পরম ধন্য আশা
৬ - শয়তানের ফাঁদসমূহ
খ্রীষ্ট এবং শয়তানের মধ্যে যে মহা সংঘর্ষ প্রায় ছ’হাজার বছর পর্যন্ত চলে আসছে, তা সত্বর শেষ হবে; আর শয়তান মানুষের পক্ষে খ্রীষ্টের কার্য পরাভূত করার জন্য তাঁর প্রচেষ্টা দ্বিগুণ বাড়িয়ে তুলছে যেন আত্মাগণকে তাঁর ফাঁদে ঢুকাতে পারে। যে পর্যন্ত ত্রাণকর্তার ধ্যান ও প্রার্থনা শেষ না হয়, এবং পাপের জন্য আর কোন বলি যাতে না হয়, এই তাঁর উদ্দেশ্য যেন সে। লােকদেরকে অন্ধকারে এবং অনুতপ্ত অবস্থায় ধরে রাখতে পারে। GrHBen 73.1
যখন তাঁর ক্ষমতা প্রতিরােধ করার বিশেষ কোন চেষ্টা থাকবে না, যখন ম-লীর মধ্যে এবং পৃথিবীতে কৌতুহলশূন্যতা, নীরসতা বিরাজ করবে, তখন শয়তানের কোন চিন্তা ভাবনা থাকবে না; কেননা যাদের সে তাঁর ইচ্ছার অধীনে চালাচ্ছে তাদের হারাবার তাঁর আর কোন ভয় থাকবে না । তবে যখন চিরন্তন বিষয়ের প্রতি মনােযােগ আকর্ষণ করা হবে এবং আত্মাগণ জিজ্ঞেস করবে, “পরিত্রাণ পাইবার জন্য আমাকে কি করিতে হইবে?” যে ভূমিকে সে খ্রীষ্টের ক্ষমতার বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষমতার তুলনা করার চেষ্টা করবে এবং পবিত্র আত্মার প্রভাব নকল করবে। GrHBen 73.2
শাস্ত্র ঘােষণা করে যে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে যখন ঈশ্বরের দূতগণ নিজেদেরকে ঈশ্বরের সম্মুখে হাজির করতে এসেছিলেন, শয়তানও তখন তাদের মধ্যে উপস্থিত হল (ইয়ােব ১:৬), চিরস্থায়ী রাজার সম্মুখে নতজানু হয়ে প্রমাণ করতে নয়, কিন্তু ধার্মিকতার বিরুদ্ধে তাঁর নিজ বিদ্বেষপূর্ণ পরিকল্পনা এগিয়ে নেবার জন্য। মানুষ যখন ঈশ্বরের আরাধনার জন্য সমবেত হয় তখন সে তাঁর একই উদ্দেশ্য নিয়ে উপস্থিত হয়। যদিও আমরা তাকে দেখি না তথাপি সে সমস্ত দক্ষতা ও মনােযােগ সহকারে আরাধনাকারীদের মন বশীভূত করার জন্য কাজ করতে থাকে। একজন সুদক্ষ জেনারেলের ন্যায় সে তাঁর আগে থেকেই তাঁর পরিকল্পনা তুলে ধরে । যখন সে ঈশ্বরের বার্তাবাহকগণকে শাস্ত্র অনুসন্ধান করতে দেখে, তখন লােকদের কাছে কোন বিষয়টি উপস্থাপন করা হচ্ছে, সেদিকে সে বিশেষ লক্ষ্য রাখে । তখন সে তাঁর সর্ব প্রকার চতুরতা প্রয়ােগ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, যেন যাদের সে প্রতারিত করছে তাদের কাছে ঐ বার্তা না পৌঁছায়। যে ব্যক্তির এই সতর্কবাণী অধিক প্রয়ােজন তাকে কোন একটি ব্যবসায় যােগ দিতে সজোরে অনুরােধ করা হবে যেখানে তাঁর উপস্থিতি প্রয়ােজন, বা অন্য কোন মাধ্যম, দ্বারা বাক্য শ্রবণে বাধা সৃষ্টি করা হবে যা তাঁর কাছে জীবনের জন্য একটি সুগন্ধ । GrHBen 73.3
আবার শয়তান লক্ষ্য করে যে প্রভুর দাসরা আত্মিক অন্ধকারের কারণে বােঝাগ্রস্থ যা লােকদের আচ্ছাদিত করে । সে ঐশ্বরিক অনুগ্রহ এবং শক্তির জন্য তাদের একান্ত প্রার্থনা শােনে পাচ্ছে যেন তারা হতাশা, অসতর্কতা, এবং শ্রম বিমুখতার ঘাের ছিন্ন করতে পারে । অত:পর নবায়ীত উদ্যম সহ সে তাঁর কৌশল চালনা করে। সে লােকদেরকে ক্ষুধার ইচই পূরণের জন্য বা অন্য ধরণের আত্ম পরিতৃপ্তির জন্য প্রলােভিত করে, আর এরূপে তাদের বােধশক্তি খর্ব করে যেন যা কিছু তাদের জীবনের জন্য শিক্ষা লাভ করা সর্বাধিক প্রয়ােজন তারা যেন তা শুনতে ব্যর্থ হয়। GrHBen 74.1
শয়তান ভালাে করেই জানে যে, সে যত লােককে প্রার্থনা অবহেলায় এবং শাস্ত্র অনুসন্ধান থেকে বিপথে পরিচালিত করতে পারবে ততই তারা তাঁর আক্রমণে পরাভূত হবে । অতএব, মনকে সম্পূর্ণরূপে আচ্ছন্ন করতে সে সম্ভাব্য প্রতিটি পরিকল্পনা উদ্ভাবন করে । সর্বদা এক শ্রেণীর লােক রয়েছে যারা মুখে স্বীকার করে যে, তারা ধার্মিক, যারা সত্য অবগত হওয়ার পরিবর্তে দোষ ক্রটির অন্বেষণ করে, আর বিশ্বাসের সাথে তারা একমত নয়। সেই বিশ্বাসের ভুল তারা খুঁজে বেড়ায়। এরূপ লােকেরাই শয়তানের দক্ষিণ হস্তরূপ সাহায্যকারী । ভ্রাতৃগণের অপবাদকদের সংখ্যা কম নয় এবং যখন ঈশ্বর কর্মরত তখন তারা সর্বদা কর্মব্যস্ত আর তাঁর দাসেরা তাঁর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। যারা সত্যকে ভালবাসে এবং সত্যের আজ্ঞাবহ হয় তাদের কার্য ও বাক্যের প্রতি তারা মিথ্যা রং লেপন করবে। তারা প্রতারক ও প্রতারণাকারী হয়েও খ্রীষ্টের একান্ত আগ্রহী আত্মত্যাগী নাসরূপে দেখাবে । তাদের কাজ হল প্রতিটি প্রকৃত এবং মহৎ কর্তব্যের উদ্দেশ্যের ব্যাখ্যা করা এবং সকল অনভিজ্ঞ লােকদের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করা। তারা প্রতিটি কল্পনাসাধ্য উপায়ে যা খাটি এবং ধার্মিক তা বাজে এবং প্রতারণামূলক করে তােলার চেষ্টা করবে । GrHBen 74.2
