প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ

40/59

৩৯শ অধ্যায়—কৈসরীয়ায় বিচার

(প্রথম কিছু অংশ নাই বাংলা করতে হবে)

“ইহারা যাহাকে দল বলে” এ কথা তিনি স্বীকার করে বলেন যে, ” সেই পথ অনুসারে আমি পৈতৃক ঈশ্বরের আরাধনা করিয়া থাকি ; যাহা যাহা ব্যবস্থার অনুযায়ী এবং যাহা যাহা ভাববাদি—গ্রন্থে লিখিত আছে, সে সমস্ত বিস্বাস করি ;” আর শাস্ত্রের সরল শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে তিনি মৃতদের পুনরুত্থানে বিশ্বাস করেন। আর তিনি আরও বলেন, তক্ষ জীবনের প্রধান ঊদ্দেশ্য হল, “আর এ বিষয়ের আমিও ঈশ্বরের ও মনুষ্যের প্রতি বিঘড়বহীন সংবেদ রক্ষা করিতে নিরন্তর যত্ন করিয়া থাকি।” AABen 349.1

তিনি অকপট ও অবান্তর বিষয়ের অবতারণাবিহীনভাবে তাঁর যিরুশালেম যাত্রার উদ্দেশ্য এবং তাঁর গ্রেপ্তার ও বিচারের পারিপার্র্শ্বিক অবস্থা ব্যক্ত করেন: অনেক বৎসর পরে আমি স্বজাতির কাছে দান লইবার এবং নৈবেদ্য উৎসর্গ করিবার জন্য আসিয়াছিলাম ; এই উপলক্ষে লোকেরা আমাকে ধর্ম্মধামে শুচীকৃত অবস্থায় দেখিয়াছিল, জনতাও হয় নাই, গন্ডগোলও হয় নাই ; কিন্তু এশিয়া দেশের কতকগুলি যিহূদী উপস্থিত ছিল, তাহাদেরই উচিত ছিল, যেন আপনার কাছে আমার বিরুদ্ধে যদি তাহাদের কোন কথা থাকে, তবে উপস্থিত হয়, এবং দোষারোপ করে। নতুবা এই উপস্থিত লোকেরাই বলুক, আমি মহাসভার সম্মুখে দাঁড়াইলে ইহারা আমার কি অপরাধ পাইয়াছে ? না কেবল এই এক কথা, যাহা তাহাদের মধ্যে দাঁড়াইয়া উচ্চৈঃস্বরে বলিয়াছিলাম ‘মৃতদের পুনরুত্থান বিষয়ে অদ্য আপনাদের সম্মুখে আমার বিচার হইতেছে’। AABen 349.2

স্পষ্ট অকৃত্রিমতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে প্রেরিত কথা বললেন, তাঁর কথা দৃঢ়প্রত্যয়যুক্ত ছিল। ফীলিক্সের কাছে পাঠানো ক্লৌদিয় লুষিয়র চিঠি পৌলের আচরণ সম্পর্কে একই রকম সাক্ষ্য বহন করেছিল। তা ছাড়া, ফীলিক্সের নিজেরও যিহূদী ধর্ম্ম সম্পর্কে অনেকের ধারণার থেকেও বেশী ভাল জ্ঞান ছিল। যে মতলব নিয়ে যিহূদীরা প্রেরিতকে গণবিক্ষোভ ও রাষ্রদ্রোহিতার দোষে দোষী সাব্যস্ত করার প্রচেষ্টা করছিল, এই মামলার প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে পৌলের সোজাসুজি বক্তব্য ফীলিক্সকে তা আরো পরিস্কারভাবে বুঝতে সাহায্য করল। শাসনকর্তা একজন রোমীয় নাগরিককে অন্যায়ভাবে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের সন্তুষ্ট করতে বা সুষ্ঠু বিচার ছাড়া মৃত্যুদন্ড দেবার জন্য তাঁকে তাদের হাতে তুলে দিতে চান নি। তবুও ফীলিক্স নিজ—স্বার্খের ওপরে আর কিছু জানতেন না, আর তিনি আত্মগরিমা ও পদোনড়বতির লোভের দ্বারা নিয়স্ত্রিত হয়েছিলেন। তিনি যাকে নির্দোষী জানতেন তাঁর প্রতি পূর্ণ ন্যায় বিচার করতে যিহূদীদের রাগোৎপাদনের ভয় তাকে পিছুটান দিয়েছিল। তাই তিনি এই কথা বলে লুষিয়র উপস্থিত হবার আগ পর্যন্ত বিচার স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন যে,“লুষিয় সহস্রপতি যখন আসিবেন, তখন আমি তোমাদের বিচার নিষ্পত্তি করিব।” AABen 349.3

