মহা বিবাদ

16/44

১৩শ অধ্যায় - স্তিফানের মৃত্যু

যিরূশালেমে প্রচুররূপে শিষ্যদের বৃদ্ধি হয়। আর ঈশ্বরের বাক্য ব্যাপিয়া গেল, আর যাজকদের মধ্যে বিশ্বস্ত লোক বিশ্বাসের বশবর্তী হইল। আর স্তিফান অনুগ্রহে ও শক্তিতে পরিপূর্ণ হইয়া লোকদের মধ্যে মহা মহা অদ্ভূত লক্ষণ ও চিহ্নকার্য সাধন করিতে লাগিলেন। অনেকেই ক্রুদ্ধ ছিল কারণ যাজকেরা তাদের পরম্পরা থেকে, এবং বলিদান ও নৈবদ্যসমূহ থেকে বিমুখ হচ্ছিল, ও যীশুকে মহা বলিদান রূপে গ্রহণ করছিল। স্তিফান ঊৰ্দ্ধ হতে ক্ষমতার সাথে, যাজক ও প্রাচীনদেরকে ভৎসণা করেন ও তাদের সাক্ষাতে যীশুকে প্রশংসিত করেন। কিন্তু তিনি যে বিজ্ঞতার ও যে আত্মার বলে কথা কহিতেছিলেন, তাহার প্রতিরোধ করিতে তাহাদের সাধ্য হইল না। তখন তাহারা কয়েক জনকে গড়িয়া লইল, আর ইহারা এই কথা কহিল, আমরা ইহাকে মোশির ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে নিন্দাবাদ করিতে শুনিয়াছি। তাহারা লোক সাধারণকে উত্তেজিত করিয়া তুলিল এবং স্তিফানকে আক্রমণ করিয়া ধরিল, এবং মিথ্যা সাক্ষী দাঁড় করাইয়া দিল, যাহারা কহিল এই ব্যক্তিকে পবিত্র স্থানের ও ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা কহিতে শুনিয়াছি যে, নাসরতীয় যীশু এই স্থান ভাঙ্গিয়া ফেলিবে, এবং মোশি আমাদের কাছে যে সকল নিয়মপ্রনালী সমৰ্পণ করিয়াছেন, সে সকল পরিবর্তন করিবে। GCBen 35.1

তখন যাহারা সভায় বসিয়াছিল তাহারা সকলে তাহার প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া দেখিল, তাহার মুখ স্বর্গদূতের মুখের তুল্য। তারা তার মুখমন্ডলে ঈশ্বরের মহিমা দেখে। বিশ্বাসে ও আত্মার পূর্ণ হয়ে তিনি উঠে দাঁড়ান, আর ভাববাদীগণ থেকে শুরু করে, তিনি তাদেরকে যীশুর আগমন, তাঁর ক্রুশারোহণ, তাঁর পুনঃউত্থান ও স্বর্গারোহণ পর্যন্ত নিয়ে আসেন, ও তাদেরকে দেখান যে সদাপ্রভু হস্তনির্মিত মন্দিরসমূহে বাস করেন না। তারা মন্দিরের উপসনা করে। যদি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বলা হতো তার চেয়ে অধিকতর ঘৃনামিশ্রিত ক্রোধে তারা পূর্ণ হয় মন্দিরের বিরুদ্ধে বলা হলে। স্বৰ্গীয় ঘৃণামিশ্ৰিত ক্ৰোধে স্তিফান উত্তেজিত হন যেমন তিনি দুষ্ট হবার, ও হৃদয়ে অচ্ছিন্নত্বক হবার জন্যে তাদের বিরুদ্ধে চিৎকার করেন। তোমরা সবৰ্দা পবিত্র আত্মা প্রতিরোধ করিয়া থাক। তারা বাহ্যিক বিধিসমূহ পালন করে যখন তাদের হৃদয় নীতিহীন ও মারাত্বক মন্দে পূর্ণ। ভাববাদিগণকে উৎপীড়ন করায় তাদের পূর্ব-পুরুষদের নিষ্ঠুরতা এই বলে স্তিফান তাদের কাছে উল্লেখ করেন, তোমরা তাহাদিগকেই বধ করিয়াছিলে, যাঁহারা পূর্বের সেই ধৰ্মময়ের আগমন জ্ঞাপন করিতেন, যাঁহাকে সম্প্ৰতি তোমরা শত্ৰু হস্তে সমর্পণ ও বধ করিয়াছ। GCBen 35.2