কিন্তু ঐ সকল বিষয়ে কারও প্রতারিত হবার প্রয়ােজন নেই। এটি হয়ত তৎক্ষণাৎ দেখা যাবে তারা কার সন্তান-সন্ততি, তারা কার আদর্শ অনুসরণ করে, এবং তাঁর কাজ করে। “তােমরা তাহাদের ফল দ্বারাই তাহাদিগকে চিনিতে পারিবে।” মথি ৭:১৬। তাদের গতিবিধিই শয়তান বিষময় অপবাদের রূপ প্রকাশ করে, “আমাদের ভ্রাতৃগণের উপরে দোষারােপকারী।” প্রকাশিত বাক্য ১২:১০। GrHBen 74.3
মহা প্রতারকের অনেক প্রতিনিধি রয়েছে, তারা যে কোন এবং প্রত্যেক রকমের ভুল উপস্থাপন করার জন্য প্রস্তুত যেন তারা আত্মাগণকে ফাঁদে আটকাতে পারে, সেজন্য বিরুদ্ধ ধর্মমত প্রস্তুত করা হয়েছে, আর সে যাদেরই ধ্বংস করবে তাদের সে বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা এবং ক্ষমতা উপযােগী করে নিবে । ম-লীর মধ্যে অসরল এবং কপট অপুনরুৎপাদিত লােকদের আনয়ন করাই তাঁর পরিকল্পনা, যারা সন্দেহ এবং অবিশ্বাস উৎসাহিত করবে এবং যারা ঈশ্বরের কাজের অগ্রগতি চায় এবং ঐ কাজ নিয়ে সম্মুখে এগিয়ে যেতে চায় তাদের সম্মুখে যেন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে । অনেকে আছে যাদের ঈশ্বরে অথবা তাঁর বাক্যে প্রকৃত বিশ্বাস নেই, তারা কোন নীতিমালার প্রতি সমর্থন দান করে এবং খ্রীষ্টানরূপে নিজেদের পথে চলে এবং এভাবে তারা তাদের প্রান্তিসমূহ শাস্ত্রীয় শিক্ষামালারূপে উপস্থাপন করতে সমর্থ । GrHBen 74.4
অবস্থাটি এই যে, মানুষ যা-ই বিশ্বাস করুক না কেন তাতে কোনই শাস্তি হবে না, এটিই শয়তানের অতীব কৃতকার্যতাপূর্ণ প্রতারণা। সে জানে। যে, প্রেমের সঙ্গে যে সত্য গ্রহণ করা, সেই সত্য গ্রহণকারীর জীবনকে পবিত্র করে; সুতরাং সে অবিরত ভ্রান্ত মতবাদ পৌরাণিক কাহিনী এবং অন্য একটি সুসমাচারের অন্বেষণ করছে। আদি থেকেই ঈশ্বরের দাসগণ ভ্রান্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিবাদ করেছে, প্রতিযােগিতা করেছে; কেবলমাত্র অবাধ্যদের বিরুদ্ধে নয়, কিন্তু যারা আত্মাগণের মরণঘাতী সেই মিথ্যা প্রচারণাকারীদের বিরুদ্ধে। এলিয়, যিরমিয়, পৌল, দৃঢ়তার সঙ্গে নির্ভয়ে তাদের বিরােধিতা করেছেন, যারা ঈশ্বরের বাক্য থেকে লােকদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছিল। যে বদান্যতা একটি সঠিক ধর্মীয় বিশ্বাসকে গুরুত্বহীন মনে করে তা সত্যের এই সকল পবিত্র সমর্থকগণের কোন অনুগ্রহ লাভ করেনি । GrHBen 75.1
শাস্ত্রের অস্পষ্ট এবং কল্পনাপ্রসূত ব্যাখ্যা এবং ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পৰ্কীয় অনেক বিরােধ সৃষ্টিকারী মতবাদ খ্রীষ্টান বিশ্বে পাওয়া যায় যা আমাদের মহা শত্রুর কাজ, যা দ্বারা মনকে বিভ্রান্ত করতে পারে যেন তারা সত্য দেখতে না পায় । ম-লীগুলাের মধ্যে বিচ্ছেদ ও বিভেদ বিশাল পরিমাণে বিরাজমান, যেখানে একটি জনপ্রিয় মতবাদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করার জন্য শাস্ত্র নিয়ে টানা ছেড়ার প্রথা বিরাজ করছে। তাঁর ইচ্ছার একটি জ্ঞান লাভের জন্য নম্র হৃদয়ে যত্ন সহকারে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়নের পরিবর্তে অনেকে কেবলমাত্র আদিম কিছু আবিস্কার করার চেষ্টা করছে। GrHBen 75.2
ভ্রান্তিপূর্ণ শিক্ষামালা বজায় রাখার জন্য অথবা ন-খ্রীষ্টিয় অনুশীলন ধারণ করার জন্য কোন কোন লােক শাস্ত্রের কোন কোন অংশ জোর পূর্বক পৃথক করবে যা আসল বিষয় বর্হিভূত, আর তারা একটা পদের অর্ধেকের উতি দিয়ে তাদের বিষয়টি প্রমাণ করবে, যখন অবশিষ্ট অংশে অর্থ সম্পূর্ণ বিপরীত । নিজেদের মাসিক অভিলাসগুলাের সাথে খাপ খাওয়াতে তারা সর্পের ধূর্ততার সাথে তাদের অমাসঞ্জস্য বাক্যগুলাের ব্যাখ্যার পেছনে নিজেদের লুকিয়ে রাখে। এভাবে অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে ঈশ্বরের বাক্য বিকৃত করে। অন্যান্যরা, যাদের একটি কার্যকর ধারণা রয়েছে, তারা পবিত্র লিখনের নক্সাচিত্র এবং প্রতীকের ওপরে গুরুত্ব আরােপ করে; ওগুলাে তাদের জল্পনা কল্পনার উপযােগী করে ব্যাখ্যা করে যা শাস্ত্রের সাক্ষ্যের প্রতি সামান্যই মনােযােগ প্রদান করে আর তারা নিজেদের ব্যাখ্যা নিজেরাই করে এবং অতঃপর তারা বাইবেলের শিক্ষামলারূপে তাদের নিজেদের খামখেয়ালী ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে । GrHBen 75.3
