সুষম শিক্ষা

51/67

২৩ - চিত্তবিনােদন

“সকল বিষয়েরই সময় আছে।”

চিত্তবিনােদন এবং আমােদ-প্রমােদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। চিত্তবিনােদন, আসলে একে আমরা পুনরায় কিছু সৃষ্টি করাও বলতে পারি, যা আমাদের শক্তিশালী করে এবং নির্মাণ করে। আমাদের সাধারণ পেশা, কাজ-কর্ম, উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা ইত্যাদি থেকে এটা আমাদের একটু বিরতি দেয়, মন ও শরীরকে সজীব করে, এবং এভাবে আমাদের নতুন শক্তি ও উদ্দীপনা যুগিয়ে দিয়ে পুনরায় আমাদের জীবিকা অর্জনের কাছে ফিরে যেতে সমর্থ জোগায়। আমােদ প্রমােদ, অন্য কথায়, এগুলাে থেকে আমরা আনন্দ পাই, সুখানুভব করি, ইন্দ্রিয়ের বা মনের খাবার জোগায় আর মাঝে মধ্যে এর একটু বাড়াবাড়িও হয়ে থাকে; এটা আমাদের আবশ্যকীয় কাজের শক্তি কেড়ে নেয় এবং এভাবে এটা জীবনের প্রকৃত সাফল্য অর্জনের পথে বাধা স্বরূপ হয়ে থাকে। EdBen 193.1

আমাদের সমুদয় দেহটিই কাজের জন্য আগে থেকে নকশাকৃত; এবং দৈহিক শক্তি যদি সক্রিয় ব্যায়ামের মাধ্যমে সুস্থ ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে না রাখি তবে মানসিক শক্তিগুলাে সর্বোচচ ক্ষমতা অনুসারে দীর্ঘকাল ব্যবহৃত হতে পারে না। বিদ্যালয় কক্ষের দৈহিক নিস্ক্রিয়তা, একই সঙ্গে অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর অবস্থা ছােট ছােট শিক্ষার্থীদের পক্ষে কষ্টদায়ক হয়ে পড়ে, বিশেষ করে যারা দুর্বল তাদের পক্ষে। প্রায়ই দেখা যায় শ্রেণীকক্ষে পর্যাপ্ত বাতাস নেই । ছাত্র-ছাত্রীদের বসার আসনগুলাে খুবই সাধারণ, খুব কষ্ট করে বসতে হয়, ফলে ফুসফুস এবং হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক কাজ বিঘ্নিত হয়। এখানে ছােট ছােট ছেলে-মেয়েদের দিনে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা থাকতে হয়, শ্বাস-প্রশ্বাসের বায়ু অপরিষ্কার এবং ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং রােগজীবাণুর কারণে দূষিত হয়ে যেতে পারে। শরীরের খুব সূক্ষ্ম অঙ্গের মধ্যে মগজ, এবং যা থেকে পুরাে গঠন প্রণালীর স্নায়ুবিক শক্তি নির্গত হয়, তা ভীষণ ভাবে আহত হয়। অত্যাধিক কাজ এবং এই অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে, তা দুর্বল হয়ে পড়ে, এবং প্রায়ই স্থায়ীভাবে মন্দ ফলাফল বয়ে আনে। EdBen 193.2

ছােটদের দীর্ঘ সময় যাবৎ বন্ধ দরজার মধ্যে আটকা থাকা উচিত নয়, অথবা যে পর্যন্ত না দৈহিক উন্নতির জন্য একটি উত্তম ভিত্তি স্থাপন করা হয় সে পর্যন্ত তাদের পড়াশুনার চাপের মধ্যে রাখা উচিত নয়। একটি শিশুর জীবনের প্রথম আট অথবা দশ বৎসর পর্যন্ত ক্ষেত বা বাগানই হবে সবচেয়ে ভালাে বিদ্যালয় কক্ষ, যা সবচেয়ে ভালাে শিক্ষক, প্রকৃতি হবে সবচেয়ে ভালাে পাঠ্য বই। এমন কি শিশুর যখন বিদ্যালয়ে যাবার যথেষ্ট বয়স হবে তখন তার বই-পুস্তকের জ্ঞানের চেয়ে তার স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে। বেড়ে ওঠার সহায়ক পরিস্থিতি দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকবে। EdBen 194.1

