মহা বিবাদ

40/44

৩৭শ অধ্যায় - ধার্মিকগণের উদ্ধার

সে ছিল মধ্যরাত্রি যে ঈশ্বর তাঁর লোকদেরকে উদ্ধারের নির্বাচন করেন। যেমন দুষ্টেরা তাদের চারিদিকে উপহাস করছিল, সহসা সূর্য আবির্ভূত হয়ে, তাঁর শক্তিতে প্রকাশমান হয়, আর চন্দ্র স্থির হয়ে দাঁড়ায়। দুষ্টেরা বিস্ময়ের সঙ্গে দৃশ্যটি দেখে। চিহ্নকার্য ও অদ্ভুত অদ্ভূত ঘটনা দ্রুত অনুক্রমে অনুগমন করে। সবকিছু মনে হয় যেন তার স্বাভাবিক গতিপথ থেকে বহিস্কৃত হয়। পবিত্র আনন্দে সাধুগণ তাদের উদ্ধারের নিদর্শন দেখে। GCBen 78.1

স্রোতধারা গুলি প্রবাহিত হতে বিরত হয়। অন্ধকার, ভারী ভারী, মেঘ উঠে আসে, ও পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা খায়। তবে অটল মহিমার একটি পরিস্কার স্থান ছিল, যেখান থেকে, বহু জলধির ন্যায় ঈশ্বরের কণ্ঠ আসে, যা স্বর্গ ও মর্ত কাঁপিয়ে দেয়। এক প্রবল ভূমিকম্প হয়। কবরগুলি নড়ে খুলে যায়, আর যারা তৃতীয় দূতের বার্তার বশে বিশ্রামদিন পালন করে, বিশ্বাসে মরেছিল, তাদের ধূলিময় শয্য থেকে, মহিমান্বিত হয়ে, সেই শান্তির চুক্তি শুনতে বেরিয়ে আসে যা ঈশ্বর তাদের সঙ্গে করবেন যারা তাঁর ব্যবস্থা পালন করেছিল। GCBen 78.2

আকাশ খোলে ও বন্ধ হয়, ও আন্দোলনে (উত্তেজনায়) ছিল। পর্বতসমূহ বাতাসে এক খাগড়া নলের ন্যায় নড়ে, ও চারিদিকে এবড়োখেবড়ো শিলা নিক্ষেপ করে। এক পাত্রের মতন সমুদ্র ফুটন্ত হয়, ও ভূমির ওপরে পাথর নিক্ষেপ করে। আর যেমন ঈশ্বর যীশুর আগমনের দিন ও দন্ডের কথা বলেন, ও তাঁর লোকদের উদ্দেশে চিরস্থায়ী চুক্তি অৰ্পণ করেন, তিনি একটি বাক্য বলেন, ও তারপরে ক্ষণেকের জন্যে থামেন, যখন কথাগুলি পৃথিবীর মধ্য দিয়ে ঘুরতে থাকে। ঈশ্বরের ইস্রায়েলগণ ঊৰ্দ্ধমুখে তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে, সেই কথাগুলির প্রতি কর্ণপাত করে যেমন সেগুলি যিহোবার মুখ থেকে নিগৰ্ত হয়, ও পৃথিবীব্যাপী বজ্রের উচ্চতম গজর্নের ন্যায় ঘুরতে থাকে। তা ভীষণভাবে ভাবগম্ভীর ছিল। প্রতিটি বাক্যের শেষে সাধুগন উচ্চৈঃস্বরে বলে, গৌরব! হাল্লেলুইয়া ! তাদের মুখমন্ডল ঈশ্বরের মহিমার দ্বারা উদ্ভাসিত হয়। আর সেগুলি মহিমার সাথে উজ্জ্বল হয় যেমন মোশির চেহারা হয়েছিল যখন তিনি সিনয় থেকে নেমে আসেন। প্রতাপের জন্যে দুষ্টেরা তাদের ওপরে দৃষ্টি রাখতে পারে না। আর যখন কখনো শেষ না হওয়া আশীবাদ তাদের ওপরে উচ্চারিত হয় যারা তাঁর বিশ্রামদিন পবিত্ররূপে পালন করে, ঈশ্বরকে সমাদৃত করেছিল, পশুর, ও তাঁর প্রতিমূর্তির ওপরে বিজয়ের এক প্রবল চিৎকার হয়। GCBen 78.3

