পরম ধন্য আশা
৭ - সর্বপ্রথম মহা প্রতারণা
মনুষ্য জাতির ইতিহাসের গােড়ার দিকে, আমাদের মানব জাতিকে প্রতারিত করতে শয়তান তাঁর চেষ্টা চালায়। সে স্বর্গে বিদ্রোহ করেছিল, সে আকাঙ্খ করেছিল জগতবাসীকে একত্রিত করে ঈশ্বরের শাসন তর্মের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হতে । ঈশ্বরের ব্যবস্থায় আজ্ঞাবহ থেকে আদম ও হবা পরম সুখেই ছিল, আর এই ঘটনাটিই ছিল শয়তানের অভিযােগের বিরুদ্ধে একটি নিশ্চিৎ সাক্ষ্য, শয়তান তাঁর অভিযােগের স্বর্গ রাজ্যে এই বলে উপস্থাপন করেছিল যে, ঈশ্বরের সৃষ্ট প্রাণীদের মঙ্গলের ব্যাপারে ঈশ্বরের আজ্ঞা ছিল নিবীড় ও প্রতিরােধ মূলক । অধিকন্তু, শয়তান হিংসায় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিল যখন সে দেখত নিস্পাপ যুগলের জন্য সুন্দর গৃহ প্রস্তুত করা হয়েছে। সে মানব জাতির পতনের জন্য বদ্ধপরিকর ছিল, যেন তাদেরকে ঈশ্বরের সান্নিধ্য থেকে ছিন্ন করা যায় এবং তাঁর নিজের নিয়ন্ত্রণ আনা যায় যেন সে পৃথিবীর অধিপতি হতে পারে এবং সেখানে তাঁর রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে পরাৎপরের বিরুদ্ধে সে তা স্থাপন করতে পারে । GrHBen 85.1
এখানে শয়তান তাঁর নিজের বাস্তব চরিত্র প্রস্ফুটিত করেছিল, আর সে বীভৎস রূপ ধারণ করেছিল, কারণ আদম ও হবাকে জানানাে হয়েছিল যে তারা তাদের বিপদজনক শত্রুর সামনে আছে তা জানানাে হয়েছিল; কারণ সে আধারে কাজ সম্পন্ন করে, তাঁর উদ্দেশ্যে গুপ্তরাখে, যেন সে তাঁর কাজ অধিক দৃঢ়তার সহিত ফলপ্রসূভাবে সম্পন্ন করতে পারে। সাপকে তাঁর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে, সে তাঁর অপরূপ সৌন্দর্য্যে হবাকে আকৃষ্ট করল, সে তাকে তাঁর নিজের পরিচয় দিল: “ঈশ্বর কি বাস্তবিক বলিয়াছেন, তােমরা এই উদ্যানের কোন বৃক্ষের ফল খাইও না?” আদি ৩:১। হবা কি বাস্তবিকই প্রলােভনকারীর সাথে তর্ক-বিতর্কে যাওয়া থেকে বিরত ছিল, যাতে সে নিরাপদে থাকতে পারে; কিন্তু বিপজ্জনক অবস্থায় তাঁর শত্রুর সঙ্গে পরামর্শ করতে এগিয়ে গেল আর সে অসহায় অবস্থায় তাঁর ফাঁদে ধরা পড়ল । এই পরীক্ষা থেকে আজ আমরা অনেকেই উত্তীর্ণ হতে পারি নি। ঈশ্বরের দাবীর কথা বিবেচনা করে তারা সন্দেহ পােষণ করে এবং বাক-বিত-ায় যায়; আর তারা স্বগীয় আজ্ঞাগুলাের বাধ্য থাকার পরিবর্তে, তারা মানুষের দেয়া তত্ত্বগুলাে মেনে নেয়, যা শয়তানের প্রতারণার ছদ্মবেশ ছাড়া আর কিছু নয় । GrHBen 85.2
নারী সৰ্পকে কহিলেন, আমরা এই উদ্যানতু বৃক্ষ সকলের ফল খাইতে পারি; কেবল উদ্যানের মধ্যস্থানে যে বৃক্ষ আছে, তাহার ফলের বিষয় ঈশ্বর বলিয়াছেন, তােমরা তাহা ভােজন করিও না, স্পর্শও করিও না, করিলে মরিবে । তখন সর্প নারীকে কহিল, কোন ক্রমে মরিবে না; কেননা ঈশ্বর জানেন, যে দিন তােমরা তাহা খাইবে সেই দিন তােমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে, তাহাতে তােমরা ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সস-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।” আদি ৩:২৫। সে দৃঢ়ভাবে বলল, যে তারা ঈশ্বর তুল্য হবে, তারা পূর্বের তুলনায় অধিক জ্ঞানের অধিকারী হবে এবং তাঁর জীবনের উচ্চতর সত্ত্বার অধিকারী হবে। হত্যা প্রলােভনে পতিত হল; এবং তাঁর সক্রিয় প্রভাবে, আদম পাপের পথে পরিচালিত হল । তারা শয়তানের কথায় কর্ণপাত করল, যা ঈশ্বর তাদের নিষেধ করেছিলেন, তারা তাদের সৃষ্টিকর্তার ওপর অবিশ্বাস করছল এবং এই ধারণা পােষণ করছল যে তিনি তাদের স্বাধীনতা খর্ব করছিলেন যাতে তারা মহাজ্ঞানী হয় ও আরও উৎকর্ষপূর্ণ হয়, আর এভাবেই তারা ঈশ্বরের ব্যবস্থা লঙঘন করে । GrHBen 85.3
কিন্তু আদম তাঁর পাপের পতনের পর কি করেছিল, সে কি এই বাক্যের অর্থ বুঝতে পেরেছিল, “যে দিন তােমরা তাহা ভােজন করিবে, তােমরা মরিবেই মরিবে”? সে কি এর তাৎপর্য বুঝতে পেরেছিল, যে শয়তান তাকে এটি বিশ্বাস করানাের জন্য পরিচালিত করছিল, সে যে জীবনের একটি উচ্চতর সত্ত্বার দিকে উন্নীত হচেছ যেমন তাকে পরিচালিত করছিল জীবনের অধিকতর উৎকর্ষের উদ্দেশ্যে! পরে বাস্তবিকই তারা আজ্ঞা লঙ্ঘন করে অনেক উত্তম কিছু পেয়েছিল, এবং শয়তান মানব জাতি থেকে উপকার প্রাপক হিসেবে বিবেচিত হল। তবে আদম এতে ঈশ্বরের বাক্যের মত অর্থবহ কিছু খুঁজে পায়নি । ঈশ্বর বলেছিলেন তাঁর পাপের শাস্তি স্বরূপ তাকে মাটিতে প্রতিগমন করতে হবে, যেখান থেকে তাঁর উৎপত্তি হয়েছে; তুমি ধূলি, এবং ধূলিতে প্রতি গমন করিব” ১৯ পদ। শয়তানের বাক্য, তােমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে,” শুধু এই অর্থে সত্য প্রমাণিত হয় : আদম হবা ঈশ্বরের অবাধ্য হবার পরে তাদের চোখ পুরােপুরি উন্মােচিত হয়েছিল তাদের নিজেদের বােকামী বুঝতে পারার জন্য; তারা মন্দতার ভয়াবহতা বুঝতে পেরেছিল; এবং আজ্ঞা লঙ্ঘনের তিক্ত রস তারা আস্বাদন করেছিল। GrHBen 86.1
উদ্যানের মধ্যে ছিল জীবন বৃক্ষটি, যার ফল ভােজনের ফলে অনন্ত জীবনের শক্তি লাভ করা যেত । আদম যদি ঈশ্বরের বাধ্য থাকত, সে অনন্তকাল এই বৃক্ষের ফল ভােজন করা আনন্দ লাভ করতে পারত এবং অনন্তকাল বেঁচে থাকত । কিন্তু যখনই সে পাপ করল তখনই তাঁর কাছ থেকে জীবন বৃক্ষর ফল খাওয়ার অধিকার তুলে নেয়া হল, আর সে মৃত্যুর অধীন হল। স্বর্গীয় দ-াদেশ, “তুমি ধূলি এবং ধূলিতে প্রতিগমন করিবে ।” কথাটি দ্বারা জীবনের বিলােপ সাধনকে নির্দেশ করে। GrHBen 86.2
অমরত্ব, মানব জাতির বাধ্যতা শর্তের উপর প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল, তা আজ্ঞা লঙ্ঘন হেতু বাজেয়াপ্ত হয়ে গেল। আদম নিজেও তা অর্জন করতে পারেনি, এবং তাঁর বংশধরদের ওপর তা হস্তান্তর করতে পারেনি । পতিত মানব জাতির জন্য আর কোন আশা থাকত না যদি প্রভু না থাকতেন আর তাঁর পুত্রের আত্মত্যাগের মাধ্যমে, সেই অমরত্ব তাদের সহজ লভ্য হল । যখন। “মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল,” খ্রীষ্ট সুসমাচার দ্বারা জীবন ও অক্ষয়তাকে দীপ্তিতে আনিয়াছেন।” রােমীয়। ৫:১২; ২ তীমথিয় ১:১০। এক মাত্র খ্রীষ্টের মাধ্যমেই অমরত্ব অর্জিত হয় । যীশু বলেন: “যে কেহ পুত্রে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে; কিন্তু যে কেহ পুত্রকে অমান্য করে, সে জীবন দেখিতে পাইবে না।” যােহন ৩:৩৬ । প্রত্যেক লােক এই অমূল্য ধন পেতে পারে যদি সে আজ্ঞাবহ হবার শর্তপূরণ করে । সকল লােক যারা “সৎক্রিয়ায় ধৈর্য সহযােগে যাহারা প্রতাপ, সমাদর ও অক্ষয়তার অন্বেষণ করে তাহাদিগকে অনন্তজীবন দিবেন।” রােমীয় ২:৭। GrHBen 86.3