বাতাস এবং ব্যয়ামের অভাবে শিশু কিন্তু একাই বিপদের মধ্যে থাকে না। দেখা গেছে, বড়দের এবং ছােটদের বিদ্যালয়ে সমভাবেই স্বাস্থ্যের পক্ষে অপরিহার্য বিষয়গুলাের প্রতি অবহেলা করা হয়। অনেক ছেলে-মেয়ে দিনের পর দিন একটি বন্ধ ঘরে তার বইয়ের উপর কুঁজো হয়ে বসে থাকে, তার বুক চেপে ধরে, ফলে সে পূর্ণ, গভীর নিঃশ্বাস নিতে পারে EdBen 194.2

, তার রক্ত চলাচল মন্থর হয়ে যায়, তার পা দুটো ঠাণ্ডা এবং মাথা গরম হয়ে উঠে। শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না, মাংসপেশী দুর্বল হয়ে পড়ে এবং গােটা শরীরই রােগগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ ধরণের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রায়ই সারা জীবন পঙ্গু অথবা কর্মক্ষম হয়ে পড়ে থাকে। তারা বিদ্যালয় থেকে বাড়তি দেহ এবং মানসিক শক্তি নিয়ে ঘরে ফিরতে পারত, যদি নাকি তারা উপযুক্ত পরিস্থিতি ও পরিবেশের মধ্যে পড়াশুনা করত সূর্যালােকে এবং মুক্ত বায়ুতে নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারত। EdBen 194.3

যে ছাত্র-ছাত্রী সীমিত সময় এবং অর্থ নিয়ে একটু শিক্ষালাভের জন্য সংগ্রাম করছে, তার এটি উপলব্ধি করা উচিত যে, শারীরিক ব্যায়ামে যে সময় ব্যয় করা হয়েছে, তা বৃথা যায় নি। যে অবিরত তার বইয়ের উপর একাগ্রভাবে পড়ে থাকে, কিছু কাল পরে সে দেখবে যে, মন তার সজীবতা হারিয়ে ফেলেছে। যারা তাদের দৈহিক গঠনের প্রতি সুনজর দেয়, তারা, যারা তাদের সমগ্র সময়টি পড়ায় ব্যয় করছে তাদের চেয়ে বেশিগুণে সাহিত্যের দিকে উন্নতি লাভ করতে পেরেছে। EdBen 194.4

কেবল একটি বিষয়ের উপরে একচেটিয়াভাবে চিন্তা করলে, মন। প্রায়ই ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। কিন্তু প্রতিটি কর্মশক্তি নিরাপদভাবে ব্যবহৃত হতে পারে, যদি নাকি মানসিক এবং শারীরিক শক্তিগুলাে সমভাবে আরওপ করা হয়, এবং চিন্তার বিষয়গুলাে যদি বিভিন্ন ধরণের হয় EdBen 195.1

দৈহিক অকর্মন্যতা কেবল মানসিক নয়, বরং নৈতিক শক্তিও দুর্বল করে ফেলে। মস্তিষ্কের (মগজ) সূক্ষ্ম তন্তুগুলাে গােটা দৈহিক গঠন তন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত এবং এগুলাের মাধ্যমে স্বর্গও মানুষের সাথে যােগাযােগ রক্ষা করে, এবং অন্তরাত্মাকে প্রভাবান্বিত করে—যা কিছু স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে বৈদ্যুতিক শক্তি সঞ্চালনকে বাধাগ্রস্ত করে, এভাবে জীবনী শক্তিকে দুর্বল করে মানসিক সংবেদনশীলতা কমিয়ে দেয়, ফলে নৈতিক স্বভাব সক্রিয় করায় আরও অসুবিধা সৃষ্টি হয়। EdBen 195.2

