ভাববাদিগণের এবং রাজগণের কাহিনী
১ম খণ্ড—সবলতা হতে দুর্বলতায়
১—শলোমন
দায়ূদ এবং শলোমনের রাজত্বকালে, ইস্রায়েল, জাতিগণের মধ্যে শক্তিশালী হয়েছিল এবং সত্য এবং ন্যায়ের পক্ষে একটি শক্তিশালী প্রভাব নিয়ন্ত্রণে রাখবার অনেক সুযোগ ছিল। যিহোবার নাম উন্নীত এবং সমাদৃত হয়েছিল, এবং যে উদ্দেশে ইস্রায়েল সন্তানগণ প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তার পূর্ণতার সম্ভাবনা দেখা দিল। প্রতিবন্ধকতা ভগ্ন হল, এবং পৌত্তলিক দেশ হতে সত্যের অন্বেষিরা অতৃপ্ত ফিরে যায়নি। অনেকে মন পরিবর্তন করল, এবং পৃথিবীতে ঈশ্বরের মন্ডলীর প্রসারিত হল এবং উন্নতি লাভ করল । PKBeng 17.1
শলোমন তার পিতার অন্তিম বছরগুলোতে রাজপদে অভিষিক্ত হলেন, যিনি তার অনুগ্রহ অধিকার লাভ করলেন । তার প্রাথমিক জীবন ছিল প্রতিজ্ঞায় উজ্জ্বল এবং সম্ভাবনা পূর্ণ এবং ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে ছিল তিনি শক্তি হতে শক্তি পর্যন্ত প্রতাপ হতে প্রতাপ পর্যন্ত অগ্রসর হবেন, সতত ঈশ্বরের চরিত্রের অনুরূপের নিকটবর্তী হবেন, এবং এরূপে তার লোকদেরকে অনুপ্রাণিত করবেন যেন তারা ঐশ্বরিক সত্যের ভান্ডাররূপে তাদের পবিত্র প্রত্যাশা পূর্ণ করতে পারে । PKBeng 17.2
দাদ জানতেন যে, ইস্রায়েলের জন্য ঈশ্বরের মহান উদ্দেশ্য কেবল মাত্র, শাসনকর্তারূপে সাধিত হতে পারে এবং লোকেরা, তাদের সামনে স্থাপিত মানদণ্ডের লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য বিরামহীন সতর্কতার সাথে অন্বেষণ করে। তিনি জানতেন যে, তার পুত্র শলোমনের পক্ষে, প্রত্যাশা পূর্ণ করতে হলে, যদ্বারা ঈশ্বর তাকে সম্মানিত করবেন। তরুণ শাসক কেবলমাত্র যোদ্ধা রাষ্ট্রের একজন দক্ষ শাসনকর্তা, এবং একজন সার্বভৌম রাজা, হবেন না। কিন্তু একজন বলবান, উত্তম ব্যক্তি, ধার্মিকতার একজন শিক্ষক, বিশ্বস্ততার একজন আদর্শ হবেন। অনেকের ক্লেশকর এবং অসাধারণ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে দায়ূদ তার জীবনকাল অতিক্রম করেছেন, যা তাকে আদর্শ গুণাবলীর মূল্য শিক্ষা দিয়েছিল এবং তাকে, শলোমনের কাছ তার মৃত্যুকালিন গুরুদায়িত্ব ঘোষণা করতে পরিচালিত করেছিল: “যিনি মনুষ্যদের ওপরে ধার্মিকতায় কর্তৃত্ব করেন, যিনি ঈশ্বর ভয়ে কর্তৃত্ব করেন, তিনি প্রাতঃকালে, সূর্যোদয় কালের মেঘরহিত প্রাতঃকালের দীপ্তির ন্যায় হবেন; যখন বৃষ্টির পরবর্তী তেজ প্রযুক্ত ভূতল হতে নবীন তৃণ বহির্গত হয়।” ২শমূয়েল ২৩:৩, 8 । PKBeng 17.3