একমাত্র একজন যে আদমকে অবাধ্যতার জীবন দেবার প্রতিজ্ঞা করেছিল সে ছিল মহা প্রতারক । আর এদনে সাপ হবাকে যে কথা এদের বলেছিল “কোন ক্রমে মরিবে না”—তা ছিল আত্মার অমরতার উপর সর্ব প্রথম বক্তৃতা । তবুও এই বক্তব্য, যা সম্পূর্ণ শয়তানের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে, তা খ্রীষ্টীয় জগতের প্রচার মঞ্চ থেকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে এবং তা সংখ্যা গরিষ্ঠ লােকেরা গ্রহণ করছে, তারা এমন সহজ ভাবে গ্রহণ করছে ঠিক যেমন আমাদের আদি পিতামাতা গ্রহণ করেছিলেন। ঈশ্বরের দ-জ্ঞাটি, “যে প্রাণী পাপ করে, সেই মরিবে” (যিহিষ্কেল ১৮:২০), কথাটি তারা এভাবে ব্যাখ্যা করে: ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস না করে অদ্ভুত বিমুগ্ধকরণ প্রক্রিয়ায় শয়তানের কথাগুলােকে লােকদের কাছে এমন ভাবে বিশ্বাসযােগ্যরূপে বর্ণনা করা হয় যে, আমরা বিস্মিত না হয়ে পারি না। GrHBen 87.1
মানুষ কি তাঁর পতনের পরে সহজেই জীবন বৃক্ষের কাছে যাবার স্বাধীনতা পেয়েছিল, তাহলে সে অনন্তকাল বেঁচে থাকত, এবং পাপও অমরত্ব। লাভ করত। কিন্তু “জীবন বৃক্ষের পথে” (আদি ৩:২৪) করূবদের ও ঘূর্ণায়মান ত্যেজোময় খড়গ রাখা হল এবং আদম পরিবারের কাউকে সেই সীমা লঙ্ঘন করতে এবং জীবন দায়ক বৃক্ষের ফল আস্বাদন করতে অধীকার প্রদান করা। হয়নি । অতএব আর কোন অমরত্ব প্রাপ্ত পাপী থাকল না। GrHBen 87.2
তবে পাপে পতনের পরে, শয়তান তাঁর দূতদেরকে এই নির্দেশ দিয়েছিল যেন তারা সর্বোত্তম চেষ্টা চালায় মানুষের স্বাভাবিক অমরত্বের ওপর বিশ্বাস জন্মাতে এবং জনগণকে প্ররােচিত করতে যেন তারা এই ভ্রান্তি গ্রহণ করে, তারা যেন তাদের এই সিন্ধান্ত গ্রহণ করতে পরিচালিত যে- পাপীরা অনন্তযন্ত্রণা ভােগ করবে। এখন সেই অন্ধকারের অধিপতি, তাঁর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে কাজ করছে, ঈশ্বরকে একজন প্রতিহিংসাপরায়ণ অত্যাচারী শাসক রূপে উপস্থাপন করছে, বলছে যে তিনি তাদেরকে নরকে নিক্ষেপ করবেন, তাদের সবাইকে, যারা তাঁর ইচ্ছা মত চলবে না, এবং সর্বদা কারণ তাঁর ক্রোধে কারণ অনুভব করতে; আর তখন তারা অবর্ণনীয় যন্ত্রণা ভােগ করবে ও অনন্ত অগ্নি শিখায় ছটফট করবে, আর সৃষ্টিকর্তা আত্মতৃপ্তির দৃষ্টিতে তাদের দিকে চেয়ে দেখবেন। GrHBen 87.3
আর সেই শয়তান তাঁর নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে মানবের স্রষ্টা ও শুভাকাঙ্খী সেজে বসে আছে । নিষ্ঠুরতা শয়তানের বৈশিষ্ট্য। ঈশ্বর প্রেমময়; তাঁর সমস্ত সৃষ্টি খাঁটি, পবিত্র ও সুন্দর যে পর্যন্ত না প্রথম মহা বিদ্রোহের মাধ্যমে পাপের উৎপত্তি হলাে । শয়তান নিজেই সেই শত্রু যে মানুষকে পাপে প্রলােভিত করে এবং যদি পারে ত সে তাকে ধ্বংস করে, আর যখন সে-তাঁর-শিকার সম্বন্ধে সুনিশ্চিত, তখন সে তাঁর কাজে মহা উল্লাসিত হয়। যদি সুযােগ পেত, সে সমুদয় মনুষ্য জাতিকে তাঁর জালে আটকিয়ে ফেলত। এটা কি ঐশ্বী ক্ষমতার উপর হস্তক্ষেপ নয় আদমের পুত্র অথবা কন্যার একজনও রক্ষা পাবে না। GrHBen 88.1
শয়তান আজও মানুষকে বশীভুত করার উপায় খুঁজছে, যেমন সে। আমাদের আদি পিতা-মাতাদের তাদের সৃষ্টিকর্তার আহবানের ন্যায়পরায়নতার উপর এবং তাঁর প্রশাসনিক জ্ঞান ও বিজ্ঞতার উপর সন্দেহ করতে তাদের পরিচালিত করে সৃষ্টিকর্তার উপর তাদের বিশ্বাসের সুলুঢ় ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। শয়তান এবং তাঁর গুপ্তচরেরা তাদের কলঙ্ক ও বিদ্রোহকে যথার্থ রূপে প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে ঈশ্বরকে তাদের নিজেদের চেয়ে ভ্ৰষ্টরূপে উপস্থাপন করে। সেই মহা প্রতারক তাঁর নিজের চরিত্রের ভয়াবহ নিষ্ঠুরতা আমাদের স্বর্গীয় পিতার ওপর অর্পণ করতে সচেষ্ট, যেন সে নিজেকে এভাবে প্রকাশ করতে পারে যে, তাকে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করা একটি বড় ভুল ছিল; কারণ সে এই ধরণের একজন অন্যায্য প্রশাসকের কাছে নত স্বীকার করবে না। সে পৃথিবী নিবাসীদের কাছে এই স্বাধীনতা প্রচার করে, যেখানে তারা তাঁর অধীনে সামান্যই নিয়ন্ত্রিত হবে, যা যিহােবার অর্পিত কঠোর অনুশাসনের বিপরীত। এভাবে সে ঈশ্বরের অনুগত থেকে মনুষ্যদের প্রলুব্ধ করে কৃতকার্য হয়। GrHBen 88.2
এই ধর্ম-মতবাদটি আমাদের প্রতিটি প্রেম ও করুণার প্রতি এবং এমন কি আমাদের ন্যায়পরায়ণ অনুভূতির প্রতি কি এক বিস্বাদ ভাবাবেগ তৈরী করে, যেখানে বলা হয় যে, যতদিন ঈশ্বর বেঁচে থাকবেন ততদিন পর্যন্ত মৃত দুষ্টেরা তাদের সংক্ষিপ্ত এই পার্থিব জীবনের পাপের জন্য জ্বলন্ত নরকে অগ্নি ও গন্ধকের আগুনে অনন্তকাল নিদারুণ যন্ত্রণা ভােগ করবে । তথাপি আর এই ধর্মনীতি ব্যাপক আকারে শিক্ষা দেয়া হয় এবং এখনাে খ্রীষ্ট জগতের ধর্ম বিশ্বাসে তা সংযুক্ত করা হয়। ধর্মতত্ত্ব বিষয়ক একনি বিশেষজ্ঞ বলেন, “নরক যন্ত্রণার দৃশ্য হবে ধার্মিকদের অনন্ত আনন্দের বহিপ্রকাশ। যখন তারা দেখে যে অন্যরা যারা একই স্বভাবের এবং একই পরিবেশে জন্ম ঐ রকম যন্ত্রণা ভােগ করছে, এবং তারা নিজেরা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, এটাই তাদের চিহ্নিত করবে কেমন সুখী তারা।” অন্য আর একজন এই কথাগুলাে এভাবেই বলেছে : “ক্রোধের পানপাত্রে যখন অনন্তকালের নিমিত্তে প্রত্যাখ্যানের হুকুম জারি করা। হয়েছে, তখন তলের যন্ত্রণার ধোয়া অনন্তকাল উৰ্ব্বদিকে অনুগ্রহের পানপাত্রের নিকট উঠত থাকবে, অনেকে, যন্ত্রণাদায়ক বন্ত্রত অংশগ্রহণ না করে, বরং বলবে, আমেন, হালুয়া’ । সমস্ত গৌরব প্রংশসা সদাপ্রভুর।” GrHBen 88.3
সদাপ্রভুর বাক্যের এই ধরণের শিক্ষা কোন কোন পৃষ্ঠায় কোথায় পাওয়া যায়? স্বার্গে মুক্তি প্রাপ্তরা কি দয়া ও সহমর্মিতার আবেগ হারিয়ে ফেলবে এবং এমন কি মানুষের স্বাভাবিক মানবিকতাও কি হারিয়ে ফেলবে? আকর্ষণ বিহীন সুখ-দুঃখে নির্বিকার বা বর্বরতার নিষ্ঠুরতার সঙ্গে এসব কি বিনিময়ের যােগ্য? না, না; এসব ঈশ্বরের পুস্তকের শিক্ষা নয়। যারা এ ধরণের মতবাদ প্রকাশ করে উদ্ধৃতি দেয়, হতে পারে তারা বিজ্ঞ ও সৎ লােক, তবে তারা শয়তানের চাতুর্যে ভ্রান্তপথে পরিচালিত। শাস্ত্রের বিশেষ বিশেষ কঠিন বাক্যের ভুল ব্যাখ্যা দিতে সে তাদের পরিচালিত করে, তারা ভাষার মাধুযে, বিন্যাস ও অলংকার প্রদান করে এবং মারাত্মক ভুল তাঁর নিজের মধ্যে বাসা বাধে, কিন্তু তা আমাদের সৃষ্টিকর্তার মধ্যে স্থান পায় না। “প্রভু সদাপ্রভু কহেন, আমার জীবনের দিব্য, দুষ্ট লােকের মরণে আমার সন্তোষ নাই; বরং দুষ্ট লােক যে আপন পথ হইতে ফিরিয়া বাঁচে, ইহাতেই আমার সন্তোষ । তােমরা ফির, আপন কুপথ হইতে ফির; কারণ হে ইস্রায়েল কুল তােমরা কেন মরিবে?” যিহিষ্কেল ৩৩:১১। GrHBen 89.1