প্রেরিত বন্দি অবস্থায় থাকলেন, কিন্তু ফীলিক্স পৌলের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিযুক্ত শতপতিকে এই আদেশ দিলেন, “তুমি ইহাকে আবদ্ধ রাখ, কিন্তু স্বচ্ছন্দে রাখিও, ইহার কোন আত্মীয়কে ইহার সেবা করণার্থে আসিতে বারণ করিও না।” AABen 350.1

এর অল্প কয়েকদিন পরেই ফীলিক্স ও তার স্ত্রী দ্রুযিল্লা পৌলকে একটা ব্যক্তিগত সাক্ষাতকারের জন্য ডেকে পাঠালেন যেন, “খ্রীষ্ট যীশুর প্রতি বিশ্বাসের ষিষয়” শুনতে পারেন। তারা এই সব নতুন সত্য শুনতে ইচ্ছুক এমন কি গভীর আগ্রহী ছিলেন— যে সত্য তারা হয়তো আর কোন দিন শুনতে পাবেন না, আর যদি প্রত্যাখ্যান করেন , তবে ঈশ্বরের দিনে তা হয়তো তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রমান হিসাবে প্রমানিত হবে। AABen 350.2

পৌল এই সুযোগকে ঈশ্বরদত্ত বলে গণ্য করলেন, আর তিনি বিশ্বস্তভাবে তার উৎকর্ষস্াধন করলেন। তিনি জানতেন যে তিনি এমন একজনের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন যিনি তাকে মৃত্যুদন্ডও দিতে পারেন অথবা তাকে মুক্ত করেও দিতে পারেন ; তবুও তিনি ফীলিক্স ও দ্রুজিল্লাকে তোষামোদ করে বা প্রশংসা করে সম্বোধন করলেন না। তিনি জানতেন যে তার কথাগুলো তাদের কাছে জীবনের বা মৃত্যুর স্বাদ এনে দেবে, তাই তিনি তার সমস্ত স্বার্থ চিন্তা ভুলে গিয়ে, তাদের বিপদাপনড়ব অবস্থা সম্পর্কে সজাগ করে দিতে চাচ্ছিলেন। AABen 350.3

প্রেরিত বুঝতে পেরেছিলেন যে যারা হয়তো তার কথা শুনবে তাদের ওপর সুসমাচারের দাবি থাকবে যে হয় তারা একদিন সেই মহান শুভ্র সিংহাসনের চার পাশে ঘিরে থাকা পবিত্র ও ধার্ম্মিকদের সাথে দাঁড়িয়ে থাকবে অথবা তাদের সাথে থাকবে যাদের খ্রীষ্ট বলবেন, হে অধর্ম্মচারীরা, আমার নিকট হইতে দূর হও।” মথি ৭ঃ২৩ পদ। তিনি জানতেন যে তার শ্রোতাদের প্রত্যেকের সাথে তিনি স্বর্গীয় বিচারাসনের সামনে অবশ্যই দেখা করবেন আর তিনি যে সব কথা বলেছেন ও যে সব কাজ করেছেন কেবল তারই কৈফিয়ৎ দেবেন না, কিন্তু তার সমস্ত কথার ও কাজের উদ্দেশ্য ও মনোভাবের জন্য কারণ দর্শাবেন। AABen 351.1

ফিলিক্সের আচরণ নির্মম ও নিষ্ঠুর ছিল যা এর আগে কেউ কখনো তার সামনে AABen 351.2

এমন কি আভাস গর্যন্ত দিতে সাহস পায় নি যে কারণে তার চরিত্র ও আচরণ ত্রুটিশূন্য ছিল না। কিন্তু পৌল কোন মানুষকে ভয় করেন নি। তিনি অকপটে খ্রীষ্টের ওপরে তার বিশ্বাস ও সেই বিশ্বাসের কারণ ঘোষণা করেছিলেন, আর এই কারণে বিশেষ ভাবে খ্রীষ্টিয় চরিত্রের প্রয়োজনীয় গুণাবলীর কথা বলতে প্ররোচিত হয়েছিলেন, যে বিষয়ে তার সামনের গর্বিত দুজন লক্ষণীয় ভাবে চরম বঞ্চিত হল। AABen 351.3

