সুষম শিক্ষা

34/67

১৩ - মানসিক ও আধ্যাত্মিক কৃষ্টি

“জ্ঞান দ্বারা কুঠরী সকল পরিপূর্ণ হয়,
বহুমূল্য ও মনোরম্য সমস্ত দ্রব্যে।”

দেহ-মন-আত্মার জন্য ঈশ্বরের ব্যবস্থা শক্তি যােগায়, কিন্তু এ জন্য কঠোর প্রচেষ্টার প্রয়ােজন। অনুশীলনের মাধ্যমেই ক্রমবৃদ্ধি লাভ হয় এবং ব্যবস্থার সঙ্গে সমতান রক্ষা করে, ঈশ্বর মানসিক এবং আধ্যাত্মিক ক্রমবৃদ্ধির জন্য তাঁর বাক্যে আগে থেকেই কার্য সাধনের উপায় প্রস্তুত করে রেখেছেন। EdBen 111.1

মানুষের বােঝার জন্য বাইবেলে সব সত্য নিহিত রয়েছে, যা দ্বারা তারা ইহ-জীবন এবং পর-জীবনের জন্য উপযুক্ততা অর্জন করতে পারে । আর এই নীতিমালা প্রত্যেকেই বুঝতে পারে। যে কেউ বাইবেলের শিক্ষার প্রতি কৃতজ্ঞ থেকে বাইবেল থেকে একটি অংশ পাঠ করবে, সে এ হতে কোন না কোন কার্যকর বিচারবুদ্ধি অর্জন করতে পারবে। সত্যের মহান পদ্ধতি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় নি, যার ওপর দিয়ে তাড়াহুড়াে করে এবং অসর্তকভাবে পাঠক চোখ বুলিয়ে যাবে। এর গভীরে অনেক ধনরাশি অবস্থান করছে, যা কেবল নিবিষ্ট মনােযােগ সহকারে অন্বেষণ এবং অবিরাম চেষ্টার মাধ্যমে পাওয়া যায়। সে সত্য আমাদের মহৎ বস্তুটি দান করে তা অবশ্যই “এখানে একটু এবং সেখানে একটু” এভাবে খুঁজে নিতে হবে এবং সংগ্রহ করতে হবে। যিশাইয় ২৮:১০। EdBen 111.2

এভাবে যখন তা খুঁজে বের করা হবে এবং একত্র করা হবে, তখন তা একে অন্যের প্রতি সম্পূর্ণ উপযুক্ত অবস্থায় পাওয়া যাবে। প্রতিটি সুসমাচার একটি অন্যটির সম্পূরক অংশ, প্রত্যেকটি ভবিষ্যদ্বাণী একটি অন্যটির ব্যাখ্যা, প্রতিটি সত্য- অন্য কোন সত্যের একটি বৃদ্ধিসাধক। যিহুদী ধর্মমতের কৌশলময় ব্যাখ্যা সুসমাচার দ্বারা পরিষ্কাভাবে দেখান হয়েছে। ঈশ্বরের বাক্যে প্রতিটি নীতির স্থান রয়েছে, প্রত্যেকটি সত্যের ধারণ রয়েছে। আর সম্পূর্ণ কাঠামােটির পরিকল্পনা, নকশা তার সৃষ্টিকর্তার সাক্ষ্য বহন করে। এভাবে একটি কাঠামাে কেবল যিনি অসীম তিনিই ধারণ করতে এবং গঠন করতে পারেন। EdBen 111.3

বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা শাখার অন্বেষণ এবং তাদের সম্পর্ক আলােচনায় মানব মনের সর্বোচ্চ মানসিক শক্তিকে কর্মরত থাকতে হবে। মানসিক শক্তির পূর্ণ বিকাশ ব্যতিরেকে কেউই এমন অধ্যয়নে মনােনিবেশ করতে পারে না। EdBen 112.1

