মহা বিবাদ

13/44

১০ম অধ্যায় - খৃষ্টের পুনঃউত্থান

শিষ্যেরা শাব্বাতদিনে বিশ্রাম করেন, তাদের প্রভুর মৃত্যুর জন্যে দুঃখপ্রকাশ করেন, যখন যীশু, প্রতাপের রাজা কবরে বিশ্রাম করেন।রাতটি ধীরে ধীরে কেটে যায়, আর যখন তখনো তা অন্ধকারে ছিল, কবরের ওপরে ঘোরাফেরা করা দূতেরা জানতেন যে ঈশ্বরের প্রিয় পুত্রের, তাদের প্রিয়পাত্র অধিনায়কের, মুক্তি পাবার সময় প্রায় আগত ছিল। আর যেমন তারা গভীরতম আবেগ নিয়ে তাঁর সাফল্যের অপেক্ষা করেছিলেন, এক প্রবল শক্তিশালী দূত স্বর্গ থেকে দ্রুতবেগে উড়ে আসেন। তাঁর মুখমন্ডল বিদ্যুতের ও তাঁর পোষাক তুষারের ন্যায় শুভ্র ছিল। তাঁর দীপ্তি তাঁর গতিপথ থেকে অন্ধকার অন্তৰ্হিত করে, আর যারা বিজয়ের সঙ্গে যীশুর দেহ দাবি করেছিল সেই অসৎ দূতগণকে তাঁর উজ্জ্বলতা ও প্রতাপ থেকে মহা আতঙ্কে পলায়ন করায়। স্বর্গদূতীয় বাহিনীর একজন যিনি যীশুর অবমাননার ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছিলেন, ও তাঁর পবিত্র বিশ্রামের স্থান চৌকি দিচ্ছিলেন স্বর্গ হতে আসা দূতের সঙ্গে যোগ দেন। আর একত্রে তারা কবরের অভিমুখে নেমে আসেন। পৃথিবী বিচলিত হয় ও কেঁপে ওঠে যেমন তারা এগিয়ে আসেন, আর এক প্রবল ভূমিকম্প হয়। উৎসাহী ও প্রতাপশালী দূত পাথরটি ধরেন ও তাড়াতাড়ি সেটিকে গড়িয়ে দ্বার থেকে সরিয়ে দেন ও তার ওপরে বসেন। GCBen 28.1

প্রহরীদেরকে ভীষণ ভয় আক্রান্ত করে। যীশুর দেহখানি ধরে রাখতে এক্ষণে তাদের ক্ষমতা ছিল কোথায়? তাদের কর্তব্যের বিষয়ে, কিম্বা তাকে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তারা ভাবে নি। তারা বিস্মিত ও সন্ত্রাসগ্রস্ত হয়, যেমন সূর্যের চেয়ে উজ্জ্বলতর হয়ে চর্তুদিকে দূতগণের অতিশয় উজ্জ্বল জ্যোতি প্ৰকাশিত হয়। রোমীয় প্রহরীরা দূতগণকে দেখে, ও মৃত ব্যক্তির ন্যায় ভূমিতে পতিত হয়। একজন দূত বিজয়ে পাথরখানি গড়িয়ে সরিয়ে দেন, ও এক স্পষ্ট ও জোরালো কণ্ঠে, চিৎকার করে বলেন, হে ঈশ্বরের পুত্র! আপনার পিতা আপনাকে ডাকেন। বের হয়ে আসুন! মৃত্যু আর তাঁর ওপরে আধিপত্য রাখতে পারে না। যীশু মৃতগণের মধ্যে হতে ওঠেন। অপর দূত কবরে প্রবেশ করেন, আর যেমন যীশু বিজয়ের সঙ্গে উত্থিত হন, তিনি তাঁর মস্তকে জড়ানো কাপড়খানি খোলেন, আর যীশু এক বিজয়ী জেতাঁর ন্যায় চলে আসেন। ভক্তিপূর্ণ বিস্ময়ে দূতীয় বাহিনী দৃশ্যটির ওপরে স্থির দৃষ্টিতে তাকান। আর যেমন যীশু প্রতাপের সঙ্গে কবরের থেকে হেঁটে বেরিয়ে আসেন, সেই উজ্জ্বল দূতেরা আপনাকে ভূমিতে অবনমিত করেন ও তাঁর আরাধনা করেন পরে বিজয় ও সাফল্যের গীতসমূহে অভিবাদন করেন, যে মৃত্যু তাঁর ঐশ্বরিক বন্দিকে আর ধরে রাখতে পারতো না। শয়তান এক্ষণে বিজয়োল্লাস করে না। তাঁর দূতেরা স্বর্গীয় দূতগণের উজ্জ্বল তীক্ষ্ম আলোকের সাক্ষাতে পলায়ন করেছিল। তারা বিদ্বেষের সঙ্গে তাদের রাজার কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করে, যে তাদের কাছ থেকে তাদের শিকার বলপূর্বক নিয়ে নেয়া হয়েছিল, ও যে তিনি যাঁকে তারা এমন প্রবলভাবে ঘৃণা করে, মৃতগণের মধ্যে হতে উঠেছিলেন। GCBen 28.2