ও! শলোমনের কি-ই-না এক অপূর্ব সুযোগ ছিল! তিনি যদি তাঁর পিতা কর্তৃক প্রদত্ত স্বর্গীয় অনুপ্রাণিত নির্দেশ অনুসরণ করতেন, তার কর্তৃত্বকাল হত, ধার্মিকতার একটি কর্তৃত্বকাল, যেমন গীতসংহিতা বাহাত্তর গীতে বর্ণিত রয়েছে: PKBeng 18.1
১. হে ঈশ্বর, তুমি রাজাকে আপনার শাসন, রাজপুত্রকে আপন ধর্ম্মশীলতা প্রদান কর । PKBeng 18.2
২. তিনি ধাৰ্ম্মিকতায় তোমার প্রজাগণের, ন্যায়ে তোমার দুঃখীদের বিচার করবেন। PKBeng 18.3
৩. পর্বতেরা ও উপবর্তেরা ধার্ম্মিকতা দ্বারা প্রজাদের জন্য শান্তিরূপ ফলে ফলবান হবে । PKBeng 18.4
৪. তিনি দুঃখী প্রজাদের বিচার করবেন, তিনি দরিদ্রের সন্ত নিদেরকে ত্রাণ করবেন, কিন্তু উপদ্রবীকে চূর্ণ করবেন। PKBeng 18.5
৫. যাবৎ সূর্য থাকবে, লোকে তোমাকে ভয় করবে, যাবৎ চন্দ্র থাকবে, পুরুষানুক্রমেই করবে। PKBeng 18.6
৬. ছিন্নত্বণ মাঠে বৃষ্টির ন্যায় তিনি নেমে আসবেন, ভূমি সিঞ্চকারী জলধারার ন্যায় আসবেন। PKBeng 18.7
৭. তাঁর সময়ে ধার্মিক লোক প্রফুল্ল হবে, চাদের স্থিতিকাল পর্যন্ত প্রচুর শান্তি হবে। PKBeng 18.8
৮. তিনি এক সমুদ্র অবধি অপর সমুদ্র পর্যন্ত, ঐ নদী অবধি পৃথিবীর প্রাপ্ত পর্যন্ত কর্তৃত্ব করবেন। PKBeng 18.9
৯. তাঁর সামনে মরুনিবাসীরা নত হবে, তাঁর শত্রুরা ধূলা চাটবে। PKBeng 18.10
১০. তর্শীশ ও দ্বীপগুলোর রাজারা নৈবেদ্য আনবেন; শিবা ও সবার রাজারা উপহার দেবেন । PKBeng 19.1
১১. হ্যাঁ, সমুদয় রাজা তাঁর কাছে প্রণিপাত করবেন; সমুদয় জাতি তাঁর দাস হবে। PKBeng 19.2
১২. কেননা তিনি আর্তনাদকারী দরিদ্রকে, এবং দুঃখী ও নিঃসহায়কে উদ্ধার করবেন। PKBeng 19.3
১৩. তিনি দীনহীন ও দরিদ্রেও দরিদ্রেও দরিদ্রদের প্রাণ নিস্তার করবেন । প্রতি দয়া প্রতি দয়া করবেন, তিনি PKBeng 19.4
১৪. তিনি চাতুরী ও দৌরাত্ম্য হতে তাদের প্রাণ মুক্ত করবেন, তাঁর দৃষ্টিতে তাদের রক্ত বহুমূল্য হবে; PKBeng 19.5
১৫. আর তারা জীবিত থাকবে; ও তাঁকে শিবার সুবর্ণ দান করা যাবে, লোকে তাঁর জন্য নিরন্তর প্রার্থনা করবে, সমস্ত দিন তাঁর ধন্যবাদ করবে। PKBeng 19.6
১৬. দেশমধ্যে পর্বত-শিখরে প্রচুর শস্য হবে, তার ফল লিবানোনের ন্যায় দোলায়মান হবে; এবং নগরবাসীরা ভূমির তৃণের ন্যায় প্রফুল্ল হবে । PKBeng 19.7