তারপরে আসে পঞ্চাশতম জয়ন্তীকালীন উৎসব-অনুষ্ঠান, যখন ভূমি বিশ্রাম করে। আমি দেখি ধার্মিক দাস সাফল্য ও বিজয়ের সঙ্গে ওঠে, ও সেই শৃঙ্খল ঝেড়ে ফেলে যা তাকে বেঁধে রাখে, যখন তার দুষ্ট মালিক বিভ্রান্তিতে থাকে, বুঝতে পারেন কি করবে, কারণ দুষ্ট ঈশ্বরের কণ্ঠের বাক্য বুঝতে পারে না। শীঘ্রই আবির্ভূত হয় মহা শুভ্ৰ মেঘ। তাঁর ওপরে উপবিষ্ট মনুষ্যপুত্ৰ। GCBen 78.4

এই মেঘটি যখন তা প্রথম দূরে আবির্ভূত হয়, খুবই ছোট দেখায়। দূত বলেন যে তা ছিল মনুষ্য-পুত্রের চিহ্ন। আর যেমন মেঘটি পৃথিবীর পানে আরো কাছে এগিয়ে আসে, আমরা যীশুর চমৎকার মহিমা ও প্রতাপ দেখতে পাই যেমন তিনি জয় করতে চড়ে আসেন। দূতগণের এক পবিত্ৰ অনুচরবর্গ তাদের উজ্জ্বল, চকমকে মুকুট তাদের মাথায় নিয়ে, তাঁর পথে তাঁকে সাহচর্য দেন। দৃশ্যটির মহিমা কোনো ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। মহিমা ও অনতিক্রম্য গৌরবের জীবন্ত মেঘ, আরো অধিকতর নিকটে আসে, আর আমরা যীশুর সুন্দর চেহারা স্পষ্টভাবে দেখতে পাই। তিনি এক কাঁটার মুকুট পরিধান করেন নি। কিন্তু এক গৌরবের মুকুট তাঁর পবিত্ৰ কপাল ভূষিত করে। তাঁর পরিচ্ছদে ও ঊ(তে একটি নাম লেখা ছিল, রাজাদের রাজা ও প্রভুদের প্রভু। তাঁর চোখদুটি ছিল অগ্নির শিখাসম, তাঁর পদযুগল খাঁটি পিতলের সাদৃশ্য ছিল, আর তাঁর কণ্ঠ শব্দ করে বহু সুশ্ৰাব্য বাদ্যযন্ত্রের মতন। তাঁর মুখমন্ডল ছিল মধ্যাহ্ন সূর্যের উজ্জ্বলতাঁর ন্যায়। পৃথিবী তাঁর সাক্ষাতে কম্পমান হয়, আর আকাশমন্ডল গুটানো কাগজের ন্যায় প্রস্থান করে যখন তা একত্রে গুটানো হয়, আর প্রত্যেক পর্বত ও দ্বীপ তাদের স্ব-স্থান থেকে স্থানান্তরিত হয়। আর পৃথিবীর রাজাগণ ও মহান ব্যক্তিগণ ও ধনী ব্যক্তিরা, আর প্রধান সেনাধ্যক্ষেরা, ও পরাক্রমী লোকেরা আর প্রত্যেক দাস, ও প্রত্যেক স্বাধীন লোক, গুহাসমূহে ও পর্বতসমূহের শৈলে আপনাকে লুকোয়। আর পর্বত ও শৈলসমূহকে বলে, আমাদের উপরে পতিত হও, যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তাঁহার সম্মুখ হইতে এবং মেষশাবকের ক্রোধে হইতে আমাদিগকে লুকাইয়া রাখ।কেননা তাঁহাদের ক্রোধের মহাদিন আসিয়া পড়িল, আর কে দাঁড়াতে পারে? GCBen 78.5

