পিতৃকুলপতিগণ ও ভাববাদীগণ
৩—আমাদের প্রথম পিতামাতার বিপজ্জনক অবস্থা
স্বর্গে বিদ্রোহ সৃষ্টির স্বাধীনতা হারানোর পর শয়তান মানব জাতিকে ধ্বংসের পরিকল্পনা করার একটি নূতন ক্ষেত্র পেল। প্রতিহিংসার দ্বারা পরিচালিত হয়ে সে তাদের উপর পাপের দোষ ও শাস্তি চাপানোর প্রচেষ্টা চালাতে বদ্ধ পরিকর হলো। সে তাদের সৃষ্টিকর্তার প্রতি তাদের প্রেমকে অবিশ্বাসে ও তাদের প্রশংসাপূর্ণ গানকে তীব্র নিন্দাতে রূপান্তরিত করবে। তা হলে সে শুধু এই নির্দোষ প্রাণীদেরকেই যে দুর্দশাগ্রস্ত করবে তা নয়, কিন্তু ঈশ্বরের উপরও বদ্নাম নিয়ে আসবে এবং ফলে স্বর্গে অনেক দুঃখাবস্থা সৃষ্টি হবে। PPBeng 24.1
স্বর্গের দূত আমাদের প্রথম মাতা-পিতার নিকট শয়তানের পতনের ইতিহাস ও তাদের ধ্বংস করার তার পরিকল্পনা কথা খুলে বললেন এবং যে স্বর্গীয় শাসন ব্যবস্থাকে মন্দের রাজপুত্র ধ্বংস করতে চাচ্ছে তার প্রকৃতিও তাদের নিকট তুলে ধরলেন। ঈশ্বরের আজ্ঞা তাঁর ইচ্ছারই বহিঃপ্রকাশ, তার চরিত্রের অনুলিপি, স্বর্গীয় প্রেম ও জ্ঞানের প্রকাশ। সৃষ্টির সুসমন্বয় স্রষ্টার আজ্ঞার সহিত সঙ্গতিপূর্ণ থাকার উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক কিছু নির্ধারিত নিয়মের আওতাধীন এবং এর অবহেলা করা চলে না। কিন্তু পৃথিবী নিবাসী সমস্ত প্রাণীদের মধ্যে শুধু মানুষই নৈতিক নিয়মের বাধ্য। মানুষকেই ঈশ্বর তাঁর আজ্ঞার ন্যায়পরায়ণতা ও উপকারীতা অনুধাবন করার ক্ষমতা দিয়েছেন, আর শুধু মাত্র মানুষের নিকট হতেই অনঢ় বাধ্যতা চাওয়া হচ্ছে। PPBeng 24.2
দূতগণের মত এদনের অধিবাসীদিগকেও শিক্ষানবিসি অবস্থায় স্থাপন করা হয়। তাঁর বাধ্য থেকে বেঁচে থাকতে পারে অথবা অবাধ্য হয়ে ধ্বংস হতে পারে। যিনি দূতগণের পাপ ক্ষমা করেন নি, তিনি তাদেরকেও ক্ষমা করবেন না; অবাধ্যতা তাদের উপর দুঃখ-কষ্ট ও ধ্বংস আনবে। PPBeng 24.3
শয়তানের ছলনার বিরুদ্ধে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য দূতগণ তাদেরকে সতর্ক করে দিলেন। যদি তারা তার প্রথম ভ্রান্তি সৃষ্টিকে প্রতিহত করতে পারেন তবে তারা নিরাপত্তা লাভ করবেন। কিন্তু যদি তারা একবার মাত্র প্রলোভনে পড়ে যান, তাদের চরিত্র এত কলুষিত হয়ে যাবে যে শয়তানকে প্রতিহত করার জন্য তাদের নিজেদের মধ্যে আর কোন ক্ষমতা বা কোন ইচ্ছা থাকবে না। PPBeng 25.1
জ্ঞান-দায়ক বৃক্ষ তাদের বাধ্যতা এবং ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসার পরীক্ষা স্বরূপ করা হয়েছিল। যদি এই বিষয়ে তারা তাঁর ইচ্ছার অমান্য করে, তবে তারা দোষী বিবেচিত হবে। শয়তান অনবরত প্রলোভন দেখিয়ে তাদের অনুসরণ করতে পারত না; সে শুধু মাত্র এই নিষিদ্ধ গাছের নিকটেই তাদের নিকটবর্তী হতে পারত । PPBeng 25.2
তাহার কাজ যেন অদৃশ্য থাকে তার জন্য শয়তান একটি ছদ্মবেশ ধারণ করল । সর্প ছিল গভীর জ্ঞানী এবং সুন্দরতম প্রাণীদের একটি। তার ঝল্মল্ করা অত্যুজ্জ্বল দেহ ছিল। নিষিদ্ধ গাছে বিশ্রামরত ঐ গাছের সুস্বাদু ফল আহারে-লিপ্ত সর্প ছিল মনোযোগ আকর্ষণকারী ও দৃষ্টিতে আনন্দকর একটি বস্তু । এই ভাবে শান্তির উদ্যানেই ধ্বংসকারী ওত পেতে ছিল । PPBeng 25.3
