পিতৃকুলপতিগণ ও ভাববাদীগণ
আত্মার উন্নয়নমূলক সঙ্গীতের শিক্ষাদান
গান-বাজনা তৈরীর উদ্দেশ্য ছিল চিন্তা-ভাবনাকে এক পবিত্র উচ্চতায় উত্তোলন করা ও হৃদয়ের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা ও কৃতজ্ঞতা সৃষ্টি করা। কতজনই না ঈশ্বরের গৌরব প্রকাশ না করে আত্ম-স্বার্থকে উন্নীত করার জন্য এই মেধার ব্যবহার করে থাকেন। গান-বাজনার প্রতি মোহ হল এমন একটি মাধ্যম যা ব্যবহার করে শয়তান মানুষের মনকে কর্তব্য সম্পাদন ও স্বর্গীয় জিনিষের বিষয়ে ধ্যান করা হতে দূরে নিয়ে যেতে পারে। PPBeng 432.5
স্বর্গে ঈশ্বরের কাছে তাঁর আরাধনার জন্য সঙ্গীত ব্যবহৃত হয়ে থাকে, আর আমাদের চেষ্ট করা উচিত আমরা যে সকল প্রশংসা ও গান তৈরী করি তা যেন স্বর্গীয় গায়কদলের প্রশংসা ও গানের যতদূর সম্ভব নিকটতম হয়। সঙ্গীত প্রার্থনার মতই আরাধনার একটি অংশ। হৃদয় যেন সঙ্গীতের আত্মাকে অনুভব করতে সক্ষম হয় যাতে সঙ্গীতের উপযুক্ত প্রকাশ সম্ভব হয়ে উঠে। PPBeng 433.1
যিহুদীদের অতীত বিদ্যালয় হতে কি কোন কোন বিশেষ শিক্ষামালা আমাদের বর্তমানকালের শিক্ষকরা লাভজনকরূপে প্রয়োগ করতে পারে? শিক্ষার প্রকৃত কার্যকারীতা তখন প্রমাণিত হয় যখন লোকেরা বিশ্বস্ততার সাথে স্রষ্টার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয় । PPBeng 433.2
শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হল হৃদয়ের ভিতর ঈশ্বরের সঠিক চেহারা স্থাপন করা । মানুষের মধ্যে যে ঈশ্বরের আকৃতি ছিল পাপ তা প্রায় ধ্বংসই করে ফেলেছে। যে পরিপূর্ণতায় তাকে প্রথম সৃষ্টি করা হয়েছিল সেই পরিপূর্ণতায় তাকে ফিরিয়ে আনাই হল জীবনের মহান ব্রত। যুবক-যুবতীদের শিক্ষাদান কালে পিতামাতা ও শিক্ষকের কর্তব্য হলো ঐ স্বর্গীয় লক্ষ্যের সাথে সহযোগীতা করা। স্রষ্টা আমাদের যে সকল মেধা ও যে সকল গুণ দিয়েছেন তার প্রত্যেকটিই তাঁর গৌরবার্থে ও সহ-মানবের উন্নয়নে আমাদের প্রয়োগ করতে হবে। PPBeng 433.3
এই নীতির গুরুত্ব অনুসারে যদি এর প্রতি মনোযোগ দেয়া হয়, তবে বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতিতে একটি আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে। তখন আত্ম- গৌরব ও উচ্চাকাঙ্খা জাগিয়ে তুলার পরিবর্তে উত্তমতা, সত্য, এবং সৌন্দর্যের প্রতি প্রেমকে জাগিয়ে প্রচেষ্টা চালানো হবে। ছাত্র অন্যদের চেয়ে ভাল ফল করার পরিবর্তে স্রষ্টার উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করতে ও নিজের মধ্যে তাঁর আকৃতি আঁকতে অধিক চেষ্টা চালাবে। যা অন্যদের ছোট করে সেইরূপ আত্ম-উন্নতির আকাঙ্খায় পরিচালিত না হয়ে ছাত্রদের মন স্রষ্টার দিকে ধাবিত হবে। PPBeng 433.4
“সদাপ্রভুকে ভয় করাই প্রজ্ঞার আরম্ভ, পবিত্রতম-বিষয়ক জ্ঞানই সুবিবেচনা।” হিতোপদেশক ৯:১০। এই জ্ঞান প্রদান করা এবং এর সাথে ঐক্য রেখে চরিত্র সংগঠন করাই হবে শিক্ষকের কাজের লক্ষ্য। গীতসংহিতায় বলা হয়েছে, “তোমার সমস্ত আজ্ঞা ধর্মময়”, এবং “তোমার নির্দেশমালা দ্বারা আমার বুদ্ধি লাভ হয়।” গীতসংহিতা ১১৯৪১৭২, ১০৪। ভাববাণীর আত্মার হাজারো শিক্ষামালায় ও প্রকৃতির পুস্তক হতে আমরা ঈশ্বর সম্পর্কিত জ্ঞান লাভ করব। PPBeng 433.5