পুনরায়, মাত্রাতিরিক্ত পড়াশুনা মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে তােলে, রােগাক্রান্ত হওয়ার ভাবপ্রবণতা সৃষ্টি করে যা আত্ম-নিয়ন্ত্রণ শক্তি কমিয়ে ফেলে, এবং প্রায়ই প্রেরণাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এভাবে অপবিত্রতার জন্য দরজা খুলে দেয়। দৈহিক শক্তি অপব্যবহার পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া ভ্রষ্টতার স্রোতের জন্য বিশেষ ভাবে দায়ী । “অহঙ্কার, আহারের প্রাচুর্য, আলস্য” এ সব এই যুগে মানব উন্নতির মারাত্মক শত্ৰু, যেমন ঐ সব সদোম ঘমােরার ধ্বংসের জন্য দায়ি। EdBen 195.3

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এই সব বিষয় বুঝতে হবে, এবং এ সব বিষয়ে তাদের শিক্ষা দিতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা দিন যে, সঠিক জীবন যাপন নির্ভর করে সঠিক চিন্তা-ভাবনার ওপর, এবং চিন্তাকে বিশুদ্ধকরণার্থে শারীরিক পরিশ্রমের আবশ্যক। EdBen 195.4

শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উপযুক্ত চিত্তবিনােদন প্রশ্নে প্রায়ই মুশকিলে পড়ে যান। শরীর চর্চার ব্যয়াম অনেক বিদ্যালয়ে বেশ স্থান পেয়েছে, কিন্তু সতর্কতামূলক পরিদর্শনের অভাবে প্রায়ই তা সীমা ছাড়িয়ে যায়। শরীর চর্চায় অনেক যুবক-যুবতি, তাদের প্রচেষ্টার এবং শক্তির বীরত্বপূর্ণ কাজের কারণে সারা জীবনের জন্য আহত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। EdBen 195.5

ব্যায়ামাগারে শরীর চর্চা, যতই সুন্দরভাবে পরিচালিত হােক না কেন, তা খােলা বাতাসে চিত্তবিনােদনের স্থান অধিকার করতে পারে না; এবং এ জন্য আমাদের বিদ্যালয়গুলাের উচিত আরও সুন্দর সুযােগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা। ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাণ শক্তি সম্পন্ন ব্যয়াম করতে হবে। আলস্য এবং লক্ষ্যহীনতার চেয়ে কয়েকটি মন্দ বিষয় ভীষণ আতঙ্কজনক। তবুও যারা যুবক-যুবতিদের মঙ্গলের জন্য চিন্তা করেন তাদের কাছে অধিকাংশ মল্লযুদ্ধ সংক্রান্ত খেলাধুলার ঝোঁক একটি উদ্বেগপূর্ণ চিন্তার বিষয়। শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ মনােকষ্টে ভােগেন যখন তারা চিন্তা করেন যে, এই সব খেলাধুলা তাদের বিদ্যালয় এবং পরজীবনের সাফল্যের ক্ষেত্রে কি প্রভাব রাখে? যে সব খেলাধুলায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়, তা তাদের মনকে পড়াশুনা হতে অন্যদিকে নিয়ে যায়। তারা যৌবনকালকে জীবনের ব্যবহারিক, আন্তরিকতাপূর্ণ কাজের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করে না। তাদের প্রভাব দ্রতা, উদারতা অথবা প্রকৃত মনুষ্যত্বের দিকে পরিচালিত করে না । EdBen 195.6

