সুষম শিক্ষা

64/67

৩৪ - নিয়মানুবর্তিতা

প্রশিক্ষণ দান করুন, মৃদু ভৎসনা করুন, উৎসাহ দান করুন, দীর্ঘ সহিষ্ণু হউন।

একটি শিশুকে সর্বপ্রথমে যে শিক্ষা দিতে হবে, তা হল বাধ্যতা বা আজ্ঞাবহতা। শিশুর বাদানুবাদ, যুক্তিতর্ক, বিচার করা, ন্যায়সঙ্গতভাবে চিন্তা করার বয়স বাড়ার আগেই তাকে বাধ্যতা শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে। কোমল, স্থির প্রচেষ্টার দ্বারা অভ্যাস গঠিত হতে পারে। তাহলে একটি মহৎ উপাধি অর্জনের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে হয়তাে ঐ সমস্ত প্রতিরােধ করা যেতে পারে যা ইচছা এবং ক্ষমতার মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে, যা বাবা-মা ও শিক্ষকশিক্ষিকাদের মধ্যকার বিরােধ ও তিক্ততার সৃষ্টি করে, এবং প্রায়ই তা পরবর্তীতে মানব ও স্বর্গীয় উভয় প্রকার সকল ক্ষমতার প্রতিরােধী হয়ে ওঠে। EdBen 267.1

শৃঙ্খলার উদ্দেশ্য আত্ম-শাসনের জন্য প্রশিক্ষণ দান । তাকে আত্ম-বিশ্বাস এবং আত্ম-নিয়ন্ত্রণ শিক্ষা দিতে হবে। সুতরাং যখন থেকে সে কিছু কিছু বুঝতে সমর্থ হয়, তখন থেকেই তার যুক্তি ও বিচার বুদ্ধি বাধ্যতার পাশে তালিকাভুক্ত করতে হবে। তার সঙ্গে এমন আচরণ করতে হবে যেন সে সঙ্গত এবং যুক্তিসঙ্গত ভাব প্রকাশ করে। তাকে সাহায্য করুন। যেন সে দেখতে পায় যে সব কিছু নিয়মের অধীন, এবং অবাধ্যতা পরিশেষে ধ্বংস এবং দুঃখভােগ নিয়ে আসে। যখন ঈশ্বর বলেন, “তুমি করিও না,” তখন তিনি প্রেমে আমাদেরকে অবাধ্যতার পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করিয়ে দেন, যেন তিনি আমাদেরকে ক্ষতি এবং বিনাশ থেকে রক্ষা করতে পারেন। EdBen 267.2

শিশুকে সাহায্য করুন যেন সে দেখতে পারে যে, বাবা-মা ও শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ ঈশ্বরের প্রতিনিধি এবং যেন তাঁর সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করে, তাদের বাড়িতে এবং বিদ্যালয়ের নিয়মকানুনগুলােও তাঁর। যেমন শিশু বাবা-মা ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি বাধ্যতা দেখায়, একইভাবে যেন তারা ঈশ্বরেরও আজ্ঞাবহ হতে পারে। EdBen 267.3

