মণ্ডলীর জন্য উপদেশ
ঈশ্বরের চাক্ষুস উপস্থিতির সম্মুখে আছেন, এরূপ ব্যবহার করিবেন
ঈশ্বরের অসীম মহত্ত্ব সম্বন্ধে জ্ঞান জন্মিলে ও তাঁহার উপস্থিতি হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিলে ঈশ্বরের প্রতি যথার্থ ভক্তি উদ্দীপিত হইয়া উঠে । অদৃশ্য ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞানের প্রভাবে প্রত্যেকটী হৃদয় গভীর ছাব অঙ্কিত হইবে । প্রার্থনার সময় ও স্থান পবিত্র, কারণ ঈশ্বর তথায় বাস করেন ; ভাবভঙ্গীতে ও আচরণে ভক্তি প্রদর্শিত হয় বলিয়া ইশর-বিষয়ক অনুভূতি প্রগাঢ় হইয়া উঠে । গীতরচক বলেন, “তাঁহার নাম পবিত্র ও ভয়াবহ ।” (গিতসংহিতা ১১১ : ৯) ।3 CCh 216.2
প্রারথনা-পূর্ব্বক সভা আরম্ভ হইলে, সেই পবিত্রতমের সম্মুখে প্রত্যেক জানু পাতিত হওয়া এবং নীরব আরাধনায় প্রত্যেক হৃদয় ঈশ্বরের দিকে উত্থিত হওয়া আবশ্যক । বিশ্বস্ত আরাধনাকারিগণের প্রার্থনা শ্রুত হইবে ও বাক্যের পরিচর্য্যা ফলদায়ী হইবে । সুসমাচার প্রচারকার্য্যে আশানুরুপ সুফল দেখা যায় না, ইহার একটী মুখ্য কারণ,— ঈশ্বরের গৃহে আরাধনাকারিগণের নির্জীব ভাবভঙ্গী । সুস্পষ্ট ও সুমধুর স্বরে বহু অন্তঃকরণ হইতে যে সুললিত সঙ্গিতধ্বনি উত্থিত হয়, আত্মালাভ কার্য্যে তাহা ঈশ্বরের একটী উপায় । সভার অধিনায়কের প্রত্যক্ষ দৃষ্টির অন্তরালে আছি, ইহা মনে রাখিয়া আরাধনার সকল কিছুই ভয় ও ভক্তি ভাবে সাধন করা কর্ত্তব্য । CCh 217.1
ভ্রাতৃগণ, যখন ঈশ্বরের বাক্য শুনিবেন, তখন স্মরণে রাখিবেন যে, ঈশ্বর-নিয়োজিত দাসের প্রমুখ্যাৎ আপনারা ঈশ্বরের বানী শুনিতেছেন । সুতরাং সবিশেষ মনোযোগ সহকারে ইহা শুনিবেন একটুও ঘুমাইবেন না, কারণ এই নিদ্রার জন্য হইতো সর্ব্বাপেক্ষা অত্যাবশ্যক কথাটিই শুনিতে পাইবেন না, হয়তো ব ইহা সেই কথা, যাহা শুনিলে বিপথ গমন হইতে আপনি আপনার চরণ রক্ষা করিতে পারিতেন । সতর্কবাণী, উপদেশ, ভৎসনা যেন শ্রুত না হয়, অথবা হইলেও যেন হৃদয়ে কার্য্যকরী না হয় ও জীবনের পরিবর্ত্তন না ঘটে, তজজন্য শয়তান ও তাহার দূতগণ বোধশক্তি অসাড় করিয়া দিবার নিমিত্ত সতত ব্যস্ত । কখন কখন ক্ষুদ্র একটী শিশু শ্রোতৃবর্গের মন এরূপ ভাবে আকর্ষণ করিতে পারে যে, বহুমূল্য বীজ ভূমিতে পতিত হইতে ও তাহাতে ফল উৎপন্ন করিতে পারে না । সময় সময় যুবক যুবতীদের মধ্যে ঈশ্বরের গৃহের ও তাঁহার আরাধনার প্রতি এত অল্প শ্রদ্ধা দেখা যায় যে, উপাসনার সময়ে তাহারা পরস্পরের সহিত অবিরত কথা বলিতে থাকে । ইহারা যদি তাহারা দেখিতে পাইত যে, ঈশ্বরের দূতগণ তাহাদিগকে দেখিতেছেন ও তাহাদের ক্রিয়াকলাপ লিপিবদ্ধ করিয়া রাখিতেছেন, তাহা হইলে তাহারা লজ্জায় অভিভূত হইয়া নিজেরা নিজেদিগকে ঘৃণা করিত । ঈশ্বর মনোযোগী শ্রোতা চাহেন । লোকেরা যখন নিদ্রিত ছিল, শয়তান তখনই তাহার শ্যামাঘাস বপন করিয়াছিল । CCh 217.2
পাছে খ্রীষ্টের শান্তি হারাইয়া ফেলে, এই ভয়ে শান্তিবাক্য উচ্চারণের বা শেষ প্রার্থনা উৎসর্গ করণের সময়ে সকলের ত্তখনও শান্ত বা নীরব থাকা কর্ত্তব্য । তাহারা ঈশ্বরের সম্মুখে আছে, তাঁহার চক্ষু তাহাদিগকে দেখিতেছে এবং তিনি তথায় প্রত্যক্ষ বিদ্যমান আছেন, ইহা মর্ম্মে মর্ম্মে অনুভব করিয়া ঠেলাঠেলি ও চেঁচাচেঁচি না করিয়া শিষ্টভাবে মন্দির ত্যাগ করিতে হইবে । অনের যাতায়াতে প্রতিবন্ধকস্বরূপ হইয়া যাতায়াতের পথে দাঁড়াইয়া কাহারও সহিত দেখাসাক্ষাৎ বা গল্পগুজব করিবেন না । উপাসনাগৃহের পরিসীমা পবিত্রশ্রদ্ধায় ভরপূর থাকা উচিত । উপাসনা মন্দিরকে পুরাতন বন্ধুবান্ধবের সহিত সাক্ষাতের ও আলাপের এবং সাধারণ চিন্তারাশির, অথবা বৈষয়িক ব্যবসা-বাণ্যিজ্য সংক্রান্ত আলাপ আলোচনার ও কাজকারবারের স্থান করিয়া তোলা কর্ত্তব্য নহে । বস্তুতঃ এই সকল করিতে হইবে, উপাসনা মন্দিরের বাহিরে । কোন কোন স্থানে অসতর্ক অট্টহাস্যে ও এলোমেলো পাদবিক্ষেপে ঈশ্বর ও দূতগণ অবমানিত হইয়াছেন । CCh 218.1