যখনই একটি প্রার্থনাপূর্ণ, নম্র, শিক্ষণীয় মনােভাব সহকারে, শাস্ত্র অধ্যয়নে মনােনিবেশ না করা হয় তখনই সরল ও সহজতম এবং সেইসাথে অতীব কঠিনতম অংশগুলাে তাঁর প্রকৃত অর্থ থেকে বিকৃত হবে। পােপীয় নেতৃবৃন্দ শাস্ত্রের ঐরূপ অংশ বেছে নেয়ে যা তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য, এবং তাদের সুবিধা মত ব্যাখ্যা করে তা তাদের লােকদের মধ্যে উপস্থাপন করে এবং তারা বাইবেল অধ্যয়ন এবং নিজের পবিত্র সত্যমালার জ্ঞান অস্বীকার করে। সম্পূর্ণ বাইবেলটি ঠিক যেমন লেখা আছে, তদ্রুপভাবেই লােকদের হাতে তুলে দিতে হবে । যদি শাস্ত্রের শিক্ষামালা এরূপ লজ্জাজনক এবং অমার্জিতভাবে উপস্থাপন করা হয়, তবে তারা মােটেই বাইবেল শিক্ষা গ্রহণ না করুক। GrHBen 76.1
যারা তাদের নির্মাতার সঙ্গে পরিচিত হতে ইচই করে তাদের সকলের জন্য বাইবেল একখানি পথ প্রদর্শকরূপে প্রস্তুত করা হয়েছিল । ঈশ্বর মনুষ্যদের কাছে ভাববাণীর নিশ্চিত বাক্য দিয়েছিলেন; দূতগণ এবং এমন কি স্বয়ং খ্রীষ্ট দানিয়েল এবং যােহনকে, অতিসত্বর যা কিছু ঘটবে তা জানাতে এসেছিলেন। আমাদের পরিত্রাণ সম্পর্কিত ঐসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রহস্যাবৃত রাখা হয়নি। এ সকল এমনভাবে প্রকাশিত হয়নি, যা প্রকৃত সত্যান্বেষীকে ভুল পথে পরিচালিত করে। হবক্ক ভাববাদীর মাধ্যমে প্রভু বলেছিলেন: “এই দর্শনের কথা লিখ, সুস্পষ্ট করিয়া ফলকে খুদ, যে পাঠ করে, সে যেন দৌড়িতে পারে।” হবকূক ২:২। যারা প্রার্থনাপূর্ণ চিত্তে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করে, তাদের কাছে তা সহজ। প্রত্যেক প্রকৃত সৎ ব্যক্তি সত্যের আলাের কাছে আসবে । “দীপ্তি বপন করা গিয়াছে ধার্মিকের জন্য।” গীতসংহিতা ৯৭:১১। আর কোন ম-লী পবিত্রতায় অগ্রসর হতে পারে না যে পর্যন্ত তাঁর সভ্য-সভ্যগণ ঐকান্তিকতা সহকারে গুপ্তধনের ন্যায় সত্যের অনুসন্ধান না করে। GrHBen 76.2
বদান্যতা ক্রন্দন দ্বারা মানুষ তাদের শত্রুর কৌশলে পড়ে অন্ধ হয়েছে, এই সময়ে সে সর্বদা তাঁর উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একটানা কাজ করে চলেছে । যেমন সে মানব দূরকল্পনা দ্বারা বাইবেল স্থানচ্যুতকরণে কৃতকার্যতা লাভ করে, ঈশ্বরের ব্যবস্থা একপার্শ্বে রেখে দেয়া হয় এবং ম-লীগুলাে পাপের দাসত্বে বন্দী, তখন তারা, দাবি করে তারা মুক্ত। GrHBen 76.3
অনেকের কাছে, বৈজ্ঞানিক গবেষণা একটি অভিশাপ স্বরূপ হয়েছে। ঈশ্বর বিজ্ঞান এবং শিল্পকলা আবিষ্কারে বিশ্বের ওপর একটি আলাের বন্যা অনুমতি দিয়েছেন; কিন্তু গবেষণা কাজে ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা পরিচালিত না। হলে, সর্বশ্রেষ্ঠ মনােবিজ্ঞান এবং প্রকাশ প্রাপ্তির সম্পর্ক অনুসন্ধানে তাদের চেষ্টায় তারা হতবুদ্ধি হয়ে যায় । GrHBen 76.4
বৈষয়িক এবং আত্মিক উভয় বিষয়ে মানব জ্ঞান আংশিক এবং অসম্পূর্ণ; সুতরাং অনেকে শাস্ত্রের উক্তি সমূহের সঙ্গে বিজ্ঞান সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির ঐক্য আনয়নে অসমর্থ । অনেকে কেবলমাত্র যুক্তি এবং দূরকল্পনাগুলােকে বৈজ্ঞানিক বিষয়রূপে গ্রহণ করে এবং তারা মনে করে যে, ঈশ্বরের বাক্য “অযথারূপে বিদ্যা নামে আখ্যাত” (১ তীমথিয় ৬:২০)। এসব দ্বারা পরীক্ষিত হতে হবে । স্রষ্টা এবং তাঁর কার্যসমূহ তাদের বােধের অগম্য; এবং যেহেতু তারা এগুলাে প্রকৃতির নিয়ম দ্বারা ব্যাখ্যা করতে পারে না তাই বাইবেলের ইতিহাস তাদের কাছে অনির্ভরযােগ্য বলে বিবেচিত হয় । যারা প্রায়ই পুরাতন এবং নতুন নিয়মের ইতিহাসের নির্ভরশীলতাকে। সন্দেহ করে তারা প্রায়ই আরাে এক ধাপ এগিয়ে যায় এবং ঈশ্বরের অস্তিত্ব এবং প্রকৃতির প্রতি তাঁর অসীম শক্তি ও গুণাবলির প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করে । তাদের লঙ্গর ছেড়ে দিয়ে তারা নাস্তিকতার প্রস্তরের ওপরে আঘাত হানছে । GrHBen 77.1