দূতগণ হবাকে স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়ার জন্য সতর্ক করে দিয়েছিলেন । একাকী না থেকে তার সাথে থাকলে তার বিপদের সম্ভাবনা কম ছিল। কিন্তু অজ্ঞাত ভাবে তিনি তার নিকট হতে দূরে সরে গেলেন। শীঘ্রই তাকে পাওয়া গেল দূতগণের সতর্কবাণী ভুলে গিয়ে, নিষিদ্ধ গাছের দিকে উৎসুক পূর্ণ ও প্রশংসাপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে । ফলগুলি ছিল মনোরম এবং তার মনে প্রশ্নের উদয় হল কেন ঈশ্বর এগুলি তাদের নিকট থেকে দূরে রাখলেন। PPBeng 25.4
এখনই ছিল প্রলোভনকারীর সুযোগ। “ঈশ্বর কি বাস্তবিক বলিয়াছেন, তোমরা এই উদ্যানের কোন বৃক্ষের ফল খাইও না?” হবা তার চিন্তার প্রতিধ্বনি শুনতে পেয়ে আশ্চর্যান্বিত হলেন। সর্প তার অবর্ণনীয় সৌন্দর্য্যের প্রশংসা করতে শুরু করল, এবং তার শব্দগুলিও বিরক্তিকর ছিল না। ঐ স্থান থেকে দ্রুত পলায়ন না করে তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলেন। তার কোন ধারণা ছিল না যে ঐ অবাক-করা সর্পই পতিত শত্রুর মাধ্যম । PPBeng 25.5
তিনি উত্তর দিলেন, “আমরা এই উদ্যানস্থ বৃক্ষ সকলের ফল খাইতে পারি; কেবল উদ্যানের মধ্যস্থানে যে বৃক্ষ আছে, তাহার ফলের বিষয় ঈশ্বর বলিয়াছেন, তোমরা তাহা ভোজন করিও না, স্পর্শও করিও না, করিলে মরিবে । তখন সর্প নারীকে কহিল, কোন ক্রমে মরিবে না, কেননা ঈশ্বর জানেন, যে দিন তোমরা তাহা খাইবে, সেই দিন তোমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে, তাহাতে তোমরা ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসজ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।” PPBeng 25.6
সে বলল গাছের ফল খেয়ে তারা আরো উন্নত জীবন লাভ করবেন। সে নিজে খেয়েছে এবং কথা বলার ক্ষমতা লাভ করেছে। সে মনের মধ্যে ধারণা দিল যে সদাপ্রভু ঈর্ষাপূর্ণ হয়ে ইহা তাদের নিকট থেকে দূরে রেখেছেন, কারণ যদি তারা তাঁর সমতুল্য হয়ে পড়ে। যেহেতু এটি জ্ঞান ও ক্ষমতা দান করে তাই তিনি তাদেরকে এর ফল খেতে অথবা স্পর্শ করতে নিষেধ করেছেন। স্বর্গীয় নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র তাদেরকে ভয় দেখানোর জন্য কি ভাবে ইহা সম্ভব যে ওরা মরে যাবে? তারা কি জীবন বৃক্ষের ফল খান নি? ঈশ্বর শুধু তাদেরকে একটি উন্নত অবস্থায় পৌছাতে ও আরো অধিক আনন্দ লাভ করতে বাধা দিচ্ছেন । PPBeng 26.1
আদমের সময় হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত শয়তানের কাজ ঐ ধরণেরই । সে মানুষকে ঈশ্বরের প্রেম ও তাঁর জ্ঞানকে সন্দেহ করতে প্ররোচিত করে । ঈশ্বর যা তাদের নিকট থেকে দূরে রেখেছেন, তার অনুসন্ধান করতে গিয়ে অনেকে পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় সত্যকে অবহেলা করে থাকেন। শয়তান মানুষকে অবাধ্যতায় প্রলোভিত করে, জ্ঞানের আশ্চর্য্য ক্ষেত্রে প্রবেশ করছেন বলে তাদের মধ্যে ধারণার সৃষ্টি করে। কিন্তু এটি একটি প্রতারণা। তারা অবমাননা ও মৃত্যুর পথে পা বাড়িয়ে থাকেন। PPBeng 26.2