পিতৃকুলপতিগণ ও ভাববাদীগণ

25/333

হনোক স্বর্গে স্থানান্তরিত হলেন

এই পৃথিবীতে ধন সম্পদ সংগৃহীত করতে চাননি বলে সে যুগের লোকেরা তাকে ঠাট্টা বিদ্রূপ করছিল। হনোকের হৃদয় ছিল অনন্তকালীন সম্পদের দিকে নিবদ্ধ। তিনি সিয়োনের মধ্যখানে স্বর্গের মধ্যখানের রাজাকে তার উজ্জ্বল গৌরবে বিভূষিত দেখেছেন। তার মন, তার আদান প্রদান স্বৰ্গীয়ই ছিল। বিদ্যমান অত্যাচার যত বেশী হচ্ছিল তত বেশী হচ্ছিল ঈশ্বরের গৃহের জন্য তার বাসনা । PPBeng 50.5

তিনশত বসর হনোক ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করেন । দিনে দিনে তিনি আরো নৈকট্য লাভের বাসনা করেছিলেন; তার যোগাযোগ আরো নিকটস্থ হতে থাকল, পরিশেষে ঈশ্বর তাকে তাঁর নিকট নিয়ে নিলেন । আর যখন তিনি পবিত্র নগরের সম্মুখ দরজা দিয়ে পার হলেন ঐখানে নগরে প্রবেশকারীদের মধ্যে প্রথম মানুষ তখন যে গমনাগমন পৃথিবীতে চালু ছিল, তা এখনও চালুই থাকল । PPBeng 51.1

তার অভাব পৃথিবীতে অনুভুত হলো। ধার্মিক ও দুষ্টদের কেহ কেহ তার এই যাত্রা দেখেছিল। যারা তাকে ভালবাসত তারা তাকে অনেক খুঁজল । কিন্তু কোন লাভ হল না। তারা বলল, “তিনি আর রহিলেন না।” কেননা ঈশ্বর তাকে গ্রহণ করলেন । PPBeng 51.2

হনোককে স্থানান্তরের মাধ্যমে ঈশ্বর মানুষকে একটি বিশেষ পরিকল্পনা করলেন। আদমের পাপের ফল ভোগ করতে করতে মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল। অনেকেই এই কথা বলে চিৎকার করতে প্রস্তুত ছিল, “ঈশ্বরকে ভয় করে ও তার আদেশ অনুসারে চলে আমরা কি লাভ পেয়েছি, কেননা মানব জাতিও প্রচন্ডভাবে শাপগ্রস্ত, আর মৃত্যু প্রত্যেকেরই প্রাপ্য?” শয়তান মানুষকে এই বিশ্বাসে অনুপ্রাণিত করেছিল যে ধার্মিকদের কোন পুরস্কার নাই, আর অপরাধের কোন শাস্তি নাই, এবং স্বর্গীয় আইন রক্ষা করা মানুষের পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু হনোকের ঘটনায় ঈশ্বর দেখিয়ে দিলেন যারা তার ব্যবস্থা রক্ষা করে তিনি তাদের জন্য কি করবেন। মানুষকে শিক্ষা দেয়া হল যে ঈশ্বরের ব্যবস্থা রক্ষা করা সম্ভব, আর বাধ্যতার মাধ্যমে প্রলোভনের উপর জয়লাভ করা যায় এবং খাঁটি ও পবিত্র হওয়া যায়। তার স্থানান্তরিতকরণ পরকাল সম্বন্ধে ভাববাণীর সত্যতা প্রমাণ করল। PPBeng 51.3

“বিশ্বাসে হনোক লোকান্তরে নীত হইলেন, যেন মৃত্যু না দেখিতে পান...বস্তুতঃ লোকান্তরে নীত হইবার পূর্বে তাঁহার পক্ষে এই সাক্ষ্য দেওয়া হইয়াছিল যে, তিনি ঈশ্বরের প্রীতির পাত্র ছিলেন।” ইব্রীয় ১১:৫। খ্রীষ্টের দ্বিতীয় আগমনের সময় “পৃথিবী হইতে ক্রীত” (প্রকাশিত বাক্য ১৪:৩) লোকেরা খাঁটি ও পবিত্রতা যে অবস্থায় উন্নীত হবেন এই ভাববাদীর স্বর্গীয় চরিত্র তার এক দৃষ্টান্ত। যেভাবে মহা বন্যার পূর্বে হয়েছিল, সেই ভাবেই অপরাধ ও পাপ বিদ্যমান থাকবে। মানুষ ঈশ্বরের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। কিন্তু হনোকের মতই যতক্ষণ না মশীহের প্রকৃতি প্রতিফলিত হয় ততক্ষণ ঈশ্বরের লোকেরা হৃদয়ের পবিত্রতা কামনা করবে আর ঈশ্বরের ইচ্ছা মেনে চলবে। হনোকের মতই তারা ঈশ্বরের দ্বিতীয়বার আগমন সম্বন্ধে পৃথিবীকে সতর্ক করবে এবং তাদের খাঁটি জীবনের দৃষ্টান্ত দ্বারা অধার্মিকদের নিন্দা করবে। হনোককে যেভাবে স্বর্গে লোকান্তরিত করা হয়েছিল, ঠিক সেইভাবে, পৃথিবীকে আগুন দ্বারা ধ্বংস করার পূর্ব মুহূর্তে, জীবিত ধার্মিকদের রূপান্তরীকৃত করা হবে। ১ করিন্থীয় ১৫:৫১, ৫২; ১ থিষলনীকীয় ৪:১৬-১৮ দেখুন । PPBeng 51.4