খ্রীষ্টের দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষা

22/61

মুক্তা

মথি ১৩:৪৫, ৪৬ পদের উপর ভিত্তি করে রচিত

পরিত্রাণকারী ভালোবাসার আশীর্বাদকে আমাদের মুক্তিদাতা একটি মূল্যবান মুক্তার সাথে তুলনা করেছেন। তিনি এক বণিকের দৃষ্টান্তের বণিক মধ্য দিয়ে এই শিক্ষাটি দিয়েছেন, যে ভালো মানের মুক্তা খুঁজে বেড়াত। “আবার স্বর্গ-রাজ্য এমন এক বণিকের তুল্য, যে উত্তম উত্তম মুক্তা অন্বেষণ করিতেছিল, সে একটি মহামূল্য মুক্তা দেখিতে পাইয়া গিয়া সর্বস্ব বিক্রয় করিয়া তাহা ক্রয় করিল।” খ্রীষ্ট স্বয়ং এক মহা মূল্যবান মুক্তা। তাঁর মাঝেই একীভূত হয়েছে তাঁর পিতার সকল মহিমা এবং তাঁর পরিপূর্ণতা। তিনিই তাঁর পিতার মহিমার উজ্জ্বলতা এবং তিনিই তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রতিরূপ ত্রিত্বের পূর্ণতা সাধনকারী। ঈশ্বরের সমস্ত স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য তাঁর চরিত্রের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। পবিত্র শাস্ত্রের প্রত্যেকটি পাতা তাঁর আলো দ্বারা উদ্ভাসিত হয়েছে। খ্রীষ্টের ধার্মিকতা এক বিশুদ্ধ সাদা মুক্তার মত, যেথায় কোন খুঁত নেই, কোন ত্রুটি নেই। মানুষের কোন কাজ ঈশ্বরের এই অমূল্য উপহারকে আরও উন্নত করতে পারবে না। এই রত্নে কোন খাদ নেই। খ্রীষ্টের মধ্যে “জ্ঞানের ও বিদ্যার সমস্ত নিধি গুপ্ত রহিয়াছে।” কলসীয় ২:৩। তিনি “হইয়াছেন আমাদের জন্য ঈশ্বর হইতে জ্ঞান Ñ ধার্মিকতা ও পবিত্রতা এবং মুক্তি।” ১ করিন্থীয় ১:৩০। মানুষের আত্মার প্রয়োজন মেটাতে পারে এমন যা কিছু এই বিশাল জগতে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে, তা নিহিত রয়েছে খ্রীষ্টের মাঝে। আমাদের ত্রাণকর্তা এমন এক মহা মূল্যবান মুক্তা যাঁর সাথে আর কোন কিছুর তুলনা করতে গেলে ব্যর্থ হতে হবে। COLBen 95.1

খ্রীষ্ট “নিজ অধিকারে আসিলেন, আর যাহারা তাঁহার নিজের, তাহারা তাঁহাকে গ্রহণ করিল না।” যোহন ১:১১। ঈশ্বরের জ্যোতি এই জগতে দ্বীপ্তি দিল এবং “অন্ধকার তাহা গ্রহণ করিল না।” যোহন ১:৫। কিন্তু সকলেই যে ঈশ্বরের এই উপহার থেকে বিচ্যুত হয়েছিল তা নয়। দৃষ্টান্তের বণিকটি এমন এক শ্রেণীর মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে, যারা একাগ্রতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে এই পৃথিবীর সমস্ত সাহিত্যকর্ম, বিজ্ঞান, ও পরজাতীয় ধর্মের মাঝে অনুসন্ধান করে তাদের আত্মার ধন সঞ্চয়ের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যিহূদীদের মধ্যেও এমন অনেকে ছিলেন যারা তাদের জীবনে অনুপস্থিত সেই সত্যের অনুসন্ধান করছি। আনুষ্ঠানিকতায় পরিপূর্ণ ধর্মকর্মে সন্তুষ্ট না হয়ে তাঁরা সত্যিকার আত্মিক ও সমৃদ্ধি দানকারী ধর্মের খোঁজে পথে নেমেছিলেন। খ্রীষ্টের মনোনীত শিষ্যেরা এই দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ ছিলেন। আর কর্ণীলিয় ও ইথিয়পীয় নপুংসক ছিলেন পূর্বে উল্লিখিত শ্রেণীর মানুষ। তাঁরা স্বর্গ থেকে বিচ্ছুরিত জ্যোতি পাওয়ার জন্য আশা করছিলেন ও প্রার্থনা করছিলেন। যখন খ্রীষ্ট তাদের কাছে তা প্রকাশ করলেন, তখন তাঁরা তাঁকে আনন্দ চিত্তে গ্রহণ করলেন। COLBen 95.2