শয়তান ও তার দূতেরা অল্প মুহূর্তের সাফল্য উপভোগ করেছিল যে পতিত লোকদের ওপরে তাদের ক্ষমতা জীবনের প্রভুকে কবরে স্থাপন করা ঘটিয়েছিল। তবে তাদের নারকীয় সাফল্য ছিল সংক্ষিপ্ত। কারণ যেমন যীশু তাঁর কারাগৃহ থেকে এক মহিমাময় সাফল্যে বেরিয়ে আসেন, শয়তান বুঝতে পারে যে এক নিৰ্দিষ্ট সময় পরে তাকে মরতেই হবে, ও তাঁর রাজ্য তাঁর কাছে চলে যাবে, যার অধিকার তাঁর ছিল। সে বিলাপ করে ও ক্রোধোন্মত্ত হয় যে তাঁর সমস্ত প্রচেষ্টা ও ক্ষমতা সত্বেও, যীশু পরাজিত হন নি, কিন্তু মনুষ্যদের জন্যে পরিত্রাণের একপথ খুলে দিয়েছিলেন, আর যে কেউ চাইবে তাতে চলতে পারে ও রক্ষা পেতে পারে। GCBen 28.3

অল্প ক্ষণের জন্যে শয়তান কে বিষন্ন মনে হয় ও সে ক্লেশ প্রকাশ করে। ঈশ্বরের শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কাজ করতে এর পরে তারা কিসে ব্যাপৃত হবে তা বিবেচনা করতে সে তাঁর দূতগণের সঙ্গে এক মন্ত্রণাসভা করে। শয়তান বলে, তোমাদেরকে অবশ্য করে প্রধান প্রধান পুরোহিত ও প্রাচীনবৰ্গের কাছে তাড়াতাড়ি যেতে হবে। তাদেরকে প্রতাড়িত করতে ও তাদের চোখ অন্ধ করতে, যীশুর বিরুদ্ধে তাদের হৃদয় কঠিন করতে আমরা সফল হয়েছি। তাকে এক ভন্ড বলে আমরা বিশ্বাস করিয়েছি। রোমীয় চৌকি ঘৃণাজনক খবরটি বয়ে নিয়ে যাবে যে যীশু উত্থিত হয়েছেন। যাজক ও প্রাচীনবর্গকে আমরা যীশুকে ঘৃণা করতে ও তাকে হত্যা করকে চালিত করি। এক্ষণে তাদের সাক্ষাতে এক উজ্জ্বল আলোকে এটা তুলে ধর, যে যেমন তারা তাঁর হত্যাকারী ছিল, এটা যদি জানাজানি হয়ে যায় যে তিনি উঠেছেন, তারা লোকদের দ্বারা প্রস্তরাঘাত প্রাপ্ত হবে, যেহেতু তারা একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে হত্যা করে। GCBen 28.4