এরূপে অনেকে বিশ্বাস হতে বিপথে চলে যায় এবং দিয়াবল কর্তৃক প্রলুব্ধ হয় । মানুষ তাদের স্রষ্টা অপেক্ষা অধিক জ্ঞানী হবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে; মানব দর্শন বিদ্যা রহস্যসমূহ অনুসন্ধান করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে যা চিরকালেও প্রকাশিত হবে না । ঈশ্বর তাঁর নিজের সম্পর্কে এবং তাঁর উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা প্রকাশ করেছেন, মানুষ যদি তা অন্বেষণ করত, তবে তারা সদাপ্রভূর গৌরব ও মহিমা বুঝতে পারত আর তারা তাদের নিজেদের ক্ষুদ্রতা উপলব্ধি করতে পারত এবং তাদের নিজেদের ও তাদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য সদাপ্রভু যা প্রকাশ করেছেন তাঁর জন্য তারা সgষ্ট হত । GrHBen 77.2
ঈশ্বর যা প্রকাশ করেননি এবং তিনি যা চান না যেন আমরা তা বুঝি; সে বিষয়ে মানব মনকে অম্বেষণ ও ভবিষ্যৎ অনুসন্ধানে ব্যস্ত রাখাই শয়তানের প্রতারণার শ্রেষ্ঠ কাজ। এভাবেই লুসিফর স্বর্গের তাঁর স্থান হারিয়েছিল। সে অসন্তুষ্ট হল কারণ ঈশ্বরের সব গােপন উদ্দেশ্য বিশ্বাস করে তাকে বলেননি, আর তাকে তাঁর নিজের কাজ এবং যে উচ্চপদে তাকে অলংকৃত করা হয়েছিল সে বিষয়ে যা তাঁর কাছে প্রকাশ করা হয়েছিল, তা সে সম্পূর্ণ রূপে তুই করল। সে তাঁর অধীনস্থ দূতগণের মধ্যে একইরূপ অসন্তোষ ছাড়িয়ে দিল, সে তাদের পতন ঘটাল। এখন সে একই মনােভাব নিয়ে মানুষের মনকে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করে এবং তাদেরকে ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ আদেশ সমূহের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শনে পরিচালিত করে। GrHBen 77.3
যারা বাইবেলের সহজ-সরল হৃদয় বিদারক সত্যসমূহ গ্রহণে অনিচ্ছুক, তারা অবিরাম কৌতুক পূর্ণ পৌরাণিক কাহিনীর খোঁজ করছে যা তাদের বিবেককে শান্ত রাখবে। অপেক্ষাকত অল্প আত্মিক আত্ম অস্বীকারমূলক এবং ধর্মীয় শিক্ষাকে অবনমিত করে উপস্থাপন করে তারা। অধিক সুবিধা লাভ করে । এই সব লােকেরা তাদের পাপময় কামনা চরিতার্থ করার জন্য মেধাসম্পন্ন শক্তি সমূহকে খর্ব করে । ঐশ্বরিক পরিচালনার জন্য ভগ্ন আত্মা এবং একান্ত প্রার্থনাসহ শাস্ত্র অন্বেষণে তাদের নিজেদের চেষ্টায় আত্মগরিমার প্রতারণা থেকে রক্ষা পাবার কোন উপায় নেই। হৃদয়ের বাসনার জোগান দিতে শয়তান প্রস্তুত, এবং সে সত্যের স্থানে তাঁর প্রতারণা সমূহ কৌশল গত উপায়ে স্থাপন করে। এভাবে মানুষের মনে পােপত্ব স্থান করে নেয়; এবং সত্য প্রত্যাখ্যান দ্বারা যেহেতু এতে একটি ক্রুশ অন্তর্ভুক্ত, তাই প্রটেস্ট্যান্টরাও একই পথ অনুসরণ করে। যারা সুবিধা এবং নিয়ম অধ্যয়ন করতে ঈশ্বরের বাক্য তুচ্ছ করে, যেন জগতের সঙ্গে তাদের বৈসাদৃশ্য হতে না হয়, তারা ধর্মীয় সত্যের কারণে ক্ষতিকর ধর্মীয় মতামত গ্রহণ করবে। যারা স্বেচ্ছাকৃতভাবে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে তারা প্রত্যেকে বােধ্যরূপ ভুল গ্রহণ করবে। যে ব্যক্তি আতঙ্কের সঙ্গে একটি প্রতারণার প্রতি দৃষ্টিপাত করবে সে তাৎক্ষণিকভাবে অন্য একটি গ্রহণ করবে । প্রেরিত পৌল এই শ্রেণীর লােকদের সম্পর্কে বলেন, যারা “পরিত্রাণ পাইবার নিমিত্ত সত্যের প্রেম গ্রহণ করে নাই।” তিনি বলেন: “আর সেই জন্য ঈশ্বর তাহাদের কাছে ভ্রান্তির কার্যসাধন পাঠান, যাহাতে তাহারা সেই মিথ্যায় বিশ্বাস করিবে, যেন সেই সকলের বিচার হয়, যাহারা সত্যে বিশ্বাস করিত না, কিন্তু অধার্মিকতায় প্রীত হইত।” ২ থিষলনীকীয় ২:১০-১২। আমাদের সম্মুখে এরূপ একটি সতর্কবাণীসহ এটি আমাদেরকে সতর্ক থাকতে সাহায্য করে যে আমরা কোন প্রকার ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করব । GrHBen 77.4
মহান প্রকারকের সবচেয়ে কৃতকার্য প্রতিনিধিদের মধ্যে ভ্রান্ত শিক্ষামালা এবং আত্মিকবাদের মিথ্যা আলৌকিক কার্য অন্যতম । একজন দীপ্তির দূতের ন্যায় ছদ্মবেশ ধারণ করে সে তাঁর জাল বিস্তার করে, এতে খুব কমই সন্দেহ করেছিলেন। লােকেরা যদি এটি বােঝার জন্য একান্ত প্রার্থনা সহকারে ঈশ্বরের গ্রন্থ অধ্যয়ন করত, তবে তাদের অন্ধকারের মধ্যে থেকে ভ্রান্ত শিক্ষা পেতে হত না । কিন্তু তারা যদি সত্য প্রত্যাখ্যান করে তবে তারা প্রতারণার শিকার হবে। GrHBen 78.1