এই দৃষ্টান্তে মুক্তাটিকে কোন উপহার হিসেবে দেখানো হয় নি। বণিকের কাছে যা কিছু ছিল সব বিক্রি করে দিয়ে সে ঐ মুক্তাটি ক্রয় করেছিল। অনেকে এর অর্থ জিজ্ঞেস করেন, কারণ খ্রীষ্টকে সুসমাচারে এক মহা মূল্য উপহার হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি এক উপহার বটে, কিন্তু শুধুমাত্র তাদের কাছে, যারা নিজেদেরকে অর্থাৎ তাদের আত্মা, দেহ, ও অন্তর শুধুমাত্র তাঁর জন্য গচ্ছিত রেখেছে। আমাদের নিজেদেরকে খ্রীষ্টের কাছে সমর্পণ করে; এখন জীবন ধারণ করতে হবে যেখানে তাঁর ইচ্ছার প্রতি সম্পূর্ণ বাধ্যতা এবং তাঁর আদেশ অনুসারে কাজ করার মানসিকতা রয়েছে। আমরা এই পৃথিবীতে যে ব্যক্তি হিসেবে জীবন ধারণ করছি, আমাদের যে দক্ষতা ও মেধা রয়েছে, তা একান্তভাবে প্রভুর, যা তাঁর উপাসনা ও পরিচর্যার্থে ব্যয় করতে হবে। যখন আমরা এভাবে আমাদের নিজেদেরকে উপহার হিসেবে সম্পূর্ণ ভাবে তাঁর কাছে সমর্পণ করব, তখন স্বর্গের সমস্ত ধন রাজি সহকারে তিনি নিজেকে আমাদের কাছে উপহার হিসেবে প্রদান করবেন। আমরা সেই মহা মূল্যবান মুক্তা অর্জন করতে পারব। COLBen 96.1

পরিত্রাণ এক বিনামূল্যে দত্ত উপহার, এবং তথাপি তা ক্রয় বিক্রয় করা হয়। যে বাজারে ঐশ্বরিক দয়ার ব্যবস্থাপনা দ্বারা পরিচালিত হয়, সেখানে এই মহা মূল্যবান মুক্তা কোন অর্থ ও মূল্য ব্যতীত উপস্থাপন করা হয়। এই বাজারে প্রত্যেকেই স্বর্গের মঙ্গলজনক দ্রব্য আহরণ করতে পারে। সত্যের ধনরাশি প্রত্যেকের জন্যই উন্মুক্ত রয়েছে। প্রভু ঘোষণা দিয়েছেন, “দেখ, আমি তোমার সম্মুখে এক খোলা দ্বার রাখিলাম, তাহা রুদ্ধ করিতে কাহারও সাধ্য নাই।” এই দ্বারের সামনে তলোয়ার হাতে নিয়ে কোন রক্ষী পাহারা দিচ্ছে না। দরজা থেকে ও দরজার ওপার থেকে উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে, এসো। পরিত্রাতার কণ্ঠ আন্তরিকতা ও ভালবাসা সহকারে আমাদেরকে আহ্বান জানাচ্ছে: “আমি তোমাকে এক পরামর্শ দিই; তুমি আমার কাছে এই সকল দ্রব্য ক্রয় করÑ অগিড়ব দ্বারা পরিষ্কৃত স্বর্ণ, যেন ধনবান হও।” প্রকাশিত বাক্য ৩:৮, ১৮। COLBen 96.2