আমি দেখি রোমীয় চৌকি, যেমন দূতীয় বাহিনী স্বর্গের দিয়ে চলে যান, এবং জ্যোতি ও মহিমা চলে যায়, এটা দেখতে আপনাকে উত্তোলন করে চারিদিকে দৃষ্টি ফেরানো তাদের পক্ষে নিরাপদ কি না। তারা বিস্ময়ে পূর্ণ হয় যেমন তারা দেখে যে প্রকান্ড পাথরখানি কবরের দ্বার থেকে গড়ানো হয়েছে, ও যীশু উত্থিত হন। তারা যা দেখেছিল তার অদ্ভুত কাহিনী নিয়ে তারা তাড়াতাড়ি প্রধান প্রধান পুরোহিত ও প্রাচীনদের কাছে যায়।আর যেমন সেই হত্যাকারীরা অদ্ভুত বিবরণী শোনে তাদের মূখমন্ডলে পান্ডুরতা আসে।তারা যা করেছিল তাতে তাদেরকে ভীষণ আতঙ্ক চেপে ধরে। তারা তখন বুঝতে পারে যে যদি বিবরণীটি সঠিক হয়, তারা বিনাশপ্রাপ্ত। কিছুক্ষণের জন্যে তারা স্তম্ভিত হয় আর পরস্পরের দিকে নীরবে তাকিয়ে, কি করবে বা বলবে বুঝতে পারে না। তারা যথায় স্থাপিত ছিল তা বিশ্বাস করতে পারে না যদি না তা তাদের আপন দোষারোপে হয়। নিজেরা নিজেরা একান্তে পরামর্শ করতে যায় কি করা যেতে পারে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে যদি এটা চারিদিকে ছড়িয়ে যায় যে যীশু উঠেছিলেন, আর অমন গৌরবের প্রতিবেদন, যা চৌকিকে মৃত ব্যক্তিদের ন্যায় পতিত করাটি লোকদের কাছে পৌঁছেলে, তারা নিশ্চয়ই ক্রোধত হবে ও তাদেরকে হত্যা করবে। ব্যাপারটি গোপন রাখতে তারা সৈন্যদেরকে পারিশ্রমিক দিয়ে নিযুক্ত করে। এই বলে তারা তাদেরকে প্রচুর অর্থ দেয়, তোমরা বল, যখন আমরা ঘুমিয়েছিলাম, তাঁর শিষ্যরা রাতের মধ্য দিয়ে আসেন ও তাকে চুরি করে নিয়ে যান। আর যখন চৌকি জিজ্ঞেস করে তাদের নির্দিষ্ট স্থানেতে ঘুমোবার জন্য তাদের সঙ্গে কি করা হবে, যাজক ও প্রাচীনেরা বলে যে তারা শাসনকর্তাকে প্রবর্তিত করবে ও তাদেরকে বাঁচাবে। পয়সার উদ্দেশ্যে রোমীয় চৌকি তাদের সম্মান বিক্রী করে এবং যাজক ও প্রাচীনদের পরামর্শ অনুসরণ করতে রাজী হয়। GCBen 28.5

যখন যীশু যেমন তিনি ক্রুশের ওপরে ঝোলেন, চিৎকার করে বলেন, ‘সমাপ্ত হইল’, শিলাসমূহ বিদীর্ণ হয়, পৃথিবী কেঁপে উঠে ও কবরের কতকগুলি নাড়ায় খুলে যায়।কারণ যখন যীশু মৃতগণের মধ্য হতে ওঠেন, এবং মৃত্যু ও কবরকে জয় করেন,যখন তিনি তাঁর কারা গৃহ থেকে এক সফলকাম বিজয়ী রূপে বেরিয়ে আসেন।যে সময়ে পৃথিবী টলমল করছিল ও কঁপছিল, ও স্বর্গের চমৎকার মহিমা পবিত্র স্থানটির আশেপাশে গুচ্ছবদ্ধ হয়, তাঁর আহ্বানে আজ্ঞাবহ হয়ে ধার্মিকদের অনেকে সাক্ষীরূপে বেরিয়ে আসেন যে তিনি উঠেছিলেন। সেইসব অনুগৃহীত, পুনঃউত্থিত সাধুগণ মহিমান্বিত হয়ে বেরিয়ে আসেন। তাঁরা ছিলেন কিছু মনোনীত ও পবিত্র ব্যক্তি যারা সৃষ্টি থেকে প্রত্যেক যুগে জীবিত ছিলেন, এমন কি খৃষ্টের সময়কাল পর্যন্ত। আর যে সময়ে প্রধান প্রধান পুরোহিত ও প্রাচীনেরা খৃষ্টের পুনঃত্থান চাপা দেবার চেষ্টা করেছিল, খৃষ্ট যে উঠেছিলেন তাঁর সাক্ষ্য দিতে ও তাঁর মহিমা প্রচার করতে ঈশ্বর একটি দলকে তাদের কবর থেকে আনবার মনস্থ করেন। GCBen 29.1