১৭. তাঁর নাম অনন্তকাল থাকবে; সূর্যের স্থিতি পর্যন্ত তাঁর নাম সতেজ থাকবে; মানুষেরা তাঁতে আশীর্বাদ পাবে; সমুদয় জাতি তাঁকে ধন্য ধন্য বলবে। PKBeng 19.8
১৮. ধন্য সদাপ্রভু ঈশ্বর, ইস্রায়েলের ঈশ্বর; কেবল তিনিই আশ্চর্য ক্রিয়া করেন । PKBeng 19.9
১৯. তাঁর গৌরবান্বিত নাম অনন্তকাল ধন্য; তাঁর গৌরবে সমস্ত পৃথিবী পরিপূর্ণ হোক । আমেন, আমেন । PKBeng 19.10
শলোমন তার যৌবনকালে দায়ূদের মনোনয়নকে তারই মনোনয়ন রূপে বরণ করেছিলেন, এবং অনেক বছর পর্যন্ত তিনি ন্যায়ের পথে চলেছিলেন, তার জীবন ঈশ্বরের আজ্ঞাপালন দ্বারা কড়াকড়িভাবে চিহ্নিত হয়েছিল । PKBeng 19.11
তার শাসনামলের প্রথম দিকে তিনি রাষ্ট্রের তার পরামর্শদাতাদের নিয়ে গিদিয়োনে গেলেন, সেখানে প্রান্তরে নির্মিত সমাগম তাবুটি তখনও ছিল এবং সেখানে তিনি তার মনোনীত পরামর্শদাতাদের যুক্ত হলেন, “সহস্রপতিদের, শতপতিদের, বিচারপতিদের ও সমস্ত ইস্রায়েলের যাবতীয় অধ্যক্ষের- কুলপতিদের” ঈশ্বরের উদ্দেশে যজ্ঞ উসর্গ করার এবং সদাপ্রভুর সেবায় সম্পূর্ণরূপ আত্মোসর্গ করার জন্য। ২ বংশাবলি ১:২। রাজকীয় কর্মদায়িত্বে জড়িত হয়ে এর বিশালতা উপলব্ধি করে তিনি জানতে পারলেন যে, যারা ভারি বোঝা বহন করছেন, তাদেরকে পরিচালনার জন্য জ্ঞানের উসের অন্বেষণ করতে হবে, যদি তারা গ্রহণযোগ্যরূপে তাদের দায়িত্ব পূর্ণ করতে চান। এটি তাদের পরামর্শ দাতাদেরকে, ঈশ্বরের সাথে তাদের পরিগ্রহণ নিশ্চিত করেন, তার সাথে আন্তরিকভাবে যুক্ত হতে উসাহিত করতে পরিচালিত করবে। PKBeng 19.12
পার্থিব প্রত্যেকটি উত্তম বিষয়ের ঊর্ধ্বে রাজা ঈশ্বর প্রদত্ত কর্মদায়িত্ব সম্পন্ন কল্পে জ্ঞান এবং বুদ্ধি লাভ করতে চাইলেন। তিনি মনে তীক্ষ্ণতা, প্রাণের উদারতা, আত্মার কোমলতা লাভের অপেক্ষা করলেন। ঐ রাতে সদাপ্রভু স্বপ্নে শলোমনের কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন, যাচঞা কর, আমি তোমাকে কি দেব।” উত্তরে যুবক এবং অনভিজ্ঞ শাসক তার অপারগতা এবং তার বাসনা ব্যক্ত করলেন।” “তোমার দাস, আমার পিতা দায়ূদ সত্যে ধার্মিকতায় ও তোমার উদ্দেশে হৃদয়ের সরলতায় তোমার সাক্ষাতে যেমন চলতেন, তুমি তাঁর প্রতি অনুরূপ মহা দয়া প্রদর্শন করেছ, আর তাঁর প্রতি এই মহা দয়া করেছ যে, তাঁর সিংহাসনে বসবার জন্য এক পুত্র তাকে দিয়েছ, যেমন অদ্য রয়েছে। PKBeng 20.1