আমরা যদি বলি যে, অনন্ত যন্ত্রণার সাক্ষী হয়ে ঈশ্বর পরিতৃপ্ত হন; যাদের তিনি ফেলে রেখেছেন নরকের জলন্তঅগ্নিশিখায় সেই যন্ত্রণা ভােগকারীদের আর্তনাদ ও তীব্র চিৎকারে ঈশ্বরের কি লাভ? তাদের কি এই ভয়াবহ শব্দ অসীম প্রেমময়ের কানে কি সুশ্রাব্যরূপে বাজাতে পারে? এটি জোর দিয়ে সমর্থন করে যে, দুষ্ট লােকদের উপরে সীমাহীন দুঃখ-কষ্ট একটি মন্দরূপে পাপের উপর ঈশ্বরের ঘৃণা প্রদর্শন করে য মহা বিশ্বের শান্তি ও শৃঙ্খলার জন্য ধ্বংসকর । উহ! কেমন ভয়াবহ ঈশ্বরের নিন্দা । মনে হচ্ছে। পাপের প্রতি ঈশ্বরের ঘৃণাই এর একমাত্র কারণ যার কারণে এই চিরস্থায়ী শাস্তি ও যন্ত্রণা। কারণ, বিত্ত ধর্মাবলালের শিক্ষা অনুযায়ী, করুণা পাবার প্রত্যাশা ছাড়া অবিরত নির্যাতন, হতভাগ্যের শিকার লােকদের উত্তেজিত করে তােলে, আর যেহেতু তারা তাদের ক্রোধ অভিশাপে ও ঈশ্বর নিন্দায় ঢেলে দেয়, তাই তারা চিরদিনের জন্য তাদের অপরাধের বােঝা বাড়িয়ে তুলতে থাকে। তাই যুগপর্যায়ে যুগে যুগে অনন্ত-অসীম পাপের বৃদ্ধিতে ঈশ্বরের গৌরব বৃদ্ধি পাচ্ছে না । GrHBen 89.2
যে মন্দতা অনন্ত যন্ত্রণার মতবাদ দ্বারা গঠিত রয়েছে তাঁর অনুমান করা মানুষের ক্ষমতার উর্ধে। বাইবেলের ধর্ম প্রেমে ও সততায় পূর্ণ এবং করুণাময় সমৃদ্ধশালীতে আচ্ছাদিত রয়েছে, ভ্রান্তবিশ্বাসও আবৃত্ত রয়েছে ভয় ভীতিতে । যখন আমরা চিন্তা করি কেমন মিথ্যা রং এ ঈশ্বরের চরিত্রে শয়তান প্রলেপ দিয়েছে, আমরা কি মনে মনে ভাবি যে, আমাদের দয়ালু স্রষ্টা ভীতিকর, ভয়াবহ ও ঘৃণার পাত্র? আর ঈশ্বরের এই আতঙ্কজনক দৃশ্য প্রচার মঞ্চের শিক্ষা থেকে এবং তা সহস্র সহস্র ও অযুত অযুত লােকদের সন্দেহবাদী ও অবিশ্বাসী করেছে। GrHBen 89.3
অনন্ত যন্ত্রণার ধারণাটি একটি মিথ্যা ধর্মবিশ্বাস, যা ব্যাবিলনের রােষ। মপিরা দ্বারা গঠিত, যা থেকে সে সমগ্র জাতিকে পান করায় । প্রকাশিত বাক্য ১৪:৮; ১৭:২ খ্রীষ্টের ঐ পুরােহিতেরা এই কুসংস্কার গ্রহণ করেছে এবং পবিত্র বেদী থেকে তা প্রচার করছে, এটি বাস্তবিকই অদ্ভুত ব্যাপার । তারা এটা রােম থেকে আহরণ করেছে যেমন তারা মিথ্যা শাববাথ গ্রহণ করেছে। সত্য, এটি মহৎ ও ভালাে লােকদের দ্বারা শিক্ষা দেয়া হয়েছে; কিন্তু এই বিষয়ের যথার্থতা তারা জানে না যেমন কিনা এটা আমাদের কাছে প্রকাশিত হয়েছে। তারা শুধু ততটুকু আলাের জন্য দায়বদ্ধ, যতটুকু আলাে তাদের সময়ে তাদের কাছে প্রকাশ করা হয়েছে; আর আমরা দায়বদ্ধ আমাদের দিনে আমাদের কাছে যা প্রকাশ করা হয়েছে তাঁর উপর। আমরা যদি ঈশ্বরের বাক্যের সাক্ষ্য থেকে সরে পড়ি এবং মিথ্যা ধর্ম বিশ্বাস গ্রহণ করি- যেহেতু আমাদের পিতারা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, তাহলে বাবিলের ওপর যে দোষারােপ করা হয়েছিল আমরাও তাঁর সহভাগী হই; আমরা তখনই তাঁর বেশ্যা ক্রিয়ার রােষা মদিরা পান করি। GrHBen 90.1
একটি সুবৃহৎ দল আছে যারা অনন্ত-যন্ত্রণার ধর্মবাদের সব দিক থেকে তলিয়ে দেখছেন তারাও বিপরীতধর্মী ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছেন । তারা শাস্ত্র অবলােকন করে শাস্ত্র ঈশ্বরকে একজন প্রেমের ও করুণার ব্যক্তিত্বে উপস্থাপন করে আর তারা বিশ্বাস করতে পারে না যে তিনি তাঁর সৃষ্ট জারকে সেই নরকের অনন্তঅগ্নিতে সমর্পন করবেন যেখানে তারা পুড়তে থাকবে। কি এই বিশ্বাস ধরে রাখে যে আত্মা বাস্তবিক ভাবে অমর, তারা আর কোন উপায় না দেখে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, পরিশেষে সমগ্র মানব জাতি মুক্তি লাভ করবে। অনেকে মনে করে যে বাইবেলের সর্তকবাণীগুলাে শুধু ভয় দেখাবার জন্য দেয়া হয়েছে, মানুষ যেন ভয়ে আজ্ঞাবহ হয়, ওগুলাে কখনাে বাস্তবিক সংঘটিত হবে না। সুতরাং পাপীরা নিজ নিজ অভিলাষ জীবন যাপন। করতে পারে, ঈশ্বরের আজ্ঞা অমান্য করতে পারে, এবং তবুও আশা করতে পারে যে, সব শেষে তাঁর অনুগ্রহ লাভ করতে পারবে । এই ধরণের একটি মতবাদ ঈশ্বরের ন্যায় বিচারকে উপেক্ষা করে তাঁর কণার অন্যায় সুযােগ গ্রহণ করে এবং মাংসিক হৃদয়কে এবং দুষ্টদের তাদের পাপাচারে সাহাস যােগায় । GrHBen 90.2
তারা শাস্ত্রের শিক্ষা বিকৃত করে সার্বজনীন পরিত্রাণ প্রদর্শন করে, কিভাবে বিশ্বাসীরা তাদের আত্মধ্বংসকারী মতবাদ নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে, এটা প্রমাণ করার জন্য শুধু তারা তাদের মুখের বাক্যের উদ্ধৃতি দেয়। একজন ধর্মবিরােধী যুবকের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময়, যে আকস্মিক দুর্ঘটনাক্রমে মৃত্যুবরণ করে, তাঁর উদ্দেশ্যে, একজন সার্বজনীন পুরােহিত শাস্ত্রের দায়ূদের চিন্তার একটি অংশ বেছে নেন: “কেননা অমােন মরিয়া গিয়াছে জানিয়া তিনি তাহার বিষয়ে সান্ত্বনা প্রাপ্ত হইয়াছিলেন ।” ২ শমূয়েল ১৩:৩৯। GrHBen 90.3
বক্তা বললেন, “আমাকে স্পষ্ট জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তাদের ভাগ্য কি হবে যারা পাপে থাকতে মৃত্যুবরণ করে এমন কি মাতাল অবস্থায়, মৃত্যুবরণ করে তাদের অপরাধের কলঙ্ক কালিমা নিয়ে, তাদের মলিন বস্ত্র ধৌত না করে, অথবা এই যুবক যেমন মৃত্যুবরণ করল তেমনই মৃত্যুবরণ করে, কদাচ পাপের জন্য অনুশােচনা করে পাপ স্বীকার করেনি অথবা ধর্মীয় অভিজ্ঞতা উপভােগ করেনি। আমরা শাস্ত্রের বচনে সান্ত্বনা পাই; তাদের উত্তর এই ভয়াবহ সমস্যার সমাধান করে। অমােন জঘন্য পাপী ছিল; সে ছিল অননুতপ্ত, সে ছিল মাতাল এবং মাতাল অবস্থায়ই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল । দায়ূদ ছিলেন ঈশ্বরের ভাববাদী, তিনি নিশ্চয়ই জানতে পেরেছিলেন ভাবী জগতের জন্য এটা কি ভাল হবে না খারাপ হবে । তাঁর হৃদয়ের অভিব্যক্তিগুলাে কিরূপ ছিল? “পরে দায়ূদ রাজা অবশালােমের কাছে যাইবার আকাঙ্খা করিলেন; কেননা অমােন মরিয়া গিয়াছে জানিয়া তিনি তাহার বিষয়ে সান্ত্বনা প্রাপ্ত হইয়াছিলেন ।” ২ শমূয়েল ১৩:৩৯। GrHBen 91.1
“এই কথা থেকে কোন সিদ্ধান্তটি আমরা বর্জন করতে পারি? এটা কি ঐ সীমাহীন যন্ত্রণার একটি রূপ নয় যা তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাসের একটি অংশ ? সুতরাং আমরা কল্পনা করতে পারি; এবং এখানে আমরা অধিক আনন্দপ্রদ, অধিক আলােকিত, এবং সার্বজনীন শুদ্ধতা ও শান্তির অধিক হিতৈষী কল্পনার পক্ষে একটি সফলকাম তর্ক আবিষ্কার করি। সে সান্ত্বনা পেয়েছিল তাঁর ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে। তবে কেন সান্ত্বনা পেয়েছিল? কারণ সে ভাববানীর চোখে দেখতে পেয়েছিল সামনের দিকে গৌরবময় ভবিষ্যৎ, দেখতে পেয়েছিল তাঁর ছেলে সব ধরণের প্রলােভন থেকে অনেক দূরে সরে পড়েছে, দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছে এবং পাপের পঙ্কিলতা থেকে পরিশােধিত হয়েই এবং যথাযােগ্য শুদ্ধতা লাভ করেছে ও দীপ্তির মত হয়েছে। তাঁর একমাত্র সান্ত্বনা যে, তাঁর প্রিয়পুত্র সেখানে গিয়ে বর্তমান পাপ ও যন্ত্রণা থেকে সরে পড়েছে। সেখানে তাঁর বিমর্ষ আত্মা পবিত্র আত্মার সুউচ্চ প্রশংসায় উদ্ভাসিত হয়েছে। যেখানে তাঁর অন্তরে প্রকাশিত হবে স্বর্গের জ্ঞান এবং অমর প্রেমের মধুর উল্লাস, এবং সেথায় একটি পাপমুক্ত পরিবেশ অনন্তকাল উপভােগ করার জন্য বিশ্রামাগার এবং স্বর্গীয় অধিবাসীদের সমাজ প্রস্তুত হয়েছে । GrHBen 91.2
