খ্রীষ্টের দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষা

16/61

গুপ্ত ধন

মথি ১৩:৪৪ পদের উপর ভিত্তি করে রচিত

“স্বর্গ-রাজ্য ক্ষেত্রমধ্যে গুপ্ত এমন ধনের তুল্য, যাহা দেখিতে পাইয়া এক ব্যক্তি গোপন করিয়া রাখিল, পরে আনন্দ হেতু গিয়া সর্বস্ব বিক্রয় করিয়া সেই ক্ষেত্র ক্রয় করিল।” COLBen 82.1

প্রাচীন কালে মানুষ সাধারণত তাদের মূল্যবান বস্তু মাটির নিচে লুকিয়ে রাখত। সে সময় প্রায়শই চুরি ডাকাতি হত। আর যখনই সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তিত হত, তখন যাদের অনেক বেশি সম্পদ তাদেরকে আনুগত্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে অনেক বেশি পরিমাণে কর দিতে হত। তাছাড়া দেশে প্রায়শই পার্শ্ববর্তী দেশের সৈন্যবাহিনীর আক্রমণের আশঙ্কা দেখা দিত। এর ফলে ধনী ও স্বচ্ছল ব্যক্তিরা তাদের ধন সম্পদ লুকিয়ে রাখার পক্ষপাতী ছিলেন এবং তারা মাটির নিচে পুঁতে রাখাকে অনেক বেশি নিরাপদ বলে মনে করতেন। কিন্তু অনেক সময় তারা এই লুকিয়ে রাখা জায়গাটা ভুলে যেতেন; সম্পদের মালিক হয়তো মারা যেতেন, কিংবা তাকে বন্দীত্ব বরণ করতে হত, যার ফলে সেই সম্পদের কাছ থেকে তাকে চিরতরে বিদায় নিতে হত। তাতে করে তিনি সারা জীবন যে ধনটি আগলে রেখেছিলেন সেটি পড়ে থাকত কোন গুপ্তধন সন্ধানকারীর জন্য। কাজেই যীশু খ্রীষ্টের সময়কালে পরিত্যক্ত ভূমিতে স্বর্ণের বা রৌপ্যের পুরোনো মুদ্রা ও অলঙ্কার খুঁজে পাওয়া কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার ছিল না। COLBen 82.2

সে সময় জমির মালিকরা চাষ করার জন্য লোক ভাড়া করে নিয়ে আসত। গবাদি পশু দিয়ে জমি চাষ করানোর সময় লাঙ্গলের ফলায় লেগে অনেক ক্ষেত্রে এই লুকানো সম্পদ উঠে আসতো। তখন সেই কৃষক দেখতো যে, এই সম্পদ তার নাগালের মধ্যেই রয়েছে। সেই সম্পদ আবারও মাটির নিচে লুকিয়ে রেখে সে ফিরে গেল এবং তার বাড়িসহ যা কিছু ছিল সব বিক্রি করে দিয়ে আসলো যেন সে গুপ্তধন সহ সেই জমি কিনতে পারে। তার পরিবার ও প্রতিবেশীরা মনে করল যে, সে পাগল হয়ে গেছে। জমির দিকে তাকিয়ে তারা সেই পরিত্যক্ত ভূমির কোন মূল্য অনুধাবন করতে পারলো না। কিন্তু লোকটি জানে যে সে কী করছে। আর তাই যখন সে সেই জমির মালিকানা পেয়ে গেল, তখন সে জমির প্রত্যেকটি প্রান্ত তন্ন তন্ন করে অনুসন্ধান করে দেখল যে, তার গুপ্তধন সুরক্ষিত আছে কি না। COLBen 82.3

এই দৃষ্টান্তে স্বর্গীয় ধনের মূল্য এবং তা সুরক্ষিত করার জন্য যে প্রচেষ্টা আমাদের থাকা প্রয়োজন তা চিত্রায়িত করা হয়েছে। জমিতে যে গুপ্তধন খুঁজে পেয়েছিল, সে তা পাওয়ার জন্য তার স্থাবর ও অস্থাবর অন্য সমস্ত কিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিল, যেন সে একান্তভাবে ঐ গুপ্তধন অধিকার করতে পারে। কাজেই যে ব্যক্তি স্বর্গীয় ধন অনুসন্ধান করেন তার কাছে এই খাঁটি গুপ্তধন অধিকার করার জন্য কোন পরিশ্রমই বেশি মনে হবে না এবং কোন ত্যাগস্বীকারই অনেক কষ্টসাধ্য মনে হবে না। COLBen 83.1

দৃষ্টান্তে গুপ্তধন লুকানোর স্থান হিসেবে যে ক্ষেত্রের কথা বলা হয়েছে তা হল পবিত্র শাস্ত্র। আর সুসমাচার হচ্ছে সেই গুপ্তধন। ঈশ্বরের বাক্যের পরতে পরতে যে সোনা ছড়ানো রয়েছে, তেমনটা সারা পৃথিবী জুড়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না। COLBen 83.2