কয়েকটি খুবই জনপ্রিয় আমােদ-প্রমােদ, ফুটবলখেলা, বক্সিং বিদ্যালয়ের পশুবৎ আচরণের ধারক হয়েছে। তারা পুরাকালীন রােমের খেলাধূলার বৈশিষ্ট্য গড়ে তুলছে। কর্তৃত্বের প্রতি অনুরাগ ও আসক্তি, পশুবৎ শক্তি, জীবনের প্রতি বেপরােয়া ঘৃণা এবং অবহেলা তাদের নৈতিকতাকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে যুবক-যুবতিদের ওপরে প্রভাব ফেলছে, আর তা সতিই আতঙ্কজনক। EdBen 196.1

অন্যান্য মল্লযুদ্ধের ক্রিড়াকৌতুকগুলাে, যদিও পশুবৎ নয়, তথাপি কম আপত্তিকর নয়, কেননা সে সবের মধ্যেও বাড়াবাড়ির কিছু ব্যাপার রয়েছে। ঐ সব ভােগ বিলাস এবং চাঞ্চল্য বাড়িয়ে তােলে, এভাবে তা স্বাভাবিক কাজ-কর্মের প্রতি একটি বিতৃষ্ণা জাগিয়ে তােলে, ব্যবহারিক কাজ-কর্ম এবং দায়িত্ব পালনের অনিহা ভাব নিয়ে আসে। ঐ সব জীবনের সংযত বাস্তবতা এবং এর মানসিক প্রশান্তি উপভােগের একটি রুচি নষ্ট করে দেয়। এভাবে তুচ্ছ অসৎ আমােদ-প্রমােদ আইন অমান্য করা এবং স্বেচ্ছাচারিতার দরজা খুলে দেয়, যার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। EdBen 196.2

সাধারণত আয়ােজিত বিলাসিতা এবং আমােদ প্রমােদও, মনের এবং চরিত্রের দিক হতে বাস্তব ক্রম বৃদ্ধির পথে বাধা স্বরূপ । ছেলেমানুষিপূর্ণ মেলামেশা, বাজে অর্থ ব্যয়ের অভ্যাস, বিলাসীতার অন্বেষণ এবং প্রায়শ অসৎ আমােদ-প্রমােদ গঠিত হয়, যা গােটা জীবনকে কেবল মন্দতার জন্যই গঠিত করে। এভাবে আমােদ-প্রমােদের পরিবর্তে বাবা-মা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ স্বাস্থ্যকর, উন্নতি সাধক, এবং জীবন-দায়ী অনেক কিছুর আয়ােজন করতে পারেন। EdBen 196.3

আমাদের মঙ্গলের জন্য সকল বিষয়ের যেমন, তেমনি এতেও অনুপ্রেরণার পথ দেখিয়ে দিয়েছে। ছােট বেলায়, ঈশ্বরের পরিচালনাধীন লােকদের জীবন ছিল সহজ ও সরল। তারা প্রকৃতির একেবারে প্রাণকেন্দ্রের কাছাকাছি বাস করতেন। তাদের ছেলে-মেয়েরা বাবা-মায়ের। কাজে সাহায্য করত এবং তারা প্রকৃতির ধনাগারের সৌন্দর্য ও রহস্য থেকে শিখত। শস্যক্ষেত এবং বনাণীর নীরবতার মাঝে তারা বংশ পরম্পরার মাধ্যমে হস্তান্তরিত শক্তিশালী পবিত্র সত্য ধ্যান করত। এ রকম প্রশিক্ষণ দক্ষ মানুষ উৎপাদন করেছিল। EdBen 197.1

এ যুগে জীবন কৃত্রিম, এবং মানুষের আয়ু হ্রাস পেয়েছে। আমরা সেই আগের যুগের সরল সাদাসিদে জীবনে পূর্ণরূপে ফিরে যেতে পারি না, তবুও আমরা ঐ সব থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারি যা আমাদের চিত্ত বিনােদনের কালকে, দেহ, মন এবং আত্মা গঠনের প্রকৃত সময় করে দিতে পারে। EdBen 197.2