“উও চিন্তাধারায় বিশ্বাস করার জন্য আমরা এইরূপ বুঝব যে, স্বর্গীয় পরিত্রাণ এই পৃথিবীতে আমরা যা কিছু করি তাঁর উপর নির্ভর করে না; হৃদয়ের বর্তমান পরিবর্তনের উপরও না, বর্তমান বিশ্বাসের উপরও না, অথবা একটি বর্তমান ধর্ম-পেশার উপরও না” GrHBen 91.3
তাইতাে খ্রীষ্টের স্বঘােষিত পুরােহিত বারংবার সেই মিথ্যা বাক্য উচ্চারণ করে, যা শয়তান এদনে উচ্চারণ করেছিল “কোন ক্রমে মরিবে না।” “যে দিন তােমরা তাহা খাইবে, তাহাতে তােমরা ঈশ্বরের সদৃশ্য হইয়া সদসদ জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।” সে ঘােষণা করে যে, দুষ্ট পাপীরা হত্যাকারী, চোর এবং ব্যাভিচারীর মৃত্যুর পরে চিরস্থায়ি স্বর্গ সুখে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত হবে । GrHBen 92.1
আর শাস্ত্রের এই বিকৃত অর্থকারী কি সিদ্ধান্তে পৌছায় ? সৃষ্ট জীবের প্রতি ঈশ্বরের ব্যবস্থায় দায়ূদের আত্মসমর্পণের একটি মাত্র বাক্যই তা প্রকাশ করে। তাঁর প্রাণ অবশালােমের কাছে যাবার আকাঙ্খ করেছিল; “কেননা অমােন মরিয়া গিয়াছে জানিয়া তিনি তাহার বিষয় সান্ত্বনা প্রাপ্ত হইয়া ছিলেন।” এই সময় তাঁর তীব্র বেদনা কিছুটা লাঘব হয়েছিল, এই চিন্তা তাকে মৃতের কথা ভুলে জীবিত ছেলেদের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল। তাঁর ছেলের অপরাধের শাস্তির ভয় থেকে তিনি নির্বাসিত হয়েছিলেন। আর এই হচ্ছে প্রমাণ যে অনাহারী, মদ্যপায়ী, অমােন মৃত্যুবরণ করেছিল এবং সঙ্গে সঙ্গে তাকে পরম আবাসে নেয়া হয়েছিল, যেন সেখানে সে বিশুদ্ধ হয়ে প্রস্তুত হয়ে নিস্পাপ দুতগণের সান্নিধ্যে থাকতে পারে। এটা চিত্তাকর্ষক গল্প মাত্র, লালসাপূর্ণ মনকে তৃপ্ত করার জন্য সুউপযােগী করা । এটা শয়তানের নিজস্ব মতবাদ এবং এটা তাঁর কাজ ফলপ্রসূভাবে করে । এই শিক্ষায়, মন্দতার বেড়াজালে আমরা কি আশ্চর্যান্বিত হব? GrHBen 92.2
এই শিক্ষাটি একজন মিথ্যা শিক্ষকের ব্যাখ্যা দ্বারা চালিত হয় এবং অনেককে এই শিক্ষা দেয় । শাস্ত্রের কয়েকটি শব্দ বিষয়বস্তু থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করা হয়, যা সাধারণত বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী ব্যাখ্যা করা হয়েছে; আর এই অসংলগ্ন অংশ বিপথগামী করে এবং তা ব্যবহার করা হয় ধর্মীয় মৌলিক নীতির প্রমাণ সরূপ যার কোন ভিত্তি ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া যায় না। যে সাক্ষ্যটি এখানে উদ্ধৃত করা হয়েছিল প্রমাণস্বরূপ, যে মদ্যপায়ী অমােন এখন স্বর্গে তা একটি সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী পরিকল্পনা, কারণ পবিত্র শাস্ত্রের সাধারণ ও সরল বাক্য প্রকাশ করে যে কোন মদ্যপায়ী ঈশ্বরের রাজ্যে বসবাস করবে না। ১ করিন্থীয় ৬:১০। আর এই কারণে সন্দেহভাজনরা, অবিশ্বাসীরা ও নাস্তিকরা সত্যকে মিথ্যায় পতিপন্ন করে। তাই অগণিত জনতা তাদের কুতর্ক দ্বারা প্রতারিত হয়ে থাকে এবং মাংসিক নিরাপত্তার দোলনায় দুলতে দুলতে ঘুমিয়ে পড়ে। GrHBen 92.3
যদি এটা সত্য হত যে মৃত্যুতে প্রত্যেক মানুষের আত্মা সরাসরি স্বর্গে যায়, তবে আমরা জীবনের চেয়ে মৃত্যুই বেছে নিতাম। এই বিশ্বাস দ্বারা অনেকেই পরিচালিত হয়ে তাদের জীবনের পরিসমাপ্তি ডেকে আনে । যখন সমস্যা, জটিলতা ও হতাশায় বিহবল হয়ে পড়ি তখন এটি সহজ মনে হয় যে জীবনের ভঙ্গুর সূতাটি ছিন্ন করি এবং অনন্তরাজ্যে পরম সুখের উদ্দশ্যে উড় যাই । GrHBen 92.4
ঈশ্বর তাঁর বাক্যে চূড়ান্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি তাঁর আজ্ঞা লজ্ঞানকারীদের শাস্তি দেবেন। যারা নিজেদের মিথ্যা আশ্বাস দেয় যে ঈশ্বর বড়ই দয়ালু, তাদের শুধু কালভেরীর ক্রুশের ওপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে হবে । ঈশ্বরের নিস্পাপ পুত্রের মৃত্যুই প্রমাণ করে যে, “পাপের বেতন মৃত্যু,” যেন ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতিটি লঙ্ঘনই তাঁর সমুচ্চিত প্রতিদান পায়। নিস্পাপ খ্রীষ্ট মানব জাতির জন্য পাপী সাব্যস্ত হলেন । তিনি পাপের বােঝা বহন করলেন, এবং তাঁর পিতার শ্রীমুখের আড়াল হলেন, যে পর্যন্ত-না তাঁর হৃদয় ভগ্নচূর্ণ হয়েছিল এবং তাঁর জীবন চূর্ণ বিচূর্ণ হয়েছিল। তাঁর এই সব আত্মত্যাগের উদ্দেশ্য যেন পাপীরা মুক্তি পেতে পারে । আর কোন উপায় নেই যার মাধ্যমে মানুষ জাতি তাদের পাপের শাস্তি থেকে রেহাই পেতে পারে। আর প্রত্যেকটি প্রাণ যে প্রদত্ত প্রায়শ্চিত্তে একজন অংশগ্রহণকারী হতে অস্বীকার করে সে নিজে অবশ্যই তাঁর অপরাধ এবং আজ্ঞা লঙ্ঘনের সাজা ভােগ করবে । GrHBen 93.1
আসুন আমরা বিবেচনা করে দেখি বাইবেল অধার্মিক ও অপবিত্রদের সম্বন্ধে এ বিষয়ে আমাদের অধিক আর কি শিক্ষা দেয়, যাদেরকে বিশ্বজনীনরা। স্বর্গে পবিত্র ও সুখী দূতগণ হিসেবে স্থাপন করেছেন । GrHBen 93.2
“যে পিপাসিত, আমি তাহাকে জীবন-জলের উনুই হইতে বিনামূল্যে জল দিব।” প্রকাশিত বাক্য ২১:৬। এই প্রতিজ্ঞা শুধু তাদের জন্য যারা পিপাসিত। অন্য কেউ নয়, কিন্তু শুধু তারা যারা জীবন জলের প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করে, এবং, সব কিছু বিসর্জন দিয়ে তা অন্বেষণ করে, তাদেরকে দেয়া হবে । “যে জয় করে, সে এই সকলের অধিকারী হইবে; এবং আমি তাহার ঈশ্বর হইব, ও সে আমার পুত্র হইবে।” ৭ পদ। এখানেও শর্তগুলাে সুস্পষ্ট। আর এই সব অধিকার করার জন্য আমাদের পাপকে প্রতিরােধ করতে হবে এবং পাপের ওপর জয় লাভ করতে হবে । GrHBen 93.3
সদাপ্রভু যিশাইয় ভাববাদীর মাধ্যমে ঘােষণা করেন, “তােমরা ধার্মিকের বিষয় বল, তাহার মঙ্গল হইবে ।” “ধিক দুষ্টকে! অমঙ্গল ঘটিবে; কেননা তাহার হস্তকৃত কার্যের পরিশােধ তাহার প্রতি করা যাইবে।” যিশাইয় ৩:১০, ১১। জ্ঞানী ব্যক্তি বলেন, “পাপী যদ্যপি শতবার দুষ্কর্ম করিয়া দীর্ঘকাল থাকে, তথাপি আমি নিশ্চয় জানি, ঈশ্বর-ভীত লােকদের, যাহারা ঈশ্বরের সাক্ষাতে ভীত হয়, তাহাদের মঙ্গল হইবে; কিন্তু দুষ্ট লােকের মঙ্গল হইবে না।” উপদেশক ৮:১২,১৩। আর পৌল সাক্ষ্য দেন যে পাপীরা তাদের নিজেদের জন্য “এমন ক্রোধ সঞ্চয় করিতেছে, যাহা ক্রোধের ও ঈশ্বরের ন্যায়বিচার-প্রকাশের দিনে আসিবে; তিনি ত প্রত্যেক মনুষ্যকে তাহার কার্যানুযায়ী ফল দেবেন; ” “তাহাদের প্রতি ক্রোধ ও রােষ ক্লেশ ও সঙ্কট বৰ্তিবে...।” রােমীয় ২:৫,৬,৯। GrHBen 93.4