আর কেবল সত্যের অন্বেষণ এবং এর সমষ্টির মধ্যে বাইবেল পাঠের মানসিক মূল্য অন্তর্ভুক্ত নয়, উপস্থাপিত মূল বিষয়বস্তুও আঁকড়ে ধরতে হবে। যে মন কেবল গতানুগতিক বা বৈশিষ্ট্যহীন বিষয়সমূহ অধিকার করে থাকে তা ছােট এবং দুর্বল হয়ে পড়ে। যদি কখনাে মহান এবং সুদূর প্রসারিত সত্য বুঝতে মনকে কাজে ব্যবহার না করা হয়, তা কিছু সময় পরে ক্রমবৃদ্ধির শক্তি হারিয়ে ফেলে। বংশােচিত মর্যাদা হারানাের বিরুদ্ধে একটি রক্ষাকবচ এবং ক্রমবর্ধমান শক্তি হিসেবে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়নের জুড়ি আর কিছুই হতে পারে না। বুদ্ধিগত প্রশিক্ষণের মাধ্যম হিসেবে অন্যান্য বই এবং অন্যান্য সমস্ত পুস্তকের সমষ্টি অপেক্ষা বাইবেল বেশি ফলপ্রসূ এবং বিষয় বস্তু, এর বাচনভঙ্গির মর্যাদাপূর্ণ সরলতা, এর কল্পনাপ্রসূত শব্দালঙ্কারের সৌন্দর্য চিন্তারাশিকে প্রাণবন্ত করে এবং উচ্চে তুলে ধরে যা অন্য কিছুতে করতে পারে না। অন্য কোন অধ্যয়ন এমন। মানসিক শক্তি দিতে পারে না, যেমন উদ্ঘাটিত বিস্ময়কর সত্য আঁকড়ে ধরার প্রচেষ্টা করতে পারে। যে মন এমন অসীমের চিন্তারাশির সংস্পর্শে আনা হয়, তা প্রসারিত এবং শক্তিশালী হয় EdBen 112.2

আর এমন কি আধ্যাত্মিক প্রকৃতি বাড়ানাের জন্য বাইবেলের ক্ষমতা আরও মহৎ। ঈশ্বরের সঙ্গে সহভাগ জন্য মানুষ ঐ ধরণের সহভাগিতায় তার বাস্তব জীবনে শ্রীবৃদ্ধি খুঁজে পায়। ঈশ্বরে তার সর্বোচ্চ আনন্দ খুঁজতে গিয়ে সে কিছুই পায় না যা হৃদয়ের আকুল কামনা শান্ত করতে পারে, আত্মার ক্ষুধা ও পিপাসা মিটাতে পারে । যিনি সরল এবং শিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক, আত্মায় ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করেন, এর সত্য বােঝার চেষ্টা করেন, তিনি তার আদিকর্তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ হবেন; এবং তার নিজ মনােনয়ন ব্যতিরেকে, তার উন্নতির সম্ভাবনা অসীম। EdBen 112.3

এর লেখাদির বৈশিষ্ট্য এবং অধ্যয়নের বিষয়গুলাে প্রসার ক্রমবিন্যাস অনুসারে বাইবেলের মধ্যে এমন কিছু রয়েছে যা প্রত্যেকের মনে আগ্রহ সৃষ্টি করে এবং প্রত্যেকের অন্তর স্পর্শ করে। এর পৃষ্ঠাগুলােতে। রয়েছে অতি পুরাতন ইতিহাস, নির্ভুল জীবন কথা, রাষ্ট্র পরিচালনার শাসননীতি, পরিবারের আইন-কানুন, এমন নীতিমালা, মানব জ্ঞান যার সমকক্ষ হতে পারে না। এতে গভীর দর্শনশাস্ত্রের বিষয় রয়েছে, অতি মধুরতর এবং উচ্চতর কবিতা রয়েছে, যা খুবই আবেগপূর্ণ এবং মর্মস্পর্শি। যে কোন মানব লেখনীর সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে যে বাইবেলের লেখনীর মূল্য অপরিমেয় ভাবে উচ্চতর, এবং যখন তাদের প্রধান মূল চিন্তার সঙ্গে তাদের সম্পর্কের দিকে দৃষ্টিপাত করা যায়, তখন দেখা যায় যে, তাদের বিশাল। প্রসারিত লক্ষ্য রয়েছে এবং অসীম মূল্য রয়েছে। এই চিন্তার আলােকে দেখা যায় যে, প্রতিটি বিষয়ের একটি নতুন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অতীব সহজে বর্ণিত সত্যের মধ্যে এমন নীতিমালা জড়িত রয়েছে যা আকাশ সমান উঁচু এবং যা অনন্তকালকে বেষ্টন করে। EdBen 113.1