তিনি ফিলিক্স ও দ্রুযিল্লার কাছে ঈশ্বরের চরিত্র—তাঁর ধার্মিকতা, ন্যায়বিচার, ও নিরপেক্ষতা আর তাঁর নিয়মের প্রকৃতি তুলে ধরেন। তিনি পরিস্কারভাবে দেখিয়ে দিলেন যে সংযম ও মিতব্যয়িতার জীবন যাপন, ঈশ্বরের নিয়মের সঙ্গে উপযোগী বিচারবুদ্ধি দিয়ে প্রচন্ড আবেগকে নিয়ন্ত্রিত রাখা, এবং শারীরিক ও মানসিক শক্তিগুলোকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সংরক্ষণ করা মানুষেরই কর্তব্য। তিনি ঘোষণা করলেন যে নিশ্চিতভাবে একটা বিচারের দিন আসবে যখন প্রত্যেককে তাদের দেহের প্রতি যা কিছু করা হয়েছে সে অনুযায়ী পুরস্কৃত করা হবে, যখন পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত হবে যে ধনসম্পত্তি, পদাধিকার, খেতাব মানুষকে পাপের পবিণাম থেকে উদ্ধার বা ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করাতে কত শক্তিহীন। তিনি দেখিয়ে দিলেন যে এই জীবনই ভবিষ্যৎ জীবনের প্রস্তুতির জন্য মানুষের সময়। সে বর্তমান সুযোগ—সুবিধা অবহেলা করলে এক অনন্ত ক্ষতির সম্মুখীন হবে; জন্য আর কোন নতুন অনুগ্রহ প্রদান করা হবে না। AABen 351.4

পৌল বিশেষভাবে ঈশ্বরের নিয়মের দাবীর অনেক ঊর্দ্ধে বাস করতেন। তিনি দেখালেন কিভাবে তা মানুষের নৈতিক প্রকৃতির রহস্যের গভীর পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে আর যা মানুষের দৃষ্টি ও জ্ঞানের থেকে রুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল তার ওপর আলোর বন্যা ছড়িয়ে দেয়। হয়ত হাত যা কিছু করে বা জিভ যা কিছু বলে— বাইরের জীবন যা কিছু প্রকাশ করে— তা মানুষের নৈতিক চরিত্রকে অসম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করে। নিয়ম তার চিন্তাগুলো, মনোভাবগুলো, ও উদ্দেশ্যগুলোকে অনুসন্ধান করে দেখে। মানুষের দৃষ্টি থেকে লুকিয়ে থাকা অন্ধকারময় আসক্তিগুলো,ঈর্ষা, ঘৃণা, লালসা,ও উচ্চাভিলাষ. অন্তরের নিভৃত কোণে গভীরভাবে ধ্যানকরা মন্দ কাজ, যা সুযোগের অভাবে কার্যকর করা সম্ভব হয় নি—সব ঈশ্বরের নিয়ম অপরাধ বলে গণ্য করে। AABen 352.1

পৌল তার শ্রোতাদের চিন্তাগুলোকে পাপের জন্য একটা মহাযজ্ঞের দিকে দৃষ্টি ফেরাতে চেষ্টা করেছিলেন। তিনি সেই সব যজ্ঞের দিকে নির্দ্দেশ করলেন যা অনাগত ভাল কিছুর ছায়া মাত্র, তারপরে তিনি সেই সব বিষয় যা তারা পতিত মানবের আশা ও জীবনের একমাত্র উৎস বলে নির্দ্দেশ করত সেইসব যাগযজ্ঞের বিপরীত প্রতীক, খ্রীষ্টকে উপস্থাপন করলেন। অতীতের ধার্মিক লোকেরা খ্রীষ্টের রক্তে বিশ্বাস করে মুক্তি পেয়েছিল। যখন তারা বলির পশুকে মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করতে দেখতো তখন তারা যুগ যুগ পরে আসা ঈশ্বরের মেষশাবকের দিকে চেয়ে থাকতো যিনি জগতের পাপভার তুলে নিয়ে তা দূর করবেন। AABen 352.2