“তােমরা নিশ্চয়ই জানিতেছ, বেশ্যাগামী কি অশুদ্ধচারী কি লােভী সে ত প্রতিমা পূজক কেহই খ্রীষ্টের ও ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পায় না।” ইফিষীয় ৫:৫। “সকলের সহিত শান্তির অনুধাবণ কর এবং যাহা ব্যতিরেকে কেহই প্রভুর দর্শন পাইবে না” ইব্রীয় ১২:১৪। “ধন্য তাহারা, যাহারা আপন আপন পরিচ্ছদ ধৌত করে, যেন তাহারা জীবনবৃক্ষের অধিকারী হয়, এবং দ্বার সকল দিয়া নগরে প্রবেশ করে। বাহিরে রহিয়াছে কুকুরগণ, মায়াবিগণ, বেশ্যাগামীরা, নরঘাতকেরা ও প্রতিমাপূজকেরা, এবং যে কেহ মিথ্যা কথা। ভালবাসে ও রচনা করে।” প্রকাশিত বাক্য ২২:১৪, ১৫। GrHBen 93.5
ঈশ্বর তাঁর চরিত্র ও পাপের ব্যাপারে তাঁর ব্যবস্থার পদ্ধতি মনুষ্যদের কাছে প্রকাশ করেছেন ।” সদাপ্রভু, সদাপ্রভু, স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান; সহস্র সহস্র পুরুষ পর্যন্ত দয়া রক্ষক অপরাধের অধর্মের ও পাপের ক্ষমাকারী; তথাপি তিনি অবশ্য পাপের দদেন।” যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬, ৭। “তিনি সমুদয় দুষ্টকে সংহার করিবেন । “অধর্মাচারীগণ সকলেই বিনষ্ট হইব; দুষ্টদের শেষ ফল উচ্ছিন্ন হইবে।” গীতসংহিতা ১৪৫:২০;৩৭,৩৮। বিদ্রোহের মূল উৎপাটন করতে স্বর্গীয় শাসনকর্তা তাঁর ক্ষমতা ও বিক্রম প্রয়ােগ করবেন; তথাপি শাস্তিস্বরূপ সর্ব প্রকার বিচার ব্যবস্থায় একজন দয়ালু, দীর্ঘ-সহিষ্ণ, সদাশয় ব্যক্তি হিসেবে ঈশ্বরের চরিত্র নিখুঁতভাবে প্রকাশিত হবে । GrHBen 94.1
ঈশ্বর কোন প্রকার ইচ্ছা শক্তি বা বিচারকে জোরপূর্বক চাপিয়ে দেন । গােলামীমূলক বাধ্যতায় তাঁর কোন সন্তোষ নেই। তাঁর বাসনা যেন তাঁর হাতের নির্মিত সৃষ্ট জীব তাকে ভালবসে কারণ তিনি ভালবাসা পাবার যােগ্য। তিনি চেয়েছিলেন যেন তারা তাঁর আজ্ঞাবহ হয় কারণ তারা নিজ নিজ বিবেকে তাঁর বিজ্ঞতা পূর্ণ জ্ঞান, ন্যায়পরায়নতা ও বদান্যতা উপলব্ধি করেছে। আর যাদের উক্ত বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে সামান্যতম ধারণা আছে তারা তাকে ভালবাসে কারণ তারা তাঁর স্বাভাবিক গুণে মুগ্ধ হয়ে প্ররম শ্রদ্ধায় আকৃষ্ট হয় । পরােপকারিতা, দয়া, প্রেমের মূলনীতি আমাদের ত্রাণকর্তা শিক্ষা দিয়েছেন এবং নিজ জীবন দিয়ে তিনি তাঁর উদাহরণ স্বরূপ প্রমাণ দিয়েছেন এগুলােই হল ঈশ্বরের মনােবাঞ্ছর ও চরিত্রের প্রতিলিপি । খ্রীষ্ট বলেছিলেন তিনি নতুন কিছু শিক্ষা দেননি কিন্তু তিনি যা কিছু পিতার কাছ থেকে পেয়েছেন শুধু তাই শিক্ষা দিয়েছেন। স্বর্গীয় শাসন তন্ত্রের মূলনীতিগুলাে পরিত্রাতার উপলব্ধির সাথে নিখুঁতভাবে সুসামঞ্জস্য ও একতাপূর্ণ, “তােমার শত্রুকে প্রেম কর।” ঈশ্বর সমগ্র নিখিল বিশ্বের মঙ্গলের জন্য, এমন কি যাদের প্রতি তাঁর ন্যায় বিচার প্রদর্শিত হয়েছে তাদের মঙ্গলের জন্য দুষ্টদের উপর ঈশ্বর তাঁর ন্যায় বিচার কার্যকর করেন । ঈশ্বর তাঁর শাসনতন্ত্রের নিয়ম নীতির এবং তাঁর চরিত্রের ন্যায়পরায়ণতার সংঙ্গে সংগতি রেখে তিনি তাদের সুখী করবেন । তিনি তাদেরকে তাঁর প্রেমে নিশ্চয়তা দ্বারা আবৃত করেন, তিনি তাদের জন্য আইনের জ্ঞান মঞ্জুর করেন, তিনি তাঁর প্রদত্ত অনুগ্রহে তাদেরকে পরিচালিত করেন; কিন্তু যারা তাঁর প্রেম অবজ্ঞা করে, তাঁর আজ্ঞা অমান্য করে এবং তাঁর করুণাকে প্রত্যাখ্যান করে। একদিকে তারা অবিরত তাঁর দানসমূহ গ্রহণ করে অপর দিকে তারা দাতাকে অসম্মান করে ঈশ্বরকে ঘৃণা করে কারণ তারা জানে যে তিনি তাদের পাপ চরম ঘৃণা করেন। তাদের স্বেচ্ছাচারিতার ওপর সদাপ্রভুর চক্ষু আছে; পরিশেষে সেই চরম মুহূর্ত উপস্থিত হবে, যখন তাদের নিয়তি ধার্য করা হবে। তখন তিনি কি এই বিদ্রোহকারীরদের তাঁর কাছে টেনে নেবেন? তিনি তাঁর ইচ্ছা পালন করতে তাদেরকে কি জোর প্রয়ােগ করবেন? GrHBen 94.2
যারা শয়তানকে তাদের দলপতি হিসেবে মনােনীত করেছে এবং তাঁর শক্তিতে পরিচালিত হচ্ছে তারা ঈশ্বরের সম্মুখে উপস্থিত হবার জন্য প্রস্তুত নয়। তাদের চরিত্রে অহংকার, প্রবঞ্চনা, লাম্পট্যতা, ও নিষ্ঠুরতা স্থায়ীভাবে স্থান দখল করে নিয়েছে। তারা কি স্বর্গ রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে এবং যাদেরকে তারা অবজ্ঞা ও ঘৃণা করেছিল তাদের সঙ্গে কি অনন্তকাল বসবাস করতে পারবে? সত্য কখনাে মিথ্যের সংঙ্গে চলতে পারে না; মৃদুতা কখনাে আত্মমর্যাদা ও অহংকারকে তৃপ্তি দিতে পারে না; ভ্রষ্টতার কাছে পবিত্রতা মূল্যহীন; স্বার্থপরদের কাছে স্বার্থহীন প্রেম আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপিত হয় না। তবে যারা সম্পূর্ণ জাগতিকতায় ও আত্ম-স্বার্থে মগ্ন স্বর্গ রাজ্যে তাদেরকে কোন ধরণের আনন্দের উৎস প্রদান করবে? GrHBen 95.1
তবে যারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তাদের জীবন অতিবাহিত করেছে, তারা কি হঠাৎ স্বর্গরাজ্যে নীত হবে এবং উচ্চ স্থানের দর্শন পাবে, যেখানে চিরস্থায়ীভাবে নিখুঁত পবিত্র অবস্থা বিরাজমান। সেখানে প্রতিটি হৃদয় প্রেমে পূর্ণ, প্রত্যেকের মুখম-ল থেকে আলােক রশ্মি বিকিরণ হয়, ঈশ্বরের ও মেষশাবকের সম্মানে একতানে সুশ্রাব্য সুর তােলে এবং এক অসীম আলাের প্রবাহ স্রোত প্রবাহিত হয় মুক্তি প্রাপ্তদের ওপর যিনি সিংহাসনে উপবিষ্ট, তাঁর মুখম-লে থেকে অবিরত আলােকপ্রবাহ নির্গত হয়, তারা কি পারবে সহ্য করতে যাদের হৃদয় ঈশ্বরের প্রতি হিংসায় পূর্ণ, তারা কি পারবে সত্যতায় ও পবিত্রতায় পূর্ণ হতে, স্বর্গীয় সিংহাসনে এবং প্রশংসা সংগীতের সাথে সংযুক্ত হতে? তারা কি ঈশ্বরের ও মেষশাবকের মহিমা সহ্য করতে পারবে? না, কখনাে না; বছরের পর বছর অনুগ্রহের বরগুলাে তাদের দত্ত হয়েছিল যেন তারা স্বর্গরাজ্যের জন্য নিজেদের চরিত্র গঠন করে, কিন্তু তারা কখনাে নিজেদের মনকে প্রেমের পবিত্রতাকে গ্রহণ করতে শিক্ষা দেয়নি; তারা কখনাে স্বর্গ রাজ্যের ভাষা আয়ত্ব করেনি, আর এখন তা তাদের জন্য খুব দেরী হয়ে গেছে। ঈশ্বরের বিরূদ্ধে তাদের বিদ্রোহপূর্ণ জীবন স্বর্গরাজ্যের জন্য তাদেরকে বেমানান করেছে। এর বিশুদ্ধতা, পবিত্রতা এবং শান্তি তাদের জন্য যাতনাদায়ক হবে । ঈশ্বরের মহিমা তাদের কাছে হয়ে ওঠবে প্রজ্জ্বলিত আগুনস্বরূপ। তারা পবিত্র স্থান থেকে পালাতে চেষ্টা করবে। যিনি তাদের মুক্তি কল্পে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁর কাছ থেকে পালাতে তারা ধ্বংসকে স্বাগত জানাবে । দুষ্টরা নিজেদের মনােনয়ন তারা নিজেদের গন্তব্য নির্ধারণ করেছে । তারা স্বেচ্ছায় নিজেদের স্বর্গরাজ্য থেকে বহিষ্কার করেছে এবং ঈশ্বর তাঁর নিজ অবস্থানে সত্য, ন্যায্য ও প্রেমময়। GrHBen 95.2