যারা পুনঃউত্থিত হন তারা ছিলেন বিভিন্ন আকৃতির ও গঠনের। আমাকে জ্ঞাত করা হয় যে পৃথিবীর নিবাসীগণ অপজাত হয়ে এসে, তাদের শক্তি-সামর্থ ও লাবণ্য হারাচ্ছিল। শয়তানের ব্যাধি ও মৃত্যুর বিষয়ে ক্ষমতা আছে, আর প্রত্যেক যুগে অভিশাপটি অধিকতর প্রতীয়মান হয়, ও শয়তানের ক্ষমতা অধিকতর স্পষ্টভাবে দেখা যায়। কেউ কেউ অন্যদের চেয়ে চেহারায় ও গঠনে দেখতে অধিকতর চমৎকার ছিলেন। আমাকে জ্ঞাত করা হয় যে যারা নোহের ও আব্রাহামের সময়ে বাস করেন তারা গঠনে, সৌন্দর্যে ও সামর্থে বেশী করে দূতগণের ন্যায় ছিলেন। কিন্তু প্রতিটি প্রজন্ম দুর্বলতর ও ব্যাধির প্রতি অধিকতর বশীভূত হয়ে আসছিল ও তাদের জীবন সংক্ষিপ্ততর স্থায়ীত্বে হয়ে আসছিল। শয়তান শিখে চলেছিল মনুষ্যদেরকে কি করে উত্যক্ত করা যায় ও মানবজাতিকে দুর্বল করা যায়। GCBen 29.2

ঐসব পবিত্ৰ লোক যারা খৃষ্টের পূনঃউত্থানের পরে বেরিয়ে আসেন অনেকের কাছে আবিভূর্ত হয়ে বলেন যে মানবের জন্যে বলিদান সম্পূর্ণ ছিল, যে যীশু যাকে যিহূদীরা ক্রুশে দেয়, মৃতগণের মধ্য হতে উঠেছিলেন ও আরো বলেন, আমরা তাঁর সঙ্গে উঠেছি, তারা সাক্ষ্য বহন করেন যে সে ছিল তাঁর পরাক্রমী ক্ষমতা যা দ্বারা তাদেরকে তাদের কবর থেকে আহ্বান করা হয়েছিল। প্রচারিত হওয়া মিথ্যা জ্ঞাপনগুলি সত্বেও, ব্যাপারটি শয়তানের তাঁর দূতগণের, কিম্বা প্রধান পুরোহিতদের দ্বারা লুকানো যায় নি, কারণ এই পবিত্র দলটি তাদের কবর থেকে বাইরে আনীত হয়ে, অদ্ভুত, আনন্দময় খবরটি প্রচার করেন যীশুও তাঁর দুঃখ প্রকাশকারী, ভগ্নহৃদয় শিষ্যদের কাছে আপনাকে দেখা দিয়ে, তাদের শঙ্কা-ভয় দূরীভূত করেন, ও তাদের উল্লাসিত হওয়া ও আনন্দ উৎপন্ন করেন। GCBen 29.3

খবরটি যেমন নগর থেকে নগরে, শহর থেকে শহরে ছড়ায়, তাদের পালায় যিহূদীরা তাদের জীবনের জন্যে শঙ্কিত হয়, ও শিষ্যদের প্রতি যে বিদ্বেষ তারা পোষণ করে তা লুকোয়। তাদের একমাত্র আশা ছিল মিথ্যে খবর ছড়ানো। আর ইচ্ছে এই যে যাদের এই মিথ্যে খবরটি সত্য হয়, তা বিশ্বাস করে। পিলাত কম্পিত হয়। সে প্রদত্ত জোরালো সাক্ষ্যটি বিশ্বাস করে যে যীশু মৃতগণের মধ্যে থেকে ওঠেন, যে অনেকে তাঁর সঙ্গে আনীত হন, আর তাঁর শান্তি তাকে চিরকালের জন্যে ত্যাগ করে। জাগতিক সম্মানের উদ্দেশ্যে, তাঁর কর্তৃত্ব, তাঁর জীবন হারাবার ভয়ে, সে যীশুকে মরতে অর্পণ করে। এক্ষণে সে সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাসসিদ্ধ হয় যে সে শুধু এক সাধারণ লোক, নির্দোষ লোক ছিল না যাঁর রক্তের জন্যে সে দোষী ছিল কিন্তু ঈশ্বরের পুত্রের রক্তের জন্যে। পীলাতের জীবন ছিল শোচনীয় তাঁর শেষ পর্যন্ত শোচনীয়। হতাশা ও মনস্তাপ প্রতিটি আশাবান, আনন্দময় অনুভূতি ভেঙ্গে দেয়। সে সান্তনাপ্রাপ্ত হতে অস্বীকার করে, ও এক অতি শোচনীয় মৃত্যু মরে। GCBen 29.4