অনাবশ্যক নিয়ন্ত্রণের বাধা সৃষ্টি না করে শিশুর পরিচালনাই হবে বাবা-মা ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কর্তব্য। যেমন প্রয়ােজনের চেয়ে কম, একইভাবে অতিরিক্ত কাজ পরিচালনাও মন্দ। একটি শিশুর “ইচ্ছা ভঙ্গ করার প্রচেষ্টা একটি মারাত্মক ভুল কাজ। মন ও চিন্তারাশি বিভিন্নভাবে সংগঠিত; এবং যদি বল প্রয়ােগ দ্বারা বাহ্যিক বশ্যতাস্বীকার আদায় করা হয়। তাহলে অনেক ছেলে-মেয়ে বিদ্রোহী হয়ে উঠে। এমন কি বাবা অথবা মা সন্তানকে যদি সব সময় বশে রাখতে চান, এতেও সন্তানের কম-বেশি ক্ষতি হবেই। মানব-সত্ত্বা যিনি বহু বৎসরের জ্ঞানে অভিজ্ঞ তাদের শাসন বােবা বা অবুঝ পশুদের হতে ভিন্নতর হবে। পশু কেবল তার প্রভুর বশীভূত হয়, যা তাকে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র অপেক্ষা বেশি কিছু করে গড়ে তােলে। পশুর মন, বিচার, এবং ইচ্ছাই প্রভু। মন, ইচ্ছা, বিবেক, অন্যের বশীভূত। ঈশ্বরের এমন উদ্দেশ্য নয় যে, মনের ওপরে কেউ কর্তৃত্ব করুক। যারা ব্যক্তি স্বতন্ত্র দুর্বল করে অথবা ধ্বংস করে তারা এর মন্দ পরিণতির জন্য দায়ী হবে। কর্তৃত্বের অধীনে শিশুরা সুবিন্যস্ত সৈন্যবাহিনীর মত হতে পারে; কিন্তু যখন নিয়ন্ত্রণ থেকে যায়, তখন দেখা যাবে যে, চরিত্রে শক্তি এবং দৃঢ়তার ঘাটতি রয়ে গেছে। যে যুবক-যুবতি নিজেকে শাসন করতে শিক্ষা করে নি, সে বাবা-মা অথবা শিক্ষক-শিক্ষিকার অবশ্য করণীয় কাজ অথবা ধরাবাঁধা আত্ম-সংযম ছাড়া আর কিছুই বােঝে না। এটা অপসারিত হলে, সে জানে না কিভাবে তার স্বাধীনতা কাজে প্রয়ােগ করবে এবং দেখা যাবে প্রায়ই সে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। EdBen 268.1

কারাে কারাে ক্ষেত্রে ইচ্ছাকে পূর্ণ করা অন্যান্য ছাত্রদের চেয়ে। কঠিন বলে মনে হয়, তখন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে তার অবশ্যকরণীয় কাজকে যতদূর সম্ভব সহজতর করতে হবে। ইচ্ছাকে পরিচালিত এবং গঠন করতে হবে, কিন্তু উপেক্ষা করা অথবা ধ্বংস করা যাবে না। ইচ্ছা শক্তিকে রক্ষা করুন; কেননা জীবন যুদ্ধে এটি কাজে ব্যবহৃত হবে । EdBen 268.2

প্রত্যেক শিশুকে প্রকৃত ইচ্ছা শক্তি কি তা বুঝতে হবে। তাকে পরিচালনা দান করতে হবে যেন সে দেখতে পারে যে, এ পরিচালনার মধ্যে কত মহান দায়িত্ব অন্তর্নিহীত রয়েছে। ইহা মানব প্রকৃতির মধ্যস্থিত শক্তি যা সিদ্ধান্ত গ্রহণের অথবা সঠিক মনােনয়ন শক্তিকে শাসন করছে । জীবনের প্রতিটি অভিজ্ঞতায়, আমাদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য এই, “তােমরা যাহার সেবা করিবে তাহাকে অদ্যই মনােনীত কর।” যিহােশূয় ২৪:১৫। প্রত্যেকেই তাকে মনােনয়ন করতে তার ইচ্ছা ঈশ্বরের ইচ্ছার পাশে স্থাপন করতে পারে এবং সে নিজেকে ঈশ্বরের প্রতিনীধিগণের সঙ্গে সংযুক্ত রেখে এমন স্থানে স্থির থাকতে পারে যেখানে কিছুই তাকে অন্যায় কাজ করতে বল প্রয়ােগ করতে পারবে না। প্রত্যেক যুবক-যুবতি, প্রত্যেক শিশুর মধ্যে এমন শক্তি আছে, যা ঈশ্বরের সাহায্যে ন্যায়পরায়ণতার একটি চরিত্র গঠন এবং কার্যকর জীবন যাপনে সাহায্য করে। EdBen 268.3

