মহা বিবাদ

6/44

৩য় অধ্যায় - পরিত্রাণ পরিকল্পনা

দুঃখ স্বৰ্গ পূর্ণ করে, যেন এটা উপলব্ধি হয় যে মানব অধিকারভ্রষ্ট হয়েছে, আর যে জগৎ ঈশ্বর সৃষ্টি করেন তা সেই মনুষ্যদের দ্বারা পূর্ণ হবে যারা দূৰ্বিপাক, ব্যাধি ও মৃত্যুর দ্বারা দন্ডাজ্ঞা প্ৰাপ্ত, আর অপরাধীর জন্যে কোনো পলায়ন করার পথ নেই। আদমের সমগ্র পরিবারকে অবশ্যই মরতে হবে। আমি লাবন্যময় যীশুকে দেখলাম ও তাঁর মুখমন্ডলে এক সহানুভূতি ও দুঃখের ভাব দেখলাম। শীঘ্রই আমি তাকে সেই অতিশয় উজ্জ্বল আলোকের নিকটে আসতে দেখি যা পিতার সিংহাসন আচ্ছাদন করে। আমায় সঙ্গ দেয়া দূত বলেন, তিনি তাঁর পিতার সঙ্গে মনোযোগী কথোপকথনে রত। দূতগণের উৎকণ্ঠা প্রগাঢ় মনে হয় যখন যীশু তাঁর পিতার সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলাপ করছিলেন। তিন বার তিনি পিতার চতুর্দিকের মহিমাময় আলোকের দ্বারা আচ্ছাদিত হন। আর তৃতীয় বার তিনি পিতার কাছ থেকে বেরিয়ে আসেন। তাঁর চেহারাটি দেখা যেত। তাঁর মুখমন্ডল প্রশান্ত, সকল হতবুদ্ধিতা ও অসুবিধে থেকে মুক্ত ছিল, ও এমন বদান্যতা ও লাবণ্যে ঝিকমিক করে, যার কারণ প্রকাশ করা যায় না। তিনি তখন দূত সম্পর্কিত বাহিনীকে জ্ঞাত করেন যে অধিকারভ্রষ্ট মানবের জন্যে বিপদ অতিক্রমের এক উপায় করা হয়েছে। তিনি তাদেরকে বলেন যে তিনি তাঁর পিতার সাথে পক্ষসমর্থনে বাদানুবাদ করে আসছিলেন, আর এক মুক্তিপণ রূপে আপনাকে দেবার ও আপনার উপরে মৃত্যুর দণ্ডাদেশ নেবার প্রস্তাব করেছিলেন, যাতে তাঁর মাধ্যমে মনুষ্য ক্ষমা পেতে পারে। যেন তার রক্তের গুণের ও ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতি বাধ্যতার মাধ্যমে, তারা ঈশ্বরের অনুগ্রহ পেতে পারে, এবং সুন্দর উদ্যানে আনিত হতে, ও জীবন-বৃক্ষের ফল খেতে পারে। GCBen 12.1