“এখন হে সদাপ্রভু আমার ঈশ্বর তুমি আমার পিতা দায়ূদের পদে আপনার এই দাসকে রাজা করলে; কিন্তু আমি ক্ষুদ্র বালক মাত্র, বাইরে যেতে ও ভেতরে আসতে জানি না। আর তোমার দাস তোমার মনোনীত প্রজাদের মধ্যে রয়েছে তার এক মহাজাতি, বাহুল্য-প্রযুক্ত তাদের গণনা ও সংখ্যা করা যায় না । অতএব তোমাদের প্রজাদের বিচার করতে ও ভাল মন্দের বিশেষ জানতে তোমার এই দাসকে বুঝবার চিত্ত প্রদান কর, কারণ তোমার এমন বৃহ প্রজাবৃন্দের বিচার করা কার সাধ্য? PKBeng 20.2
“তখন প্রভুর দৃষ্টিতে এটি তুষ্টিকর হল যে, শলোমন এই বিষয় যাচঞা করলেন ।” PKBeng 20.3
“আর ঈশ্বর তাকে বললেন, তুমি এই বিষয় যাচঞা করেছ, আপনার জন্য দীর্ঘায়ু যাচঞা করনি, এবং আপন শত্রুদের প্রাণ যাচঞা করনি; কিন্তু বিচার শুনার জন্য আপনার জন্য বুদ্ধি চেয়েছ, এই কারণ দেখ, আমি তোমার বাক্যানুসারেই করলাম। দেখ, আমি তোমাকে এমন জ্ঞান ও বুঝবার চিত্ত দিলাম যে, তোমার পূর্বে তোমার তুল্য কেউ হয়নি, এবং পরেও তোমার তুল্য কেউ উৎপন্ন হবে না।” PKBeng 21.1
“আর তোমার বাবা দায়ূদ যেমন চলতেন তেমনি তুমি যদি আমার আজ্ঞা সকল ও আমার বিধিসকল পালন করতে আমার পথে চল, তবে আমি তোমার আয়ু দীর্ঘ করব।” ১রাজাবলি ৩:৫-১৪; ২বংশাবলি ১:৭-১২। PKBeng 21.2
ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করলেন যে, তিনি যেমন দায়ূদের সঙ্গে ছিলেন, তদ্রূপ তিনি শলোমনের সাথে থাকবেন। যদি রাজা সদাপ্রভুর সামনে ধার্মিকতায় চলেন, যদি তিনি ঈশ্বরের আদেশ অনুসারে চলেন তবে তার সিংহাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তার শাসনকাল ইস্রায়েলকে “জ্ঞানবান ও বুদ্ধিমান লোক’ চারদিকের জাতিদের দীপ্তি স্বরূপ করার মাধ্যম স্বরূপ হবে। দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৩ । PKBeng 21.3
শলোমন গিবিয়নের পুরাকালিন বেদীর সামনে ঈশ্বরের কাছে প্ৰাৰ্থনা করার সময়ে তার ব্যবহৃত ভাষা তার নম্রতা এবং ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য তাঁর দৃঢ় ইচ্ছা ব্যক্ত করে। তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, ঐশ্বরিক সাহায্য ব্যতিরেকে তার ওপরে ন্যাস্ত দায়িত্ব সম্পন্ন করার জন্য তিনি ছিলেন একজন শিশুর ন্যায় অসহায়। তিনি জানতেন যে, তার বোধ শক্তির অভাব ছিল, এবং তার মধ্যে একটি বড় অভাব বোধ ছিল যে কারণে তিনি জ্ঞানের জন্য ঈশ্বরের অন্বেষণ করলেন। তার অন্তরে এমন একটি জ্ঞানের জন্য স্বার্থসিদ্ধির