পিতৃকুলপতিগণ ও ভাববাদীগণ
যখন সমস্ত কিছুই অন্ধকারময় তখন দায়ূদ প্রার্থনা করেন
যখন যাজকগণ যিরূশালেমের দিকে ফিরতে আরম্ভ করলেন তখন বিদায়ী জনতার মুখে একটি বিষাদের কালো ছায়া নেমে এল। তাদের রাজা এখন পলাতক, তারা সকলেই সমাজচ্যুত, এমন কি ঈশ্বরের নিয়ম-সিন্দুকও তাহাদের নিকট নাই। তাদের ভবিষ্য সম্পূর্ণ অন্ধকার! “পরে দায়ূদ জৈতুন পর্বতের ঊর্দ্ধগামী পথ দিয়া উঠিলেন, তিনি উঠিবার সময়ে ক্রন্দন করিতে করিতে চলিলেন, তাঁহার মুখ আচ্ছাদিত ও প৷ অনাবৃত ছিল, এবং তাঁহার সঙ্গী লোকেরা প্রত্যেকে আপন আপন মুখ আচ্ছাদন করিয়াছিল, এবং উঠিবার সময়ে রোদন করিতে করিতে চলিল । পরে কেহ দায়ূদকে কহিল, অবশালোমের সংগে চক্রান্তকারীদের মধ্যে অহীথোফলও আছে।” আবারও দায়ূদ তার পাপের প্রতিফল স্বীকার করতে বাধ্য হলেন। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সব চাইতে সক্ষম অহীথোফলের পক্ষত্যাগের কারণ হল তার নাতনী বৎশেবার প্রতি অন্যায় আচরণ। “তখন দায়ূদ কহিলেন, হে সদাপ্রভু, অনুগ্রহ করিয়া অহীথোফলের মন্ত্রনাকে মুর্খতায় পরিণত কর।” পর্বতের চুড়ায় উঠার পর, রাজা প্রার্থনার জন্য অবনত হলেন, আর তার হৃদয়ের সমস্ত বোঝা ঈশ্বরের নিকট উন্মোচিত করে তিনি তাঁর আশীর্বাদ কামনা করলেন। PPBeng 534.2
অৰ্কীয় হূশয়, একজন জ্ঞানী ও দক্ষ পরিষদ ও দায়ূদের একজন বিশ্বস্ত বন্ধু, এখন সিংহাসনচ্যুত ও পলাতক রাজার ভাগ্যের সাথে নিজ ভাগ্য সংযুক্ত করলেন। ইল্হামের মাধ্যমে দায়ূদ বুঝাতে পারলেন যে রাজধানীর পরিষদদের মধ্যে রাজার স্বার্থ রক্ষার জন্য এই ব্যক্তির প্রয়োজন রয়েছে। তাই দায়ূদের অনুরোধে অহীথোফলের সুচতুর পরামর্শ সমূহকে পরাভূত করার জন্য হূশয়কে যিরূশালেমে ফিরে গিয়ে অবশালোমের কাছে চাকুরী প্রার্থনা করতে রাজী হলেন । PPBeng 534.3
অন্ধকারের মধ্যে আলোর ছটা দেখতে পেয়ে রাজা ও তার সাথীরা জৈতুন পর্বতের পূর্ব-ঢাল বেয়ে ও মরুময় পথ হেটে, যৰ্দ্দন নদীর দিকে চললেন। “পরে দায়ূদ রাজা বহুরীমে উপস্থিত হইলে দেখ, শৌলকুলের গোষ্ঠিভুক্ত গেরার পুত্র শিমিয়ি....বাহির হইয়া আসিতে আসিতে শাপ দিল । আর সে দায়ূদের ও দায়ূদ রাজার সমস্ত দাসদের দিকে প্রস্তর নিক্ষেপ করিল। শিমিয়ি শাপ দিতে দিতে এই কথা কহিল, যা, যা, তুই রক্তপাতী, তুই পাষন্ড । তুই যাহার পদে রাজত্ব করিয়াছিস, সেই শৌলের কুলের সমস্ত রক্তপাতের প্রতিফল সদাপ্রভু তোকে দিতেছেন, এবং সদাপ্রভু তোর পুত্র অবশালোমের হস্তে রাজ্য সমর্পণ করিয়াছেন, দেখ, তুই নিজ দুষ্টতায় আট্কা পড়িয়াছিস্, কেননা তুই রক্তপাতী।” PPBeng 535.1
দায়ূদের উন্নতির সময় শিমিয়ি কখনও প্রকাশ করে নি যে সে তার প্রতি অনুগত নয় । সে ক্ষমতায় উপবিষ্ট দায়ূদকে সম্মান প্রদর্শন করেছিল, কিন্তু এখন তার বিপদের সময় তাকে শাপ দিল। যাকে ঈশ্বর সংশোধন করছিলেন, শয়তানের প্ররোচনায় সে তার উপরে তার ঘৃণা উদ্ধারিত করল। PPBeng 535.2
শৌলও তার কুলের প্রতি অন্যায় আচরণ করার কোন দোষে দায়ূদ দোষী ছিলেন না। তার জীবনের বেশীর ভাগই যুদ্ধ-বিগ্রহের মধ্যেই কেটেছে, কিন্তু দায়ূদের মত আর কেউই এর নিষ্ঠুরতা ও অবক্ষয়ের প্রভাবমুক্ত থাকতে পারেন নি I PPBeng 535.3
দায়ূদের ভাতিজা অবীশয় শিমিয়ির এই অপমানজনক কথা-বার্তায় আর ধৈর্য্য রক্ষা করতে পারল না। সে চিৎকার করে বলল, “ঐ মৃত কুকুর কেন আমার প্রভু মহারাজকে শাপ দেয়? আপনি অনুমতি করিলে আমি পার হইয়া গিয়া উহার মস্তক কাটিয়া ফেলি।” কিন্তু রাজা তাকে মানা করলেন। তিনি বললেন, “দেখ, আমার...পুত্র আমার প্রাণনাশের চেষ্টা করিতেছে, তবে ঐ বিন্যামীনীয় কি না করিবে? উহাকে থাকিতে দেও, ও শাপ দিউক, কেননা সদাপ্রভু উহাকে অনুমতি দিয়াছেন। হয় ত সদাপ্রভু আমার উপরে কৃত অন্যায়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করিবেন, এবং অদ্য আমাকে দত্ত শাপের পরিবর্তে সদাপ্রভু আমার মঙ্গল করিবেন।” PPBeng 535.4