পিতৃকুলপতিগণ ও ভাববাদীগণ
অনুষ্ঠানের মর্মার্থ
নিস্তার পর্ব্বের পর সাতদিন ধরে চলত তাড়ীশূন্য রুটীর উসব। ঐ উসবের দ্বিতীয় দিনে ঐ বসরে শস্যের প্রথম ফসল ঈশ্বরের সামনে উপহারস্বরূপ উপস্থিত করা হত। সমস্ত কিছুই যে তাঁরই দান তার স্বীকৃতি হিসাবে যাজক শস্যের একটি শীষ ঈশ্বরের যজ্ঞবেদির সামনে দুলাতে থাকতেন । এই অনুষ্ঠান পূর্ণ করার আগে কোন শস্য সংগ্রহ করা হত না। PPBeng 388.3
প্রথম শস্য দান করার পঞ্চাশ দিন পর আসত তাড়ীশূন্য রুটীর উসব, শস্য সংগ্রহের ভোজ। শস্য সংগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে খামিরসহ তৈরি দুটি রুটী ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত করা হত। তাড়ীশূন্য রুটী চলত শুধু একদিন। সপ্তম মাসে নতুন ভক্ষ্যের উসব বা ফসল সংগ্রহের উসব উদ্যাপন করা হত। এই উসবে ফল বাগানের, জলপাই গাছের ও আঙ্গুর ক্ষেতের প্রচুর ফলের জন্য ঈশ্বরের ধন্যবাদ করা হত । বসরের মধ্যে এই উসবটি ছিল খুবই আনন্দপূর্ণ উসব। ফসল গোলাজাত করা শেষ হয়েছে, ফল, তেল ও আঙ্গুর রস তৈরি করে সংরক্ষণ করা শেষ হয়েছে, আর এখন লোকেরা তাদের কৃতজ্ঞ অন্তর নিয়ে ঈশ্বরের কাছে উপস্থিত হয়েছে। PPBeng 388.4
এই উসব ছিল আনন্দ প্রকাশের উসব এটি প্রায়শ্চিত্ত প্রদানের পর দিনই উদ্যাপিত হত যখন লোকদের স্মরণ থাকত যে তাদের পাপসমূহ ঈশ্বর আর তাঁর স্মরণে আনবেন না। তখন ঈশ্বরের সাথে শান্তি স্থাপন করা হয়েছে, বসরের পরিশ্রম সমাপ্ত হয়েছে, নতুন বসরের শ্রম শুরু করার সময় বেশ দূরে রয়েছে, ফলে লোকেরা পবিত্র আনন্দের মধ্যে নিজেদের বিলিয়ে দিতে পারত । যতদূর সম্ভব প্রত্যেক পরিবারকেই এই উসবে অংশ গ্রহণ করতে হত, এবং দাস, লেবীয়, বিদেশী ও দরিদ্রদের এই উসবে স্বাগতম জানানো হত । PPBeng 388.5
নিস্তারপর্ব্বের মত, নতুন ভোক্ষের উসবও একটি স্মারক ছিল। মরু- প্রান্তরে তাদের যাত্রা স্মরণ করে লোকদের ঘর হতে বেরিয়ে এসে “শোভাদায়ক বৃক্ষের ফল, খর্জুর-পত্র, জড়ান গাছের শাখা এবং নদীতীরস্থ বাইসী-বৃক্ষের” সবুজ শাখা দ্বারা কুড়ে ঘর বা নিকুঞ্জ তৈরী করে তাতে বাস করতে হত। লেবীয় ২৩:৪০। PPBeng 389.1