অন্য একটি বিপজ্জনক ভ্রান্তি হল সেই শিক্ষাটি যা খ্রীষ্টের ঈশ্বরত্ব অস্বীকার করে, দাবি করে যে তাঁর এই পৃথিবীতে আগমনের পূর্বে তাঁর কোন অস্তিত্ব ছিল না। বড় এক শ্রেণীর লােক এই মতবাদটি গ্রহণ করে যারা মুখে বাইবেল বিশ্বাস করে; তথাপি পিতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, তাঁর ঐশ্বরিক স্বভাব এবং তাঁর পূর্ব অতি ত্বর ক্ষেত্রে আমাদের ত্রাণকর্তার সরল সহজ উক্তিগুলাের তারার সরাসরি বিরােধীতা করে । শাস্ত্রের সর্বাধিক অনিশ্চিৎ বিকৃতিকরণ ছাড়া আপ্যায়িত হওয়া যায় না, এটি কেবল পরিত্রাণ কার্য সম্পর্কে মনুষ্যের ধারণাকে নীচ করে দেয় না বরং ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া একটি প্রত্যাদেশরূপে বাইবেলের প্রতি বিশ্বাসকে খাটো করে দেয় । এটি অধিক বিপজ্জনক কিছুতে রূপান্তরিত করে এর মােকাবিলা করতে এটি কঠিনতর করে তােলে । লােকেরা যদি খ্রীষ্টের ঈশ্বরত্ব সম্পর্কে অনুপ্রাণিত শাস্ত্রের সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করে, এটি নিয়ে তাদের সঙ্গে তর্ক করা অর্থহীন; কেননা কোন বিতর্কহ তা যতই সিদ্ধান্তমূলক হােক না কেন, তা তাদের অনুপ্রাণিত করতে পারবে না। কিন্তু প্রাণিক মনুষ্য ঈশ্বরের আত্মার বিষয়গুলাে গ্রহণ করে না, কেননা তাহার কাছে সে সকল মূর্খতা; আর যে সকল সে জানতে পারে না।কারণ আত্মিকভাবে বিচারিত হয় । ১ করিন্থীয় ২:১৪। যারা এই ভুল ধারণা ধরে রাখে, তারা খ্রীষ্টের প্রকৃতি বা তাঁর কার্য অথবা মানুষের মুক্তির জন্য ঈশ্বরের মহা পরিকল্পনা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে পারে না। GrHBen 78.2
তথাপি আরাে একটি ভ্রান্ত এবং চাতুর্য পূর্ণ ভুল বিশ্বাস দ্রুত বিস্তার লাভ করছে যা বলে যে ব্যক্তি হিসেবে শয়তানের কোন অস্তিত্ব নেই; শাস্ত্রে যে নামটি ব্যবহৃত আছে তা কেবল মানুষের মন্দ চিন্তা এবং বাসনা উপস্থাপন করে। GrHBen 79.1
শিক্ষাটি এত ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় প্রচারমঞ্চ থেকে প্রতিধ্বনিত হয়, যে খ্রীষ্টের দ্বিতীয় আগমন হল প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে তাঁর মৃত্যুতেই তাঁর আগমন, আকাশীয় মেঘরথে তাঁর সশরীরি আগমন থেকে মানুষের মনকে সরিয়ে নেবার একটা কৌশল । বহু বছর পর্যন্ত শয়তান এ কথা বলে আসছে, “দেখ তিনি অন্তরাগারে,” (মথি ২৪:২৩-২৬); আর বহু সংখ্যক আত্মা এই প্রতারণা গ্রহণ করে হারিয়ে গেছে । GrHBen 79.2
পুনরায়, জাগতিক জ্ঞান শিক্ষা দেয় যে প্রার্থনার কোন প্রয়ােজনীয় নেই । বিজ্ঞানের লােকেরা দাবি করে যে, প্রার্থনার কোন বাস্তব উওর হতে পারে না; তাঁর উত্তর হয়তাে অ GrHBen 79.3
লঙ্ঘন, অলৌকিক কাজ, আর ঐ অলৌকিক কাজের কোন অস্তিত্ব নেই। তারা বলে, নিখিল বিশ্ব কিছু স্থির নিয়মের দ্বারা চলে, আর স্বয়ং ঈশ্বর এই নিয়মের বিপরীতে কিছুই কারন। এরূপে তারা ঈশ্বরকে তাঁর নিজের নিয়ম দ্বারা বন্দীরূপে উপস্থিত করেমনে হয় যেন স্বর্গীয় নিয়মগুলাের ক্রিয়া পদ্ধতি স্বর্গীয় স্বাধীনতাকে বাদ দিতে পারে। এরূপ শিক্ষা শাস্ত্রের সাক্ষ্যের বিরুদ্ধে। খ্রীষ্ট এবং তাঁর শিষ্যগণ কর্তৃক কি কোন অলৌকিক কার্য সাধন করা হয়নি? অদ্য একই করুণাময় ত্রাণকর্তা জীবিত আর তিনি বিশ্বাসের প্রার্থনা এমন ভাবে শ্রবণ করতে ইচ্ছুক যেন তিনি প্রকাশ্যে মানুষের মধ্যে গমনাগমন করেছেন। প্রাণিক মনুষ্য অতি প্রাকৃত ব্যক্তির সঙ্গে সহযােগিতা করে। বিশ্বাসের প্রার্থনার উত্তর প্রদানে আমাদের গ্রহণ করা, ঈশ্বরের পরিকল্পনার একটি অংশ যা আমরা চাইনি তিনি আমাদের তা দেবেন না । অসংখ্য ভুল শিক্ষা এবং অসার কাল্পনিক ধারণা রয়েছে যা খ্রীষ্টান সমাজের ম-লীর লােকেরা গ্রহণ করছে । ঈশ্বরের বাক্য কর্তৃক স্থিরীকৃত সীমা নির্দেশক চিহ্নগুলাের যে কোন একটি স্থানান্তরিত করার মন্দ পরিণামের পরিমাপ করা অসম্ভব। মুষ্টিমেয় লােক যারা এটি স্থানান্তর করার ঝুঁকি নেয় তারা একটি একক সত্যকে প্রত্যাখ্যান করতেই থেমে যায়। অধিকাংশ লােক একের পর এক সত্যের নীতিমালা এক পার্শ্বে রেখে দেয়, যে পর্যন্ত না প্রকৃত নাস্তিকে পরিণত হয়। GrHBen 79.4
জনপ্রিয় ধর্মতত্ত্বের ভুল ভ্রান্তি বহু সংখ্যক আত্মাগণকে নাস্তিকতার দিকে চালিয়ে নিয়েছে যারা হয়ত শাস্ত্রে বিশ্বাসী হত। যে ধর্মতত্ত্বগুলাে একজন ব্যক্তির বিচার, বুদ্ধি, করুণা ও বদান্যতার অনুভূতিকে প্রচ-ভাবে আঘাত করে ঐ ব্যক্তির পক্ষে ধর্মতত্ত্ব গ্রহণ করা অসম্ভব; আর যেহেতু এগুলােই শাস্ত্রীয় শিক্ষামালার প্রতিনিধিত্ব করে, সুতরাং সে এটিকে ঈশ্বরের বাক্য বলে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। GrHBen 80.1