খ্রীষ্টের সুসমাচার একটি আশীর্বাদ, যেন সকলে পায়। যারা সবচেয়ে দরিদ্র, তারও পরিত্রাণ ক্রয় করার মত ধনশালী। কারণ কোন পার্থিব ধন দিয়ে এই পরিত্রাণ ক্রয় করা যায় না। একমাত্র স্বেচ্ছাকৃত বাধ্যতা এবং আমাদের নিজেদের জীবন সম্পূর্ণ ভাবে উৎসর্গ করার মধ্য দিয়ে আমরা তা পেতে পারি। জাগতিক শিক্ষা, এমন কি সবচেয়ে উচ্চ স্তরের শিক্ষাও মানুষকে ঈশ্বরের কাছাকাছি আনতে পারে না। ফরীশীরা তাদের প্রত্যেকটি জাগতিক ও আত্মিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে অত্যন্ত গর্ব করত। তারা বলত, “আমি ধনবান, ধন সঞ্চয় করিয়াছি, আমার কিছুরই অভাব নাই।” কিন্তু তথাপি তারাই ছিল সবচেয়ে “দুর্ভাগ্য, কৃপাপাত্র, দরিদ্র, অন্ধ ও উলঙ্গ।” প্রকাশিত বাক্য ৩:১৭। খ্রীষ্ট তাদেরকে মহা মূল্যবান মুক্তা দিতে চেয়েছিলেন; কিন্তু তারা তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, এবং তিনি তাদেরকে বলেছেন, “করগ্রাহী ও বেশ্যারা তোমাদের অগ্রে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতেছে।” মথি ২১:৩১। COLBen 97.1

আমরা পরিত্রাণ অর্জন করতে পারি না, কিন্তু এমন অধ্যবসায় ও একাগ্রতা নিয়ে আমাদের তা অনুসন্ধান করতে হবে যে, পৃথিবীর সমস্ত কিছুর বিনিময়ে হলেও আমরা তা গ্রহণ করব। COLBen 97.2

আমরা মহা মূল্যবান এই মুক্তা অন্বেষণ করব, কিন্তু কোন পার্থিব বাজারে বা পার্থিব কোন পদ্ধতিতে নয়। যে দাম আমাদের দিতে হবে তা কোন স্বর্ণ বা রৌপ্য নয়, কারণ এই মুক্তা ঈশ্বরের। এ কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে যে, জাগতিক যোগ্যতা বা গুণ আমাদেরকে এই পরিত্রাণ জয় করতে সাহায্য করবে। ঈশ্বর আপনার কাছ থেকে স্বেচ্ছাকৃত বাধ্যতা দাবী করবেন। তিনি আপনাকে সমস্ত পাপ কাজ থেকে মুক্ত হওয়ার আহ্বান জানাবেন। “যে জয় করে,” খ্রীষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন, “তাহাকে আমার সহিত আমার সিংহাসনে বসিতে দিব, যেমন আমি নিজে জয় করিয়াছি, এবং আমার পিতার সহিত তাঁহার সিংহাসনে বসিয়াছি।” প্রকাশিত বাক্য ৩:২১। COLBen 97.3