বাবা-মা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা যিনি এই নির্দেশনার মাধ্যমে শিশুকে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ শিক্ষা দেন তিনি বেশি কার্যকর এবং স্থায়িভাবে কৃতকার্য হবেন। ভাসা ভাসা পর্যবেক্ষকের কাছে তার কাজ সর্বোত্তম লাভজনক না-ও হতে পারে; অথবা যে ব্যক্তি অসীম ক্ষমতায় শিশুর মন ও ইচ্ছা ধরে রাখেন তার মত উচ্চ মূল্যায়ন করা না-ও হতে পারে; কিন্তু অনেক বছর পরে সুপ্রশিক্ষণের ফলাফল দেখা যাবে। EdBen 269.1

জ্ঞানী শিক্ষাদাতা, তার ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে আচরণে উৎসাহ, বিশ্বাস, এবং সম্মান বােধ শক্তিশালী করবে । শিশু এবং যুবক-যুবতি নির্ভরশীলতার মাধ্যমে উপকার প্রাপ্ত হয়। এমন কি ছােট শিশুদের অনেকের উচ্চ সম্মান বােধ রয়েছে; সকলের বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা ভাজন হতে চায়, এবং এটি তাদের অধিকার। তাদের এমন শিক্ষা দিবে না যাতে তারা মনে করে যে, তারা অগােচরে ইচ্ছামত বাইরে যেতে এবং ভিতরে আসতে পারে না। সে যে মন্দতা প্রতিহত করতে চায়ে, তা সন্দেহ নীতিভ্রষ্ট করে দেয়। EdBen 269.2

অবিরত তাদের মন্দতার দিকে লক্ষ রাখার পরিবর্তে, শিক্ষকগণ, যারা তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, তারা তাদের চঞ্চল মনের কাজের প্রতি লক্ষ রাখবেন, এবং কাজের ওপর একটি প্রভাব রাখবেন যা মন্দের বিরুদ্ধে কাজ করবে। যুবক-যুবতিদের এমন ভাবে পরিচালিত করুন যেন তারা উপলব্ধি করতে পারে যে তারা বিশ্বাস ভাজন, এবং খুব অল্প সংখ্যক রয়েছে যারা নিজেদের প্রমাণ করবে যে, তারা বিশ্বাসযােগ্য নয়। EdBen 269.3

একই ভাবে, তাদের আদেশ না করে বরং তাদের অনুরােধ করতে হবে; যাকে এভাবে বলা হয়, এবং তার যথার্থ নীতিমালার প্রতি বিশ্বস্ততা প্রমাণ করার সুযােগ রয়েছে। তাঁর আজ্ঞাবহতা বাধ্যবাধকতা নয় বরং মনােনয়নের ফল। EdBen 270.1

প্রশাসনের নিয়মকানুন বিদ্যালয় কক্ষ পরিচালনা করে, এবং সম্ভবত, স্কুলের বিষয়ে প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের ক্ষেত্রে প্রতিটি নীতি ছাত্রছাত্রীর সামনে এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে এর সঠিক প্রয়ােগের প্রতি তার দৃঢ় আস্থা থাকে। এভাবে সে উপলব্ধি করতে পারবে যে, তাদের একটি দায়িত্ব রয়েছে, যেন তারা দেখতে পায়, সে নিজে যে নিয়ম কানুনগুলাে গঠনে সাহায্য করছে তা পালিত হয়েছে । EdBen 270.2

নিয়ম-কানুন হবে অল্প এবং সুবিবেচিত এবং একটি নিয়ম প্রণয়ন করা হলে তা বলবৎ রাখতে হবে। যা পরিবর্তন করা অসম্ভব বলে পাওয়া যাবে, মন তা চিহ্নিত করতে শেখে এবং আপনা আপনি একে মেনে নিতে শেখে, কিন্তু বাসনা চরিতার্থের আকাঙ্খ আশা এবং অনিশ্চয়তা নিয়ে আসতে পারে যার ফলাফল হল অস্থিরতা, বিরক্তি, খিটখিটে মনােভাব, এবং অবাধ্যতা। EdBen 270.3