ঈশ্বরের রায় ঘােষণার সেই মহা দিনে মহা প্লবনের ন্যায় অগ্নি বর্ষিত হবে যা থেকে অধার্মিকদের নিস্তার পাবার কোন উপায় থাকবে না। সেই দিন স্বর্গীয় ক্ষমতার কাছে নিজেদের সমর্পন না করার কোন ব্যবস্থা থাকবে না । তাদের ইচ্ছা শক্তি বিদ্রোহের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে; আর যখন তাদের জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে, তখন তাদের বর্তমান চিন্তা ধারাকে আজ্ঞাবহতা থেকে আজ্ঞাবহতার দিকে, ঘৃণা থেকে প্রেমের দিকে অর্থাৎ সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী করতে অত্যন্ত দেরী হয়ে গেছে । GrHBen 96.1
নরঘাতক কয়িনকে বাচিয়ে রাখার মাধ্যমে ঈশ্বর এই শিক্ষা দিয়েছেন যে, পাপীদের বেঁচে থেকে অবিরাম লাগামহীন পাপ কার্যে লিপ্ত থাকার কি পরিণাম । কয়িনের আদর্শে ও শিক্ষামালার প্রভাবের মাধ্যমে বহু সংখ্যক লােক তাঁর অনুসারী হয়ে পাপকার্যে পরিচালিত হয়েছিল, যে পর্যন্ত না “পৃথিবীতে মনুষ্যের দুষ্টতা অত্যধিক এবং তাহাদের অন্তকরণের চিন্তার সমস্ত কল্পনা নিরন্তর কেবল মন্দ” আর “তৎকালে পৃথিবী ঈশ্বরের সাক্ষাতে ভ্রষ্ট, পৃথিবী দৌরাত্মে পরিপূর্ণ ছিল।” আদিপুস্তক ৬:৫, ১১ । GrHBen 96.2
জগতের প্রতি অনুগ্রহের কারণে নােহের সময়ের ঈশ্বর ভ্রষ্ট অধিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করেছিলেন। দয়ার কারণেই তিনি সদোমের জঘন্য বাসিন্দাদের ধ্বংস করেছিলেন । শয়তানের প্রবঞ্চনা ক্ষমতার কারণে দুষ্কর্মকারী লােকেরা সহানুভূতি ও প্রশংসা পায় এবং অবিরত অন্যদের বিদ্রোহ করতে পরিচালনা করে। যেমন ছিল কয়িনের সময় তদ্রুপ ছিল নােহের সময় এবং অব্রাহাম ও লােটের সময়ে; তেমনি আমাদের সময়েও একই রূপ। শুধু এই নিখিল বিশ্বের প্রতি অনুগ্রহের কারণে ঈশ্বর তাঁর অনুগ্রহ অগ্রাহ্যকারীদের পরিশেষে বিনষ্ট করবেন । GrHBen 96.3
“কেননা পাপের বেতন মৃত্যু; কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্তজীবন” রােমীয় ৬:২৩। জীবন ধার্মিকতার উত্তরাধিকার, মৃত্যু অধার্মিকতার নিয়তি। মােশি ইস্রায়েলের বলেছিলেন, “দেখ, আমি অদ্য তােমার সম্মুখে জীবন ও মঙ্গল এবং মৃত্যু ও অমঙ্গল রাখিলাম।” দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৫। মৃত্যু বলতে শাস্ত্রে এখানে আদমের প্রতি যা উচ্চারিত হয়েছিল তাঁর কথা বলা হয়নি, বলা হয়েছে প্রত্যেক মানুষ, যে আজ্ঞা লঙ্ঘন করবে সে তাঁর জন্য শাস্তি ভােগ করে। এটা “দ্বিতীয় মৃত্যু” যা। অনন্তজীবনের বিপরীত। GrHBen 96.4
আদমের পাপের শাস্তিস্বরূপ, সমগ্র মানব জাতির ওপর মৃত্যুর ছায়া নেমে এল । সবাইকে একই ভাবে মাটির কবরে স্থান করে নিতে হবে। আর পরিত্রাণ পরিকল্পনার সুবাদে, সবাইকে করব থেকে উত্থাপিত করা হবে । “ধার্মিক অধার্মিক উভয় প্রকার লােকের পুনরুত্থান হইবে; কারণ আদমে যেমন সকলে মরে, তেমনি আবার খ্রীষ্টে সকলে জীবন প্রাপ্ত হইবে । প্রেরিত ২৪:১৫; ১ করিন্থীয় ১৫:২২। তবে যারা উত্থাপিত হবে তাদের দুটো শ্রেণীতে ভাগ করা হবে। কেননা এমন সময় আসিতেছে, যখন কবর সকলে তাহার রব শুনিবে, এবং যাহারা সকাৰ্য্য করিয়াছে, তাহারা জীবনের পুনরুত্থানের জন্য ও যাহারা অসৎকাৰ্য্য করিয়াছে, তাহারা বিচারের পুনরুত্থানের জন্য বাহির হইয়া আসিবে।” যােহন ৫:২৮, ২৯ । তারা যারা জীবের পুনরুত্থানের জন্য “ধার্মিক বলিয়া গণ্য হয়েছে তাদেরকে “ধন্য ও পবিত্র বলা হয়েছে । “তাহাদের উপরে দ্বিতীয় মৃত্যুর কোন কর্তৃত্ব নাই ।” প্রকাশিত বাক্য ২০:৬। কিন্তু যারা বিশ্বাস ও অনুশােচনার মাধ্যমে ক্ষমা নিশ্চিৎ না করবে তারা পাপের জন্য অবশ্যই শাস্তি ভােগ করবে। কেননা পাপের বেতন মৃত্যু” তারা তাদের কর্ম অনুযায়ী বিভিন্ন সময় ব্যাপী এবং বিভিন্ন তীব্রতায় সাজা ভােগ করবে, অবশেষে দ্বিতীয় মৃত্যুতে তাঁর সমাপ্তি ঘটবে। যেহেতু পাপীকে তাঁর পাপপূর্ণ অবস্থায় অবিরত তাঁর ন্যায়পরায়নতা ও করুণার দ্বারা মুক্ত করা ঈশ্বরের পক্ষে অসম্ভব, সুতরাং তিনি তাকে তাঁর অস্তিত্ব থেকে বঞ্চিত করেন যা তাঁর পাপ তাকে বঞ্চিত করিয়েছে এবং যা তাকে মূল্যহীন হিসেবে প্রমাণ করেছে । একজন অনুপ্রাণিত লেখক লিখেছেন, “আর ক্ষণকাল পরে দুষ্ট লােক আর নাই, তুমি তাহার স্থান তত্ত্ব করিবে, কিন্তু সে আর নাই।” অন্য আর একজন বলেন, তারা “অজাতের ন্যায় হইবে ।” গীতসংহিতা ৩৭:১০ ওবদিয় ১৬। তারা পযশ দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে, তারা হতাশায় নিমজ্জিত হয় এবং অনন্ত বিস্মৃতির গর্ভে তলিয়ে যায় । GrHBen 96.5
এভাবেই পাপের সমাপ্তি হবে সব ধরণের দুর্দশা ও ধ্বংস সেই সাতে শেষ হয়ে যাবে । গীত সংহিতার রচক বলেন, “তুমি ... দুষ্টকে সংহার করিয়াছ, তুমি অনন্তকালের জন্য তাহাদের নাম লােপ করিয়াছ। শত্রুরা শেষ হইয়াছে । চিরতরে উৎসন্ন হইয়াছে; তুমি নগর সকল ধ্বংস করিয়াছ; তাহাদের নাম পর্যন্ত লুপ্ত হইয়াছে।” গীতসংহীতা ৯:৫, ৬। প্রকাশিত বাক্যে যােহন অনন্তের অবস্থার দিকে দৃষ্টিপাত করে একটি সার্বজনীন প্রশংসা সংগীত শুনছেন, যা একটিও গড়মিল সুরে বিঘ্নিত হচ্ছে না। স্বর্গে ও পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী ঈশ্বরের প্রতি আরােপিত গৌরব শুনছে । প্রকাশিত বাক্য ৫:১৩। তখন সেখানে ঈশ্বরের নিন্দা করার জন্য আর কোন পতিত প্রাণীকে পাওয়া যাবে না কারণ তারা অন্তহীন দুঃখ কষ্টে মানসিক যন্ত্রণায় নরকে সাজা ভােগ করছে, আর তাদের আর্তনাদ মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সংগীতের সাথে মিশ্রিত হবে না । GrHBen 97.1
স্বাভাবিক অমরত্বের ভুল ভিত্তির উপর মৃত্যুর সজ্ঞনতার ধর্মতত্ত্ব অবস্থান করে। এটি এমন একটি ধর্মমতবাদ যা অনন্তকাল সাজা পছন্দ করে, যা শাস্ত্রীয় শিক্ষার বিপরীত, যা আমাদের মানবিকতার অনুভূতির বিপরীত যুক্তি দেখায়। জনপ্রিয় বিশ্বাস মতে, স্বর্গের পাওয়া পরিত্রাণ পৃথিবীতে যা কিছু সংঘটিত হয়েছে তাঁর সব কিছুর সঙ্গে পরিচিত, বিশেষ করে সেই বন্ধুদের জীবনের সাথে যাদের তারা পেছনে ফেলে এসছে। জীবিতদের সমস্যাগুলাে জানা, তাদের প্রিয় ব্যক্তিদের দ্বারা সংঘটিত পাপগুলাে প্রত্যক্ষ করা, তাদের জীবনের সকল প্রকার দুঃখ-কষ্ট, হতাশা এবং তীব্র ঘৃণাগুলাে দেখা- কিভাবে মৃতদের কাছে একটি আনন্দের উৎস হতে পারে? যারা পৃথিবীতে তাদের বন্ধুদের ওপর দিয়ে আকাশে উড়তে থাকবে তাদের কাছে কতটা উপভােগ্য পরমানন্দের বিষয় হতে পারে? আর এটি কতই না মনকে আন্দোলিত করার মত বিশ্বাস যেখানে বলা হয়ে থাকে যে, প্রাণ-বায়ু দেহ ত্যাগ করার সাথে। সাথে অননুতপ্ত আত্মাকে নরকের অগ্নিশিখার মধ্যে পাঠিয়ে দেয়া হয় । তাদেরকে নিদারুন মানসিক যন্ত্রণার কত গভীরতায় ফেলে দেয় যখন তারা দেখে যে তাদের বন্ধুরা’ অপ্রস্তুত অবস্থায় কবরে প্রতিগমন করছে, অনন্তদুঃখ দুর্দশায় ও পাপে প্রবেশ করছে! অনেকে এই হয়রানী ও প্রহসনমূলক চিন্তা ভাবনার উন্মাদনায় পরিচালিত হচ্ছে । GrHBen 97.2
