মণ্ডলীর জন্য উপদেশ
সম্পত্তির উপযুক্ত ব্যবস্থা
মাতা-পিতার মন যখন সুস্থির, ও বিচারশক্তি যখন প্রখর থাকে, তখন সত্যে অভিজ্ঞ উপযুক্ত পরামর্শদাতাগণের ও ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্বন্ধে যাহাদের প্রচুর জ্ঞান আছে, এমন লোকদের সাহায্য লইয়া প্রার্থনাপূর্ব্বক ও সুবিবেচনায় সহিত তাহাদের সম্পত্তির ব্যবস্থা করা কর্ত্তব্য। CCh 152.3
তাহাদের যদি রুগ্ন ও দারিদ্র প্রপীড়িত কোন সন্তান থাকে, যাহারা জ্ঞান পূর্ব্বক অর্থের সদ্ব্যবহার করিতে পারিবে, তবে তাহাদের সম্বন্ধে বিবেচনা করিতে হইবে। কিন্তু তাহাদের যদি প্রচুর ধনৈশ্বর্য্যশালী অবিশ্বাসী সন্তান — সন্ততি থাকে, যাহারা জগতের সেবা করে, কেবল সন্তান বলিয়া তাহাদের হস্তে অর্থ সমর্পন করিলে, যে প্রভু মাতা- পিতাকে ধন সম্পত্তির দেওয়ান করিয়াছেন, তাঁহার বিরুদ্ধে তাহারা পাপ করেন। ঈশ্বরের দাবি- দাওয়া হাল্কা বিবেচনা করা উচিত নহে। CCh 153.1
আর ইহাও সুস্পষ্টরূপে বুঝিতে হইবে যে, মাতা- পিতা ‘উইল’ করিয়া দিয়াছেন বলিয়া, তাহাদের জীবন কালে তাঁহারা যে প্রভুর কার্য্যের নিমিত্ত অর্থ দান করিতে পারিবেন না এমন নহে। ফলতঃ তাহাদের ইহা কর্ত্তব্য। তাঁহাদের জীবিতবস্থায় যে উদ্বৃত্ত অর্থ থাকে, তাহা দান করিয়া এই জগতে তাঁহারা যেমন তৃপ্তি লাভ করিতে পারেন, পরজগতে তেমনি পুরস্কার লাভ করিতে পারেন। ঈশ্বরের কার্য্য বিস্তৃতির জন্য তাঁহাদের যাহা করণীয় তাহা করা কর্ত্তব্য। প্রভু ধারস্বরূপ তাঁহাদিগকে যে অর্থ দিয়াছেন, তাহা প্রভুর দ্রাক্ষাক্ষেত্রের কার্য — বিস্তৃতির জন্য অম্লানব্দনে ব্যবহার করা কর্ত্তব্য।19 CCh 153.2
যাঁহারা ঈশ্বরের ধনভান্ডারে অর্থ দান না করিয়া সন্তান সন্ততিগণের জন্য অর্থ সঞ্চয় করেন, তাঁহারা তাঁহাদের সন্তানসন্ততিগণের আধ্যাত্মিক জীবন বিপন্ন করেন। যে সম্পত্তি তাঁহাদের নিজেদের পক্ষে বিঘ্নস্বরূপ, তাহা তাঁহাদের সন্তান সন্ততিগণের পথের মধ্যে স্থাপন করিয়া তাঁহারা তাঁহাদিগকে বিনাশে মগ্ন করেন। এই জীবনের বিষয়- বস্তু সম্পর্কে অনেকেই মহা ভুল করিতেছেন। ঈশ্বর ধারস্বরূপ তাঁহাদিগকে যে সকল অর্থ দিয়াছিলেন, তাঁহার সদ্ব্যবহার করিয়া নিজেদের ও অপরের যে মঙ্গল সাধন করিতে পারিতেন, তাহা না করিয়া তাঁহারা নিজেদিগকে মিতব্যয়ী দেখান এবং স্বার্থপর ও লোভী হইয়া পড়েন। যে ধন — সম্পত্তি তাঁহারা ব্যবহার করিতে পারেন না, তাহা সঞ্চয় করিয়া রাখিবার জন্য তাঁহারা তাঁহাদের আধ্যাত্মিক স্বার্থে অবহেলা দেখান এবং ধর্ম্ম- সংক্রান্ত বৃদ্ধিতে খর্ব্ব হইয়া পড়েন। তাঁহারা তাঁহাদের ধন — সম্পত্তি সন্তানসন্ততিগণের হস্তে রাখিয়া যান, আর ইহা নিজেদের পক্ষে যেমন, উত্তরাধিকারিগণের পক্ষেও তেমনি দশ ভাগের নয় ভাগ, এমন কি ইহা অপেক্ষাও অধিকতর অভিশাপের বিষয় হইয়া পড়ে। সন্তানসন্ততিগণ পিতামাতার সম্পত্তির উপরে নির্ভর করিয়া প্রায়ই এই জীবনে উন্নতি লাভ করিতে পারেনা এবং পরজীবন লাভেও সাধারানতঃ সম্পূর্ণ অকৃতকার্য্য হইয়া পড়ে। CCh 153.3
মৃত্যুকালে মাতাপিতা তাঁহাদের সন্তানসন্ততিগণের জন্য যে সর্ব্বোত্তম সম্পত্তি রাখিয়া যাইতে পারেন, তাহা হইতেছে, - প্রয়োজনীয় পরিশ্রম সম্বন্ধে জ্ঞান এবং নিঃস্বার্থ বদান্যতা- প্রদর্শক জীবনের দৃষ্টান্ত। এইরূপ জীবনের দ্বারা তাঁহারা প্রকৃত মুল্য প্রদর্শন করেন, তাঁহারা দেখান যে, কেবল মঙ্গলের জন্য, - নিজেদের ও অপরের অভাব অনটন মিটাইবার জন্য এবং ঈশ্বরের কার্য্য- বিস্তৃতির নিমিত্ত উহা ব্যবহার করিতে হইবে।20 CCh 154.1