এটি পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, ঈশ্বরের সরকার এবং শাসনতন্ত্র মনের সঙ্গে আপােষ করতে জানে না। বাড়িতে এবং বিদ্যালয়ে অবাধ্যতা বর্দাস্ত করা যাবে না। কোনাে অভিভাবক অথবা শিক্ষক, যাদের মঙ্গলের জন্য একটি হৃদয় রয়েছে, তিনি গােড়া আত্ম-ইচ্ছার সঙ্গে আপোেষ করবেন না যা ক্ষমতা নষ্ট করে, অথবা এড়ানাের কৌশল অবলম্বন করবেন। EdBen 270.4

যেন আজ্ঞাবহতা এড়িয়ে চলতে পারে। কোমলতাপূর্ণ মনােভাব যা ভুল কাজের ক্ষেত্রে দ্বিমুখি আচরণ করে, ঘুষের মাধ্যমে পরের ইচ্ছাপূরণে সম্মতি লাভের চেষ্টা করে এবং অবশেষে আবশ্যকীয় জিনিষের পরিবর্তে কিছু প্রতিকল্প গ্রহণ করে—তা কোনাে প্রেম দেখানাে নয়। EdBen 270.5

“অজ্ঞানেরা দোষকে উপহাস করে।” হিতােপদেশ ১৪:৯। পাপকে সামান্য জ্ঞান করার ক্ষেত্রে আমাদের সাবধান হতে হবে। অন্যায়কারীর ওপরে তার ক্ষমতা অত্যন্ত ভয়াবহ। “দুষ্ট নিজ অপরাধ সমূহেই ধরা পড়ে, সে নিজ পাপ পাশে বদ্ধ হয়।” হিতােপদেশ ৫:২২। শিশু অথবা যুবক-যুবতিকে এই মন্দ অভ্যাসের দাসত্বে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ হতে অনুমতি দেয়া হলে তার প্রতি মারাত্মক অন্যায় করা হয়। EdBen 270.6

যুবকগণ জন্মগত ভাবে স্বাধীনতা প্রিয়; তারা স্বাধীনতা চায়; এবং তাদের বুঝতে হবে যে, এ সব অপরিমেয় আশীর্বাদ কেবল ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতি আজ্ঞাবহতায় উপভােগ করতে হবে। এই ব্যবস্থা প্রকৃত স্বাধীনতার সংরক্ষক। এটি ঐ সব বিষয় দেখিয়ে দেয় এবং নিষেধ করে যা পদমর্যাদা হাস করে এবং দাসত্বে বন্দী করে, এবং এভাবে বাধ্যতার প্রতি এটি মন্দতার শক্তি হতে বেড়াজাল হিসেবে কাজ করে। EdBen 271.1

গীতরচক বলেন, “আমি প্রশস্ত স্থানে যাতায়াত করিব কেননা আমি তােমার নির্দেশ সকলের অন্বেষণ করিয়াছি।” “তােমার সাক্ষ্যকলাপ আমার হর্ষজনক, সেগুলি আমার মন্ত্রণাদায়ক সুহৃৎ।” গীতসংহিতা ১১৯:৪৫; ২৪। EdBen 271.2

মন্দতার সংশােধনে আমাদের প্রচেষ্টায়, আমাদেরকে দোষ খুঁজে বের করার জন্য এবং নিন্দার ক্ষেত্রে একটি প্রবণতার বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। অবিরত নিন্দা ও তিরস্কার হতবুদ্ধি করে তােলে, কিন্তু পুনর্গঠন করে না। অনেকের মনে, যাদের চমৎকার সংবেদনশীলতা রয়েছে, একটি সমবেদনাহীন সমলােচনা একটি ধ্বংসাত্মক প্রচেষ্টা। ফুল প্রচণ্ড বায়ুর মধ্যেও বিছিয়ে যায় না। EdBen 271.3