যারা কিছুক্ষণ পূর্বে ঈশ্বরের বিশ্বস্ত সন্তানদেরকে পৃথিবী থেকে বিনষ্ট করতো, তাদেরকে, ঈশ্বরের মহিমা স্বচক্ষে দেখতে হয়েছিল যা তাদের ওপরে বিরাজ করে। তাদেরকে তারা গৌরাবান্বিত দেখে। আর যাবতীয় ভয়ানক দুষ্ট দৃশ্যসমূহের মাঝে তারা আনন্দপূর্ণ সঙ্গীতে সাধুগণের কণ্ঠকে বলতে শুনেছিল, এই দেখ, ইনিই আমাদের ঈশ্বর আমরা ইহাঁরই অপেক্ষায় ছিলাম, আমরা ইহাঁর কৃত পরিত্রাণে উল্লাসিত হইব। পৃথিবী প্রচন্ডভাবে কেঁপে উঠে যেমন ঈশ্বরের পুত্রের কণ্ঠ ঘুমন্ত ধার্মিকগণকে আহ্বান করে। তারা আহ্বানে সাড়া দেয়, ও গৌরবময় অমরত্বে পরিহিত হয়ে, এরূপ ঘোষণা করে বেরিয়ে আসে, “মৃত্যু জয়ে কবলিত হইল”। “মৃত্যু তোমার জয় কোথায়? মৃত্যু তোমার হুল কোথায়?” তখন জীবিত ধার্মিকেরা, ও পুনঃত্থিত ব্যক্তিরা, এক দীর্ঘ, প্রবল আবেগে অভিভূত করা জয়ের আনন্দসূচক উচ্চধ্বনিতে কণ্ঠ তোলে। সেই সব ভগ্ন দেহ যা কবরে নেমে গিয়েছিল অক্ষয় সুস্থতা ও প্রাণশক্তিতে উঠে আসে। জীবিত ধার্মিকেরা মুহূর্তের মধ্যে, চোখের পলকে, রূপান্তরিত হয়, ও পুনঃত্থিত ব্যক্তিদের সঙ্গে মিলিত হয়, আর একত্রে তারা শূন্যে (আকাশে) তাদের প্রভুর সাক্ষ্যাৎ করে। ও কি এক গৌরবময় সাক্ষ্যাৎ (মিলন), বন্ধুগণ যাদেরকে মৃত্যু বিচ্ছিন্ন করেছিল, আর বিচ্ছিন্ন না হতে মিলিত হয়। GCBen 78.6

মেঘ রথের উভয় দিকে পক্ষসমূহ ছিল, ও তাঁর নীচে জীবন্ত চাকাসমূহ ছিল। আর যেমন মেঘের রথ উদ্ধাদিকে গড়িয়ে চলে, চাকাসমূহ ঘোষণা করে, পবিত্র, আর মেঘ ঘোষণা করে, পবিত্র, পবিত্র, পবিত্র, সদাপ্রভু ঈশ্বর সর্বশক্তিমান। আর মেঘে ধার্মিকেরা ঘোষণা করে, গৌরব, হাল্লেলুইয়া। আর রথ ঊৰ্দ্ধমুখে পবিত্র নগরের দিকে গড়িয়ে চলে। পবিত্র নগরী প্রবেশ করার পূর্বে, ধার্মিকগণকে এক সিদ্ধ বর্গক্ষেত্রে বিন্যস্ত করা হয়, যীশুকে ভেতরে নিয়ে। তিনি স্কন্ধে ও মস্তকে সাধুগণের ওপরে উঁচা ছিলেন, এবং দূতগণের চেয়ে স্কন্ধে ও মস্তকে ওপরে ছিলেন। তাঁর গরিমাময় গঠন, ও সুন্দর মুখমন্ডল বর্গক্ষেত্রে সকলের দ্বারা দেখা যেত। GCBen 79.1

______________________________________
২ রাজাবলি ২:১১( যিশাইয় ২৫:৯( ১ করিস্থীয় ১৫:৫১-৫৫( ১ থিষলনীকীয় ৪:১৩-১৭( প্রকাশিত বাক্য ১:১৩-১৬( ৬:১৪-১৭( ১৯:১৬ দেখুন।
GCBen 79.2