প্রথমে দূতগণ আনন্দ বোধ করতে পারেন না, কারণ তাদের অধিনায়ক তাদের কাছে থেকে কিছুই লুকোন নি, কিন্তু তাদের সাক্ষ্যতে পরিত্রাণ পরিকল্পনা উন্মুক্ত করেন। যীশু তাদেরকে বলেন যে তিনি তার পিতার রোষ ও অপরাধী মনুষ্যের মধ্যে দাঁড়াবেন, যাতে তিনি অপরাধ ও অবজ্ঞা বহন করবেন, আর কেবল অল্পজনেই তাঁকে ঈশ্বরের পুত্ররূপে গ্রহণ করবে। প্রায় সবাই তাঁকে ঘৃণা, প্রত্যাখ্যান করবে। তিনি তাঁর সমস্ত মহিমা স্বর্গে পরিত্যাগ করবেন ও এক মনুষ্য রূপে পৃথিবীর ওপরে আবির্ভূত হবেন, এক মনুষ্যের ন্যায় আপনাকে অবনত করবেন, তার আপন অভিজ্ঞতা দ্বারা সেই বিবিধ প্রলোভনের সঙ্গে পরিচিত হবেন যদ্বারা মানব বেষ্টিত হবে, যাতে তিনি জানতে পারেন কি করে তাদেরকে উদ্ধার (সাহায্য) করা যায় যারা প্রলোভিত হবে, আর যাতে অবশেষে এক শিক্ষক রূপে তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদিত হবার পরে তিনি মনুষ্যদের হাতে সমৰ্পিত হবেন, ও প্রায় প্রতিটি নিষ্ঠুরতা ও দুঃখকষ্ট সহ্য করবেন যা শয়তান ও তার দূতেরা আরোপ করতে দুষ্ট লোকদেরকে অনুপ্রাণিত করবে, যে তিনি মৃত্যু সমূহের নিষ্ঠুরতমটি মরবেন, এক দোষী পাপী রূপে আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর মধ্যে ঝুলবেন, যে তিনি মৃত্যু যন্ত্রণার ভীষণ প্রহরগুলি ভোগ করবেন, যার উপরে এমনকি দূতগণও তাকাতে পারতেন না, কিন্তু সে দৃশ্য থেকে তাদের মুখ আচ্ছাদন করবেন। শুধু দেহের যন্ত্রণাই তিনি ভোগ করবেন না, কিন্তু যে মানসিক যন্ত্রণা, যার সঙ্গে দৈহিক কষ্টভোগ কোনোভাবে তুলনা করা যেত না। সমগ্র জগতের পাপ রাশির ভার তার ওপরে হবে। তিনি তাদেরকে বলেন তিনি মরবেন ও তৃতীয় দিনে আবার উত্থিত হবেন, ও একগুঁয়ে, অপরাধী মনুষ্যের জন্যে মধ্যস্থতা করতে তাঁর পিতার কাছে স্বর্গারোহণ করবেন। GCBen 12.2

দূতগণ নিজেরা তার সাক্ষ্যতে প্ৰণিপাত করেন। তারা তাদের জীবন দেবার প্রস্তাব করেন। যীশু তাদের উদ্দেশে বলেন যে তাঁর মৃত্যুর দ্বারা তিনি অনেক জনকে রক্ষা করবেন, যে কোনও দূতের জীবন ঋণ(পাপ)পরিশোধ করতে পারে না। মনুষ্যের মুক্তিপণের জন্যে শুধু তার জীবনই তার পিতার সম্বন্ধে মান্যতা পেতে পারে। GCBen 12.3

তাদেরকে যীশু এও বলেন যে তাদের এক ভূমিকা পালন করার রয়েছে, তার সঙ্গে থাকার, ও বিভিন্ন সময়ে তাকে সবল করার। এ নিমিত্ত যে তিনি মানবের পতিত প্ৰকৃতি গ্রহণ করবেন, আর তার সামর্থ্য এমন কি তাদের সমরূপ হবে না। আর তাদেরকে তার অবমাননার ও মহা দুঃখভোগ সমূহের সাথী হতে হবে। আর যেমন তারা তার দুঃখকষ্ট এবং তাঁর প্রতি মনুষ্যদের ঘৃণা প্রত্যক্ষ করবেন, তারা গভীরতম আবেগ-উচ্ছ্বাসের দ্বারা উত্তেজিত হবেন, আর তার জন্যে তাদের ভালবাসার মাধ্যমে তাঁর হত্যাকারীদের থেকে তাঁকে রক্ষা ও উদ্ধার করার ইচ্ছে করবেন কিন্তু তারা যা দেখবেন তার কিছু নিবারণ করতে অবশ্যই তারা বাধাসরূপ হবেন না, আর যে তাঁর পুনঃউত্থানে তারা এক ভূমিকা পালন করবেন, যে পরিত্রাণের পরিকল্পনার অভিসন্ধি হয়েছিল, আর তার পিতা পরিকল্পনাটি মেনে নিয়েছিলেন। GCBen 12.4

