পিতৃকুলপতিগণ ও ভাববাদীগণ

69/333

রাহেলের জন্য যাকোবের ভালবাসা

পুরাকালে, নিয়ম ছিল যে বিয়ের বন্দোবস্তের আগে বরকে, তার অবস্থা অনুসারে কণের পিতাকে কিছু টাকা-পয়সা অথবা সম্পত্তি দিতে হত। এটা বিয়েতে একটি নিরাপত্তা হিসাবে গণ্য করা হত। যে যুবক পরিবারের ভরণ- পোষণের কোন বন্দোবস্ত করেনি তার সাথে মেয়ের ভবিষ্য সুখ বেঁধে দিতে পিতারা রাজী হতেন না । যদি কেউ যথেষ্ট সঞ্চয়ী না হয় ও যথেষ্ট পরিশ্রম করে ব্যবসা পরিচালনা এবং পশু ও ভূমি সংগ্রহ না করতে পারে, তবে তার জীবন মূল্যহীন বলে বিবেচনা করা হত। কিন্তু যাদের স্ত্রীর মূল্য দেবার মত কিছুই থাকত না তাদের পরীক্ষা করার পদ্ধতি নির্দ্ধারিত ছিল। তারা যার মেয়েকে ভালবাসে তার জন্য পরিশ্রম করতে পারত, আর এই পরিশ্রমের কাল দেয় যৌতুকের মূল্য অনুসারে নিরূপিত হত। যখন প্রেমিককে বিশ্বস্ত মনে করা হত এবং তাকে যোগ্য মনে করা হত, তখন সে মেয়েটিকে স্ত্রী হিসাবে লাভ করতে পারত । PPBeng 126.3

সাধারণতঃ যে যৌতুক পিতা গ্রহণ করত তা বিয়ের সময় মেয়েকে দিয়ে দেয়া হত। কিন্তু রাহেল ও লেয়া উভয়ের ব্যাপারেই লাবন যে যৌতুক তাদের দেবার কথা ছিল তা নিজেই রেখে দিলেন। তারা এই বিষয়ের প্রতি তখন ইঙ্গিত করেছিল যখন মেসোপটেমিয়া ত্যাগের পূর্বে তারা বলেছিল; “তিনিও আমাদিগকে বিক্রয় করিয়াছেন এবং আমাদের রৌপ্যও ভোগ করিয়াছেন।” PPBeng 127.1

প্রেমিককে তার স্ত্রীকে লাভ করার জন্য এভাবে শ্রম দিতে হত বলে দ্রুত ও নির্বিবেচনায় বিয়ে করা বন্ধ হত। বরের কণের প্রতি প্রেম ও তার পরিবারের ভরণ-পোষণ করার ক্ষমতা পরীক্ষা করার সুযোগ থাকত । আমাদের সময়ে এটা প্রায়ই ঘটছে যে ছেলে মেয়েরা পরস্পরকে জানবার এবং পরস্পরের মনোভাব ও ব্যবহারিক জীবনের সঙ্গে পরিচিত হবার কোন সুযোগ পায় না । যখন তারা বিবাহ বন্ধনে একত্রিত হয় ও স্বার্থের সংমিশ্রন ঘটায় তখন তারা প্রকৃত পক্ষে পরস্পরের নিকট অপরিচিত। অনেকেই, অনেক দেরীতেই, দেখতে পান যে তারা পরস্পরের সহিত খাপ খাচ্ছেন না, এবং বাকী জীবন দুর্ভোগের মধ্যে কাটাতে হয়। প্রায়ই স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা স্বামী ও পিতার অলসতা ও দুশ্চারিত্রিক অভ্যাসের জন্য অনেক কষ্ট ভোগ করে। যদি আদি কালীন পদ্ধতি অনুসারে প্রেমিকের চরিত্র পরীক্ষা করে নেয়া হত, তবে অনেক দুঃখ-কষ্ট হতে রক্ষা পাওয়া যেত । PPBeng 127.2

রাহেলের জন্য যাকোব সাত বসর শ্রম দিলেন, এবং ঐ পরিশ্রমের বসরগুলি “রাহেলের প্রতি তাহার অনুরাগ প্রযুক্ত এক এক বসর তাঁহার কাছে এক এক দিন মনে হইল ।” কিন্তু স্বার্থপর লাবন একটি নিষ্ঠুর চালাকীর মাধ্যমে রাহেলের পরিবর্তে লেয়াকে যাকোবের সহিত বিয়ে দিলেন। যেহেতু ঐ চালাকী লেয়া অংশ গ্রহণ করেছিল, তাই যাকোবের মনে হল তিনি লেয়াকে ভালবাসতে পারবেন না। লাবনকে কঠোর ভাষায় তিরস্কারের ফলে লাবন আরো সাত বসর পরিশ্রমের পর রাহেলকে বিয়ে দিতে রাজী হলেন। কিন্তু পিতা দাবী জানালেন যে লেয়াকে পরিত্যাগ করা চলবে না। এই ভাবে যাকোবকে একটি কঠিন পরীক্ষায় ফেলা হল, পরে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে লেয়াও থাকবে এবং তিনি রাহেলকেও বিয়ে করবেন। রাহেল অবশ্যই যাকোবের নিকট হতে সবচেয়ে বেশী ভালবাসা পেতেন, কি দুই বোন স্ত্রীদের প্রতিযোগীতায় তার জীবন তিক্ততর হয়ে উঠল। PPBeng 127.3

বিশ বসর পর্য্যন্ত যাকোব মেসোপটেমিয়ায় লাবনের চাকরীতে নিযুক্ত থাকলেন, যে তার আত্মীয়তার সকল সুযোগই গ্রহণ করতে বদ্ধ পরিকর ছিল। তার দুই মেয়ের জন্য সে চৌদ্দ বসরের পরিশ্রম দাবী করল; আর এই চৌদ্দ বসরে যাকোবের পারিশ্রমিক দশ বার পরিবর্তন করা হল । PPBeng 128.1

তথাপি যাকোব বিশ্বস্ততার সহিত কঠোর পরিশ্রম করতেন। বসরের কোন কোন সময় যাকোবকে মেষদের সহিত সর্বদা ব্যক্তিগত ভাবে বাইরে থাকতে হত যেন শুকনা মৌসুমে ওরা তৃষ্ণার্ত হয়ে মারা না যায় ও প্রচন্ড শীতের সময় যেন রাতের প্রচুর তুষার পাতে ওগুলি জমে না যায়। যাকোব ছিলেন প্রধান মেষপালক ও তার অধীনে ছিল অন্যান্য মেষপালক। যদি কোন মেষ হারিয়ে যেত তবে প্রধান মেষপালককে এর ক্ষতিপূরণ বহন করতে হত, আর যদি মেষগুলিকে তাজা অবস্থায় না দেখা যেত তবে তিনি অন্যান্য মেষপালককে দায়ী করতেন। PPBeng 128.2