ঈশ্বর ন্যায্যভাবে তার সমস্ত প্রাণীর কাছ থেকে ভারবাসা ও বাধ্যতা দাবী করেন। তিনি তাাঁর নিয়মের মধ্যে তাদের জন্য অধিকারের একটা সম্পূর্ণ মানদন্ড দিয়েছেন। কিন্তু অনেকে তাদের নির্মাণকর্তাকে ভুলে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের নিজেদের পথ বেছে নেয়। তারা স্বর্গ সমান উঁচু ও নিখিল বিশ্ব সমান বিস্তৃত প্রেমের বদলে শত্রুতা ফিরিয়ে দেয়। দুষ্ট লোকদের মানদন্ড রক্ষার জন্য ঈশ্বর যেমন তাঁর নিয়মের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নীচু করতে পারেন না; তেমন মানুষও তার নিজের শক্তিতে নিয়মের দাবী পুরণ করতে পারে না। একমাত্র খ্রীষ্টের ওপর বিশ্বাস দ্বারা পাপী পাপ থেকে ধৌত হতে পারে আর তার নির্মানকর্তার প্রতি বাধ্যতা প্রদর্শন করার শক্তি প্রাপ্ত হতে পারে। AABen 352.3

এই ভাবে বন্দি পৌল যিহূদী ও পরজাতিদের ওপর ঐশ্বরিক নিয়মের অধিকার দাবী করেন, ও অবজ্ঞাত নাসারতীয়কে জগতের ত্রাণকর্তা, যীশুকে, ঈশ্বরের পুত্ররূপে উপস্থাপন করেন। AABen 353.1

যিহূদী রাজকন্যা নির্লজ্জ্যভাবে লঙ্ঘন করা সেই নিয়মের পবিত্র চরিত্র ভাল ভাবে বুঝতে পেরেছিল, কিন্তু কালভেরীর মানুষটার প্রতি তার প্রতিকূল ধারণা জীবনদায়ী বাক্যের প্রতি তার অন্তর ইস্পাতকঠিন করে ফেলেছিল। কিন্তু ফিলিক্স ইতোপূর্বে সত্য শোনে নি আর ঈশ্বরের আত্মা তার অন্তরে চেতনা দিচ্ছিলেন, সে ভীষণভাবে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। বিবেক সজাগ হল,তার স্বর শোনা গেল, ফিলিক্স অনুভব করল যে পৌলের কথাগুলো সত্যি। তার স্মৃতি তার অপরাধপূর্ণ অতীতে চলে গেল। প্রথম জীবনের লাম্পট্য ও রক্তপাতের গোপন বিষযগুলো ও পরবর্তী বছরগুলোর কালো অধ্যায় ভীষণ পরিষ্কার ভাবে তার সামনে এসে হাজির হল। সে নিজেকে কামলালসা চরিতার্থ করতে উন্মুখ, নিষ্ঠুর, ও ছিনিয়ে নিতে বা আত্মসাৎ করতে ব্যগ্র ব্যক্তিরূপে দেখল। ইতোপূর্বে কখনো এই সত্য তার অন্তরে এতো নিবিড় ভাবে আসে নি। ইতোপূর্বে আর কখনো তার অন্তর আতঙ্কে এতো পূর্ণ হয় নি। তার অপরাধ জীবনের সব গোপন বিষয় ঈশ্বরের চোখের সামনে খোলা, আর তার সমস্ত কাজ অনুসারে অবশ্যই তার বিচার হবে এই চিন্তা তাকে ভীষণ আতঙ্কিত ও কম্পিত করে তুললো। AABen 353.2

কিন্তু তার এই চেতনাকে অনুশোচনার দিকে পরিচালিত না করে, সে এইসব অবাঞ্ছিত মানসিক চেতনাগুলোকে ঝেড়ে ফেলে দিতে মনস্ত করলো। পৌলের সঙ্গে আলোচনা কেটে ছোট করা হল। সে বললো “এখনকার মত যাও, উপযুক্ত সময় পাইলে আমি তোমাকে ডাকাইব।” AABen 353.3

