পিতৃকুলপতিগণ ও ভাববাদীগণ
মেঘের স্তম্ভ
“পরে তারা সুক্কোৎ হইতে রওয়ানা করিয়া মরুভূমির কিনারে এসে তাঁবু গাড়িল। আর সদাপ্রভূ দিনে পথ দেখাইবার জন্য মেঘস্তম্ভে থাকিয়া এবং রাত্রিতে আলো দিবার জন্য অগ্নিস্তম্ভে থাকিয়া তাহাদের অগ্রে অগ্রে যাইতেন। যেন তাহারা দিবারাত্র পথ চলিতে পারে। লোকদের সম্মুখ হইতে দিনে মেঘস্তম্ভ ও রাত্রিতে অগ্নিস্তম্ভ সরিয়া যাইত না।” গীতসংহিতায় বলা হয়েছে, “তিনি চন্দ্রাতপের জন্য মেঘ বিস্তার করিলেন, তিনি রাত্রি আলোকময় করণার্থে জন্য অগ্নি দিলেন । গীতসংহিতা ১০৫:৩৯। ১করিন্থীয় ১০৪১, ২ দেখুন। ইহার ঠান্ডা বাষ্প, প্রচন্ড উত্তাপ হতে রক্ষা করত, এবং শুষ্ক তৃষ্ণার্ত মরুভূমিতে ইহা আকাঙ্ক্ষিত স্বস্তিদান করত। রাত্রে ইহা আগুনের স্তম্ভতে পরিণত হত এবং তাঁবু সমূহ আলোকিত করত, আর এ দ্বারা ঈশ্বরের নিয়ত উপস্থিতির নিশ্চয়তা প্রদান করা হত । PPBeng 199.1
একটি শুষ্ক, মরুভূমি তুল্য প্রান্তর দিয়ে তারা যাত্রা করছিলেন। রাস্তার ক্লান্তিতে তারা শ্রান্ত হয়ে পড়ছিলেন, আর কিছু লোক মিস্ত্রীয়দের পিছু আক্রমণের ভয়ে ভীত হতে আরম্ভ করল। কিন্তু মেঘ অগ্রে অগ্রে চল, এবং তারা তার অনুসরণ করলেন। আর এখন ঈশ্বর মোশিকে আদেশ দিলেন যেন তারা একটি প্রস্তরময় গিরিসঙ্কটে সমুদ্রের কাছে তাঁবু স্থাপন করেন। তার (মোশির) কাছে প্রকাশ করা হল যে ফরৌণ তাদের অনুসরণ করবে কিন্তু তাদের মুক্তিতে ঈশ্বর গৌরবান্বিত হবেন । PPBeng 199.2
ফরৌণের পরিষদরা রাজাকে জানালেন যে তাদের দাসগণ পালিয়েছে, এবং আর কখনও ওরা ফিরে আসবে না। তাদের ভয় দূর হওয়ার পর তাদের মহান ব্যক্তিরা প্রাকৃতিক কারণকে তাদের আঘাতের উৎস বলে ব্যাখ্যা করলেন। তারা চিৎকার করে বললেন, “আমরা একি করিলাম? আমাদের দাসত্ব হইতে ইস্রায়েলকে কেন ছাড়িয়া দিলাম?” PPBeng 199.3
ফরৌণ তার সৈন্যদের একত্র করলেন “মনোনীত ছয়শত রথ, এবং মিসরের সমস্ত রথ,” অশ্বারোহী, সেনাপতি ও পদাতিক। তার রাজ্যের মহান ব্যক্তিবর্গসহ রাজা স্বয়ং আক্রমণকারী সেনাবহিনীর নেতৃত্বভার গ্রহণ করলেন । মিস্ত্রীয়রা ভয় করল যে বলপূর্বক ঈশ্বরের নিকট তাদের হাস্যাস্পদ করে তুলবে। এখন যদি তারা তাদের প্রতাপ ও ক্ষমতা প্রদর্শন করে পলায়নরতদের বন্দি করে নিয়ে আসে, তবে তারা তাদের গৌরব পুনরুদ্ধার করবে ও তাদের দাসদের পুরাতন কাজে নিযুক্ত করতে সক্ষম হবে। যিহুদীরা সমুদ্র তীরে তাঁবু স্থাপন করে অপেক্ষামান ছিল, সামনে রয়েছে অনতিক্রম্য বাঁধা, আর দক্ষিণের কঠিন পাহাড় তাদের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করে দাঁড়িয়ে ছিল। আকস্মিক তারা দূরের আগমনরত রথের উজ্জ্বল যুদ্ধাস্ত্র দেখতে পেল। ইস্রায়েলদের হৃদয় ভয়ে স্তম্ভিত হয়ে পড়ল । অধিকাংশই মোশির নিকট তাদের অভিযোগ নিয়ে উপস্থিত হল, “মিসরে কবর নাই বলিয়া তুমি কি আমাদিগকে লইয়া আসিলে, যেন আমরা প্রান্তরে মরিয়া যাই?.. ... প্রান্তরে মরণাপেক্ষা মিস্ত্রীয়দের দাস্যকর্ম করা আমাদের মঙ্গল।” PPBeng 199.4