এই বাসরিক সমাবেশ সমূহে আবাল বৃদ্ধ বনিতার হৃদয় ঈশ্বরের সেবা করার জন্য অনুপ্রানিত হত। দেশের বিভিন্ন অংশের লোকেরা এক জায়গায় সমবেত হওয়ার ফলে ঈশ্বরের প্রতি ও পরস্পরের প্রতি তাদের বন্ধন দৃঢ় হত। যে ভাবে ঈশ্বর তাদের পিতৃপুরুষদের মুক্তি সাধন করেছিলেন এবং তাদের ভ্রমণের সময় অলৌকিক ভাবে রক্ষা করেছিলেন ইস্রায়েলরা সেরূপ উদযাপন করত, ঠিক তেমনি ভাবে আমাদেরও কৃতজ্ঞতার সহিত স্মরণ করা উচিত যে ঈশ্বর আমাদের অন্ধকার থেকে তাঁর অনুগ্রহ ও সত্যের আলোতে নিয়ে আসার জন্য বিশেষ পদ্ধতি স্থির করেছেন। PPBeng 389.2
যারা সমাগম-তাম্বু হতে বেশ দূরত্বে অবস্থান করত, তাদের ঐ সকল উসব উদযাপন করতে গিয়ে নিশ্চয়ই বসরের এক মাস কাল কেটে যেত । এই দৃষ্টান্ত পৃথিবীর স্বার্থের সন্ধানে ঘুরার থেকে ধর্মীয় উপাসনায় গুরুত্ব প্রদান করতে প্রমাণস্বরূপ আমাদের সামনে থাকা উচিত। একে অপরকে ঈশ্বরের সেবার জন্য উসাহ দানের লক্ষ্যে যদি আমরা সমবেত হতে অবহেলা দেখাই তবে আমরা নিজদের ক্ষতি সাধন করে থাকি। আমরা সকলেই এক পিতার সন্তান, আর সুখ ও আনন্দের জন্য আমরা একে অপরের উপর নির্ভরশীল। আমাদের সামাজিক চরিত্রের সঠিক বিকাশ সাধন করলে আমরা অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হব এবং প্রকৃত আনন্দ উপভোগ করতে পারব। PPBeng 389.3
নূতন ভক্ষের উসব শুধু যে মরু-প্রান্তরের ভ্রমণের স্মরণ করাও তা নয়, বরং শেষ সংগ্রহের অন্তিম দিনটির প্রতিও এটি অঙ্গুলি নির্দ্দেশ করত। আগুনে পোড়ানোর জন্য আগাছাকে একত্রে জড় করতে এবং গোলাজাত করতে সদাপ্রভু তাঁর শস্য সংগ্রহকারীদের প্রেরণ করবেন। ঐ সময় দুষ্ট লোকেরা ধ্বংস প্রাপ্ত হবে। তারা “পরে যেন হয়ই নাই সেইরূপ হইবে।” ওবদিয় ১৬ । আর সমগ্র পৃথিবীতে সমস্ত কন্ঠস্বর এক তানে ঈশ্বরের গৌরবের প্রসংশা করবে । PPBeng 389.4
যখন সদাপ্রভু চিরকালের জন্য শাপ হতে মুক্ত করে মুক্তিপ্রাপ্তদের নিরাপদে স্বর্গীয় কনানে সংগ্রহ করবেন, তখন তারা “অনির্বচনীয় ও গৌরবযুক্ত আনন্দে উল্লাস” করিবে। খ্রীষ্টের প্রায়শ্চিত্তের মহান কাজ তখন পরিপূর্ণতা লাভ করবে এবং পাপকে চিরতরে মুছে ফেলা হবে । PPBeng 389.5
“আর সদাপ্রভুর নিস্তারিত লোকেরা ফিরিয়া আসিবে,
আনন্দ গান পুরঃসর সিয়োনে আসিবে,
এবং তাহাদের মস্তকে নিত্যস্থায়ী
হর্ষ-মুকুট থাকিবে; তাহারা আমোদ ও
আনন্দ প্রাপ্ত হইবে, এবং খেদ ও আর্দ্রস্বর
দূরে পলায়ন করিবে।”
PPBeng 390.1
যিশাইয় ৩৫:১০ ।