এক পবিত্র বিষণ্ণতা নিয়ে যীশু দূতগণকে সান্ত্বনা ও উৎসাহ দেন, এবং তাদেরকে জ্ঞাত করেন যে এরপরে যাদেরকে তিনি মুক্ত করবেন তারা তাঁর সঙ্গে হবে, আর সদা তাঁর সঙ্গে বাস করবে এবং যে তার মৃত্যুর দ্বারা তিনি অনেক কে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করবেন, ও তাকে বিনষ্ট করবেন যার মৃত্যুর ক্ষমতা ছিল। আর তাঁর পিতা তাঁকে রাজ্য, ও সমগ্র আকাশের নীচে রাজ্যের মহানতা দেবেন, আর অনন্ত অনন্ত কাল ধরে তিনি তা অধিকারে রাখবেন। শয়তান ও পাপীগণ বিনষ্ট হবে, আর কখনো স্বৰ্গ কিম্বা বিশুদ্ধিকৃত নতুন পৃথিবীকে বিরক্ত করবে না। যীশু স্বর্গীয় বাহিনীকে সেই পরিকল্পনায় সন্তুষ্ট হতে নির্দেশ দেন যা পিতা গ্রহণ করেন, ও আনন্দ প্রকাশ করতে নির্দেশ দেন যে পতিত মানবতার মৃত্যুর মাধ্যমে ঈশ্বরের সঙ্গে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হতে ও স্বর্গ উপভোগ করতে আবার উন্নত হতে পারতো। GCBen 12.5

তখন আনন্দ, অব্যক্ত আনন্দ, স্বৰ্গ পূর্ণ করে আর স্বর্গীয় বাহিনী প্রশংসা ও ভক্তি-আরাধনার এক গীত গান করেন। তারা তাদের বীণা স্পর্শ করেন ও পূর্বে যেমন করেছিলেন তার চেয়ে উচ্চতর এক সুরে গান করেন, এক বিদ্রোহীদের জাতির জন্যে মরতে তাঁর অতি প্রিয়পাত্রকে উৎসর্গ করতে ঈশ্বরের মহা কণা ও অধস্তন ব্যক্তিদের প্রতি সৌজন্য প্রকাশের পৃষ্ঠপোষকতাপূর্ণ ভাবের জন্যে। প্রশংসা ও ভক্তি-আরাধনা যীশুর আত্মত্যাগ ও স্বাৰ্থত্যাগের জন্যে নিঃশেষ করা হয়, যে তিনি তাঁর পিতার বাড়ি ছাড়তে সম্মতি প্ৰকাশ করবেন, ও এমন এক জীবন বেছে নেবেন যা হচ্ছে দুঃখ-কষ্ট ও যন্ত্রণাময়, ও অপরকে জীবন দিতে এক অসম্মানজনক মৃত্যু বরণ করবেন। GCBen 12.6

দূত বলেন, তোমরা কি ভাব যে কোনো দ্বন্দ্ব ছাড়াই পিতা তার অতি প্ৰিয় পুত্রকে অর্পণ করেছেন? না, না। এমন কি স্বর্গের ঈশ্বরের সঙ্গে এটা এক দ্বন্দ্ব ছিল, দোষী মানবকে বিনষ্ট হতে দেয়া হবে, কিম্বা তাদের জন্যে তাঁর প্রিয় পুত্রকে মরতে দেয়া হবে কি না। দূতগণ মানবের পরিত্রাণে এতই সংশ্লিষ্ট ছিলেন যে তাদের মধ্যে তারা ছিলেন যারা তাদের গৌরব বিসর্জন দেবেন, এবং বিনাশোদ্যতমনুষ্যের জন্যে তাদের জীবন দেবেন। তবে, আমার সহচর হওয়া দূত বলেন, তাতে কোনো লাভ হবে না। সত্য-লঙ্ঘন এতই গুত্বপূর্ণ ছিল যে কোনো দূতের জীবন ঋণ শোধ করবে না। কিছু নয় শুধু তাঁর পুত্রের মৃত্যু ও মধ্যস্থতা ঋণ পরিশোধ করবে, ও অধিকার ভ্রষ্ট মানবকে আশাহীন দুঃখ ও দুর্দশা থেকে রক্ষা করবে। GCBen 13.1