এমন অনেকে আছে যারা সব সময় স্বর্গীয় এই মুক্তা খুঁজতে থাকে। কিন্তু তারা তাদের মন্দ অভ্যাস থেকে সম্পূর্ণ ভাবে নিজেকে মুক্ত করে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করে না। তারা নিজ আমিত্বকে দূর করে না, যা থাকলে খ্রীষ্ট অন্তরে বাস করতে পারেন না। এই কারণে তারা সেই মহা মূল্যবান মুক্তা খুঁজে পায় না। তারা তাদের মন্দ অভিলাষ এবং জাগতিক সুখভোগের প্রতি তাদের মোহ ত্যাগ করতে পারে না। তারা ক্রুশ তুলে নিয়ে আত্মত্যাগ ও আত্ম সংযমের পথ ধরে খ্রীষ্টকে অনুসরণ করতে পারে না। তারা আংশিক খ্রীষ্টিয়ান বটে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পুরোপুরি খ্রীষ্টিয়ান হতে পারে না। এ কারণে তারা স্বর্গরাজ্যের কাছাকাছি আসে বটে, কিন্তু তাতে প্রবেশ করতে পারে না। তারা আংশিক উদ্ধার পায়, কিন্তু পুরোপুরিভাবে উদ্ধার পায় না, অর্থাৎ তারা কিছুটা নয় বরং পুরোপুরি বিনষ্ট হয়। COLBen 98.1

উত্তম মুক্তার খোঁজ করা বণিকের এই দৃষ্টান্তটির ক্সদ্বত তাৎপর্য রয়েছে: এটি শুধুমাত্র স্বর্গ রাজ্যের অন্বেষণ করতে থাকা মানুষের কথা বলে না, বরং সেই সাথে খ্রীষ্টকেও তা উপস্থাপন করে, যিনি তাঁর হারিয়ে যাওয়া উত্তরাধিকার খুঁজছেন। খ্রীষ্ট হলেন স্বর্গীয় বণিক, যিনি উত্তম মুক্তা খুঁজছেন। তিনি হারানো মানবতার মাঝে সেই মহা মূল্যবান মুক্তা দেখতে পেলেন। কলুষিত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত মানব জাতির মধ্যে তিনি পরিত্রাণের সম্ভাবনা দেখতে পেলেন। যে অন্তর শয়তানের সাথে দ্বন্দ্বের যুদ্ধ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে এবং যে অন্তর ভালবাসার শক্তিতে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, সেই সকল অন্তর ত্রাণকর্তার কাছে, যে সমস্ত অন্তর এখনো অধঃপতিত হয় নি, সে আত্মাগুলোর চেয়ে অধিক প্রিয়। ঈশ্বর মানবতার দিকে দৃষ্টিপাত করলেন, কিন্তু মন্দ ও মূল্যহীন একটি জাতি হিসেবে নয়। তিনি মানব জাতির দিকে দৃষ্টিপাত করলেন খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে, যাদেরকে খ্রীষ্টের উদ্ধারকারী ভালবাসার মধ্য দিয়ে জয় করা হয়েছে। তিনি পৃথিবীর সমস্ত ধন রাজি সংগ্রহ করলেন এবং সেগুলো এনে এই মুক্তা কিনতে চাইলেন। আর শেষ পর্যন্ত যীশু সেই মুক্তা তাঁর হাতে পেলেন এবং সেটি তাঁর মুকুটে স্থান দিলেন। “আর সেই দিন তাহাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহাদিগকে আপন প্রজারূপ মেষপালের ন্যায় নিস্তার করিবেন, বস্তুতঃ তাহারা মুকুটস্থমণির ন্যায় তাঁহার দেশের উপরে চাক্চিক্যবিশিষ্ট হইবে।।” সখরিয় ৯:১৬। “আর তাহারা আমারই হইবে, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন; আমার কার্য করিবার দিনে তাহারা আমার নিজস্ব হইবে।” মালাখি ৩:১৭। COLBen 98.2

