স্বাস্থ্য এবং সুখ

181/269

শিশুর খাদ্য

প্রকৃতি যে সব খাদ্য সরবরাহ করে থাকে তাই শিশুর জন্য সর্বোত্তম খাদ্য। এসব থেকে তাদের অনাবশ্যকভাবে বঞ্চিত করা উচিত না। নিজের সুবিধার্থে অথবা সামাজিক আনন্দের জন্য তার শিশুর কোমল পরিচর্যা থেকে নিজেকে দূরে রাখা বা মুক্ত রাখা একজন মায়ের পক্ষে একটা নির্দয় কাজ। MHBen 359.3

খাদ্য সম্পর্কিত অভ্যাস সম্পর্কে শিশুদের প্রশিক্ষণ দান কদাচিৎ অতি হিসেব হতে পারে। ছোটদের শেখা প্রয়োজন যে তারা বাঁচার জন্য খায়, খাওয়ার জন্য বাঁচে না। শিশুদের শিক্ষা শুরু হওয়া উচিত তাদের মায়েদের কোল থেকেই। শিশুদের শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সময় পর পর খাবার দেয়া উচিত, এবং বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে দিনে খাদ্য পরিবেশনের সংখ্যা কমিয়ে দেয়া উচিত। মিষ্টি খেতে দেয়া উচিত নয়, অথবা বড়দের খাবার, যা তারা হজম করতে পারে না। শিশুদের যত্ন এবং নিয়মমাফিক খাওয়ানোতে শুধু মাত্র তাদের স্বাস্থ্যকে সংবর্ধিত করে না, তাদের শান্তি ও মিষ্ট স্বভাবরূপে গড়ে তোলে, তবে অভ্যাসের এই ভিত্তি পরবর্তী বছরগুলোতে তাদের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনবে। MHBen 359.4

যেহেতু ছেলেমেয়েরা শিশু অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসে, তা সত্ত্বেও তাদের খাদ্য সম্পর্কে স্বাদ এবং ক্ষুধার ব্যাপারে খুব যত্নবান হওয়া উচিত। স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্ক ব্যতিরেকে, তারা যখন যা খেতে চায় প্রায়ই তাদের তা খেতে দেয়া হয়। শ্রম ও অর্থ প্রায়ই অস্বাস্থ্যকর রসনারোধে খাদ্যের জন্য অল্প বয়স্কদের ধারণা করতে অনুপ্রাণিত করে যে এটাই জীবনের জন্য সর্বো‪চ জিনিস যার মধ্যে সর্বাধিক পরিমাণে সুখ নিহিত আছে, এটা ক্ষুধা পরিতৃপ্ত করতে সক্ষম। এই ধরনের শিক্ষার ফল হয় অতি ভোজন, তারপরে আসে অসুস্থতা, যা পরবর্তীতে বিষাক্ত মাদক ওষুধের দিকে ধাবিত করে। ‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬ MHBen 360.1

পিতামাতা তাদের সন্তানদের খাদ্যের প্রতি ক্ষুধার ব্যাপারে শিক্ষা দেয়া উচিত, এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে না দেয়া উচিত। তবে খাদ্য বিধি অনুসরণ প্রচেষ্টায়, শিশুর কাছে যা অপছন্দের খাবার তা তাকে দেয়া উচিত নয়। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত, ভুল করা উচিত নয়, অথবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খেতে দেয়া উচিত নয়। শিশুদের অধিকার আছে, তাদের অভিরুচি আছে, এবং যখন তাদের এই অভিরুচিগুলো যুক্তিসম্মত হয় তখন তাদের প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত। MHBen 360.2

খাবার খাওয়ার ব্যাপারে নিয়মনীতি যত্নের সাথে পালন করা উচিত। মধ্যকালীন আহার হিসেবে কোন কিছুই খাওয়া উচিত নয়, মিষ্টান্ন, কেক, চকলেট, পেস্ট্রি, বাদাম, ফলমূল, অথবা কোন প্রকার খাদ্যই গ্রহণ করা উচিত নয়। অনিয়মিত খাবার খাওয়ার ফলে পরিপাক তন্ত্রের স্বাস্থ্যকর ছন্দ পতন ঘটে, স্বাস্থ্য ও মনের প্রফুল্লতা নষ্ট হয়। এবং ছেলেমেয়েরা যখন খাবার টেবিলে আসে, স্বাস্থ্যকর খাবার তাদের মুখে রোচে না; যে খাবার তাদের জন্য ক্ষতিকর সেই খাবারের প্রতি তাদের আগ্রহ জাগে। MHBen 360.3

যে সব মায়েরা স্বাস্থ্য এবং সুখের মূল্য হিসেবে খোশমেজাজে তাদের সন্তানদের ই‪ছাগুলোকে প্রশ্রয় দেয়, তারা মন্দের বীজ বুনছে যা একদিন হঠাৎ দেখা দেবে এবং ফল ধরবে। ছোটরা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে তাদের আত্মবাসনাও বৃদ্ধি পায়, এবং মানসিক এবং শারীরিক শক্তিও বিসর্জন দেয়। যে মায়েরা এই ধরনের কাজ করে তারা যেমন বীজ বুনে তেমন তিক্ত শস্য কাটে। তারা দেখে তাদের ছেলেমেয়েরা সমাজে ও ঘরে মহৎ এবং উপকারী ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে ওঠার পরিবর্তে মন-মানসিকতা ও চরিত্রের দিক থেকে অযোগ্যরূপে বৃদ্ধি পেয়েছে। আত্মিক ও একই সাথে মানসিক ও শারীরিক শক্তি মন্দ অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬ MHBen 361.1

বিবেক শক্তিহীন হয়ে পড়ে, এবং ভালো অনুভূতিগুলোর প্রতি সংবেদনশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পক্ষান্তরে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেয়া উচিত, এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে তাদের শিক্ষা দেয়া উচিত, এমন পরিকল্পনা করতে দিন যাতে যে সব জিনিস তাদের ক্ষতি করতে পারে তা যেন তারা নিজেরাই বর্জন করতে থাকে। তারা ভাল কিছুর জন্য ক্ষতিকর জিনিস পরিত্যাগ করে। খাবার টেবিল এমন সব খাবার দিয়ে সাজান যে সব খাবার ঈশ্বর আমাদের প্রচুর পরিমাণে দিয়েছেন যাতে খাবার টেবিল লোভনীয় এবং আকর্ষণীয় হয়। খাবার সময়টি হোক আনন্দময়। সুখের সময়। যেহেতু আমরা ঈশ্বরের দেয়া উপহারগুলো উপভোগ করি, তাই আমরা কৃতজ্ঞতার সাথে দাতাকে (ঈশ্বরকে) ধন্যবাদ জানাব। MHBen 361.2