আর শয়তান এ উদ্দেশ্যই হাসিল করতে চায় । ঈশ্বর এবং তাঁর বাক্যের উপর আমাদের বিশ্বাসকে ধ্বংস করা ছাড়া অধিক ইচ্ছা তাঁর নেই। শয়তান সন্দেহবাজ সৈন্য বাহিনীর প্রধান রূপে দ-ায়মান, আর সে তাঁর সর্বশক্তি প্রয়ােগ করছে, যেন সে আত্মাগণকে মতিভ্রান্ত করে তাঁর দলে নিতে পারে । সন্দেহ করা যেন একটি কায়দা কৌশল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বৃহৎ এক শ্রেণীর লােক রয়েছে যারা একই কারণে ঈশ্বরও ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি অবিশ্বাসী নজরে চেয়ে থাকে। কারণ এটি পাপকে ভৎসনা করে দোষী করে । যারা এর শর্তসমূহ পালন করতে অনিচছুক, তারা এর ক্ষমতাকে উল্টিয়ে ফেলে। তারা বাইবেল পাঠ করে এবং পবিত্র মঞ্চ থেকে যে সমস্ত শিক্ষামালা উপস্থাপিত হয় তা শ্রবণ করে কেবল শাস্ত্রমালা এবং বক্তৃতার ভুল খুঁজে পাবার উদ্দেশ্যে। কেবল অল্প সংখ্যক লােকই যে ন্যায্য প্রতিপন্ন করতে বা তাদের নিজেদের কর্তব্য অবহেলা করতে অর্জুহাত আনয়ন করে তা না । অন্যান্যরাও অহঙ্কার ও আলস্য থেকে নাস্তিকতার নীতি অবলম্বন করে । অত্যন্ত আরাম প্রিয় লােকেরা নিজেদের আলাদা ভাবে উপস্থাপন করতে এমন কিছু সম্মানীয় কাজ সম্পাদন করে, যা করতে প্রচেষ্টা ও আত্মঅস্বীকৃতির দরকার হয়, আর তারা নিজেদের জ্ঞান-গরিমার সুনাম নিশ্চিত করাত বাইবেলের সমালােচনা করে থাকে। অনেক কিছু আছে যা চিন্তা করার জন্য সীমিত, এবং উপলব্ধির জন্য ঐশ্বরিক আলােক প্রাপ্তহীন; আর এই কারণেই তারা সমালােচনা করার সুযােগ পায়। অনেকে আছে যারা মনে কার অবিশ্বাস, সমালােচনা এবং নাস্তিকতার পাশে দাঁড়ান একটা গুণ। কিন্তু সারলতার একটি অবয়বের নাচে দেখা যাবে যে, ঐধরণের ব্যক্তিরা আত্ম-বিশ্বাস এবং অহঙ্কার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়। অনেকে আছে যারা শাস্ত্রের এমন কিছু পায় যার দ্বারা অন্যদের ম কে হতবুদ্ধি করে ও বিগড়ে দিয়ে আনন্দ পায়। কোন কোন লােক ভুল দিকটা নিয়ে সমালােচনা করে তর্কবিতর্ক করে, কারণ তারা কেবল ঝগড়া বিবাদই পছন্দ করে। তারা উপলব্ধি করে না যে এভাবে তারা নিজেদের শিকারীর ফাদে জড়িয়ে ফেলছে। তবে প্রকাশ্যে অবিশ্বাস ব্যক্ত করে আর তারা মনে করে তাদের অবস্থান অবশ্যই টিকিয়ে রাখতে হবে। এভাবে তারা অধার্মিকদের সঙ্গে যােগদান করে এবং তাদের সম্মুখে পরমদেশের প্রবেশ দ্বার রুদ্ধ করে। GrHBen 80.2
ঈশ্বর তাঁর বাক্যে ঐশ্বরিক গুণাগুণের পর্যাপ্ত প্রমাণ রেখেছেন । যে মহা সত্যগুলাে আমাদের পরিত্রাণের সাথে সম্বন্ধযুক্ত, তা পরিষ্কাররূপে উপস্থাপন করা হয়েছে। পবিত্র আত্মার সাহায্যে, বা যারা এটি নিষ্কপটভাবে অন্বেষণ করে তাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে। ঈশ্বর মানুষকে একটি শক্ত ভিত্তি প্রদান করেছেন, যার ওপরে তাদের বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে । GrHBen 81.1
তথাপি মানুষের সসীম মন, অসীম ব্যক্তির পরিকল্পনা এবং উদ্দেশ্য। সম্পূর্ণরূপে বুঝতে অক্ষম। আমরা অন্বেষণ করে কখনাে ঈশ্বরকে পাই না। আমরা অনুমানের হস্ত দ্বারা যবনিকা উচু করে ধরবার চেষ্টা করব না, যার পেছনে তিনি তাঁর মহিমা আবৃত করে রেখেছেন। প্রেরিত অবাক হয়ে বলেন। “তাহার বিচার সকল কেমন বােধার্তাত! তাহার পথ সকল কেমন অননুসন্ধেয়!” রােমীয় ১১:৩৩। এ পর্যন্ত আমরা আমাদের সঙ্গে তাঁর আচরণ এবং উদ্দেশ্য বুঝতে পারি যদ্বারা তিনি অনুপ্রাণিত যেন আমরা সীমাহীন ভালবাসা এবং দয়া দেখাতে পারি যা অসীম ক্ষমতার সঙ্গে সংযুক্ত। আমাদের স্বর্গস্থ পিতা সমস্ত কিছু জ্ঞানে ও ধার্মিকতায় ফরমাস করেন এবং আমরা অসন্তুষ্ট হব না, অনির্ভরশীলও হব না বরং সমাদর ও শ্রদ্ধায় বশ্যতা স্বীকার করব । তিনি আমাদের কাছে তাঁর উদ্দেশ্য ততটুকুই ব্যক্ত করবেন যা আমাদের পক্ষে জ্ঞাত হওয়া উত্তম এবং এর পরে যা কিছু আছে তা ঐ সর্বক্ষমতাময়ের হাতে যাতে আমাদের অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে, আর তাঁর হৃদয় প্রেমে পরিপূর্ণ । GrHBen 81.2