যে শিশুকে একটি বিশেষ ভুলের জন্য প্রায়ই তিরস্কার করা হয়, সেই ভুলটি তার কাছে একটি অদ্ভুত আচরণ বলে মনে হয়, যার বিরুদ্ধে অনর্থকই সংগ্রাম করা হয়। এভাবে নিরুৎসাহ এবং অসহায় অবস্থার সৃষ্টি হয়, যা প্রায়ই একটি হতাশার ভাব ধারণ করে। ভলনার প্রকৃত ফল লাভ হয় তখনই যখন কেবল অন্যায়কারী নিজেই তার ভুল দেখতে পায় এবং তখন তার মধ্যে সংশােধনের ইচ্ছা জেগে ওঠে। যখন এটি সম্পন্ন হয়, তখন তাকে ক্ষমা এবং শক্তির উৎসের পথ দেখিয়ে দিন। তার আত্মসম্মান রক্ষার চেষ্টা করুন, এবং উৎসাহ ও প্রত্যাশার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করুন। EdBen 271.4

মানুষের উপর যে কর্মদায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তার মধ্যে এটি চমক্কার এবং খুব কঠিনও বটে। এতে অতিশয় সুদক্ষ কৌশল, সংবেদনশীলতা, মানব প্রকৃতির একটি জ্ঞান, এবং স্বর্গজাত একটি বিশ্বাস এবং ধৈর্য, কাজে ইচ্ছা এবং সতর্কতা এবং প্রতীক্ষা রয়েছে। এ কাজের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই তত হতে পারে না। EdBen 271.5

যারা অন্যকে বশে আনতে চায়, সর্ব প্রথম তাদের নিজেদের বশে আনতে হবে। নতুবা শিশু অথবা যুবক-যুবতির প্রতি উত্তেজিত আচরণ কেবল তার মধ্যে অপমান বােধ জাগিয়ে তুলবে। যখন একজন বাবা। অথবা শিক্ষক অধৈর্য হয়ে পড়েন, যখন অজ্ঞানতার বাক্য উচ্চারণের বিপদ দেখা দেয় তখন তাকে নীরব থাকতে হবে। নীরবতায় একটি আশ্চর্য শক্তি রয়েছে। EdBen 272.1

শিক্ষক-শিক্ষিকাকে অবশ্যই স্বেচ্ছাচারী আচরণ এবং অদম্য ও কঠিনীভূত হৃদয়ের মােকাবিলা করতে হবে। কিন্তু তাদের সঙ্গে আচরণে তিনি কখনাে ভুলে যাবেন না যে, তিনি নিজেও একদিন একজন শিশু ছিলেন, এবং তারও শাসনের আবশ্যক ছিল। এমনকি এখনও, তার বাড়তি বয়সে, শিক্ষা, এবং অভিজ্ঞতা অর্জনে, তিনি প্রায়ই ভুল করে। থাকেন, এবং তারও অনুগ্রহ ও ধৈর্যের আবশ্যক রয়েছে। যুবক-যুবতিদের প্রশিক্ষণে তাকে বিবেচনা করতে হবে যে, তিনি তাদের নিয়ে কাজ করবেন যাদের তারই মত একইভাবে মন্দ কিছু করার প্রবণতা রয়েছে। তাদের প্রায়ই সব কিছুই শিখতে হবে এবং কারাে কারাে পক্ষে শিক্ষা অর্জন করা অন্যদের চেয়েও কঠিন হয়ে পড়ে। দুর্বল শিশুর ক্ষেত্রে তাকে ধৈর্য সহকারে সবই বহন করতে হবে, তার মূর্খতার জন্য তাকে তিরষ্কার না করে, বরং তাকে উৎসাহিত করার প্রতিটি সুযােগ নিতে হবে। মর্মান্তিক ভাবে অনুভবনশীল, বিগড়িয়ে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে তাকে কোমল ব্যবহার করতে হবে। তার নিজের ক্রটি বােধ তাকে অবিরত, সমস্যাজর্জরীতদের প্রতি সহমর্মীতা এবং ধৈর্য দেখাতে সাহায্য করবে। EdBen 272.2

