পিতৃকুলপতিগণ ও ভাববাদীগণ

292/333

তীব্র অনুশোচনা ও ভয় নাবলের মরণ ঘটায়

যখন অবীগল ঘরে ফিরলেন তখন নাবল ও তার অতিথীগণকে মদ পানে মাতালরূপে দেখতে পেলেন। পরের দিন সকাল বেলা তিনি দায়ূদের সাথে তার সাক্ষাৎ করার বিষয়টি তার স্বামীকে জানালেন। যখন সে বুঝতে পারল যে তার ভুলের জন্য কি ভাবে তার উপর মৃত্যুর ছায়া নেমে এসেছিল, তখন মনে হল সে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ল। সে ভয়ে এত ভীত হয়ে পড়ল যে, অসহায় অবস্থা তাকে আঁকড়ে ধরল । দশ দিন পর সে মৃত্যু বরণ করল । খ্রীষ্টের কাহিনীর সেই ধনী ব্যক্তির মতই ঈশ্বর তাকে তার আনন্দের সময় বলেছিলেন, “অদ্য রাত্রিতেই তোমার প্রাণ তোমা হইতে দাবি করিয়া লওয়া যাইবে।” লুক ১২:২০ । PPBeng 486.3

পরে দায়ূদ অবীগলকে বিবাহ করলেন। ইতিমধ্যেই তিনি এক স্ত্রীর স্বামী ছিলেন, কিন্তু তার সময়ের সমাজ ব্যবস্থা তার বিচার বুদ্ধিকে বিপদগামী করেছিল। অনেক স্ত্রী বিয়ে করার তিক্ত ফল দায়ূদ সারা জীবনই ভোগ করেছিলেন । PPBeng 487.1

রাজার অনুগ্রহ লাভের আশায় সীফীয়েরা তাকে আবারও দায়ূদের আত্মা-গোপনের স্থান সম্বন্ধে জানিয়ে দিল। আবারও শৌল তার যোদ্ধাদের একত্রিত করে দায়ূদের অনুসন্ধানে যাত্রা করলেন। কিন্তু যিশয়ের পুত্রকে বন্ধুভাবাপন্ন গুপ্তচরেরা এ বিষয়টি জানিয়ে দিল; এবং তার কয়েকজন সঙ্গীকে সাথে নিয়ে দায়ূদ তার শত্রুদের অবস্থান সম্বন্ধে জানতে বেরিয়ে পড়লেন। PPBeng 487.2

রাতের বেলা তারা রাজা ও তার বাহিনীর শিবির খুঁজে পেল, এবং গোপনে গিয়ে দেখতে পেল যে সমস্ত শিবির ঘুমে অচেতন। “ঐ শিবিরে শৌলের নিকটে আমার সঙ্গে কে নামিয়া যাইবে?” দায়ূদের এই প্রশ্নের উত্তরে অবীশয় বলেন, “আমি আপনার সঙ্গে যাইব।” PPBeng 487.3

পাহাড়ের আড়াল বেয়ে বেয়ে দায়ূদ ও তার সাথী শিবিরে প্রবেশ করলেন । শৌল যেখানে ঘুমিয়ে ছিলেন সেখানে তারা পৌছলেন এবং দেখলেন, যে তার বড়শা তার পাশে পোঁতা রয়েছে ও তার মাথার কাছে এক ভাঁড় জল রয়েছে। তার কাছে শুয়ে ছিলেন অবনের, তার প্রধান সেনাপতি, আর তাদের চারিপাশে সৈন্যরা ঘুমে অচেতন। অবীশয় তার বড়শা উঠালেন । “আজ ঈশ্বর আপনার শত্রুকে আপনার হাতে সমর্পণ করিয়াছেন; অতএব এখন বিনয় করি, বড়শা দ্বারা উহাকে এক আঘাতে ভূমির সহিত গাঁথিবার অনুমতি দিউন, আমি উহাকে দুই বার আঘাত করিব না।” তিনি অনুমতির অপেক্ষা করলেন। কিন্তু তার কাণে ফিস্ ফিস্ শব্দ এল, “তাহাকে নিপাত করিও না; কেননা সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কে হস্ত বিস্তার করিয়া নির্দোষ হইতে পারে?... জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, সদাপ্রভুই উহাকে আঘাত করিবেন;...কিংবা সংগ্রামে গিয়া হত হইবেন। আমি যে সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে হস্ত বিস্তার করি, সদাপ্রভু এমন না করুন; কিন্তু উহার শিয়রের নিকটস্থ বড়শা ও জলের ভাঁড় তুলিয়া লইয়া আইস; পরে আমরা চলিয়া যাইব ....কিন্তু কেহ তাহা দেখিল না, জানিল না,...কারণ সদাপ্রভু তাহাদিগকে অগাধ নিদ্রায় মগ্ন করিয়াছিলেন ।” PPBeng 487.4

যখন দায়ূদ শিবির হতে একটু নিরাপদ দূরত্বে গেলেন তখন চিকার করে অবনেরকে বললেন, “তুমি কি পুরুষ নহ? আর ইস্রায়েলের মধ্যে তোমার তুল্য কে? তবে তুমি আপন প্রভু রাজাকে কেন সাবধানে রাখিলে না? দেখ, তোমার প্রভু রাজাকে বিনষ্ট করিতে লোকদের মধ্যে একজন আসিল। তুমি এ কাজ ভাল কর নাই। জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, তোমরা মৃত্যুর সন্তান, কেননা প্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তি তোমাদের প্রভুকে সাবধানে রাখ নাই। তুমি একবার দেখ, রাজার শিয়রের নিকটস্থ বড়শা ও জলের ভাঁড় কোথায়? তখন শৌল দায়ূদের স্বর বুঝিয়া কহিলেন, হে আমার বস দায়ূদ, এ কি তোমার স্বর? দায়ূদ কহিলেন, হ্যাঁ প্রভু মহারাজ, এ আমারই স্বর। তিনি আরও কহিলেন, আমার প্রভু আপন দাসের পশ্চাতে পশ্চাতে কেন ধাবমান হন? আমি কি করিয়াছি? আমার হস্তে কি অনিষ্ট আছে?” PPBeng 487.5