বাইবেলের মূল চিন্তা, যে চিন্তা প্রতিটি স্তবকে রয়েছে- তা হল পরিত্রাণ কল্পনা, মানুষকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে ফিরিয়ে আনা। এদনে। উচ্চারিত সর্ব প্রথম আশার ইঙ্গিত থেকে আরম্ভ করে, প্রকাশিত বাক্যের শেষ গৌরবময় প্রতিজ্ঞা পর্যন্ত তাঁহারা তাঁহার মুখ দর্শন করিবে, এবং তাহার নাম তাহাদের ললাটে থাকিবে” (প্রকাশিত বাক্য ২২:৪), বাইবেলের প্রতিটি পাতা এবং প্রতিটি অংশের ধুয়া, এই বিস্ময়কর মূল চিন্তাধারাকে উন্মােচন করা, মানুষকে তুলে ধরা ঈশ্বরের শক্তি, “তিনি আমাদের প্রভু যীশু দ্বারা আমাদিগকে জয় প্রদান করেন।” ১ করিন্থীয় ১৫:৫৭। EdBen 113.2

যে ব্যক্তি এই চিন্তাকে আঁকড়ে ধরে, তার সামনে পড়ার জন্য একটি উন্মুক্ত সীমাহীন সুযোগ রয়েছে। তার কাছে সেই চাবি আছে যা তার জন্য ঈশ্বরের বাক্যের সমস্ত ধনাগার খুলে দেয়। EdBen 113.3

পরিত্রাণ বিজ্ঞানই সমস্ত বিজ্ঞানের বিজ্ঞান; এটা এমন বিজ্ঞান যা সব স্বর্গদূত এবং নিস্পাপ বিশ্বের সব মানুষের আলােচনার বিষয়; বিজ্ঞান যা আমাদের প্রভু এবং ত্রাণকর্তার মনােযােগ আকর্ষণ করে; বিজ্ঞান যা অসীম ঈশ্বরের মনের অঙ্কুরিত উদ্দেশ্যের মধ্যে প্রবেশ করে, “যাহা অনাদি কাল অবধি অকথিত ছিল” (রােমীয় ১৬:২৫), বিজ্ঞান যা যুগ যুগ ব্যাপী ঈশ্বরের মুক্তি প্রাপ্তগণ অধ্যয়ন করবেন। এটা সর্বোচ্চ পর্যায়ের আলােচনা, যার মধ্যে মানব জাতিরও নিয়ােজিত থাকা সম্ভব। যা মনকে প্রাণবন্ত করবে এবং আত্মাকে উন্নত করবে যা অন্য কোন অধ্যয়নের দ্বারা সম্ভব নয়। EdBen 113.4

“জ্ঞানের উৎকৃষ্টতা এই যে, প্রজ্ঞা আপন অধিকারীর জীবন রক্ষা। করে।” যীশু বলেন, “আমি তােমাদিগকে যে সকল কথা বলিয়াছি, তাহা। আত্ম ও জীবন।” “আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তােমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে এবং তুমি যাহাকে পাঠাইয়াছ, তাহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে জানিতে পায়।” উপদেশক ৭:১২; যােহন ৬:৬৩; ১৭:৩। EdBen 114.1

যে সৃজনশীল শক্তি দ্বারা পৃথিবী সৃষ্ট হইয়াছিল তা ঈশ্বরের বাক্যে নিহিত আছে। এই বাক্য শক্তি প্রদান করে; এবং জীবনের জন্ম দেয়। প্রতিটি আদেশই একটি প্রতিজ্ঞা; ইচ্ছা দ্বারা গৃহীত, আত্মার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, যা সঙ্গে করে অসীম ঈশ্বরের জীবন বয়ে আনে। ঐটি প্রকৃতি রূপান্তরিত করে এবং ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে পুনঃসৃষ্টি করে। EdBen 114.2