ঈশ্বর যখন বিশ্বাসের পর্যাপ্ত প্রমাণ দিয়েছেন, তখন তিনি অবিশ্বাসের কোন অজুহাত মার্জনা করবেন না। যারা তাদের সন্দেহ ঝুলিয়ে রাখার জন্য আঁকড়ার খোঁজ করবে, তারা তা পাবে। আর যারা ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ এবং আজ্ঞাবহ হতে অস্বীকার করে যেন যে পর্যন্ত না প্রতিটি আপত্তি অপসারিত হয় এবং আর কোন একটি সন্দেহের সুযােগ না থাকে তারা কখনাে আলাের কাছে আসতে পারবে না । GrHBen 81.3
ঈশ্বরে অবিশ্বাস হল অ-নবায়নকৃত অন্তঃকরণের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, যা তাঁর সঙ্গে শত্রুতা । কিন্তু বিশ্বাস হল পবিত্র আত্মা কর্তৃক অনুপ্রাণিত, আর তা লালন করলে শুধু তখনই প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে। একটি দৃঢ় সংকল্প ও প্রচেষ্টা ছাড়া কোন ব্যক্তি বিশ্বাসে বলবান হতে পারে না । অবিশ্বাসকে সুযােগ দিলেই সে শক্তিশালী হয়; আর মানুষ যদি, তাদের বিশ্বাস ধরে রাখার জন্য ঈশ্বর যে প্রমাণসমূহ দিয়েছেন তাঁর ওপরে অবস্থান না করে বরং তাঁর অসার আপত্তি ও প্রশ্ন তােলে, তবে তারা দেখবে তাদের সন্দেহরাশি অবিরত আরাে অধিক সুদৃঢ় হচ্ছে। GrHBen 81.4
কিন্তু যারা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞায় সন্দেহ করে এবং তাঁর অনুগ্রহের। নিশ্চয়তায় অবিশ্বাস করে তারা তাকে অশ্রদ্ধা করছে; এবং তাদের প্রভাব। অন্য লােকদের খ্রীষ্টের কাছে না এনে বরং তাঁর নিকট থেকে ফিরায়ে দেয়। তারা নিষ্ফলা বৃক্ষ, যা অন্ধকারাচ্ছন্ন শাখাগুলাে দূরে যায় এবং ছাড়িয়ে পড়ে অন্য গাছের চারাগুলােকে সূর্যরশ্মি পেতে বাধা সৃষ্টি করে, এবং সেগুলাে নুয়ে পড়তে বাধ্য করে আর তারা শীতল ছায়ার নীচে মরে যায়। এই সব লােকদের জীবনের কাজ তাদের বিরুদ্ধে এমন সাক্ষ্য বলে প্রতীয়মান হবে যা কখনাে শেষ হবে না। তারা সন্দেহ এবং সমালােচনার বীজ বপন করছে যা একটি অব্যর্থ ফসল উৎপন্ন করবে । GrHBen 82.1
যারা সততার সঙ্গে তাদের সন্দেহ থেকে মুক্ত হতে চায় তাদের জন্য অনুসরণ করার একটি মাত্র পথ আছে । তারা যা না বুঝে সে সম্পর্কে অসার এবং তুহনায় প্রশ্ন না করে বরং তারা সেই আলাের প্রতি মনােযােগ প্রদান। করুক যা ইতােমধ্যে তাদের ওপর জ্বলে উঠেছে, তাতে তারা বৃহত্তর আলাে পাবে। তাদের কাছে যা সহজবােধ্য করে দেয়া হয়েছে, তাঁর প্রতিটি কাজ তারা করুক তাতে তারা এখন যে সন্দেহের মধ্যে রয়েছে তা বুঝতে ও করতে সমর্থ হবে। GrHBen 82.2
শয়তান নকল বা ভেজাল কিছু উপস্থাপন করতে পারে যা সত্যের সদৃশ যাতে করে, যারা প্রতারিত হতে ইচই করে, , যারা আত্ম-অস্বীকার এবং ত্যাগ স্বীকার পরিত্যাগ করতে চায় তাদেরকে প্রতারিত করতে পারে; কিন্তু যে ব্যক্তি সততার সহিত যে কোন মূল্যে সত্য জানতে চায়, তাঁর পক্ষে এরূপ একটি আত্মাকেও তাঁর ক্ষমতাধীন রাখতে পারবে না। খ্রীষ্টই সত্য “যিনি সকল মনুষ্যকে দীপ্তি দেন, তিনি জগতে আসিতেছিলেন।” যােহন। ১:৯। মানুষকে সকল সত্যে পরিচালিত করার জন্য সত্যের আত্মাকে প্রেরণ করা হয়েছে। আর ঈশ্ব-পুত্রের ক্ষমতায় এটি ঘােষণা করা হয়েছে : “অম্বেষণ কর, পাইবে ।” “যদি কেহ তাহার ইচ্ছা পালন করতে ইচ্ছা করে, সে এই উপদেশের বিষয়ে জানিতে পারিবে ।” মথি ৭:৭; যােহন ৭:১৭। GrHBen 82.3
খ্রীষ্টের অনুগামীদের বিরুদ্ধে শয়তান ও তাঁর অনুসারীরা যে ষড়যন্ত্র করছে সে সম্পর্কে তারা খুব সামান্যই অবগত আছে। কিন্তু যিনি স্বর্গে সমাসীন তিনি তাঁর সুগভীর পরিকল্পনা সম্পন্ন করার জন্য এইসব পরিকল্পনা। নস্যাৎ করে দেবেন। প্রভু তাঁর লােকদেরকে অনুমতি প্রদান করেছেন এবং মেনে নিয়েছেন যেন তারা অগ্নিময় কৃত্যায় পরীক্ষার অধীন হয়, এ হেতু নয় যে, তাদের কষ্টে ও দুঃখে তিনি আনন্দ পান, কিন্তু তাদের চরম বা চূড়ান্ত বিজয় লাভের জন্য এই প্রক্রিয়া অপরিহার্য। তিনি তাঁর নিজ গৌরবে দৃঢ়তার সাথে তাদেরকে একইভাবে প্রলােভন হতে অবিরত রক্ষা করেন না, কেননা পরীক্ষার এই উদ্দেশ্য হল, মন্দতার সর্বপ্রকার প্রলােভনকে প্রতিরােধ করতে প্রস্তুত করা । GrHBen 82.4
