

“আমি যে তাহা ধরিয়াছি, আপনার বিষয়ে এমন বিচার করি না, “পৌল লিখেছেন, “কিন্তু একটি কাজ করি, পশ্চাৎস্থিত বিষয় সকল ভুলিয়া গিয়া সম্মুখস্থ বিষয়ের চেষ্টায় একাগ্র হইয়া লক্ষ্যে অভিমুখে দৌড়িতে দৌড়িতে আমি খ্রীষ্ট যীশুতে ঈশ্বরের কৃত উর্দ্ধদিগন্ত আহব্বানের পথ পাইবার জন্য যত্ন করিতেছি।” AABen 404.1

পৌল অনেক কিছু করেছেন। যে সময় থেকে তিনি খ্রীষ্টের কাছে নিজেকে সমর্পন করেছিলেন, তার জীবন অক্লান্ত পরিশ্রমের দ্বারা পূর্ণ হয়েছিল। শহর থেকে শহরে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে তিনি ভ্রমন করেছেন। ক্রুশের ঘটনার কথা বলেছেন, সুসমাচারের দিকে লোকদের মন ফিরিয়েছেন এবং মন্ডলী স্থাপন করেছেন। এই মন্ডলীগুলোর প্রতি তার সবসময় মনোযোগ ছিল এবং তিনি তাদের কাছে অনেক উপদেশমূলক চিঠি লিখেছেন। ঐ সময় তিনি তার প্রতিদিনের আহারের জন্য তার ব্যবসার কাজ করেছেন। কিন্তু তার জীবনের সমস্ত বাস্তবতাপূর্ণ কাজের মাসেও, একটি উদ্দেশ্য কখনো পৌলের মন থেকে মুছে যায় নি উর্দ্ধদিগস্থ তার আহব্বানের পথ। তার সামনে একটি লক্ষ্য ছিল যা তিনি দৃঢ় রূপে ধরে রেখেছিলেন তা হল — সেই একজনের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা যিনি দম্মেশকের পথে তাকে শয়ন দর্শন দিয়েছিলেন। তাকে তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করার মত কোন শক্তি ছিল না। কালভেরীর ক্রুশের উচ্চ মর্জাদা দান এটি ছিল এমন একটি উদ্দেশ্য — যা তাকে তার কথা ও কাজের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। AABen 404.2

মহান উদ্দেশ্য পৌলকে শ্রমমধ্য এবং কষ্টকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল, যা প্রত্যেক খ্রীষ্টিরত কর্মীকে ঈশ্বরের কাজে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করার জন্য অনুপ্রণিত করে। জাগতিকতার প্রতি আকর্ষন মুক্তিদাতার দিক থেকে তার আকর্ষনকে দূরে সরিয়ে নেবে, কিন্তু তাকে তার লক্ষ্যে অভিমূখে এগিয়ে যেতে হবে, জগতকে, স্বর্গদূতকে এবং মানুষকে দেখাতে হবে যে, ঈশ্বরের মুখ দর্শনের আশা হল সমস্ত প্রচেষ্টা এবং আত্মত্যাগের বিশেষ মূল্য, যা এই আশার দাবী প্রাপ্তি। AABen 404.3

যদিও পৌল বন্দী ছিলেন তথাপি তিনি হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন নি। তার বদলে তিনি রোম থেকে মন্ডলী সমূহের কাছে যে পত্র পাঠিয়েছিলেন তার মধ্য দিয়ে তিনি বিজয়ের ঘন্টার সুর বাজিয়েছিলেন। “তোমরা প্রভুতে সর্বদা আনন্দ কর,” তিনি ফিলিপীয়দের কাছে লিখেছেন, “পূনরায় বলিব আনন্দ কর, কোন বিষয়ে ভাবিত হইও না; কিন্তু সর্ব বিষয়ে প্রর্থনা ও বিনতী দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর। তাহাতে সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি, তাহা তোমাদের হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে। অবশেষে, হে ভ্রাতৃগণ, যাহা যাহা সত্য, যাহা যাহা আদরনীয়, যাহা যাহা ন্যায্য, যাহা যাহা বিশুদ্ধ, যাহা যাহা প্রীতিজনক, যাহা যাহা সুখ্যাতিযুক্ত, যে কোন সৎ গুন ও যে কোন কীর্তি হউক, সেই সকল আলোচনা কর।” AABen 405.1

“আর আমার ঈশ্বর গৌরবে খ্রীষ্ট যীশুতে স্থিত আপন ধন অনুসারে তোমাদের সমস্ত প্রয়োজনীয় উপকার পূর্ণরূপে সাধন করিবেন। প্রভু যীশুর খ্রীষ্টের অনুগ্রহ তোমাদের আত্মার সহবর্তী হউক।” AABen 405.2