উচ্চ বাসনা ছিল না যা তাকে অন্য লোকদের ওপরে উন্নত করবেন। তার ওপরে হস্তান্তরিত কর্মদায়িত্বসমূহ সম্পন্ন করাই ছিল তার বাসনা এবং তিনি এমন একটি দান মনোনয়ন করলেন যা হবে ঈশ্বরের গৌরব আনয়নের জন্য তার কাজের মাধ্যম স্বরূপ। শলোমন এত ধনী ছিলেন না বা এত জ্ঞানী ছিলেন না বা প্রকৃত পক্ষে এত মহান্ ছিলেন না যখন তিনি স্বীকার করেছিলেন, “আমি একজন শিশুমনা: আমি জানি না কিভাবে বাইরে যেতে এবং ভেতরে আসতে হয়।” PKBeng 21.4
অদ্য যারা বিভিন্ন দায়িত্ব পূর্ণ পদ অলঙ্কৃত করে রয়েছেন তাদেরকে শলোমনের প্রার্থনা হতে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। একজন ব্যক্তি যত উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হবেন, যত বড় দায়িত্ব তিনি পালন করবেন, তত অধিক প্রভাব তিনি বিস্তার করবেন এবং তত অধিক তাকে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করতে হবে। তাকে সতত স্মরণে রাখতে হবে যে, কাজের আহ্বান অর্থ তার সহকার্যকারীদের সামনে সবদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে চলতে হবে। ঈশ্বরের সামনে তাকে একজন শিক্ষার্থীর মনোভাব নিয়ে দন্ডায়মান থাকতে হবে। পদ চরিত্রের পবিত্রতা প্রদান করে না। ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং তাঁর আজ্ঞা পালনের মাধ্যমেই এক জন ব্যক্তি প্রকৃত মহৎ ব্যক্তিরূপে গণ্য হয়ে থাকেন । PKBeng 22.1
আমরা যে ঈশ্বরের সেবা করি, তিনি মানুষের মুখাপেক্ষা করেন না । তিনি শলোমনকে জ্ঞান-দৃষ্টির আত্মা প্রদান করেছিলেন, তিনি আজ তাঁর সন্ত নিদেরকে একই আশীর্বাদ প্রদান করতে ইচ্ছুক। “যদি তোমাদের কাহারও জ্ঞানের অভাব হয়,” তাঁর বাক্য ঘোষণা করে, “তবে সে ঈশ্বরের কাছে যাচঞা করুক; তিনি সকলকে অকাতরে দিয়ে থাকেন, তিরস্কার করেন না, তাকে দেয়া হবে।” যাকোব ১:৫। যখন একজন বোঝা বহনকারী, ঐশ্বর্য, ক্ষমতা এর সুখ্যাতি লাভ অপেক্ষা জ্ঞান লাভের জন্য অধিক আকাঙ্খিত হয়, তখন সে নিরুৎসাহিত হবে না। ঐরূপ ব্যক্তি মহান শিক্ষকের কাছ হতে কেবলমাত্র তার করণীয় কাজ সম্পর্কেই শিক্ষা লাভ করবে না, কিন্তু স্বর্গীয় অনুমোদন পূরণ করার একটি উপায়ও শিক্ষা লাভ করবে। PKBeng 22.2