এভাবে প্রদত্ত জীবন একইভাবে টিকে থাকার সমর্থন দান করে । “ঈশ্বরের মুখ হইতে নির্গত যে প্রত্যেক বাক্য হয়” মানুষ “তাহাতেই বাঁচিবে” মথি ৪:৪। EdBen 114.3

মন, আত্মা যা থেকে খাদ্য গ্রহণ করে, তা দিয়েই গঠিত; এবং তা আমাদের উপরে ভরসা করে যেন স্থির করতে পারে যে ওটি কিসে পুষ্ট হবে। প্রত্যেকেরই আলােচ্য বিষয় মনােনয়নের শক্তি রয়েছে যা চিন্তাধারাকে পরিব্যাপ্ত করবে এবং চরিত্রকে গঠন করবে। প্রতিটি মানুষ যার পবিত্র শাস্ত্রের কাছে আসার সুযােগ রয়েছে, তার প্রতি ঈশ্বরের বাণী এই, “আমি তাহার জন্য আপন ব্যবস্থার দশ সহস্র কথা লিখি ।” “তুমি আমাকে আহ্বান কর, আর আমি তােমাকে উত্তর দিব, এবং এমন মহৎ ও দুরূহ নানা বিষয় তােমাকে জানাইব, যাহা তুমি জান না।” হেশেয় ৮:১২; যিরমিয় ৩৩:৩। EdBen 114.4

প্রতিটি মানব সত্তার জীবনের ভাগ্য যেখানেই পরিকল্পিত থাকুক না কেন, ঈশ্বরের বাক্য হাতে নিয়ে, সে যেমন সঙ্গ মনােনয়ন করবে, তা সে লাভ করবে। এর পৃষ্ঠাগুলাে সম্পর্কে সে সম্ভ্রান্ত এবং সর্বোত্তম মানব গােষ্ঠীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ ভাবে কথােপকথন করতে পারে, এবং একই সময়ে সে অনন্তজীবি ঈশ্বরের রব শুনতে পারে। যেমন সে মূল বিষয়বস্তু আলােচনা এবং ধ্যান করবে, যা “স্বর্গ দূতেরা হেঁট হইয়া তাহা দেখিবার আকাঙ্ক্ষা করিতেছেন” (১ পিতর ১:১২), সে তাদের সাহচর্য লাভ করতে পারবে। সে স্বর্গীয় শিক্ষকের অনুসরণ করতে পারে এবং পাহাড়-পর্বতে, খােলা মাঠে, এবং সাগরের দেয়া শিক্ষামলা শুনতে পারে। তিনি এই পৃথিবীতে স্বর্গীয় পরিবেশে বাস করতে পারেন, পৃথিবীর দুঃখার্ত এবং পরীক্ষিতদের আশার চিন্তাধারা এবং পবিত্রতার বাসনার অংশ দিতে পারেন, স্বয়ং অদৃশ্য ব্যক্তির খুব কাছে এসে তাঁর সঙ্গে সহভাগিত্ব অর্জন করলেন, প্রাচীন কালে তার ন্যায় বৃদ্ধ যিনি ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতেন, চিরন্তন ভুবনের দ্বার প্রান্তে, আরও কাছে আসলেন, যাবৎ না দ্বার খুলবে এবং তথায় প্রবেশ করবেন। তিনি নিজেকে বিদেশি মনে করবেন না। যে স্বর তাকে সম্বােধন জানাবে তা পবিত্রগণের স্বর, যারা অদৃশ্য, যারা পৃথিবীতে তার শিষ্য ছিলেন সেই স্বর যা তিনি এই স্থানে শিখেছেন যেন তা চিহ্নিত করতে এবং প্রেম করতে পারেন। যিনি ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে স্বর্গের সাথে। সহভাগিতায় বেঁচেছিলেন, তিনি ঘরেই স্বর্গীয় সাহচর্য খুঁজে পাবেন। EdBen 114.5