পিতৃকুলপতিগণ ও ভাববাদীগণ
৫৫—ঈশ্বর বালক শমূয়েলকে আহবান করেন
ইফ্রয়িম পার্বত্য অঞ্চলের একজন লেবী, ইকানা একজন ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন যিনি সদাপ্রভুকেও প্রেম করতেন। তার স্ত্রী হান্না ছিলেন একজন খুবই গুণবতী ও অত্যন্ত ধাৰ্ম্মিকা একজন মহিলা । PPBeng 411.1
তাদের গৃহ কোন শিশুদের কলধ্বনিতে মুখরিত ছিল না, সুতরাং স্বামী দ্বিতীয়বার বিবাহ চুক্তিতে আবদ্ধ হলেন। কিন্তু ঈশ্বরের উপর বিশ্বাসের দুর্বলতা দ্বারা উদ্বুদ্ধ এই পদক্ষেপ কোন আনন্দ নিয়ে এল না। গৃহে ছেলে ও মেয়েরা এল ঠিকই, কিন্তু ঈশ্বরের পবিত্র প্রতিষ্ঠানকে কর্দমাক্ত করা হয়েছিল এবং পরিবারের শান্তি ভঙ্গ হল । PPBeng 411.2
নববধূ পনিন্না ঈর্ষাপরায়ণা ও সংকীর্ণমনা ছিলেন এবং গর্বিত ও উদ্ধত ভাবে চলাফেরা করতেন। আর হান্নার মনে হল জীবনের সকল আশা অতীত হয়েছে, আর তার জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠল; তথাপি সে তার পরীক্ষার মোকাবেলায় অভিযোগ বিহীন ও বিনম্র ছিল । PPBeng 411.3
লেবীয় হিসাবে শীলোতে ইল্কানার সেবার প্রয়োজন হত না । তথাপি তিনি নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানসমূহে আরাধনা করার ও বলিদান দেবার জন্য সমস্ত পরিবারসহ সেখানে যেতেন। ঈশ্বরের আরাধনা ও সেবার সহিত সম্পর্কিত আন্দোসবের মধ্যেও যে মন্দ আত্মা তার পারিবারিক জীবনে শাপ বয়ে নিয়ে এসেছিল, সে এসে আশ্রয় করত। ইল্কানা তার সন্তানদের, মাকে তার নিজের জন্য এক অংশ এবং প্রতি সন্তানের জন্য এক অংশ করে বলির মাংস দিতেন আর হান্নার প্রতি তার ভালবাসা একই রকম রয়েছে বুঝাবার জন্য তাকে দুই অংশ মাংস দিতেন যাতে মনে হত যে হান্নারও একটি ছেলে রয়েছে। আর তখন ঈর্ষায় জ্বলে উঠে তার দ্বিতীয় স্ত্রী এমন এমন ব্যবহার পাবার দাবী জানাতেন যে তিনি যেন ঈশ্বরের নিকট হতে বিশেষ আশীর্বাদ লাভ করেছেন এবং হান্নাকে তার বন্ধ্যাত্বের জন্য বিদ্রূপ করতেন। এই ভাবে বসরের পর বসর এই ব্যবহার পাবার পর হান্না আর তা সহ্য করতে পারলেন না। তিনি অঝোরে কাঁদতে লাগলেন এবং আনন্দোসব হতে সরে পড়লেন । তার স্বামী বৃথাই তাকে সান্ত্বনা দিতে চাইলেন। “হান্না, কেন কাঁদিতেছ? কেন ভোজন করিতেছ না? তোমার মন শোকাকুল কেন? তোমার কাছে দশ পুত্র হইতেও কি আমি উত্তম নহি?” PPBeng 411.4
হান্না কোন অভিযোগ করলেন না। যে দুঃখ ভার কোন পার্থিব বন্ধুর সহিত ভাগ করা যায় না তা তিনি ঈশ্বরের কাছে নিয়ে গেলেন । অত্যন্ত কাতর ভাবে তিনি প্রার্থনা করলেন যে ঈশ্বর যেন তাকে একটি ছেলে সন্তান দেন যাকে তিনি প্রশিক্ষণ দ্বারা তাঁর (ঈশ্বরের) জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তুলবেন। তাই তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন যে যদি ঈশ্বর তার প্রার্থনা শ্রবণ করেন তবে তিনি তার সন্তানকে জন্ম কাল হতে ঈশ্বরের উদ্দেশে উসর্গ করে দেবেন। PPBeng 412.1
হান্না সমাগম-তাম্বুর প্রবেশ দ্বারের নিকটে পড়েছিলেন এবং তার মনের প্রচন্ড যাতনায় “প্রার্থনা করিতে ও অনেক রোদন করিতে লাগিলেন।” সেই মন্দ যুগে ঐ রকম প্রার্থনার দৃশ্য প্রায় দেখাই যেত না। মহাযাজক এলি হান্নাকে দেখে ভাবলেন যে সে অতিরিক্ত মদ্যপান করে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। যথার্থ প্রাপ্য একটি বকুনি দেবার কথা চিন্তা করে তিনি কর্কশ কন্ঠে বললেন,“তুমি কতক্ষণ মত্ত হইয়া থাকিবে? তোমার দ্রাক্ষারস তোমা হইতে দূর কর।” PPBeng 412.2
ব্যথিত ও হতবম্ভ হান্না নম্র স্বরে উত্তর করলেন, “হে আমার প্রভু তাহা নয়, আমি দুঃখিনী স্ত্রী, দ্রাক্ষারস কিংবা সুরা পান করি নাই, কিন্তু সদাপ্রভুর সাক্ষাতে আমার মনের কথা ভাঙ্গিয়া বলিয়াছি। আপনার এই দাসীকে আপনি পাষন্ড মনে করিবেন না; বস্তুত; আমার চিন্তার ও মনস্তাপের বাহুল্য প্রযুক্ত আমি এই পৰ্য্যন্ত কথা কহিতেছিলাম।” PPBeng 412.3
মহাযাজক খুবই অভিভূত হয়ে পড়লেন, কারণ তিনি একজন ধার্মিক লোক ছিলেন। বকুনির পরিবর্তে তিনি একটি প্রার্থনা উচ্চারণ করলেন, “তুমি শান্তিতে যাও; ইস্রায়েলের ঈশ্বরের কাছে যাহা যাচঞা করিলে, তাহা তিনি তোমাকে দিউন ।” PPBeng 412.4