সুষম শিক্ষা
জীবনের শৃঙ্খলার মােকাবিলা
ঘর এবং বিদ্যালয়ের শাসন ছাড়াও আমাদের প্রত্যেকেই জীবনের কঠোর শাসনের সম্মুখীন হতে হবে। এই বুদ্ধিমত্তার মােকাবিলা করা একটি শিক্ষা যা প্রত্যেক শিশু, প্রত্যেক যুবক-যুবতির কাছে পরিষ্কার হওয়া উচিৎ। একথা সত্য যে ঈশ্বর আমাদের প্রেম করেন, আমাদের সুখ-শান্তির জন্য কাজ করছেন, এবং যদি তার ব্যবস্থা সব সময় পালিত হত, তবে আমরা কখনাে দুঃখকষ্ট কি তা জানতাম না; এবং কম সত্য নয় যে, পাপের ফলে এই বিশ্বে, , দুঃখকষ্ট, সংকট, বােঝা ইত্যাদি প্রত্যেকের জীবনে দেখা যায় । আমরা শিশু ও যুবক-যুবতিদের সংকট, এবং বােঝাগুলাে সাহসীকতার সঙ্গে। মােকাবিলা করতে শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে সারা জীবনের জন্য মঙ্গল করতে পারি। আমরা যখন তাদের প্রতি সহমর্মীতা দেখাব, তা যেন আমাদের আত্মতুষ্টির জন্য না করি। তাদের যা প্রয়ােজন তা এমন কিছু, যা তাদের দুর্বল করার পরিবর্তে কাজে প্রেরণা যােগাবে এবং শক্তিশালী করবে। EdBen 275.1
তাদের শিক্ষা দিতে হবে যে, এই বিশ্ব একটি কুজকাওয়াজের প্রাঙ্গন নয়, কিন্তু এটি একটি যুদ্ধ ক্ষেত্র। সকলকে চরম দুঃখকষ্ট সহ্য করার এবং উত্তম সৈনিক হবার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। তাদের বলবান হতে হবে এবং অনেক মানুষের মত তাদের পরিত্যাগ করা হবে। তাদেরকে শিক্ষা দিতে হবে যে, প্রকৃত চরিত্র স্বেচ্ছায় বােঝা বহনের আগ্রহ, কঠিন স্থান গ্রহণ, করণীয় কাজ সম্পন্ন করার মাধ্যমে লাভ হয়, যদিও এ সবে খ্যাতি অথবা পুরস্কার লাভ হয় না। EdBen 275.2
. সংকট এবং পরীক্ষা এড়িয়ে যাবার চেষ্টাই প্রকৃত উপায় নয়, কিন্তু তা রূপান্তরীত করাই মূল বিষয়। এটি যেমন অতীতের তেমনি বর্তমান শাসনের ক্ষেত্রেও প্রযােজ্য। শিশুর প্রাথমিক জীবনের প্রশিক্ষণ অবহেলা, এবং মন্দ ইচ্ছাগুলাে একচেটিয়াভাবে শক্তিশালী করার ফলে, তার পরবর্তী জীবনের শিক্ষার্জন আরও কঠিন করে তােলে এবং তখন শাসন প্রায়ই বেদনাদায়ক বলে মনে হয়। যদিও তা প্রকৃতিগত ভাবে বেদনাদায়ক বলে মনে হয়, কিন্তু পরবর্তীতে ঐ বেদনা দূর হয় এবং এক অপার আনন্দ ঐ স্থান গ্রহণ করে । EdBen 275.3
শিশু এবং যুবক-যুবতিদের শিক্ষা দিতে হবে যে, প্রতিটি ভুল, প্রতিটি সমস্যা বিজিত হয়, উত্তম এবং উচ্চতর বিষয়গুলাের প্রতি ক্রমােন্নতির একটি উপায়স্বরূপ হয়। এই প্রকার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই সবাই জীবনকে স্বার্থক ও মূল্যবান করে তুলেছে। EdBen 276.1
“যে সকল মহা মানবগণ উচ্চস্থান সমূহে পদার্পণ করিয়াছেন