হেরোদের হৃদয় আরো কঠিন হয়, আর যখন সে শোনে যে যীশু উঠেছিলেন, সে বহুল পরিমানে উদ্বিগ্ন হয় না। সে যাকোবের জীবন হরণ করে আর যখন সে দেখে যে এটা যিহূদীদেরকে সন্তুষ্ট করে, তাকে মেরে ফেলবার মনস্থ করে সে পিতরকেও ধরে। তবে পিতরের করার জন্য ঈশ্বরের এক কাজ ছিল ও তাঁর দূতগণকে প্রেরণ করেন ও তাকে উদ্ধার করেন। হেরোদ শাস্তির দ্বারা বিচারিত হয়। এক বিশাল জনতার দৃষ্টির সাক্ষাতে ঈশ্বর তাকে আঘাত করেন, যেমন সে আপনাকে তাদের সাক্ষাতে উন্নত করছিল, আর সে এক ভয়ানক মৃত্যু মরে। GCBen 29.5

অতি প্রত্যুষে, এমন কি দিন হবার পূর্বেই ধার্মিক রমনীরা কবরের কাছে এসে যীশুর পবিত্র দেহকে অভিষিক্ত করতে সুগন্ধি দ্রব্যদি আনেন, যখন দেখ! তারা দেখতে পান কবরের দ্বার থেকে ভারী পাথরখানি গড়ানো ছিল, ও যীশুর দেহখানি সেখানে ছিল না। তাদের ভেতরে তাদের হৃদয় দমে যায়, আর তাদের আশঙ্কা হয় তাদের শত্ৰুরা দেহখানি চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল। আর দেখ, দুজন দূত শুভ্র বস্ত্রে তাদের পাশে দাড়িয়ে তাদের মুখমন্ডল উজ্জ্বল ও দীপ্তিশালী ছিল। তারা ধার্মিক নারীদের ভারাৰ্পিত কার্যটি বুঝতে পারেন। আর তখুনি তাদেরকে বলেন যে তারা যীশুর অন্বেষণ করছিলেন, কিন্তু তিনি তথায় নেই, তিনি উত্থিত হয়েছিলেন, আর তারা দেখতে পারেন যেখানে তিনি শায়িত ছিলেন। তাঁর শিষ্যদেরকে এই বলতে তারা নির্দেশ দেন যে তিনি তাদের পূর্বে গালীলে যাবেন। কিন্তু স্ত্রীলোকেরা ভীত ও বিস্মিত ছিলেন। তারা শিষ্যদের কাছে দৌড়ে যান যারা দুঃখ প্রকাশ করছিলেন, ও শান্তনাপ্ৰাপ্ত হতে পাবেন না কারণ তাদের প্রভু ক্রুশারোপিত হয়েছিলেন তারা তাড়াতাড়ি করে বিষয়গুলি তাদেরকে বলেন যা তারা দেখেন ও শোনেন। শিষ্যরা বিশ্বাস করতে পারেন না যে তিনি উত্থিত হয়েছিলেন, তবে যারা জ্ঞাপনটি এনেছিলেন, সেই স্ত্রীলোকদের সঙ্গে কবরের উদ্দেশে দ্রুতবেগে দৌড়ে যান, ও দেখতে পান সত্যিই যীশু তথায় ছিলেন না। তথায় তাঁর মসিনা বস্ত্রগুলি ছিল। কিন্তু তারা শুভ সংবাদটি বিশ্বাস করতে পারেন না যে যীশু মৃতদের মধ্যে হতে উঠেছিলেন। তারা যারা দেখেছিলেন তাতে বিস্ময় প্রকাশ করে, আর যে খবর নারীদের দ্বারা তাদের কাছে আনীত হয়েছিল তাতে বিস্মিত হয়ে গৃহে ফিরে যান। তবে তিনি যা দেখেছিলেন তাঁর বিষয়ে চিন্তায় ও এই চিন্তায় ক্লিষ্ট হয়ে যে হয়তো প্রতারিত হয়ে থাকবেন, মরিয়ম। কবরের আশে পাশে গড়িমসি করার মনস্থ করেন। তিনি উপলব্ধি করেন নব নব পরীক্ষা তাঁর প্রতীক্ষা করে। তাঁর শোক বেড়ে যায়, ও তিনি তীব্র রোদনে ভেঙে পরেন। কবরের মধ্যে আবার দৃষ্টি দিতে তিনি ঝুঁকে পড়েন ও শুভ্র বস্ত্ৰে দুজন দূতকে দেখতে পান। তাদের মুখমন্ডল উজ্জ্বল ও দীপ্তিমান ছিল। একজন শিয়রে, অন্যজন পায়ের দিকে, যেখানে যীশু শায়িত ছিলেন। তারা তাঁর উদ্দেশে কোমলভাবে কথা বলেন, ও তিনি কেন রোদন করেন জিজ্ঞেস করেন। তিনি উত্তর দেন তারা আমার প্রভুকে নিয়ে গিয়েছে, আর আমি জানিনে তারা তাকে কোথায় রেখেছে। GCBen 29.6