কিন্তু আমাদের মূল্যবান মুক্তা হিসেবে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট এবং এই স্বর্গীয় ধন অধিকার করার জন্য আমাদের সুযোগ হচ্ছে সেই আদর্শ, যার উপরে ভিত্তি করে আমাদের জীবনকে গড়ে তুলতে হবে। পবিত্র আত্মা মানুষের কাছে এই উত্তম মুক্তার মূল্যের কথা জ্ঞাত করেন। পবিত্র আত্মার শক্তির কাল হচ্ছে সেই সময় যখন এক বিশেষ অনুভূতির মাধ্যমে আমরা এই স্বর্গীয় উপহার খুঁজে পাব এবং অধিকার করতে পারব। খ্রীষ্টের সময়ে অনেকেই সুসমাচার শ্রবণ করেছিল, কিন্তু তাদের অন্তর মিথ্যা শিক্ষার কারণে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে ছিল এবং তারা বুঝতে পারে নি যে, গালীল থেকে আগত এই বিনম্র শিক্ষা দাতাকেই ঈশ্বর প্রেরণ করেছেন। কিন্তু খ্রীষ্টের স্বর্গারোহণের পর পবিত্র আত্মার অবতরণের মধ্য দিয়ে তাঁর স্বর্গীয় সিংহাসনে স্বগৌরবে অধিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। পঞ্চাশত্তমীর দিনে পবিত্র আত্মার অবতরণ ঘটেছিল। খ্রীষ্টের সাক্ষ্য বহনকারীরা পুনরুত্থিত ত্রাণকর্তার মহিমা ও ক্ষমতার স্বরূপ দেখতে পেয়েছিলেন। খ্রীষ্টের শত্রুদের কারণে যাদের অন্তর অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে ছিল, তাদের অন্তরে স্বর্গীয় জ্যোতি প্রভা বিস্তার করল। তারা এখন দেখতে পেল “তাঁহাকেই ঈশ্বর অধিপতি ও ত্রাণকর্তা করিয়া আপন দক্ষিণ হস্ত দ্বারা উন্নত করিয়াছেন, যেন ইস্রায়েলকে মনপরিবর্তন ও পাপ মোচন দান করেন।” প্রেরিত ৫:৩১। তারা দেখতে পেলেন যে, তিনি স্বর্গীয় এক প্রভায় পরিম-িত হয়ে আছেন, তাঁর হাতে রয়েছে সেই মহা মূল্যবান সম্পদ, যা তিনি তাদের সকলকে দান করবেন, যারা তাদের পাপের পথ থেকে মন ফিরিয়ে তাঁর অনুসারী হয়েছে ও বিশ্বাসে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। প্রেরিতগণ যখন পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষেক লাভ করে পিতার এক জাত পুত্রের মহিমা ও গৌরব ঘোষণা করছিলেন, তখন তিন হাজার লোক এক সাথে মন ফিরিয়ে বিশ্বাস করল। তারা নিজেদেরকে পাপী ও কলুষিত মানুষ হিসেবে দেখতে পেয়েছিল, খ্রীষ্টকেই তাদের একমাত্র বন্ধু এবং ত্রাণকর্তা হিসেবে দেখতে পেয়েছিল। খ্রীষ্ট উত্থিত হলেন, খ্রীষ্ট গৌরবান্বিত হলেন সেই পবিত্র আত্মার শক্তিতে যিনি এখন মানুষের মাঝে অবস্থান করছেন। বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে এই সমস্ত বিশ্বাসীরা তাঁকে সেই ব্যক্তি হিসেবে দেখতে পেয়েছিল, যিনি অপমান, দুঃখ ও লাঞ্ছনা সহ্য করেছেন, এবং সব শেষে মৃত্যু বরণ করেছেন, যেন মানুষ বিনষ্ট না হয় বরং অনন্ত জীবন পায়। পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে খ্রীষ্ট যে প্রত্যাদেশ এখানে প্রকাশ করেছেন তা বহু মানুষকে তাঁর মহিমা ও কর্তৃত্ব অনুধাবন করতে অনুভূতি জাগিয়েছে। আর তারা তাদের হাত বিশ্বাসে উঁচু করে দিয়ে উচ্চকিত কণ্ঠে বলে উঠেছে, “আমি বিশ্বাস করি।” COLBen 99.1