যে বিষয়ের উপর মন বেশী নিয়োজিত থাকে সেই বিষয়ের সহিত মন সংহতিপূর্ণ হয়ে উঠে। যদি তা সর্বদাই অতি সাধারণ জিনিষের প্রতি নিবদ্ধ থাকে তবে মন সঙ্কীর্ণ ও দুর্বল হয়ে পড়বে। যদি মনকে কঠিন সমস্যা সমাধানে নিযুক্ত করা না হয় তাহলে তা বৃদ্ধি পাবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। শিক্ষার দক্ষতা বৃদ্ধি করায় বাইবেলের কোন প্রতিযোগী নাই। এটি ত চিরন্তন সত্যের উৎস হতেই এসেছে, এবং ঈশ্বরের হাত যুগে যুগে এর পবিত্রতা রক্ষা করেছে । যে সুদূর অতীতে প্রবেশের জন্য মানবিক গবেষণা কাজ বৃথাই প্রচেষ্টা চালায়, বাইবেল তাকে আলোকিত করে তুলে। মানুষের গর্ব ও কুসংস্কার মুক্ত আমাদের জাতির ইতিহাস আমরা এখানেই পেতে পারি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তিত্বের জীবনের দ্বন্দ্ব, পরাজয়, ও বিজয় এইখানেই লিপিবদ্ধ করা রয়েছে। যে পর্দা দৃশ্য ও অদৃশ্যকে পৃথক করে এখানে এলে তা উন্মোচিত হয়, এবং তখন আমরা ভাল ও মন্দের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব ও পাপের শুরু হতে ধার্মিকের বিজয় পর্যন্ত সব কিছুই দেখতে পারি। সব কিছুই ঈশ্বরের চরিত্রসমূহের প্রকাশ মাত্র। ছাত্রকে অসীম মনের সহিত সংযোগ স্থাপন করানো হয়। এই ধরণের শিক্ষা মানসিক ক্ষমতার বৃদ্ধি সাধন করতে ব্যর্থ হয় না । PPBeng 434.1
বাইবেল সেই সকল নীতি শিক্ষা দেয় যেগুলি সমাজের স্তম্ভ এবং পারিবারিক জীবনের সংরক্ষক। ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করলে এবং এর প্রতি বাধ্যতা প্রদর্শন করলে, ইহা পৃথিবীকে দিবে শক্তিশালী চরিত্রের মানুষ, যে মানুষের থাকবে গভীর উপলব্ধি ও সঠিক বিচার ক্ষমতা, আর যারা হবে পৃথিবীতে আশীর্বাদস্বরূপ। PPBeng 434.2
সকল প্রকৃত বিজ্ঞানই হলো বস্তু-জগতে ঈশ্বরের হাতের লেখার ব্যাখ্যা-প্রদান। বিজ্ঞান তার গবেষণা দ্বারা ঈশ্বরের জ্ঞান ও ক্ষমতার নূতন নূতন প্রমাণ প্রকাশ করে। সঠিক ভাবে বুঝতে পারলে বুঝা যাবে যে, প্রকৃতি ও ঈশ্বরের বাক্য উভয়ই, তিনি যে বিজ্ঞান ও হিতকর নিয়ম-কানুনের মাধ্যমে কাজ করেন, তা শিক্ষা দিয়ে আমাদের ঈশ্বরের সাথে পরিচিত করে। PPBeng 434.3
মহান শিক্ষক (খ্রীষ্ট) যে সকল দৃষ্টান্ত দ্বারা তার শিক্ষাকে বোধগম্য করে তুলতেন ও শ্রোতার হৃদয়ের মধ্যে গভীর ভাবে গেথে দিতেন, সকল শিক্ষককে তাঁর সেই সকল দৃষ্টান্ত অনুকরণ করা উচিত। পত্রময় শাখা-প্রশাখার পাখী, উপত্যকার ফুল, বিশাল বৃক্ষসমূহ, ফসল-পূর্ণ মাঠ, নির্গতমান শস্য, অনুর্বর ভূমি, আকাশে পড়ন্ত সূর্যের সোনালী রঙের ছটা- এই সকলই শিক্ষাদানে ব্যবহার করা যায়। স্রষ্টার দৃশ্যমান কাজকে তিনি তাঁর জীবনদানকারী বাক্যের সহিত সংযুক্ত করতেন। PPBeng 434.4