ত্রাণকর্তার নিয়ম- “তােমরা যেরূপ ইচ্ছা কর যে, লােকে। তােমাদের প্রতি করে, তােমরাও তাহাদের প্রতি সেইরূপ করিও।” (সূক ৬:৩১)—সবার নিয়ম, যারা শিশু এবং যুবক যুবতিদের প্রশিক্ষণ দানের। দায়িত্ব নেন তাদের সবার জন্য প্রযােজ্য। তারা ঈশ্বরের পরিবারের যুব সভ্য-সভ্যা, আমাদের সঙ্গে জীবনের অনুগ্রহের উত্তরাধিকারী। যারা সর্বাপেক্ষা দুর্বল, এবং ক্ষুদ্রতম, সবচেয়ে বেশি ভুল করে, এমন কি যারা ভুল করে ও বিদ্রোহী, তাদের প্রতি খ্রীষ্টের নিয়মাবলি পবিত্র জ্ঞানে পালন করতে হবে । EdBen 272.3

এই নিয়ম শিক্ষক-শিক্ষিকাকে যতদূর সম্ভব, একজন ছাত্রের প্রকাশ্য ভুল ভ্রান্তি এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে। তিনি অন্যদের সামনে তিরষ্কার অথবা শাস্তি দেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। একজন ছাত্র/ছাত্রীর সংশােধনের সব ধরণের প্রচেষ্টা না চালানাে পর্যন্ত তিনি তাকে বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করবেন না। কিন্তু যদি দেখা যায় যে ছাত্র/ছাত্রীটি কোন উপকার পাচ্ছে না, এবং তার অজ্ঞানতাপূর্ণ বিরােধিতা, ক্ষমতাশীল ব্যক্তির প্রতি অশ্রদ্ধা বিদ্যালয়ের শাসনতন্ত্রের বিপর্যয় ঘটাচ্ছে, এবং তার প্রভাব অন্যদের সংক্রমিত করেছে তবে তাকে বিদ্যালয় হতে বহিষ্কার করা একটি অপরিহার্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তবুও অনেকের পক্ষে প্রকাশ্য বহিষ্কারের অপমান সম্পূর্ণ বেপরােয়া ভাব এবং সর্বনাশের কারণ হয়ে। দাঁড়ায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যখন বহিষ্কার এড়িয়ে চলা সম্ভব হয় না, তখন ব্যাপারটি প্রকাশ্যে আনার প্রয়ােজন নেই। বাবা-মায়ের সঙ্গে পরামর্শ এবং সহযােগিতার মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষিকা ছাত্র/ছাত্রীকে গােপনে বহিষ্কার করবেন। EdBen 273.1

এ সময় যুবক/যুবতিদের বিশেষ বিপদের সময়, পরীক্ষা-প্রলােভন চার দিক থেকে ঘিরে ধরে; ফলে কালের স্রোতে ভেসে যাওয়া খুবই সহজ, এবং এই স্রোতধারাকে প্রতিরােধ করতে প্রবল প্রচেষ্টা চালাতে হবে। প্রলােভিত যুবক-যুবতির পক্ষে বিদ্যালয় হবে একটি আশ্রয় নগর”, যেখানে তাদের দোষ ক্রটির সঙ্গে ধৈর্য এবং জ্ঞান পূর্বক আচরণ করতে হবে। যে সব শিক্ষক-শিক্ষিকা তাদের দায়িত্ব উপলব্ধি করতে পারেন, তারা তাদের হৃদয় ও জীবন হতে সব কিছুই দূর করবেন যা তাদের স্বেচ্ছাচারী এবং অবাধ্য, ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে কৃতকার্যতার সঙ্গে আচরণ করতে বাধা সৃষ্টি করে। প্রেম এবং কোমল ব্যবহার, ধৈর্য এবং আত্ম-নিয়ন্ত্রণ, সব সময়ে তাদের বক্তব্যের নীতি হবে। ন্যায় বিচারের সঙ্গে দয়া এবং অনুকম্পা একত্রে মিশে থাকবে। যখন অনুযােগ আবশ্যক হয়ে পড়ে তখন। তাদের ভাষা অতিরিক্ত কড়া হবে না, কিন্তু নম্র হবে। তারা অন্যায়কারীর সামনে তার ভুলগুলাে ভাবে তুলে ধরবেন এবং পুনরুদ্ধার কাজে তাকে সাহায্য করবেন। প্রত্যেক প্রকৃত শিক্ষক-শিক্ষিকাকে দেখতে হবে যে, তিনি কোনােভাবেই যেন ভুল না করেন, কঠোরতার পক্ষে ভুল করার চেয়ে বরং অনুগ্রহের পক্ষে ভুল করা ভালাে। EdBen 273.2