তখন পুনরুত্থিত ত্রাণকর্তার আনন্দের সুসমাচার এই পৃথিবী নিবাসী সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অভিযাত্রা শুরু হল। মণ্ডলীতে চার দিক থেকে মন পরিবর্তনকারী বিশ্বাসীরা দলে দলে এসে উপস্থিত হতে লাগল। পুরাতন বিশ্বাসীরা নতুন করে বিশ্বাসে স্থির হল। পাপীরা মহা মূল্যবান মুক্তার খোঁজ করতে এসে খ্রীষ্টের সাথে সম্মিলিত হল। সেই ভবিষ্যদ্বাণী তখন পরিপূর্ণতা অর্জন করল, দুর্বলেরা হয়ে উঠল “দায়ূদের মত,” আর দায়ূদের গৃহ হয়ে উঠল “সদাপ্রভুর দূতের মত।” সখরিয় ১২:৮। প্রত্যেক খ্রীষ্টিয়ান তার ভাইয়ের মধ্যে স্বর্গীয় ভালবাসার স্পর্শ পেল। বিশ্বাসীদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল খ্রীষ্টের চরিত্র তাদের নিজেদের জীবনের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করা এবং তাঁর রাজ্য বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো। “আর যে বহুসংখ্যক লোক বিশ্বাস করিয়াছিল, তাহারা একচিত্ত ও একপ্রাণ ছিল। তাহাদের এক জনও আপন স¤পত্তির মধ্যে কিছুই নিজের বলিত না; কিন্তু তাহাদের সকল বিষয় সাধারণে থাকিত। আর প্রেরিতেরা মহাপরাক্রমে প্রভু যীশুর পুনরুত্থান বিষয়ে সাক্ষ্য দিতেন, এবং তাহাদের সকলের উপরে মহা অনুগ্রহ ছিল।” প্রেরিত ৪:৩২, ৩৩। “আর যাহারা পরিত্রাণ পাইতেছিল, প্রভু দিন দিন তাহাদিগকে তাহাদের সহিত সংযুক্ত করিতেন।” প্রেরিত ২:৪৭। খ্রীষ্টের আত্মা সমগ্র মণ্ডলীকে উজ্জীবিত করেছিলেন; কারণ তারা সকলে সেই মহা মূল্যবান মুক্তা খুঁজে পেয়েছিল। COLBen 100.1

এই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটা প্রয়োজন এবং তা প্রচণ্ড ক্ষমতার সাথে সাধিত হবে। পঞ্চাশত্তমীর দিনে প্রেরিতদের উপরে পবিত্র আত্মার অবতরণ ছিল সেই প্রথম বর্ষণ, কিন্তু পরবর্তী বর্ষণ হবে আরও ব্যাপক ও অপরিমেয়। পবিত্র আত্মা আমাদের চাহিদার ও অভাবের কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করে আছেন। পবিত্র আত্মার শক্তির মধ্য দিয়ে খ্রীষ্ট আবারও আমাদের কাছে স্বমহিমায় ও পূর্ণ শক্তিতে প্রকাশিত হতে চান। মানুষ তখন এই অমূল্য মুক্তার মূল্য অনুধাবন করতে পারবে এবং প্রেরিত পৌলের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে তারাও বলে উঠবে, “কিন্তু যাহা যাহা আমার লাভ ছিল, সেই সমস্ত খ্রীষ্টের নিমিত্ত ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিলাম। আর বাস্তবিক আমার প্রভু খ্রীষ্ট যীশুর জ্ঞানের শ্রেষ্ঠতা প্রযুক্ত আমি সকলই ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিতেছি; তাঁহার নিমিত্ত সমস্তেরই ক্ষতি সহ্য করিয়াছি, এবং তাহা মলবৎ গণ্য করিতেছি, যেন খ্রীষ্টকে লাভ করি।” ফিলিপীয় ৩:৭, ৮। COLBen 100.2