প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ

1/59

প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ

ভূমিকা

প্রাচীনকাল থেকেই নতুন নিয়মের পঞ্চম পুস্তকটি প্রেরিতদের কার্যবিবরণী নামে পরিচিত হয়ে এসেছে; কিন্তু শিরোনামটি পুস্তকের ভেতরে কোথাও দেখা যায় না। অন্যতম প্রাচীন পান্ডলিপিগুলো কোডেক্স সিনাইটিকাস— এ পুস্তকটির শিরোনাম দেওয়া হয়েছে স্রেফ কার্য বিবরণী, কিন্তু তাতে প্রেরিতদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তবে এর কারণও রয়েছে। প্রেরিতদের কার্যবিবরণী পুপ্তকটি রচনা করার কারণ নেহায়েত যীশুর বারা জন শিষ্যের পরিচর্যা কাজের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লিপিবদ্ধ করাই নয়। পুপ্তকটি রচনার পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে এর প্রধান চার চরিত্র, অর্থাৎ পিতর, যাকোব, যোহন ও পৌলের কর্ময় জীবনের প্রধান ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করা। AABen 3.1

প্রেরিতদের কার্যবিবরণী পুন্তকটি রচনা করেছেন “প্রিয় চিকিৎসক” লূক, অ—যিহূদীদের মধ্য থেকে ধর্মান্তরিত একজন বিশ্বাসী, যিনি যিহুদী ও আযিহূদী নির্বিশেষে সকলের জন্য পুস্তকটি রচনা করেছেন। পুস্তকটতে তিন দশকের সামান্য বেশি সময়কালের ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনা করা হয়েছে এবং তথাপি সর্বযুগের মন্ডলীর জন্য তা গুরুত্বপূর্ণ সব শিক্ষা বহন করছে। প্রেরিতদের কার্যবিবরণী পুস্তকে ঈশ্বর পরিষ্কারভাবে নির্দেশ করেছেন যে, পঞ্চাশত্তমীর দিনে যে পবিত্র আত্মা ক্ষমতা ও কতৃর্ত নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন এবং যিনি সুসমাচারের বাণীকে আগুনের শিখায় পরিণত করেছিলেন, সেই পবিত্র আত্মার উপস্থিতির অভিজ্ঞভা আজকের দিনের খ্রীষ্টিয়ানরা লাভ করবেন। পিতর ও পৌল, যোহন ও যাকোব এবং অন্যান্যদের মধ্য দিয়ে পবিত্র আত্মা যে সকল কাজ করেছিলেন সেগুলো আধুনিককালের সকল শিষ্যদের মধ্য দিয়ে পুনরাবৃত্তি ঘটবে। AABen 3.2

প্রেরিতদের কার্যবিবরণী পুস্তকটি আকশ্মিকভাবে শেষ হয়ে যাওয়াটা দুর্ঘটনাবশত ঘটেনি। বরং এর মধ্য দিয়ে বোঝানো হয়েছে পুস্তকটির রোমাঞ্চকর ঘটনাপ্রবাহ এখনো শেষ হয়নি এবং পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে ঈশ্বর এখনো খ্রীষ্টিয় বিধান দিয়ে চলেছেন। মানব জাভির প্রত্যেকটি প্রজন্যই প্রেরিতদের কার্যবিবরণী পু্তকে একের পর এক সৌন্দর্য ও কতৃর্তে পূর্ণ ঘটনাবলী বর্ণিত অধ্যায় সংযুক্ত করে চলেছে। এই অবিস্মরণীয় পুস্তকটিতে যেসমস্ত কার্ষের বিবরণ রয়েছে তা প্রকৃত অর্থেই পবিত্র আত্মার কাজ, কারণ প্রেরিতগণের পরিচর্যার সময়ে পবিত্র আত্মা খ্রীষ্টীয় নেতৃবর্গের পরামর্শক ও সহায়ক হিসেবে আবির্ভূত হতেন। পঞ্চাশত্তমীর সময়ে প্রার্থায় রত প্রেরিতগণ পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়েছিলেন এবং ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব নিয়ে সুসমাচার প্রচার করেছিলেন। যে সাতজন ব্যক্তিকে ডিকন হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল তাঁরা “আত্মায় ও বিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ” ছিলেন। প্রেরিত ৬:৩। পবিতর আত্মাই পরিচালনা দান করেছিলেন শৌলের অভিষেক গ্রহণে (৯১৭); মন্ডলীর সহভাগিতায় অ—যিহূদীদেরকে স্বীকৃতি দানে (১০—৪৪—৪৭); বার্ণবা ও শৌলের পৃথকভাবে পরিচর্যা কাজ শুরু করায় (১৩:২—৪) জেরুশালেমের সভায় (১৫:২৮); এবং পৌঁলের পরিচর্যা কাজের যাত্রায় (১৬:৬, ৭)। আবার মন্ডল যখন রোমীয় ও যিহুদী অত্যাচারীদের হাতে নিদারুন যন্ত্রণা ভোগ করছিল, সে সময় পবিত্র আত্মাই বিশবাসীদেরকে স্থির থাকতে ও ভ্রান্ত না হতে সামর্থ্য যুগিয়েছিলেন। AABen 3.3

প্রেরিতদের কার্যবিবরণী পুস্তকটি ঈলেন জি. হায়াইট এর লেখা শেষ বইগুলোর মধ্যে একটি। তার মৃত্যুর মাত্র কয়েক বছর আগে বইটি প্রকাশিত হয়। এই বইটি তার বহুধা ফলদায়ী লেখনী থেকে আসা অন্যতম চিত্তাকর্ষক একটি সৃষ্টি। পাঠকমাত্র এই বইটি থেকে খুঁজে পাবে খ্রীষ্টিয় সাক্ষ্যর জ্যোতি। বইটির বাণী কালজয়ী এবং লেখিকার প্রয়াসে বইটি এতটাই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে যে, পঞ্চাশত্তমীতে অবতীর্ণ হওয়া পবিত্র আত্মার ক্ষমতার সাক্ষ্য বিংশ শতাব্দীতে এসেও তা সম্যকভাবে প্রদান করতে সক্ষম হচ্ছে। পবিত্র আত্মার ক্ষমতার যে নিদর্শন সুসমাচারের কাজ শুরু হওয়ার প্রাক্কালে দেখা গিয়েছিল, সমাপ্ত হওয়ার কালে তার আরও অনুপম প্রকাশ ঘটবে। AABen 4.1

প্রাথমিক মন্ডলীর গৌরবময় দৃশ্যপটের এই পুনচিত্রায়নে পাঠকগণ যেন অংশ নিতে পারেন একং একই সাথে তারা যেন আত্মার শত্রুর সূক্ষ চাতুরি ও ফাঁদ থেকে নিজেদেরকে সুরক্ষিতত রাখতে পারেন, এটাই আমাদের প্রার্থনা ও একান্ত কামনা। AABen 4.2

প্রকাশকবৃন্দ