প্রধান পুরোহিত ও প্রাচীনেরা ক্রোধিত হয় যেমন স্পষ্ট, উগ্র সত্যসমূহ বলা হয় আর তারা স্তিফানের দিকে দ্রুত এগিয়ে যায়। তাঁর ওপরে স্বর্গের আলোক প্রকাশ পায়, আর যেমন তিনি একদৃষ্টে স্বর্গের পানে তাকান, ঈশ্বরের মহিমার এক দর্শন তাকে দেয়া হয়, আর দূতেরা তাঁর উপরে ঘোরাফেরা করেন। তিনি উচ্চকণ্ঠে বলেন, দেখ আমি দেখিতেছি, স্বর্গ খোলা রহিয়াছে, এবং মনুষ্যপুত্র ঈশ্বরের দক্ষিণে দাঁড়াইয়া আছেন। লোকেরা তাঁর কথা শুনবে না। তাহারা উচ্চৈঃস্বরে চেঁচাইয়া উঠিল, আপন আপন কৰ্ণ বদ্ধ করিল এবং একযোগে তাহার উপরে গিয়া পড়িল আর তাঁহাকে নগর হইতে বাহির করিয়া পাথর মারিতে লাগিল। আর স্তিফান হাঁটু পাতিয়া উচ্চৈঃস্বরে কহিলেন, প্রভু, ইহাদের বিপক্ষে এই পাপ ধরিও না। GCBen 35.3

আমি দেখি যে স্তিফান ঈশ্বরের এক মহৎ ব্যক্তি ছিলেন, যাকে বিশেষভাবে উত্থাপন করা হয়েছিল মন্ডলীতে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান পূর্ণ করতে। শয়তান উল্লসিত হয় যেমন যেমন তাকে পাথর মেরে বধ করা হয় কারণ সে জানতো যে শিষ্যেরা তাঁর ক্ষতি ভীষণভাবে অনুভব করবেন। তবে শয়তানের সাফল্য সংক্ষিপ্ত ছিল কারণ সেই দলটিতে একজন দাঁড়িয়ে থেকে স্তিফানের মৃত্যু স্বচক্ষে দেখছিলেন, যার কাছে যীশু আপনাকে প্রকাশিত করবেন। স্তিফানের প্রতি পাথর ছুঁড়তে যদিও তিনি কোনো অংশ নেন নি তথাপি তিনি তাঁর মৃত্যুতে সম্মতি দেন। শৌল মন্ডলীকে অত্যাচার করতে অত্যন্ত আগ্রহশীল হয়ে, তাদের অনুসরণ করছিলেন, তাদেরকে তাদের ঘরে ঘরে পাকড়াও করছিলেন এবং তাদের কাছে তাদেরকে অর্পণ করছিলেন, যারা তাদেরকে বধ করে। শয়তান শৌলকে ফলপ্রদভাবে ব্যবহার করছিল। তবে ঈশ্বর শয়তানের ক্ষমতা চূর্ণ করতে পারেন, ও তাদেরকে মুক্ত করে দিতে পারেন যারা তার দ্বারা বন্দি হতে বাধ্য হয়। শৌল একজন পন্ডিত ব্যক্তি ছিলেন, আর ঈশ্বরের পুত্রের ও যারা তাঁকে বিশ্বাস করে তাদের বিরুদ্ধে তার বিদ্রোহ চালনা করতে সাফল্যের সঙ্গে তাঁর প্রতিভাসমূহ প্ৰয়োগ করছিল। তবে তাঁর নাম প্রচার করতে তাদের কার্যে শিষ্যদেরকে সবল করতে যীশু শৌলকে একজন মনোনিত পত্র নির্বাচিত করেন। যিহূদীদের দ্বারা শৌল গুরুত্বপূর্ণভাবে সম্মানিত ছিলেন। তার উদ্যোগ ও তার পান্ডিত্য তাদেরকে সন্তুষ্ট করে, ও শিষ্যদের অনেককেই ভীষণভাবে শঙ্কিত করে। GCBen 35.4

______________________________________
প্রেতির ৬ ও ৭ অধ্যায় দেখুন।
GCBen 35.5