সত্যি ঈশ্বর স্বয়ং যদি তাদের উদ্ধার না করেন তবে তার মুক্তির আর কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল না; কিন্তু ঈশ্বরের আদেশের প্রতি বাধ্য থেকে এ পর্যন্ত আসার পর মোশির মনে এর ফল সম্পর্কে কোন ভয়ই ছিল না। লোকদের নিকট তার ধীর ও উৎসাহজনক উত্তর ছিল, “ভয় করিও না, সকলে স্থির হইয়া দাঁড়াও। সদাপ্রভু অদ্য তোমাদের যে নিস্তার করেন, তাহা দেখ; কেননা এই যে মিস্ত্রীয়দিগকে অদ্য দেখিতেছ, ইহাদিগকে আর কখনই দেখিবে না । সদাপ্রভু তোমাদের পক্ষ হইয়া যুদ্ধ করিবেন, তোমরা নীরব থাকিবে।” PPBeng 200.1
শৃঙ্খলা ও আত্ম -নিয়ন্ত্রণহীন ইস্রায়েলীয় জনতা হিংস্র ও অযৌক্তিক হয়ে উঠল। তাদের বিলাপ ও ক্রন্দন প্রবল উচ্চ প্রাণে পৌঁছাল। বিস্ময়কর মেঘস্তম্ভকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ঈশ্বরের সংকেতরূপে গন্য করা হত; কিন্তু এখন কি ইহা তাদের পর্বতের ভুল প্রান্তে পরিচালিত করে একটি অনতিক্রম্য স্থানে নিয়ে আসেনি? ঈশ্বরের দূতকে তাদের প্রবঞ্চিত মনের নিকট ধ্বংসের অগ্রদূত বলে প্রতীয়মান হয়েছে। PPBeng 200.2
মিস্ত্রীয় সৈন্য বাহিনী যখন তাদের নিকটবর্তী হতে আরম্ভ করল, তখন মেঘস্তম্ভ মহিমান্বিতভাবে আকাশে উঠে ইস্রায়েলদের উপর দিয়ে পার হয়ে গিয়ে তাদের ও মিস্ত্রীয় সৈন্যদের মধ্যখানে অবস্থান নিল। তখন মিস্ত্রীয়রা যিহূদী তাঁবুসমূহ আর চিহ্নিত করতে পারল না এবং তাদের অগ্রগতি স্থগিত করতে বাধ্য হল । কিন্তু রাত্রিকালে মেঘের দেয়াল যিহূদীদের আলো দিল । PPBeng 200.3
তখন ইস্রায়েলদের হৃদয়ে আবার আশার সঞ্চার হল। “পরে সদাপ্রভু মোশিকে বলিলেন....ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে অগ্রসর হইতে বল। আর তুমি আপন যষ্টি তুলিয়া সমুদ্রের উপরে হস্ত বিস্তার কর, সমুদ্রকে দুই ভাগ কর; তাহাতে ইস্রায়েল-সন্তানেরা শুষ্ক পথে সমুদ্র মধ্যে প্রবেশ করিবে।” PPBeng 200.4
যখন মোশি তার যষ্টি বিস্তার করলেন, তখন জল দু'ভাগ হয়ে গেল. আর ইস্রায়েলরা সমুদ্রের মধ্যে শুকনা মাটিতে প্রবেশ করল, এবং দু'পাশের জল দেওয়ালের মত দাঁড়িয়ে রহিল। ঈশ্বরের স্তম্ভ হতে আলো রাস্তার উপর পড়ল আর ঐ পথকে মনে হল জলের মধ্যে গভীর একটি প্রাচীর। PPBeng 200.5