ফিলিপীর কারারক্ষক ও ফিলিক্সের গন্তব্য পথের মধ্যে কত পার্থক্য! সদাপ্রভুর দাসগণকে বন্দি করে কারারক্ষকের কাছে আনা হয়েছিল, আর পৌলকে আনা হল ফিলিক্সের কাছে। এক ঐশ্বরিক শক্তি দ্বারা সুরক্ষিত হওয়া, দুঃখ—যন্ত্রনা ও অপমানের মধ্যেও তাদের প্রশংসাগীতি, প্রচন্ড ভ’মিকম্পে যখন পৃথিবী প্রকম্পিত হচ্ছিল তখন তাদের নির্ভয়তা, খ্রীষ্টের মত ক্ষমার মনোভাবের যে প্রমান তারা দিয়েছিলেন, তা কারারক্ষকের অন্তরে চেতনা প্রদান করেছিল, আর কম্পিত হয়ে সে তার পাপ স্বীকার করে ক্ষমা প্রাপ্ত হল। ফিলিক্স কম্পিত হয়েছিল কিন্তু অনুতপ্ত হয় নি। কারাবক্ষক আনন্দের সঙ্গে তার অন্তরে ও তার ঘরে ঈশ্বরের আত্মাকে স্বাগত জানিয়েছিল; ফিলিক্স ঐশ্বরিক বার্তাবাহককে চলে যেতে বলেছিল। একজন ঈশ্বরের সন্তান ও স্বর্গরাজ্যের অধিকারী হওয়া মনোনয়ন করলো; অন্যজন পাপের দাসদের সঙ্গে তার গুটির চাল দিল। AABen 353.4

পরবর্তী দুবছর পর্যন্ত পৌলের বিরুদ্ধে কোন আভিযোগ উত্থাপন করা না হলেও তিনি বন্দি থাকলেন। ফিলিক্স কয়েক বার তার সঙ্গে দেখা করতে আসে আর মনোযোগ দিয়ে তার কথাগুলো শোনে। তার এই আপাতদৃষ্টিতে বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবের পেছনে লাভের আশাই আসল উদ্দেশ্য ছিল, আর সে আভাস দিয়েছিল যে হয়তো পৌল অনেক অর্থের বিনিময়ে তার মুক্তি আদায় করবে। প্রেরিত, অবশ্য এত ভদ্র প্রকৃতির ছিলেন যে তিনি ঘুষের বিনিময়ে নিজেকে মুক্ত করতে চান নি। তিনি কোন অপরাধে দোষী ছিলেন না, আর তিনি মুক্তি লাভ করার জন্য কোন ভুল কাজে ঝুঁকে পড়বেন না। তা ছাড়া, তাকে এই মুক্তিপণ দিতে বলা হলেও তিনি তা পারতেন না কারণ তিনি এত গরীব ছিলেন যে তার পক্ষে অত অর্থ দেওয়া সম্ভব ছিল না। আর তিনি নিজের পক্ষ থেকে তার শিষ্যদের কাছে সহানুভুতি ও উদারতার জন্য আবেদনও করবেন না। AABen 354.1

তিনি অনুভব করলেন যে তিনি ঈশ্বরের হাতে আছেন , আর তিনি তার সম্পর্কে ঐশ্বরিক উদ্দেশ্যকে বাধাগ্রস্ত করবেন না। অবশেষে যিহূদীদের বিরূদ্ধে অনেক অন্যায় করার জন্য ফিলিক্সকে রোমে ডেকে পাঠানো হল। এই শমনের উত্তরে সে “যিহূদীদের প্রীতির পাত্র হইবার ইচ্ছা করিয়া” পৌলকে বন্দি রেখে গেল। কিন্তু যিহূদীদের আস্থা ফিরে পাবার প্রচেষ্টায় ফিলিক্স কৃতকার্য হতে পারে নি। তাকে অপমানের সঙ্গে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়, আর পর্কীয় ফীষ্টকে তার পদে মনোনীত করা হয়, আর কৈসরিয়ায় প্রধান কেন্দ্র করা হয়। AABen 354.2

পৌল যখন ফিলিক্সের সঙ্গে ধার্মিকতা, মিতাচার, ও ভাবী বিচারের প্রসঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন স্বর্গ থেকে একটা আলোর রশ্মি তার ওপর আলোকিত করতে অনুমোদন করা হয়। তার সব পাপ দেখা ও পরিত্যাগ করার তা তার জন্য স্বর্গ—প্রেরিত সুযোগ ছিল। কিন্তু সে ঈশ্বরের বার্তাবাহককে বললো “এখনকার মত যাও, উপযুক্ত সময় পাইলে আমি তোমাকে ডাকাইব।” সে অবজ্ঞাভরে তার শেষ অনুগ্রহের দান উপেক্ষা করল। সে আর কখনো ঈশ্বরের কাছ থেকে আর একটা আহ্বান পাবে না। AABen 354.3