এ বিষয়ে শাস্ত্র কী শিক্ষা দেয়? দায়ূদ বলেন, মৃত্যুতে মানুষ অসচেতন। “তাহার শ্বাস নির্গত হয়, সে নিজে মৃত্তিকায় প্রতিগমন করে; সেই দিনেই তাহার সঙ্কল্প সকল নষ্ট হয়” । গীতসংহিতা ১৪৬:৪। শলােমনও একই সাক্ষ্য দেন: “কারণ জীবিত লােকেরা জানে যে, তাহারা মরিবে; কিন্তু মৃতেরা কিছুই জানে না।” তাহাদের প্রেম, তাহাদের দ্বেষ ও তাহাদের ঈর্ষা সকলই বিনষ্ট হইয়া গিয়াছে; সূর্যের নীচে যে কোন কার্য করা যায়, তাহাতে কোন কালেও তাহাদের আর কোন অধিকার হইবে না।” “কেননা তুমি যে স্থানে। যাইতেছ, সেই পাতালে কোন কার্য কি সঙ্কল্প, কি বিদ্যা, কি প্রজ্ঞা, কিছুই নাই।” উপদেশক ৯:৫, ৬, ১০ । GrHBen 98.1
হিষ্কিয়কে যখন পনের বছর দীর্ঘায়ু মঞ্জুর করা হয়েছিল তখন কৃতজ্ঞ রাজন তাঁর প্রার্থনায় ঈশ্বরকে তাঁর মহা অনুগ্রহের জন্য প্রশংসা-বাণী উৎসর্গ করেছিলেন। এই গানে তিনি বলেন, কেন তিনি এই ভাবে আনন্দ করেছেন; পাতাল ত তােমার স্তবগান করে না; মৃত্যু তােমার প্রশংসা করে না, গর্তগামীরা তােমার সত্যের অপেক্ষা করে না। জীবিত, জীবিত লােকই তােমার স্তব গান। করিবে, আমি যেমন অদ্য করিতেছি।” যিশাইয় ৩৮:১৮,১৯। জনপ্রিয় ধর্মতত্ত্ব নির্দেশ দেয় যে ধার্মিক মৃত্যুতে স্বর্গে চলে যায়, উল্লাসে পরম আনন্দে প্রবেশ করে এবং অমরত্বের জিহবায় তারা ঈশ্বরের প্রশংসা করেন; তবে মৃত্যু,ত হিষ্কিয় এ ধরণের মহিমান্বিত কোন কিছু দেখেন নাই। তাঁর বাক্যের সাথে একমত হয়ে গীতসংহিতার রচক সাক্ষ্য দেন: “কেননা মৃত্যুতে তােমাকে স্মরণ করা যায়না, পাতালে কে তােমার স্তব করিবে?” “মৃতেরা সদাপ্রভুর প্রশংসা করে না, যাহারা নিস্তব্ধ স্থানে নামে, তাহারা কেহ করে না” গীতসংহিতা ৬:৫; ১১৫:১৭। GrHBen 98.2
পঞ্চাশপ্তমীর দিনে পিতর ঘােষণা করেছিলেন যে “আমাদের পিতৃকুলপতি দায়ূদ প্রাণ ত্যাগ করিয়াছেন এবং কবর প্রাপ্ত হইয়াছেন, আর তাহার কবর আজ পর্যন্ত আমালের নিকট রহিয়াছে।” “কেননা দারুল স্বর্গারােহণ করেন নাই।” প্রেরিত ২:২৯, ৩৪। ঘটনা হল পুনরুত্থানের আগ পর্যন্ত দায়ূদ কবরে অবস্থান করলেন, প্রমাণ করে যে ধার্মিকেরা মৃত্যুতে স্বর্গারােহণ করে না। শুধু এটি পুনরুত্থানেই স্বর্গারােহণ করবেন, ঘটনার শ্রেষ্ঠতায় খ্রীষ্ট পুনরুত্থিত হন, আর সেই কারণে অবশেষে দায়ূদও ঈশ্বরের দক্ষিণ পার্শ্বে উপবিষ্ট হতে পারবেন। GrHBen 98.3
পৌল আরও বলেন: “কেননা মৃতগণের উত্থাপণ যদি না হয়, তবে খ্রীষ্টও উত্থাপিত হন নাই। আর খ্রীষ্ট যদি উত্থাপিত না হইয়া থাকেন, তাহা হইলে তােমাদের বিশ্বাস অলীক, এখনও তােমরা আপন আপন পাপে রহিয়াছ । সুতারাং যাহারা খ্রীষ্টে নিদ্রাগত হইয়াছে, তাহারাও বিনষ্ট হইয়াছে।” ১ করিন্থীয় ১৫:১৬-১৮। যদি তাঁর হাজার বছর যাবৎ ধার্মিকেরা তাদের মৃত্যুতে, সরাসরি স্বার্গে আরােহণ করে থাকেন তবে পৌল একথা কেন বলেন যে যদি কোন পুনরুত্থান না থাকত, “যাহারা খ্রীষ্টে দ্রিাগত হইয়াছে, তাহারাও বিনষ্ট হইয়াছে” তবে কোন পুনরুত্থানেরই প্রয়ােজন পড়ত না । GrHBen 99.1
মৃতদের অবস্থার কথা বলতে গিয়ে, সাক্ষ্যমর টিনডাল (Tyndale) ঘােষণা করেন “আমি উন্মুক্ত ভাবে ঘােষণা করছি যে আমি প্ররােচিত হই নাই যে তারা ইতােমধ্যে খ্রীষ্টের মত পূর্ণ গৌরবে ভূষিত, অথবা ঈশ্বরের মনােনীত দূতগণের ন্যায়। এটা আমার বিশ্বাসের প্রমাণ প্রাপ্তিও নয়; যদি হত তবে আমি মাংসিকভাবে পুনরুখ প্রচার বিষয়টি আমার দৃষ্টিতে বৃথা প্রচার ছাড়া আর কিছুই হত না” William Tyndale-এর লিখিত Preface to New Testament (১৫৩৪ সালে মুদ্রিত)। পুনর্মুদ্রিত “ British ReformersTindal, Frith, Barnes, 349 , ৩৪৯ পৃষ্টা। GrHBen 99.2
এটি অনস্বীকার্য ঘটনা যে, মৃত্যুর অমরত্বের আশীর্বাদ পাওয়ার প্রত্যাশা বাইবেলের পুনরুত্থান সম্পর্কিত মতবাদকে বহু বিস্তৃত ভাবে উপেক্ষা করতে পরিচালিত করেছে। এই প্রবণতাটি ডা. এ্যাডাম ক্লার্ক কর্তৃক চিহ্নিত হয়, যিনি বলেছিলেন, “পুনরুত্থান সম্পর্কিত ধর্মতত্ত্বটি সম্পর্কে বর্তমান অপেক্ষা প্রাথমিক খ্রীষ্টিয়ানরা দৃশ্যত অধিক গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করেছেন। সেটি কেমন? প্রেরিতেরা প্রতিনিয়ত এটির উপর গুরুত্বারােপ করতেন, এবং এর মাধ্যমে ঈশ্বরের অনুসারীরা পরিশ্রমে, বাধ্যতায় এবং সতঃস্ফুর্ততায় সক্রিয় হতেন। আর বর্তমান কালে তাদের উত্তরসূরীরা এটি কদাচিৎ উল্লেখ করে থাকেন! তাই প্রেরিতরা যা প্রচার করেছিলেন এবং প্রাথমিক যুগের খ্রীষ্টানরা তা বিশ্বাস করেছিলেন; আমরা যা প্রচার করি, আমাদের শ্রোতাম-লী তা বিশ্বাস করে। সুসমাচারে এমন কোন মতবাদ নেই যেখানে অধিক জোর প্রয়ােগ করা হয়েছে এবং বর্তমানে প্রচার পদ্ধতিতে এমন কোন মতবাদ নেই যা অধিক অবমূল্যায়ন করা হয়।” - Commentary ১ করিন্থীয় ১৫ অধ্যায়ের ওপর, ৩য় অনুচ্ছেদের উপর মন্তব্য। GrHBen 99.3
এটি ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকবে যতক্ষণ না পুনরুত্থানের মহিমান্বিত সত্য খ্রীষ্টিয় জগত কর্তৃক পুনরুত্থানের গৌরবময় সত্য প্রায় সম্পূর্ণরূপে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয় এবং দৃষ্টির আড়াল হয়। একজন প্রধান ধর্মীয় লেখক পৌলের ১ থিষলনীকীয় ৪:১৩-১৮ পদের ওপর এভাবে মন্তব্য করেছেন : “সানাদান সব ধরণের কার্যকর উদ্দেশ্যে হল ধার্মিকদের প্রত্যাশিত অমরত্বের মতবাদ আমাদের জন্য সংঘটিত হবে প্রভুর দ্বিতীয়। আগমনে, আমাদের মনে যেন কোন সংশয়পূর্ণ মতবাদ না থাকে। আমাদের মৃত্যুতে প্রভু আমাদের জন্য আগমন করেন। এই কারণেই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এবং সতর্কতার সহিত জাগ্রত থাকতে হবে । মৃতেরা ইতােমধ্যে গৌরবে প্রবেশ করেছে। তারা তাদের বিচারের জন্য এবং পরম আনন্দের জন্য তুরীর ধ্বনির জন্য অপেক্ষা করে না ।” GrHBen 100.1