আর যেমন তিনি কবর থেকে ঘোরেন, তিনি দেখেন যীশু তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে, তবে তাকে চেনেন নি। যীশু কোমলভাবে মরিয়মের প্রতি কথা বলেন, ও তাঁর দুঃখের কারণ জিজ্ঞেস করেন, ও তাকে জিজ্ঞেস করেন তিনি কাকে খুঁজছিলেন। তিনি মনে করেন তিনি মালি ছিলেন, ও তাঁর কাছে বিনতি করেন, যদি তিনি তাঁর প্রভুকে নিয়ে গিয়ে থাকেন বলুন তিনি কোথায় তাঁকে রেখেছিলেন, আর তিনি তাঁকে নিয়ে যাবেন। যীশু তাঁর কাছে তাঁর নিজস্বৰ্গীয় কণ্ঠে কথা বলেন, ও বলেন, মরিয়ম!তিনি সেই প্রিয় কণ্ঠের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন, আর তাড়াতাড়ি উত্তর দেন, প্রভু! আর হর্ষ ও আনন্দের সঙ্গে তাকে আলিঙ্গন করতে উদ্যত হন।কিন্তু যীশু পিছিয়ে দাঁড়ান, ও বলেন, আমাকে ছুঁয়ো না, কারণ আমি আমার পিতার কাছে এখনো আরোহণ করি নি।তবে আমার ভ্রাতৃগণের কাছে যাও ও তাদের উদ্দেশে বল, আমি আমার পিতা ও তোমাদের পিতার কাছে এবং আমার ঈশ্বর ও তোমাদের ঈশ্বরের কাছে আরোহণ করি। উল্লাসের সঙ্গে তিনি শুভ সমাচারটি নিয়ে শিষ্যদের কাছে ত্বরা করেন। তাঁর ওষ্ঠদ্বয় থেকে শুনতে যে তিনি বলিদান গ্রহণ করেন, ও যে তিনি সব কিছু ভালভাবে করেছিলেন, ও তাঁর পিতার কাছ থেকে স্বর্গে, ও পৃথিবীর ওপরে সমস্ত ক্ষমতা প্রাপ্ত হতে যীশু শীঘ্র তাঁর পিতার কাছে আরোহণ করেন। GCBen 30.1

দূতগণ এক মেঘের ন্যায় ঈশ্বরের পুত্রকে ঘিরে ধরেন, ও চিরস্থায়ী দ্বারগুলিকে স্ফীত হতে আদেশ দেন যেন গৌরবের রাজা ভেতরে আসতে পারেন। আমি দেখি যে যখন যীশু সেই উজ্জ্বল স্বর্গীয় বাহিনীর সঙ্গে এবং তাঁর পিতার সমক্ষে ছিলেন, ও পিতার মহিমা তাঁকে বেষ্টিত করে, তিনি পৃথিবীর ওপরে তাঁর বেচারা শিষ্যদেরকে ভোলেন নি।কিন্তু তাঁর পিতার কাছ থেকে ক্ষমতা প্রাপ্ত হন, যাতে তিনি তাদের কাছে ফিরে যেতে পারেন, আর যখন তাদের সঙ্গে হবেন তাদের উদ্দেশে ক্ষমতাঁর অংশ প্রদান করতে পারেন। ঐ দিনই তিনি ফিরে যান ও তাঁর শিষ্যদের কাছে আপনাকে দর্শান। তখন তিনি তাদেরকে তাকে স্পর্শ করতে দেন, কারণ তিনি তাঁর পিতার কাছে আরোহণ করেছিলেন, ও ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়েছিলেন। GCBen 30.2