যাবৎ তিনি আত্ম-নিবেদিত থাকবেন, বোধ শক্তি দ্বারা নির্ণয় করার শক্তি এবং দক্ষতা, একটি উচ্চপদের নিদারুণ আকাঙ্খা ব্যক্ত করবে না, সে শাসন বা নিয়ন্ত্রণ করতেও চাইবে না। প্রয়োজন বোধে মনুষ্য অবশ্যই দায়িত্ব পালন করবে; কিন্তু কর্তৃত্ব লাভের প্রবল চেষ্টার বদলে, একজন প্রকৃত নতুন একটি বোধশক্তি সম্পন্ন আত্মা লাভের জন্য প্রার্থনা করবেন, যেন উত্তম এবং মন্দের মধ্যে ব্যবধান দেখতে পারেন । PKBeng 22.3
নেতৃবৃন্দরূপে নিয়োজিত মনুষ্যদের চলার পথ খুব সহজ নয়। কিন্তু প্রতিটি সংকট এবং দুঃসময়ের জন্য তাদেরকে প্রার্থনায় আহ্বান জানান হয়েছে। তারা যেন কখনও সমস্ত জ্ঞানের শ্রেষ্ঠ উৎসের সাথে পরামর্শ করতে ব্যর্থ না হন। প্রভু-কার্যকারী কর্তৃক শক্তিমন্ত এবং আলোকপ্রাপ্ত হয়ে তদ্বারা অপবিত্র প্রভাবের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দন্ডায়মান থাকতে এবং ন্যায় এবং অন্যায়, ভাল ও মন্দের মধ্যে ব্যবধান দেখতে সমর্থ হবে। ঈশ্বর, তাদেরকে তার অনুমোদন দান করবে, এবং তাঁর কার্যে ভুল নীতিমালা ঢুকিয়ে দেবার বিরুদ্ধে একান্তভাবে চেষ্টা করবে। PKBeng 22.4
শলোমন যে জ্ঞান লাভের ইচ্ছা করেছিলেন, তার সাথে ছিল ধন, সম্মান এবং দীর্ঘ জীবন, যা ঈশ্বর তাকে দিয়েছিলেন। একটি সুতীক্ষ্ণ মন, একটি উদার হৃদয়, এবং একটি কোমল আত্মা লাভের আবেদন গ্রাহ্য করা হয়েছিল। “আর ঈশ্বর শলোমনকে বিপুল জ্ঞান ও সূক্ষ্ম বুদ্ধি এবং সমুদ্রতীরস্থ বালুকার ন্যায় বিত্তের বিস্তীর্ণতা দিলেন। তাতে পূর্বদেশের সমস্ত লোকের জ্ঞান ও মিস্ত্রীয়দের যাবতীয় জ্ঞান হতে শলোমনের অধিক জ্ঞান হল ! ফলে, তিনি সকল লোক হতে জ্ঞানবান, (ছিলেন); ...এবং চারদকের সমস্ত জাতির মধ্যে তাঁর সুখ্যাতি হল ।” ১রাজাবলি ৪:২৯-৩১। PKBeng 23.1
“সমস্ত ইস্রায়েল, রাজা হতে ভীত হল; কেননা তারা দেখতে পেল, বিচার করণার্থে তাঁর অন্তরে ঈশ্বর দত্ত জ্ঞান আছে।” ১ রাজাবলি ৩:২৮ । আর তারা দায়ূদের প্রতি যেমন, তদ্রূপ তাদের অন্তঃকরণ শলোমনের প্রতি ফিরল, এবং সর্ববিষয়ে তারা তার আজ্ঞাবহ হল । PKBeng 23.2
“আর শলোমন আপন রাজ্যে আপনাকে বলবান করলেন, এবং তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভু তার সহবর্তী থেকে অতিশয় মহান করলেন।” ২বংশাবলি ১:১। PKBeng 23.3
