খ্রীষ্টের দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষা
কীভাবে এই ধন গুপ্ত রাখা হয়েছে
বলা হয়েছে যে, সুসমাচার গুপ্ত রয়েছে। যারা নিজেদেরকে অনেক জ্ঞানী বলে মনে করে, যারা অসার দর্শনের শিক্ষা দ্বারা পূর্ণ হয়ে থাকে, তারা কখনোই পরিত্রাণের পরিকল্পনার সৌন্দর্য ও ক্ষমতা ও রহস্য উপলব্ধি করতে পারবে না। অনেকেরই চোখ আছে, কিন্তু তারা দেখতে পায় না; তাদের কান আছে, কিন্তু শুনতে পায় না; তাদের বুদ্ধিমত্তা আছে, কিন্তু তারা গুপ্ত ধন খুঁজে পেতে আগ্রহী হয় না। COLBen 83.3
যে স্থানে গুপ্ত ধন লুকানো রয়েছে সেখান দিয়ে একজন মানুষ হেঁটে যেতে পারে। হয়তো তার চরম প্রয়োজনের মুহূর্তে সে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে একটি গাছের নিচে বসে রয়েছে, কিন্তু সে জানে না ঐ গাছের গোড়ায় লুকানো রয়েছে গুপ্তধন। যিহূদীদের জীবনেও ঠিক এমনটাই ঘটেছিল। যিহূদী জাতিকে এই স্বর্ণময় গুপ্তধন বিশ্বাস করে রাখতে দেয়া হয়েছিল। ঈশ্বর কর্তৃক আহ্বানকৃত যিহূদী জাতির মূল ভিত্তি ছিলেন স্বয়ং খ্রীষ্ট। পরিত্রাণের মহান সত্যকে বিভিন্ন চিহ্ন ও প্রতিকৃতির মাঝে আবৃত রাখা হয়েছিল। তথাপি যখন খ্রীষ্ট এলেন, তখন সমস্ত চিহ্ন তাঁকে নির্দেশ করলেও তারা তাঁকে চিনতে পারেনি। তাদের হাতে ঈশ্বরের বাক্য ছিল; কিন্তু প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাদের হাতে যে প্রা ও ঐতিহ্য এবং মানুষ কর্তৃক পবিত্র শাস্ত্রের অপব্যাখ্যা চলে এসেছে, তা তাদের কাছ থেকে খ্রীষ্টের সত্যকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। পবিত্র শাস্ত্রের আত্মিক ভাবধারা তাদের কাছ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। সমস্ত জ্ঞানের ধনাগার তাদের জন্য উন্মুক্ত ছিল, কিন্তু তারা তা জানতো না। COLBen 83.4
ঈশ্বর মানুষের কাছ থেকে তাঁর সত্য লুকিয়ে রাখেন না। তারা তাদের নিজেদের কাজের মধ্য দিয়ে সেই সত্যকে নিজেদের কাছে অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য করে তোলে। খ্রীষ্টই যে স্বয়ং মশীহ্ এ বিষয়ে তিনি যিহূদীদেরকে যথেষ্ট প্রমাণ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর শিক্ষার মাঝে ছিল তাদের জীবনের আমূল পরিবর্তন আনার আহ্বান। তারা দেখেছিল যে, তারা যদি খ্রীষ্টকে গ্রহণ করে তাহলে তাদের এত দিনের সমস্ত সুখভোগ, বিলাসিতা, তাদের স্বার্থপর ও ঈশ্বরবিহীন অপকর্ম ত্যাগ করতে হবে। অপরিবর্তিত ও অনন্ত সত্যকে ধারণ করতে হলে, এক বহুমূল্য ত্যাগস্বীকারের প্রয়োজন ছিল। এ কারণে যীশু খ্রীষ্টের উপরে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য স্বয়ং ঈশ্বর যে প্রমাণ দিয়েছেন, তা তারা গ্রহণ করেনি। তারা স্বীকার করেছে যে, তারা পুরাতন নিয়মের শাস্ত্র বিশ্বাস করে, তথাপি তারা সেখানে যীশু খ্রীষ্টের জীবন ও চরিত্র ও তাঁর আগমন সম্পর্কে যে সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, তার সবই প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা এই ভেবে ভয়ে ছিল যে, পাছে তারা মন পরিবর্তন করে এবং অনাচার ও ভোগ বিলাসিতায় ভরা এই জীবন তাদের ত্যাগ করতে হয়। সুসমাচারের ধন, সেই পথ, সত্য ও জীবন তাদের মধ্যেই উপস্থিত ছিলে, কিন্তু তারা স্বর্গের সর্বোত্তম উপহার প্রত্যাখ্যান করেছে। COLBen 84.1
সুসমাচারে আমরা দেখতে পাই, “অধ্যক্ষদের মধ্যেও অনেকে তাঁহাতে বিশ্বাস করিল; কিন্তু ফরীশীদের ভয়ে স্বীীকার করিল না, পাছে সমাজচ্যুত হয়।” যোহন ১২:৪২। তারা বিশ্বাস করেছিল। তারা বিশ্বাস করেছিল যে, যীশু খ্রীষ্টই ঈশ্বরের পুত্র। কিন্তু তাঁকে স্বীকৃতি দেয়ার চেয়ে নিজেদের উচ্চাভিলাষী স্বার্থ উদ্ধারই তাদের কাছে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। খ্রীষ্টই যে তাদের জন্য স্বর্গীয় ধন সুরক্ষিত করতে পারেন এই বিশ্বাস তাদের মধ্যে ছিল না। তারা পার্থিব সম্পদের পেছনে ছুটছিল। আজকের দিনে মানুষ হন্যে হয়ে জাগতিক সম্পদের পেছনে ছুটতে থাকে। স্বার্থপরতা ও উচ্চাভিলাষী চিন্তায় তাদের অন্তর পরিপূর্ণ। পার্থিব সম্পদ, সম্মান বা ক্ষমতা লাভের জন্য তারা মানুষের তৈরি রীতিনীতি, প্রা ও বিধানকে ঈশ্বরীয় বিধান ও আদেশের উপরে স্থান দেয়। তাদের কাছ থেকে ঈশ্বরের বাক্য গুপ্ত করা হয়েছে। COLBen 85.1
“প্রাণিক মনুষ্য ঈশ্বরের আত্মার বিষয়গুলি গ্রহণ করে না, কেননা তাহার কাছে সেই সকল মূর্খতা; আর সেই সকল সে জানিতে পারে না, কারণ তাহা আত্মিক ভাবে বিচারিত হয়।” ১ করিন্থীয় ২:১৪। COLBen 85.2
“কিন্তু আমাদের সুসমাচার যদি আবৃত থাকে, তবে যাহারা বিনাশ পাইতেছে, তাহাদেরই কাছে আবৃত থাকে। তাহাদের মধ্যে এই যুগের দেবতা অবিশ্বাসীদের মন অন্ধ করিয়াছে, যেন ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি যে খ্রীষ্ট, তাঁহার গৌরবের সুসমাচার-দীপ্তি তাহাদের প্রতি উদয় না হয়।” ২ করিন্থীয় ৪:৩, ৪। COLBen 85.3