তবে মহিমা থেকে সবলকারী মলম নিয়ে ওঠা ও নামা করতে, তাঁর দুর্দশাভোগে ঈশ্বরের পুত্রকে যন্ত্রণার উপশম দিতে, ও তাঁর প্রতি প্রয়োগ করতে দূতগণের কার্য তাদেরকে নির্দিষ্ট করা হয়। তা ছাড়া, তাদের কাজ হবে অনুগ্রহের প্রজাগণকে মন্দ দূতগণ থেকে এবং শয়তানের দ্বারা তাদের চর্তুদিকে নিক্ষেপ করা অন্ধকার থেকে রক্ষা করা ও তত্ত্বাবধান করা। আমি দেখি যে হারিয়ে যাওয়া, বিনষ্ট হতে উদ্যত মনুষ্যকে রক্ষা করতে তার ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করা ঈশ্বরের পক্ষে অসম্ভব ছিল তাই তিনি মনুষ্যের সত্যলঙ্ঘনের জন্যে তাঁর প্রিয় পুত্রকে মরতে অনুমতি দেন। GCBen 13.2

শয়তান আবার তার দূতগণ নিয়ে আনন্দিত হয় যে সে মানবের পতন ঘটিয়ে ঈশ্বরের পুত্রকে তঁর উন্নত পদ থেকে উৎপাটন করতে পারতো। তার দূতগণের উদ্দেশে সে বলে যে যখন যীশু পতিত মানবের প্রকৃতি গ্রহণ করবেন, সে তাকে পরাভূত করবে এবং পরিত্রাণের পরিকল্পনা সম্পাদন করতে বাধা দিতে পারবে। GCBen 13.3

তখন আমাকে দেখানো হয় শয়তানকে যেমনটি সে ছিল, এক সুখী, উন্নত দূত। তারপর আমাকে দেখানো হয় সে এক্ষণে যেমনটি রয়েছে। সে এখনো এক রাজোচিত বাহ্যিক অবয়ব ধারণ করে। তার মুখাবয়ব এখনো মর্যাদাসম্পন্ন, কারণ সে একজন দূত যে পতিত। তবে তার মুখমন্ডল দ্বেষ, ঘৃণা, দুষ্টতা, প্রতারণা ও মন্দে পূর্ণ। একদা সম্ভ্ৰান্ত সেই ভ্ৰু আমি বিশেষভাবে লক্ষ্যকরি। তার কপাল তার চোখদুটি থেকে আরম্ভ হয়ে পেছনে হটে গেছে। আমি দেখি যে সে আপনাকে এমন দীর্ঘকাল হেয় করেছিল যে প্রতিটি উত্তম বৈশিষ্ট অবনত হয়, ও প্রতিটি মন্দ বৈশিষ্ট বিকশিত হয়। তার চোখদুটি ছিল চতুর, শঠ ও তা মহা বিচক্ষণতা দর্শায়। তার গঠন ছিল দীর্ঘ তবে তার হস্তদ্বয় ও মুখের চতুর্দিকে মাংস শিথিলভাবে ঝুলছিল। যেমন আমি তাকে দেখি, তার বাম হস্তের ওপরে তার চিবুক অবলম্বন করছিল। তাকে গভীর চিন্তায় মনে হয়। এক মৃদুহাসি, তার মুখমন্ডলের ওপরে ছিল তা এতই মন্দ ও পৈচাশিক শঠতার পূর্ণ, যা আমাকে কম্পমান করেছিল। এই মুচকি হাসিটি হচ্ছে তা যা সে ধারণ করে ঠিক তার পূর্বে যখন সে তার বলি নিশ্চিত করে ও যেমন সে বলিকে তার ফাঁদে আবদ্ধ করে এই মৃদুহাসিটি ভয়ানক হয়ে ওঠে। GCBen 13.4

______________________________________
যিশাইয় ৫৩ অধ্যায় দেখুন।
GCBen 13.5