বহু বছর পর্যন্ত শলোমনের জীবন, ঈশ্বরের প্রতি আত্মনিবেদন, ন্যায় পরায়ণতা এবং অটল নীতি, এবং ঈশ্বরের আজ্ঞামালার প্রতি কঠোর আজ্ঞাবহতা দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিলেন। তিনি প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মপ্রচেষ্টায় পরিচালনা করেছিলেন এবং রাজ্য সংক্রান্ত ব্যাপারে জ্ঞানপূর্বক নিয়ন্ত্রণ করেছেন। তার ঐশ্বর্য এবং জ্ঞান, সুউচ্চ, বিশাল অট্টালিকা এবং জনসাধরণের কার্য, যা তিনি তার শাসনামলের প্রথম বছরগুলোতে গড়েছিলেন, যে শক্তি, দয়া, ন্যায় বিচার, এবং উদাহরণ যা তিনি বাক্যে এবং কার্যে প্রকাশ করেছিলেন, তার প্রজাগণের কাছ হতে রাজভক্তি এবং বহু দেশের শাসনকর্তাদের কাছ হতে শ্রদ্ধা এবং স্বীকৃতি লাভ করেছিলেন । PKBeng 23.4
শলোমনের শাসনকালের প্রথম বছরগুলো ব্যাপী যিহোবার নাম মহা সমাদর লাভ করেছিল । রাজা কর্তৃক প্রকাশিত জ্ঞান এবং ধার্মিকতা সর্বজাতির রাষ্ট্রদূত, গভর্ণর ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ ব্যক্তির কাছে ঈশ্বরের গুণাবলী সাক্ষ্য বহন করেছে। এক সময়ে ইস্রায়েল জাতি ছিল জগতের জ্যোতি, যা যিহোবার মহত্ত্ব প্রদর্শন করেছিল । অনুপম জ্ঞান, অবিশ্বসনীয় ঐশ্বর্য, সুদূর-প্রসারী ক্ষমতা এবং খ্যাতি যা তারই ছিল, শলোমনের প্রথম শাসনামলের প্রকৃত গৌরব প্রতিষ্ঠিত হয়নি; কিন্তু স্বর্গের দানসমূহের এখন জ্ঞান পূর্ণ, সুবিধেমত ব্যবহার ইস্রায়েলের ঈশ্বরের নামের প্রতি আনীত সমাদরের মাধ্যমে হয়েছিল । PKBeng 24.1
বছর সমূহ অতিবাহিত হল এবং শলোমনের সুখ্যাতি বৃদ্ধি পেল তিনি তার মানসিক এবং আত্মিক শক্তি যোগ করে এবং অবিরত অন্যদের সাথে তার প্রাপ্ত আশীর্বাদ সহভাগ করে ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের চেষ্টা করলেন। তিনি ব্যতিত অন্য কেউ উত্তমরূপে বুঝতে পারেননি যে, এটি ছিল যিহোবার অনুগ্রহের মাধ্যমে যে তিনি ক্ষমতা বুদ্ধি ও জ্ঞানের অধিকারী হয়েছিলেন আর এই বরসমূহ প্রদান করা হয়েছিল যেন তিনি জগৎকে রাজাদের রাজার সম্পর্কে একটি জ্ঞান দিতে পারেন । PKBeng 24.2
শলোমন প্রাকৃতিক ইতিহাসের প্রতি ত্রুটি বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু শিক্ষার যে কোন একটি শাখা নিয়ে গবেষণা করেননি সমুদয় সৃষ্ট বস্তু সজীব এবং নির্জীব ভেড়া সম্পর্কে একটি মনোযোগ অধ্যয়নের মাধ্যমে তিনি স্রষ্টার বিষয় একটি পরিস্কার ধারণা লাভ করেছিলেন। প্রকৃতি খনিজ পদার্থ এবং জীব জগত, প্রতিটি বৃক্ষ এবং লতাগুল্ম এবং পুষ্পের মধ্যে তিনি ঈশ্বরের জ্ঞানের একটি প্রকাশপ্রাপ্তি লক্ষ্য করেছিলেন; এবং তিনি যেন আরও অধিক শিক্ষা শিক্ষা লাভ করতে চাইলেন, ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞান এবং তাঁর জন্য তার প্রেম অবিরাম বৃদ্ধি পেল । PKBeng 24.3