কিন্তু যীশু তাঁর শিষ্যদের ছেড়ে যাবার প্রাক্কালে তিনি কি তাদের বলেন নি যে তারা খুব শীঘ্রই তাঁর কাছে নীত হবেন। যীশু বলেছেন, “আমি তােমাদের জন্য স্থান প্রস্তুত করতে যাইতেছি।” “আর আমি যখন যাই ও তােমাদের জন্য স্থান প্রস্তুত করি, তখন পুনর্বার আসিব এবং আমার নিকটে তােমাদিগকে লইয়া যাইব।” যােহন ১৪:২৩। আর পৌল আরও অধিক কিছু বলেন যে, “কারণ প্রভু স্বয়ং আনন্দধ্বনি সহ প্রধান দূতের রব সহ এবং ঈশ্বরের তুরীবাদ্যসহ স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিবেন, আর যাহারা খ্রীষ্টে মরিয়াছে, তাহারা প্রথমে উঠিবে । পরে আমরা যাহারা জীবিত আছি, যাহারা। অবশিষ্ট থাকি, আমরা আকাশ প্রভুর সহিত সাক্ষাৎ করিবার নিমিত্ত একসঙ্গে তাহাদের সহিত মেঘযােগে নীত হইব; আর এইরূপে সতত প্রভুর সঙ্গে থাকিব।” তিনি আরও যােগ করেছেন, “তােমরা এই সকল কথা বলিয়া এক জন অন্য জনকে সান্ত্বনা দাও।” ১ থিষলনীকীয় ৪:১৬-১৮। কত ব্যাপক পার্থক্য এই সান্ত্বনামূলক কথাগুলাের মধ্যে এবং জাগতিক পুরােহিতদের কথাগুলাের মধ্যে যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। পত্রটিতে মৃত্যুর ফলে বিচ্ছিন্ন হওয়া বন্ধুদের সান্ত্বনার উদ্দেশ্যে এই নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে যে, মৃত ব্যক্তি যতই পাপী হন না কেন যখন তাঁর প্রাণ বায়ু বেরিয়ে যায় তখন সে দূতদের মাঝে গৃহীত হয়। পৌল এখানে তাঁর ভ্রাতৃগণকে অদূর ভবিষ্যতে প্রভুর আগমন সম্পর্কে বলছেন, যখন কবরের বন্ধন সকল উন্মােচিত হবে এবং “যারা খ্রীষ্টে মরিয়াছে” তারা অনন্তজীবনের উদ্দেশ্যে উত্থাপিত হবে। GrHBen 100.2
সেই পবিত্রগণের আবাস স্থানে কেউ প্রবেশের পূর্বে তাদের অবশ্যই অনুসন্ধান সূচক বিচারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, এবং ঈশ্বরের সম্মুখে তাদের চরিত্র ও তাদের কার্যাবলী পর্যালােচিত হয়ে যেতে হবে। পুস্তক সমূহে লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে তাদের সকলের বিচার হবে এবং তাদের কার্যানুসারে তারা পুরস্কৃত হবে। মৃত্যুতে এই বিচার সম্পাদিত হয় না। পৌলের বাক্যে কর্ণপাত করুন: “কেননা তিনি একটি দিন স্থির করিয়াছেন, যে দিনে আপনার নিরূপিত ব্যক্তি দ্বারা ন্যায়ে জগৎ-সংসারের বিচার করবেন; এই বিষয়ে সকলের বিশ্বাসযােগ্য প্রমাণ দিয়াছেন, ফলতঃ মৃতগণের মধ্য হইতে তাহাকে উঠাইয়াছেন।” প্রেরিত ১৭:৩১। এখানে প্রেরিত সরল ভাষায় সুনির্দিষ্ট সময়ের, তবে অদূর ভবিষ্যতের কথা উল্লেখ করেছেন; যে দিন ধার্য করা হয়েছে জগতসংসারের বিচার কার্য সম্পাদন করতে । GrHBen 100.3
যিহূদা ঐ একই সময় সম্বন্ধে বলেন: “আর যে স্বর্গ দূতেরা আপনাদের আধিপত্য রক্ষা না করিয়া নিজ বাসস্থান ত্যাগ করিয়াছিল; তাহাদিগকে তিনি মহাদিনের বিচারার্থে শৃঙ্খলে বদ্ধ রাখিয়াছেন।” পুনরায় তিনি হনােকের কথার উদ্ধৃতি দেন: “দেখ, প্রভু আপন অযুত অযুত পবিত্র লােকের সহিত আসিলেন, যেন সকলের বিচার করেন । যিহুদা ৬,১৪। যােহন ঘােষণা করেন যে, তিনি দেখলেন, “কয়েকখানা পুস্তক খােলা গেল,...মৃতেরা পুস্তক সমূহ লিখিত প্রমাণে আপন আপন কাৰ্যানুসারে বিচারিত হইল।” প্রকাশিত বাক্য ২০:১২ । GrHBen 101.1
কিন্তু যদি মৃতেরা ইতােমধ্যে স্বর্গের পরম সুখ উপভােগ করে অথবা নরকের অগ্নি শিখায় ছটফট করে, তবে ভবিষ্যতে বিচারের আর কী প্রয়ােজন আছে? ঈশ্বরের বাক্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের এই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটি হয় অস্পষ্ট না হয় পরস্পর বিরােধী; তারা হয়ত সাধারণ চিন্তা নিয়ে বুঝে থাকে । কিন্তু অকপট মন কি বর্তমান তত্ত্বে কি প্রজ্ঞা অথবা ন্যায়বিচারের কোনটা কি দেখতে পায়? ধার্মিকেরা যদি ঈশ্বরের কাছে একসঙ্গে, সম্ভবত বহু বছর একত্রে বাস করে আসতে থাকে তাহলে তাদের মামলা অনুসন্ধানের পরে ধার্মিক ব্যক্তি কি এই প্রশংসা বার্তা শুনতে পাবে “বেশ, উত্তম ও বিশ্বস্ত দাস...; তুমি আপন প্রভুর আনন্দের সহভাগী হও।” পাপীদের কি যাতনাদায়ক স্থান থেকে ডেকে এনে জগৎ নিবাসীদের বিচারের এই রায় শুনানাে হবে: “আমার নিকট হইতে দূর হও, ... যে অনন্তঅগ্নি প্রস্তুত করা গিয়াছে। তাহার মধ্যে যাও”? মথি ২৫:২১, ৪১। ওহ, ব্যঙ্গ বিদ্রুপের কি এক আনুষ্ঠানিকতা! ঈশ্বরের সুবিচার ও বিজ্ঞাতার প্রতি কি এক লজ্জাজনক অভিযােগ! GrHBen 101.2
আত্মার অমরত্বের ধারণাটি রােমের অন্যতম একটি ভ্রান্তধর্ম মতবাদ, যা পৌত্তলিকতা থেকে সংগৃহিত, যা খ্রীষ্টিয় জগতের ধর্মের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। মার্টিন লুথার এটিকে, “অবিশ্বাস্য কল্পকাহিনী যা পােপীয় নির্দেশের রােমীয় গােবর-গাদার অংশ থেকে গঠিত” রূপে শ্রেণীভুক্ত করেন।” E. Petavel, The Problem of Immortality, শলােমনের উপদেশক পুস্তকের ওপর মন্তব্যে বলা যায় যে, মৃতেরা কিছু জানে না। সংস্কারক বলেন, “অন্য একটি স্থানে বলা আছে যে মৃতদের কোন...অনুভুতি নাই। অর্থাৎ তিনি বলেন, তাহাদের নেই কোন কর্তব্য, নেই কোন বিজ্ঞান, নেই কোন জ্ঞান, এবং সেখানে বিজ্ঞতাও নেই। শলােমনের বিচারে মৃতেরা ড্রিাগত, তাহাদের একেবারেই কোন অনুভুতি নেই। মৃতেরা সেখানে শুয়ে আছে, কি দিন কি রাত তারা কোন কিছুরই হিসাব রাখে না, কিন্তু যখন তাদের নিদ্রাভঙ্গ হবে তখন তাদের মনে হইবে যে তারা যেন এক মিনিট ঘুমিয়ে ছিল।” Martin Luther, Exposition of Solomon’s Booke Called Ecclesiates, ১৫২ পৃষ্ঠা। GrHBen 101.3
পবিত্র শত্রর কোন অংশে এই উক্তি পাওয়া যায় না যে, মৃত্যুর সাথে সাথে ধার্মিকেরা তাদের পুরস্কার পাবে বা মৃতেরা তাদের শাস্তি ভােগ। করবে । পিতৃকূল পতিরা এবং ভাববাদীরা তেমন কোন প্রতিশ্রুতি রেখে যান নি। এ ব্যাপারে খ্রীষ্ট এবং তাঁর প্রেরিতগণ কোন ইঙ্গিত প্রদান করেন নি । বাইবেল সুস্পষ্ট শিক্ষা দেয় যে মৃতরা তাৎক্ষণিক স্বর্গারােহণ করে না। পুনরুত্থান না হওয়া পর্যন্ত তাদের ঘুমন্ত ব্যক্তির সাথে তুলনা করা হয়েছে। ১। থিষলনীকীয় ৪:১৪; ইয়ােব ১৪:১০-১২। “সেই সময় রৌপ্যের তাঁর খুলিয়া। যাইবে, সুবর্ণের পানপাত্র ভাঙ্গিবে” (উপদেশক ১২:৬) এবং মানুষের চিন্তা। শক্তি লােভ পাইবে। তারা নীরব কবরে প্রতিগমন করবে। তারা সুর্যের নিচে আর কোন কিছু অবগত হবে না। ইয়াের ১৪:২১। ধার্মিক পরম শান্তিত বিশ্রামে থাকবে । সময়, হতে পারে তা সংক্ষিপ্ত বা দীর্ঘায়িত । কিন্তু সে সময় তাদের কাছে মুহুর্তের মত মনে হবে। তারা নিদ্রাগত; তারা জেগে উঠবে ঈশ্বরের অমরত্বের গৌরবের তুরী বাদ্যে। “কেননা তূরী বাজিবে, তাহাতে মৃতেরা অক্ষয় হইয়া উত্থাপিত হইবে । ... কারণ এই ক্ষয়ণীয়কে অক্ষয়তা পরিধান করিতে হইবে এবং এই মতকে অমরতা পরিধান করিতে হইবে । আর এই ক্ষয়ণীয় যখন অক্ষয়তা পরিহিত হইবে, এবং মত্ত যখন অমরতা পরিহিত হইবে, তখন এই যে কথা লিখিত আছে তাহা সফল হইবে, “মৃত্যু জয়ে কবলিত হইল।” ১ করিন্থীয় ১৫:৫২-৫৪। যখন তাদের গভীর নিদ্রা থেকে ডেকে ওঠান হবে তখন তারা চিন্তা করতে থাকবে কখন কোথায় তারা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিল। তাদের শেষ অনুভূতি ছিল তাদের মৃত্যু যন্ত্রণা; তাদের শেষ চিন্তা ছিল যে, তারা কবরের শক্তির কাছে পরাজিত হচ্ছে । যখন তারা কবর থেকে জেগে ওঠবে, তাদের প্রথম আনন্দের ভাবনা ধ্বনিত হবে। বিজয় তূরী ধ্বনিতে মৃত্যু, তােমার জয় কোথায়? মৃত্যু, তােমার হুল কোথায়?” ৫৫ পদ। GrHBen 102.1
*****