তাহারা হঠাৎ সেখানে উড়িয়া যান নাই
কিন্তু তাহারা, তাহাদের বন্ধুগণ যখন দ্রিামগ্ন ছিল,
তখন তাহারা কঠোর পরিশ্রম করিয়াছে।”
“চরণের নিচে অবস্থিত বস্তুর উপর ভর করিয়াই
আমরা উপরে উঠি;
আমরা উত্তম বিষয়ের উপরে প্রভুত্ব অর্জন করিয়া
তাহা লাভ করিয়াছি;
অহংকার দূর করিয়াছি এবং লালসা হত্যা করিয়াছি,
এবং যাহা সাময়িক ভাবে দুঃসাধ্য তাহা পরাভূতহ করিয়াছি।”
“দৈন্দিন ঘটনাবলির সাধারণ বিষয়গুলি,
যাহা আইসে এবং চলিয়া যায়,
সেইগুলি আমাদের আরাম আয়েস এবং নিরানন্দ,
জীবনের বাঁক সমূহ যাহা বাহিয়া আমরা উপরে উঠিয়াছি।”
EdBen 276.2
“আমরা ত দৃশ্য বস্তু লক্ষ না করিয়া অদৃশ্য বস্তু লক্ষ করিতেছি, কারণ যাহা যাহা দৃশ্য, তাহা ক্ষণকাল স্থায়ী, কিন্তু যাহা যাহা অদৃশ্য, তাহা অনন্ত কালস্থায়ী।” ২ করিন্থীয় ৪:১৮। স্বার্থপর বাসনা ও অভিলাস অস্বীকারের মাধ্যমে আমরা যে বিনিময় করি, তা মূল্যবান ও স্থায়ী কিছুর অর্থহীন ও ক্ষণস্থায়ী কিছুর সঙ্গে বিনিময় করা। EdBen 276.3
শিক্ষার “ভালাে কিছু, নীতিবাক্য প্রকৃত জীবন যাপনের নিয়ম। খ্রীষ্ট আমাদের যা কিছু পরিত্যাগ করতে বলেন, তার পরিবর্তে আমাদের ভালাে কিছু দান করেন। যুবক-যুবতিরা প্রায়ই ইন্দ্রিয়গােচর বস্তু, অভীষ্ট বস্তু লাভ, এবং সুখভােগ ভালােবাসে যা হয়ত মন্দ বলে মনে হয় না, কিন্তু তা সর্বোচ্চ মূল্যবান বস্তু নয়। ঐ সব জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ লক্ষ্য হতে দৃষ্টি দূরে নিয়ে যায়। বিধিবহির্ভূত মাত্রা অথবা যুবক-যুবতিরা, যা নির্ধারণ করে আছে তা পরিত্যাগ করতে সরাসরি ঘােষণা দেয় না। তাদের এমন কিছুর দিকে পরিচালিত করা হােক যা আড়ম্বর, উচ্চাক অথবা আত্ম-পরিতৃপ্তি অপেক্ষা আরও ভালাে। তারা প্রকৃত সৌন্দর্য, উচচতর নীতিমালা, এবং আদর্শ জীবনের সংস্পর্শে আসুক। তারা এমন এক ব্যক্তির দিকে দৃষ্টিপাত করুক যিনি “সর্বোত্র ভাবে মনােহর।” একবার যখন তাঁর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা হয় তখন জীবন এর কেন্দ্রবিন্দু খুঁজে পায়। এস্থানে যুবক-যুবতিদের উদ্যম, উদার উৎসর্জন, প্রবল আবেগপূর্ণ ব্যগ্রতা তার প্রকৃত উদ্দেশ্য খুঁজে পায়। কর্তব্য এবং ত্যাগস্বীকার একটা আনন্দের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় । খ্রীষ্টের প্রতি সম্মান, তাঁর ন্যায় হওয়া, তাঁর জন্য কাজ করা জীবনের সর্বোচ্চ আশা এবং এর সর্বশ্রেষ্ঠ আনন্দ । EdBen 276.4
“কারণ খ্রীষ্টের প্রেম আমাদিগকে বশে রাখিয়া চালাইতেছে।”
২ করিন্থীয় ৫:১৪।
EdBen 277.1