শলোমনের ঈশ্বর অনুপ্রাণিত জ্ঞান প্রশংসাগীত এবং অনেক হিতোপদেশ বাণীর মধ্যে প্রকাশিত হল। “তিনি তিন সহস্র প্রবাদ বাক্য বলতেন, ও তার এক সহস্র পাঁচটি গীত ছিল। আর তিনি লির্বানোনের এরস বৃক্ষ হতে প্রাচীরের গাত্রে উৎপন্ন এসোব তৃণ পর্যন্ত গাছ সকলের বর্ণনা করতেন, এবং পশু। পক্ষী উরোগামী জন্তু ও মাছের বর্ণনা করতেন।” ১ রাজাবলি ৪:৩২, ৩৩ । PKBeng 24.4
শলোমনের হিতোপদেশে পবিত্র জীবন যাপন এবং মহান প্রচেষ্টার রূপরেখা প্রদান করা হয়েছে, নীতিমালা যা স্বর্গজাত এবং যা ধার্মিকতার, দিকে পরিচালিত করে, নীতিমালা যা জীবনের প্রত্যেকটি শাসন এবং নিয়ন্ত্রণ করবে। এটি ছিল এসকল নীতিমালার ব্যাপক প্রচার এবং যিনি সকল গৌরব ও সমাদর লাভের যোগ্যরূপে ঈশ্বরের স্বীকৃতি, যা শলোমনের প্রাথমিক শাসনকালকে একটি নৈতিক এবং বৈষয়িক উন্নয়নের সময় করে দিয়েছিল । PKBeng 25.1
“ধন্য সেই ব্যক্তি যে প্রজ্ঞা পায়, সেই ব্যক্তি যে বুদ্ধি লাভ করে; কেননা রৌপ্যের বাণিজ্য অপেক্ষাও তার বাণিজ্য উত্তম, সুবর্ণ অপেক্ষাও প্রজ্ঞা- লাভ উত্তম। তা মুক্তা হতেও বহুমূল্য; তোমার অভীষ্ট কোন বস্তু তার নয়। তার দক্ষিণ হাতে দীর্ঘ পরমায়ু, তার বাম হাতে ধন ও সম্মান থাকে । তার পথ সকল মনোরঞ্জনের পথ, তার সমস্ত মার্গ শান্তিময়। যারা তাকে ধরে রাখে, তাদের কাছে তা জীবন বৃক্ষ; যে কেউ তা গ্রহণ করে, সে ধন্য।” হিতোপদেশ ৩: ১৩-১৮ । PKBeng 25.2
“প্রজ্ঞাই প্রধান বিষয়, তুমি প্রজ্ঞা উপার্জন কর; সমস্ত উপার্জন দিয়ে সুবিবেচনা উপার্জন কর।” হিতোপদেশ ৪:৭। “সদাপ্রভুর ভয় প্রজ্ঞার আরম্ভ।” গীতসংহিতা ১১১:১০। সদাপ্রভুর ভয় দুষ্টতার প্রতি ঘৃণা; অহঙ্কার দাম্ভিকতা ও কুপথ এবং কুটিল মুখও আমি ঘৃণা করি ।” হিতোপদেশ ৮:১৩। PKBeng 25.3
হায়! পরবর্তী বছরগুলোতে শলোমন এই জ্ঞানের এই চমৎকার বাক্যগুলো উপেক্ষা করলেন। যিনি বলেছিলেন, “জ্ঞানবানের ওষ্ঠাধর জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়” (হিতোপদেশ ১৫:৭) এবং যিনি স্বয়ং পৃথিবীর শাসনকর্তাদের শিক্ষা দিয়েছিলেন যেন তারা একজন পার্থিব শাসনকর্তার পরিবর্তে রাজাধিরাজের প্রতি গৌরব প্রদান করেন, তিনি কখনও একটি “কুটিল মুখ” __অহঙ্কার এবং নিজের বলে দাবি করেননি যা ঈশ্বরের প্রাপ্য! PKBeng 25.4