মহা বিবাদ

17/44

১৪শ অধ্যায় - শৌলের মনপরিবর্তন

পুরুষ বা স্ত্রী যারা যীশুকে প্রচার করছিল তাদেরকে ধরতে, ও তাদেরকে বেঁধে যিরূশালেমে আনতে প্রাধিকারের চিঠি নিয়ে যেমন শৌল দম্মেশকে যাত্রা করেন, মন্দ দূতেরা তার আশেপাশে উল্লসিত হয়। তবে যেমন তিনি যাত্রা করেন, হঠাৎই স্বৰ্গ হতে এক আলোক তার চারিদিকে চমকে ওঠে ও মন্দ দূতগণের পলায়ন করায়, আর শৌলকে দ্রুত ভূমিতে পতিত করায়। এক কণ্ঠকে তিনি বলতে শোনেন, শৌল, কেন আমাকে তাড়না করিতেছ?শৌল জানতে চান, প্রভু, আপনি কে? আর প্রভু কহিলেন, আমি যীশু যাঁহাকে তুমি তাড়না করিতেছ। কন্টকের মুখে পদাঘাত করা তোমার দুষ্কর, আর শৌল কম্পিত কলেবরে ও বিস্ময়ে বলেন, প্রভু আমি কি করব? আর প্রভু কহিলেন, উঠ নগরে প্রবেশ কর, তোমাকে কি করিতে হইবে, তাহা বলা যাইবে। GCBen 36.1

আর তাহার সহ-পথিকেরা অবাক হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল, তাহারা ঐ বাণী শুনিল বটে, কিন্তু কাহাকেও দেখিতে পাইল না। যেমন আলোক সরে যায়, পরে শৌল ভূমি হইতে উঠিলেন, কিন্তু চক্ষু মোলিলে পর কিছুই দেখিতে পাইলেন না। স্বর্গের আলোকের প্রতাপ তাকে অন্ধ করেছিল। আর তাহারা তাঁহার হস্ত ধরিয়া তাহাকে দম্মেশকে লইয়া গেল। আর তিনি তিন দিন পৰ্য্যন্ত দৃষ্টিহীন থাকিলেন, এবং কিছুই ভোজন, কি পান করিলেন না। প্ৰভু তখন তাঁর দূত কে ঠিক সেই ব্যক্তিদের একজনের কাছে পাঠান যাকে শৌল বন্দি করবার আশা করেন, আর তাকে দর্শনযোগে বলেন যে তাকে সরল নামক পথে গিয়ে যিহূতার বাটিতে তার্ষ নগরীয় শৌলের অন্বেষণ করতে হবে। কেননা দেখ সে প্রার্থনা করিতেছে আর সে দেখিয়াছে, অননিয় নামে এক ব্যক্তি আসিয়া তাহার উপরে হস্তাৰ্পণ করিতেছে, যেন সে দৃষ্টি পায়। GCBen 36.2

অননিয়ের শঙ্কা হয় এই ব্যাপারটিতে কোনো ভুল ছিল ও প্রভুর কাছে বর্ণনা করতে আরম্ভ করেন শৌলের বিষয়ে তিনি কি শুনেছিলেন। কিন্তু প্ৰভু আননিয়কে বলেন, তুমি যাও, কেননা জাতিগণের ও রাজগণের এবং ইস্রায়েল-সন্তানগণের নিকটে আমার নাম বহনার্থে সে আমার মনোনীত পাত্ৰ কারন আমি তাহাকে দেখাইয়া দিব, আমার নামের জন্য তাহাকে কত ক্লেশ ভোগ করিতে হইবে। তখন অননিয় চলিয়া গিয়া সেই বাটীতে প্রবেশ করিলেন, এবং তাঁহার উপরে হস্তাৰ্পণ করিয়া কহিলেন, ভ্রাতা শৌল, প্রভু সেই যীশু, যিনি তোমার আসিবার পথে তোমাকে দর্শন দিলেন, তিনি আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, যেন তুমি দৃষ্টি পাও এবং পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হও। GCBen 36.3

আর অমনি তিনি দৃষ্টি প্রাপ্ত হইলেন, এবং উঠিয়া বাপ্তাইজিত হইলেন। আর অমনি তিনি সমাজ-গৃহে যীশুকে এই বলিয়া প্রচার করিতে লাগিলেন যে, তিনিই ঈশ্বরের পুত্র। আর যাহারা তাঁহার কথা শুনিল, তাহারা সকলে চমৎকৃত হইল, বলিতে লাগিল এ কি সেই ব্যক্তি নয় যে, এই নামে যাহারা ডাকে,তাহাদিগকে যিহ্মশালেমে উৎপাটন করিত, এবং এখানে এই জন্যই আসিয়াছিল, যেন তাহাদিগকে বন্ধন করিয়া প্রধান যাজকদের নিকটে লইয়া যায়? কিন্তু শৌল উত্তর উত্তর শক্তিমান হইয়া উঠিলেন এবং যিহূদীদিগকে নিরুত্তর করিতে লাগিলেন। তারা আবার অসুবিধেয় পড়ে। পবিত্র আত্মার ক্ষমতায় শৌল তার অভিজ্ঞতা বলেন, যীশুর প্রতি শৌলের বিরোধিতা, ও তাঁর নামের ওপরে বিশ্বাস করা সবাইকে খুঁজে বের করতে ও মৃত্যুর জন্যে অর্পণ করতে তাঁর অত্যন্ত আগ্রহের বিষয়ে সকলেই পরিচিত ছিল। তার অলৌকিক মনপরিবর্তন অনেককেই বিশ্বাস সিদ্ধ করে যে যীশুই ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন। শৌল তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন, যে তিনিও এই পথের প্রতি উপদ্রব করিতেন, পুরুষ ও স্ত্রীলোকদিগকে বাঁধিয়া কারাগারে সমৰ্পণ করিতেন, আর যেমন তিনি দম্মেশকে যাত্রা করেন হঠাৎ আকাশ হতে মহা আলোক তাঁর চারিদিকে চমকে ওঠে, ও যীশু আপনাকে তাঁর কাছে প্রকাশ করেন, ও তাকে জানান যে তিনিই ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন। যেমন শৌল সাহসের সঙ্গে যীশুকে প্রচার করেন, তিনি তাঁর সঙ্গে এক জোরালো প্রভাব বহন করেন। শাস্ত্ৰকলাপের বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ছিল, আর তার মনপরিবর্তনের পরে যীশুর সম্পর্কে ভাববানী-সমূহের ওপরে এক ঐশ্বরিক আলোক প্রকাশিত হয়, যা সত্যকে স্পষ্ট ভাবে ও সাহসের সঙ্গে উপস্থাপন করতে, এবং শাস্ত্রলিপির কোনো বিকৃতিকে সংশোধন করতে তাকে সক্ষম করে। তার ওপরে ঈশ্বরের আত্মার স্থিতি নিয়ে তিনি এক স্পষ্ট ও ফলপদ উপায়ে তাঁর শ্রোতাদেরকে ভাববানীগুলির মধ্য দিয়ে খৃষ্টের সময় পর্যন্ত নিয়ে যেতেন ও তাদের দেখাতেন যে সেই শাস্ত্রলিপি পূর্ণ হয়ে এসেছিল, যা খৃষ্টের দুঃখ, ভোগসমূহ, মৃত্যু ও পূনঃউত্থানের প্রতি উল্লেখ করে। GCBen 36.4

______________________________________
প্রেরিত ৯ অধ্যায় দেখুন।
GCBen 36.5