তবে এই সময়েতে থোমা হাজির ছিলেন না। তিনি নম্রভাবে শিষ্যদের প্রতিবেদন গ্রহণ করবেন না, কিন্তু দৃঢ়ভাবে, ও আত্ম-বিশ্বাসের সঙ্গে নিশ্চয় করে বলেন যে তিনি বিশ্বাস করবেন না, যদিনা তিনি পেরেকের চিহ্নগুলিতে তাঁর অঙ্গুলি, ও তাঁর কুক্ষিদেশে তাঁর হাত না রাখেন। যেখানে নিষ্ঠুর বর্শা ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এতে তাঁর ভ্রাতৃগণের বিষয়ে তিনি এক বিশ্বাসের অভাব দর্শান। আর সবাই যদি একই প্রমাণ দাবি করে, শুধু অল্পজনেই যীশুকে গ্রহণ করবে ও তাঁর পুনঃউত্থান বিশ্বাস করবে। তবে এটা ঈশ্বরের ইচ্ছে ছিল যে শিষ্যদের প্রতিবেদনটি একজনের কাছ থেকে অন্যদের কাছে যাবে, আর অনেকেই তাদের ওষ্ঠ থেকে তা প্রাপ্ত হবে যারা শুনেছিল ও দেখেছিল। ঈশ্বর তেমন অবিশ্বাসের সঙ্গে অতিশয় প্ৰীত ছিলেন না। আর আবার যখন যীশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে সাক্ষ্যাৎ করেন, থোমা তাদের সঙ্গে ছিলেন। যে মুহূর্তে তিনি যীশুকে দেখেন তিনি বিশ্বাস করেন। কিন্তু তিনি বিবৃতি দিয়েছিলেন যে দৃষ্টির সঙ্গে অনুভবশক্তির যোগ না হলে তিনি সন্তুষ্ট হবেন না, আর যীশু তাকে সেই প্রমাণ দেন যার তিনি বাসনা করেন। থোমা চিৎকার করে ওঠেন, আমার প্রভু ও আমার ঈশ্বর। তবে যীশু তাঁর অবিশ্বাসের জন্যে থোমাকে তিরস্কার করেন। তাঁর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, থোমা যেহেতু তুমি আমাকে দেখেছ তুমি বিশ্বাস করেছ, ধন্য তারা যারা দেখেনি আর তবুও বিশ্বাস করেছে। GCBen 30.3

সুতরাং, আমি দেখি, প্রথম ও দ্বিতীয় দূতের বার্তায় যাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই’ অবশ্যই তাদেরকে তাদের কাছ থেকে গ্রহণ করতে হবে যাদের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল, ও বার্তাগুলির মাধ্যমে অনুসরণ করে। যেমন যীশু ক্রুশারোপিত হন, তেমনি আমি দেখি যে এই বার্তাগুলি ক্রুশারোপিত হয়ে এসেছে। আর যেমন শিষ্যরা বিবৃত করেন যে মনুষ্যদের মধ্যে প্রদত্ত, স্বর্গের নীচে অন্য কোনো নামে পরিত্রাণ নেই, তেমনি, ঈশ্বরের সেবকেরাও বিশ্বস্তভাবে ও নির্ভয়ে ব্যক্ত করবেন যে তৃতীয় বার্তার সঙ্গে সম্পর্কিত সত্যসমূহের শুধু এক অংশ যারা আগ্রহের সঙ্গে গ্রহণ করে২ অবশ্যই সানন্দে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বার্তাসমূহ আগ্রহের সঙ্গে গ্রহণ করবে যা ঈশ্বর তাদেরকে দিয়েছেন, নতুবা ব্যাপারটিতে কোনো অংশ কিম্বা ভাগ নেই। GCBen 30.4

আমাকে দেখানো হয় যে ধাৰ্মিক স্ত্রীলোকেরা সেই সংবাদ বয়ে বেড়াচ্ছিলেন যে যীশু উত্থিত হয়েছিলেন। রোমীয় চৌকি সেই মিথ্যাটি ছড়াচ্ছিল যা প্রধান প্রধান পুরোহিত ও প্রাচীনবৰ্গের দ্বারা তাদের মুখে রাখা হয়েছিল, যখন তারা ঘুমায়, যে শিষ্যরা রাত্রিযোগে আসে ও যীশুর দেহকে চুরি করে। শয়তান এই মিথ্যাটি প্রধান পুরোহিতদের হৃদয় ও মুখে রাখে, আর লোকেরা তাদের কথা গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিল। তবে ঈশ্বর এই ব্যাপারটি নিশ্চিত করেন, ও এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি সমস্ত সন্দেহের বাইরে তাতে স্থাপন করেন, যার ওপরে পরিত্রাণ আটকানো রয়েছে, আর যেখানে যাজক ও প্রাচীনদের পক্ষে তা চাপা দেয়া অসম্ভব ছিল। GCBen 30.5