অনেক যুবক-যুবতির ক্ষেত্রে মনে হয় তাদের ভুল সংশােধন অসাধ্য, কিন্তু আসলে তা যেমন কঠিন বলে মনে হয় ততটা কঠিন ব্যাপার নয়। অনেকের বেলায় মনে হয় বিবেচনাপূর্ণ শাসনের মাধ্যমে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তাদের কোন আশাই নাই। তারা এমন সব ছাত্রছাত্রী, দয়া দেখানাের মাধ্যমে যেন তাদের হৃদয় গলে যায়। শিক্ষক প্রলােভিত ছাত্র-ছাত্রীর বিশ্বাসভাজন হবেন, এবং তার চরিত্রের ভালাে দিকটি উপলব্ধি করে, তিনি অনেক ক্ষেত্রে এদিকে মনােযােগ না করেও মন্দতার সংস্কার করতে পারেন। EdBen 274.1

স্বর্গীয় শিক্ষক তাদের সকল বিপথগামীতার মধ্য দিয়েও অন্যায়কারীর প্রতি ধৈর্য ধরে থাকেন। তাঁর প্রেম শিথিল হয় না; তার বিজয়ের প্রচেষ্টা থেমে যায় না। তাঁর প্রসারিত হাতের মাধ্যমে অন্যায়কারী, বিদ্রোহী, এবং ধর্মদ্রোহীকে পুনঃ পুনঃ সাদরে অভ্যর্থনা জানান। ছােট শিশুদের অসহায়তার জন্য তাদের সঙ্গে কর্কশ এবং নির্দয় ব্যবহার করা হয় যা তার হৃদয়ে আঘাত করে। মানব দুঃখকষ্টের কান্না কখনাে তাঁর কাছে বৃথা যায় না। যদিও তাঁর চোখে সবাই মূল্যবান; অমার্জিত, গােমড়ামুখখা, শক্তগ্রীব আচরণ বিশিষ্ট সবাই তাঁর সহমর্মীতা এবং প্রেমের কাছে আকর্ষিত হয়; কেননা তিনি তার কারণ হতে ফলাফল পর্যন্ত তাদের সঙ্গে গমনাগমন করেন। যে অতি সহজেই প্রলােভিত হয়, এবং অতি সহজেই ভুল করে বসে, তার প্রতি তিনি বিশেষ ভাবে উত্তষ্ঠিত । EdBen 274.2

প্রত্যেক বাবা-মা এবং প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষিকা তার গুণাবলী ধারণ করবেন, যিনি পীড়িত, দুঃখভােগী, এবং প্রলােভীতদের কারণ নিজেই খুঁজে বের করেন। তিনি এমন এক জন হবেন যিনি “অজ্ঞান ও ভ্রান্ত সকলের প্রতি কোমল ব্যবহার করিতে সমর্থ, কারণ তিনি আপনিও দুর্বলতায় বেষ্টিত।” ইব্রীয় ৫:২ । EdBen 274.3

যীশু আমাদের সঙ্গে আমাদের প্রত্যাশাতীত আচরণ করেন, এবং যেমন তিনি আমাদের সঙ্গে ব্যবহার করেছেন, আমরাও অন্যদের সঙ্গে একই রকম ব্যবহার করব। যদি আমরা ত্রাণকর্তার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে না পারি তবে বাবা-মা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা হিসেবে আমাদের সব প্রচেষ্টা বিফল হবে । EdBen 274.4