পিতৃকুলপতিগণ ও ভাববাদীগণ

121/333

২৭—সীনয় পর্বতে ঈশ্বর তাঁর ব্যবস্থা দান করেন

সীনয়ের তাঁবু স্থাপনের অব্যবহিত পরেই মোশিকে ঈশ্বরের পর্বতে উপস্থিত হওয়ার জন্য আহ্বান করা হল। ইস্রায়েলকে এখন সর্বশক্তিমানের সহিত এক ঘনিষ্ট ও বিশেষ সম্পর্কে প্রবেশ করতে হবে- ঈশ্বরের শাসনের অধীনে একটি মন্ডলী ও জাতিরূপে সংঘবদ্ধ হতে হবে। “আমি মিস্ত্রীয়দের প্রতি যাহা করিয়াছি, এবং যেমন ঈগল পক্ষী পক্ষ দ্বারা, তেমনি তোমাদিগকে বহিয়া আপনার নিকটে আনিয়াছি, তাহা তোমরা দেখিয়াছ। এখন যদি তোমরা আমার রবে অবধান ও আমার নিয়ম পালন কর, তবে তোমরা সকল জাতি অপেক্ষা আমার নিজস্ব অধিকার হইবে, কেননা সমস্ত পৃথিবী আমার; আর আমার নিমিত্তে তোমরাই যাজকদের এক রাজ্য ও পবিত্র এক জাতি হইবে।” PPBeng 212.1

মোশি তাঁবুতে ফিরে এসে ইস্রায়েলদের প্রাচীনদের নিকট স্বর্গীয় বাণী পুনরাবৃত্তি করলেন । তাদের উত্তর ছিল, “সদাপ্রভু যাহা কিছু বলিয়াছেন, আমরা সমস্তই করিব।” এই ভাবে তাঁকে তাদের শাসকরূপে গ্রহণ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে, তারা ঈশ্বরের সহিত এক পবিত্র চুক্তিতে আবদ্ধ হলেন, আর এর দ্বারা, এক বিশেষ অর্থে তারা তাঁর অধীনস্থ প্রজাতে পরিণত হলেন। PPBeng 212.2

ঈশ্বর তাঁর ব্যবস্থা প্রকাশের ক্ষণকে একটি গম্ভীর মাহাত্মপূর্ণ দৃশ্য দ্বারা পরিবেষ্টিত করতে সিদ্ধান্ত নিলেন। যা কিছুই ঈশ্বরের সেবার সহিত সংযুক্ত সেগুলিকে সর্বাধিক সম্মান দেখাতে হবে। সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি লোকদের নিকটে গিয়া অদ্য ও কল্য তাহাদিগকে পবিত্র কর, এবং তাহারা আপন আপন বস্ত্র ধৌত করুক, ...কেননা তৃতীয় দিনে সদাপ্রভু সকল লোকের সাক্ষাতে সীনয় পর্বতের উপরে নামিয়া আসিবেন।” সকলে ঈশ্বরের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার জন্য পবিত্র-প্রস্তুতিতে সময় কাটাতে হবে। তারা নিজেরা, তাদের বস্ত্রাদি অপবিত্র হতে পবিত্র হতে হবে। তারা নম্রতা, উপবাস, ও প্রার্থনাতে নিযুক্ত থাকবেন যেন তাদের হৃদয় পাপ হতে মুক্ত হয়। PPBeng 212.3

তৃতীয় দিনের ভোরবেলা, সীনয়ের শৃঙ্গ, মেঘে ঢেকে গেল, ঘন এবং কাল মেঘ, যে মেঘ উপর হতে নীচের দিকে বিস্তৃত হয়ে সমস্ত পর্বতকে অন্ধকারে ও এক গভীর রহস্যে ঢেকে ফেল্‌ল। তখন ঈশ্বরের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য লোকদের আহবান করে এক তুরীর ধ্বনি শোনা গেল । তখন গভীর অন্ধকারের মধ্যে বিদ্যুৎ চমকাল, আর চতুর্দিকের চূড়া হতে বজ্র প্রতিধ্বনিত হল। “তখন সমস্ত সীনয় পর্বত ধোয়ায় ঢাকা ছিল;...এবং সমস্ত পর্বত ভীষণভাবে কাঁপিতে লাগিল।” ইস্রায়েল জনতা ভয়ে কাঁপতে লাগল এবং সদাপ্রভুর সামনে প্রাণপাত করল । এমন কি মোশিও বললেন, “আমি খুবই ভয় পাইতেছি ও কাঁপিতেছি।” PPBeng 213.1

বজ্রধ্বনি থেমে গেল; তুরীধ্বনি আর শোনা যাচ্ছিল না; পৃথিবী শান্ত হল। কিছু সময় এক মহা নীরবতা বজায় থাকল; তারপর ঈশ্বরের আওয়াজ শুনা গেল। দূত দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পর্বত শৃঙ্গে দাঁড়িয়ে থেকে সদাপ্রভু কথা বলেন ও তার ব্যবস্থা প্রকাশ করলেন । PPBeng 213.2

“আমি তোমার ঈশ্বর, যিনি মিসর দেশ হইতে, দাসগৃহ হইতে, তোমাকে বাহির করিয়া আনিয়াছি।” যিনি সমুদ্রের মধ্যে পথ তৈরি করে, এবং ফরৌণ ও তার বাহিনীকে ধ্বংস করে, তাদের মিসর হতে বের করে নিয়ে এসেছিলেন তিনিই এখন তার ব্যবস্থা দিচ্ছিলেন । PPBeng 213.3

ঈশ্বর তার ব্যবস্থার অভিভাবক ও রক্ষকরূপে যিহূদীদের সম্মানিত করলেন, কিন্তু ইহা সমস্ত পৃথিবীর জন্য একটি পবিত্র আমানতরূপে রক্ষা করতে হবে। দশ আজ্ঞায় যে নিয়ম দেয়া হয়েছিল তা সমস্ত মানব জাতির উপর প্রযোজ্য ছিল, এগুলি সকলের জন্য উপদেশ ও পথ-নিদেশকরূপে প্রত্যেকের প্রতি প্রযোজ্য ছিল। দশটি আদেশ, সংক্ষিপ্ত, ব্যাপক, এবং কর্তৃত্বব্যঞ্জক, ঈশ্বরের প্রতি মানুষের কর্তব্য ও মানুষের প্রতি কর্তব্য সকল বর্ণনা করে এবং সবগুলিই প্রেমের মুখ্য নীতির উপর স্থাপিত। “তুমি তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত শক্তি ও তোমার সমস্ত চিত্ত দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে, এবং তোমার প্রতিবাসীকে নিজের মত প্রেম করিবে।” লুক ১০:২৭। দশ আজ্ঞার মধ্যে এই নীতিগুলো মানুষের জন্য প্রযোজ্য করা হল । PPBeng 213.4

“আমার সাক্ষাতে তোমার অন্য দেবতা না থাকুক।” আমরা যা কিছুকে এত অধিক পছন্দ করি যে তা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেমকে কমিয়ে আনে অথবা তাঁর সাহায্যে বাধার সৃষ্টি করে, তাই আমাদের নিকট আর একটি দেবতাতে পরিণত হয় ৷ PPBeng 213.5

“তুমি আপনার নিমিত্তে খোদিত প্রতিমা নির্মান করিও না; উপরিস্থ স্বর্গে,নীচস্থ পৃথিবীতে ও পৃথিবীর নীচস্থ জলমধ্যে যাহা যাহা আছে, তাহাদের কোন মূর্তি নির্মাণ করিও না।” PPBeng 214.1