দুষ্ট লােক অথবা দিয়াবলের চেলাবেলারা ঈশ্বরের কার্যে বাধা সৃষ্টি করতে পারে না, অথবা তাঁর লােকদের সম্মুখে উপস্থিত হবার পথ রুদ্ধ করতে পারে না, যদি তারা ইচেছ করে প্রশমিত ভগ্নচূর্ণ অন্তঃকরণে তাদের পাপ স্বীকার করে এবং পাপকে দূরে রাখে এবং বিশ্বাসে তাঁর প্রতিজ্ঞামালা দাবি করে। প্রতিটি পরীক্ষা, প্রতিটি বিরােধপূর্ণ প্রভাব, সে প্রকাশ্য বা গােপনে হােক, তা কৃতকার্যতার সাথে প্রতিরােধ করা যায়, “পরাক্রম দ্বারা নয়, বল দ্বারাও না কিন্তু আমার আত্মা দ্বারা, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন।” সখরিয় ৪:৬। GrHBen 83.1
“কেননা ধার্মিকগণের প্রতি প্রভুর চক্ষু আছে; তাহাদের বিনতির প্রতি তাহার কর্ণ আহে।. . আর যদি তােমরা সদাচরণের পক্ষে উদ্যোগী হও, তবে কে তােমাদের হিংসা করিবে?” ১ পিতর ৩:১২, ১৩। বিলিয়ম যখন বিত্তশালী পুরষ্কারের প্রতিজ্ঞা দ্বারা প্রলুদ্ধ হয়ে ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে জাদুমন্ত্র প্রয়ােগ করলেন এবং প্রভুর কাছে বলি উৎসর্গের দ্বারা তাঁর লােকদের ওপরে একটি অভিশাপ দেয়ার চেষ্টা করলেন, ঈশ্বরের আত্মা শয়তানকে তাঁর অভিশাপ বাণী উচ্চারণ করতে নিষেধ করলেন, এবং বিলিয়মকে একথা বলতে জোর করা হল “ঈশ্বর যাহাকে শাপ দেন নাই, আমি কিরূপে তাহাকে শাপ দিব? সদাপ্রভু যাহার উপর কুপিত হন নাই, আমি কি প্রকারে তাহার উপর কুপিত হইব?” “ধার্মিকের মৃত্যুর ন্যায় আমার মৃত্যু হউক, তাহার শেষ গতির তুল্য আমার শেষ গতি হউক । বেদিতে যখন উৎসর্গ করা শুরু হল তখন অধার্মিক ভাববাদী বললেন, “দেখ আমি আশীবাদ করিবার আজ্ঞা পাইলাম, তিনি আর্শীবাদ করিয়াছেন, আমি অন্যথা করিতে পারি না। তিনি যাকোবে অধর্ম দেখতে পান নাই, ইস্রায়েলে উপদ্রব দেখেন নাই, উহার ঈশ্বর সদাপ্রভু উহার সহবর্তী, রাজার জয়ধ্বনি উহাদের সহবর্তী ।” “নিশ্চয়ই যাকোবে মায়াশক্তি নাই ইস্রায়েলে মন্ত্র নাই, এক্ষণে যাকোবের ও ইস্রায়েলের বিষয় বলা যাইবে, ঈশ্বর কি না সাধন করিয়াছেন।” তথাপি তৃতীয় বার বেদি নির্মাণ করা হল, আর বিলিয়ম একটি আভশাপ নিশ্চিত করতে এলেন । কিন্তু অনিচ্ছুক ভাববাদীর জিহবা থেকে ঈশরের আত্মা তাঁর মনােনীত জাতির উন্নতি ঘােষণা করলেন এবং তাদের শত্রুর মুখতার ব্যাপারে এবং অপকারের ইচ্ছার প্রতি ধমক দিলেন : “যে তােমাকে শাপ দেয়। সে শাপগ্রস্ত।” গণনা ২৩:৮, ১০, ২০, ২১, ২৩; ২৪:৯। GrHBen 83.2
ইস্রায়েলের লােকেরা এই ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিল ও আর এতদিন তারা তাঁর ব্যবস্থার প্রতি আজ্ঞাবহ ছিল, পৃথিবীর বা নরকের কোন শক্তি তাদের বিরূদ্ধে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে নি। কিন্তু এই আভিশাপ যা বিলিয়মকে ঈশ্বরের লােকদের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করতে অনুমতি দেয়া হয়নি, অবশেষে সে তাদেরকে প্রলুব্ধ কবে পাপের মধ্যে আনায়ন করে কৃতকার্যতা লাভ করে। তারা যখন ঈশ্বরের আজ্ঞা লঙ্ঘন করে, তখন তারা তাঁর কাছ থেকে নিজেদের আলাদা করে, আর তারা ধ্বংসের ক্ষমতা অনুভব করা,ত পরিত্যক্ত হয় । GrHBen 83.3
শয়তান ভালাে করেই জানে যে দূর্বলতম আত্মা যে খ্রীষ্টেতে থাকে, সে অন্ধকারের বাহিনীর জন্য একটি দিয়াশলাই অপেক্ষাও অধিক, আর তাতে সে নিজেইে নিজেকে খােলামেলাভাবে প্রকাশ করবে, আর সে বাধা ও প্রতিরােধের সম্মুখীন হবে। সুতরাং সে তাদের দৃঢ় দূর্গ থেকে ক্রুশের সৈনিকদেরকে সরিয়ে নেবার চেষ্টা করবে, আর সে তাঁর সমস্ত শক্তি নিয়ে ওত পেতে থাকে, প্রস্তুত থাকে যেন যারা তাঁর ভূমিতে প্রবেশ করে তাদের ধ্বংস করতে পারে কেবল নম্রভাবে ঈশ্বরে নির্ভর করা এবং তাঁর সমুদয় আজ্ঞার প্রতি বাধ্যতা প্রদর্শনে আমরা নিরাপদ হতে পারি। GrHBen 84.1
প্রার্থনা ব্যতিরেকে কোন ব্যক্তি একটি দিন বা একটি ঘণ্টার জন্যও নিরাপদ নয়। বিশেষ করে আমাদেরকে তাঁর বাক্য বুঝবার জ্ঞান লাভের জন্য প্রভুর কাছে সনিৰ্বর্ণা অনুরােধ করতে হবে । এই ইনেই পরীক্ষকের মনােরম কৌশল এবং চুল প্রকাশিত, যদ্বারা সে কৃতকার্যের সাথে প্রতিরােধ হতে পারে। শয়তান শত্রর অনুচ্ছেদগুলাের উপর নিজের ব্যাখ্যা স্থাপন করে উদ্ধৃতি প্রদানে সুদক্ষ, আর এভাবেই সে আমাদের হােচট খাওয়ানাের আশা করে থাকে। আমাদের নম্র হৃদয়ে শাস্ত্র অধ্যয়ন করতে হবে, আমরা ঈশ্বরের নির্ভর শীল হওন থেকে কখনাে দৃষ্টিহারা হব না। আমরা অবিরত শয়তানের কৌশলের বিরুদ্ধে পাহারা থেকে, বিশ্বাসে প্রার্থনা করব: “আমাদের পরীক্ষাতে আনিও না।” GrHBen 84.2
*****