যীশু শিষ্যদের সঙ্গে চল্লিশ দিন থেকে, হৃদয়ের আনন্দ ও উৎফুল্লতা ঘটান, ও তাদের উদ্দেশে ঈশ্বরের রাজ্যের বাস্তবতাসমূহকে আরো পূর্ণভাবে উন্মুক্ত করেন। তাঁর দুঃখভোগ, মৃত্যু ও পূনঃউত্থানের সম্পর্কে তারা যা দেখেছিলেন ও শুনেছিলেন।যে তিনি পাপের জন্যে এক বলিদান করেছিলেন, যে যারা চাইবে তাদের সবাই, তাঁর পানে আসতে পাবে ও জীবন পেতে পারে, তাদেরকে তিনি সেই বিষয় সম্বন্ধে সাক্ষ্য বহনের ভারাপণ করেন। তিনি সত্য কোমলতায় তাদেরকে বলেন যে তারা তাড়িত ও ক্লেশেপ্রাপ্ত হবেন তবে তাদের অভিজ্ঞতা উল্লেখে, ও তাদের কাছে তিনি যে বাক্যসমূহ বলেছিলেন তা স্মরণ করে তারা যন্ত্রণার লাঘব পাবেন। তিনি তাদেরকে বলেন যে তিনি দিয়াবলের প্রলোভনগুলি জয় করেছিলেন, এবং পরীক্ষা-প্রলোভন ও দুঃখ কষ্টের মাধ্যমে বিজয় বজায় রাখেন, যাতে তাঁর ওপরে শয়তান আর ক্ষমতা না রাখতে পারে, কিন্তু অধিকতর প্রত্যক্ষ ভাবে তাদের ওপরে ও তাদের সবার ওপরে যারা তাঁর নামে বিশ্বাস করবে, তাঁর প্রলোভনগুলি ও ক্ষমতা বহন করে আনবে। তিনি তাদেরকে বলেন যে তারা বিজয়লাভ করতে পারেন যেমনটি তিনি করেছিলেন। চিহ্ন কার্য সাধন করতে তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে ক্ষমতা দিয়ে ভূষিত করেন, আর তিনি তাদেরকে বলেন যে যদিও তাদের দেহের ওপরে দুষ্ট লোকদের ক্ষমতা থাকবে, তিনি নির্দিষ্ট সময়েতে তাঁর দূতগণকে প্রেরণ করবেন ও তাদেরকে উদ্ধার করবেন।যেন তাদের জীবন তাদের কাছ থেকে। নিতে না পারা যায় যাবৎ না তাদের উদ্দেশ্য সম্পাদিত হবে। আর যখন তাদের সাক্ষ্য শেষ হবে, তারা যে সাক্ষ্য বহন করেছিলেন সেগুলি মোহর-যুক্ত করতে তাদের জীবন আবশ্যক বোধ হতে পারে। তাঁর উৎসুক অনুগামীরা সানন্দে তাঁর শিক্ষা সমূহ শ্রবণ করেন। তারা সাগ্রহে প্রতিটি বাক্যের ওপরে পরিতৃপ্ত হন যা তাঁর পবিত্র ওষ্ঠদ্বয় থেকে পতিত হয়। তখন তারা নিশ্চিতভাবে জানতেন যে তিনি জগতের ত্ৰাণকর্তা ছিলেন। প্রতিটি বাক্য গভীর প্রভাব নিয়ে তাদের হৃদয়ে পতিত হয়, আর তারা দুঃখ প্রকাশ করেন যে তাদেরকে তাদের স্বৰ্গীয় গুরুর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হতেই হবে। যে অল্পক্ষণ পারে আর তারা তাঁর ওষ্ঠদ্বয় থেকে সান্তনাপূর্ণ অনুগ্রহের বাক্য শুনবেন না। কিন্তু আবার তাদের হৃদয় ভালবাসা ও অতিশয় আনন্দে উষ্ণ হয়, যেমন যীশু তাদেরকে বলেন, যে তিনি যাবেন ও তাদের জন্যে স্থান প্রস্তুত করবেন, ও আবার আসবেন ও তাদেরকে নিয়ে যাবেন, যেন তারা সতত তাঁর সঙ্গে থাকেন। তিনি তাদেরকে বলেন যে, সকল সত্য তাদেরকে পথ দেখাতে, আর্শীবাদ করতে ও চালিত করতে, তিনি তাদেরকে সহায়, পবিত্র আত্মা, পাঠাবেন। আর তিনি তাঁর হস্তদ্বয় তোলেন ও তাদেরকে আশীবাদ করেন। GCBen 30.6

______________________________________
১। প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬-৮ দেখুন। এই পুস্তকের ২৩ ও ২৪ অধ্যায়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
২। প্রকাশিত বাক্য ১৪:৯-১২ দেখুন। এই পুস্তকে ২৮ অধ্যায়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
মথি ২৭:৫২, ৫৩(২৮ অধ্যায়( মার্ক ১৬:১-১৮(লূক ২৪:১-৫০( যোহন ২০ অধ্যায়( প্রেরিত ১২ অধ্যায় দেখুন।
GCBen 31.1