ঘর এবং বিদ্যালয়ের চার পাশের খেলাধুলা বা চিত্তবিনােদনের ক্ষেত্রে অনেক কিছু করার আছে। ঘর অথবা বিদ্যালয় খুঁজে নেবার জন্য মনােনয়নে এ সব বিষয় বিবেচনা করতে হবে। টাকা-পয়সা অথবা সমাজের দাবি এবং রীতি-নীতি অপেক্ষা, যাদের সঙ্গে মানসিক এবং শারীরিক উন্নতির জন্য সময় দিচেছন, তা মহত্ত্বর। তারা তাদের ছেলেমেয়েদের প্রকৃতির শিক্ষার সুযােগ লাভের খােজ করবেন এবং তার মাঝে চিত্ত বিনােদনের ব্যবস্থা করবেন। যদি প্রতিটি বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটু চাষাবাদ, জমিতে এবং বনানীতে প্রবেশের সুযােগ করে দিতে পারত, তবে এটি শিক্ষা দেয়ার কাজের একটি বড় রকমের সাহায্য স্বরূপ হত । EdBen 197.3

ছাত্র-ছাত্রীদের চিত্ত বিনােদনের ক্ষেত্রে, শিক্ষক-শিক্ষিকার ব্যক্তিগত সহযােগিতার মাধ্যমে সর্বোত্তম ফল লাভ হবে। একজন প্রকৃত শিক্ষক/শিক্ষিকা, তার নিজের বন্ধুত্বের দান রূপে, তার ছাত্র-ছাত্রীদের কতিপয় মূল্যবান উপহার দিতে পারেন। নর-নারীদের পক্ষে এটি সত্য, এবং যুবক-যুবতি এবং ছোট ছােট ছেলে-মেয়েদের পক্ষে এটি আরও কত বেশি সত্য যে, আমাদের তাদের সংস্পর্শে এসে সহানুভূতির মাধ্যমে তাদের বুঝতে হবে, এবং আরও ফলপ্রসূভাবে তাদের সুবিধাদি দেবার জন্য শৃঙ্খলার বিষয়ও উপলব্ধি করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরালাে করতে হলে, কয়েকটি মাধ্যম রয়েছে, তাদের মধ্যে বিদ্যালয় কক্ষের বাইরে মেলামেশাকে আরও মধুর করতে হবে। কোন কোন বিদ্যালয়ে দেখা যায়, শিক্ষক তাদের চিত্তবিনােদনের সময়ে সর্বদা তার ছাত্রদের সঙ্গেই থাকেন। তিনি তাদের সঙ্গে খেলাধুলায় । তাদের সব ধরণের উপস্থাপনায় যােগ দেন, এবং মনে হয় তিনি তাদের সঙ্গে এক হয়ে গেছেন। আমাদের বিদ্যালয়গুলাে যদি আরও বেশি মাত্রায় এমন ঘনিষ্ঠতা লাভ করতে পারত তবে কতই না সুফলদায়ক হত । শিক্ষকদের ত্যাগ স্বীকার মহৎ, কিন্তু তিনি এক মহা পুরস্কার লাভ করবেন। EdBen 197.4

যে চিত্ত বিনােদন তাদের নিজেদের ক্ষেত্রে কোন উপকারে আসে তবে তা অন্যান্য ছেলে-মেয়েদের ক্ষেত্রেও একই উপকার আনবে। স্বভাবত উৎসাহি এবং প্রভাবী যুবক-যুবতিরা কোন পরামর্শের প্রতি দ্রুত সাড়া দেয়। গাছ লাগাবার ক্ষেত্রে শিক্ষক বিদ্যালয় প্রাঙ্গন এবং কক্ষের সৌন্দর্য বাড়ানাের জন্য ছাত্রদের আগ্রহ বাড়িয়ে তােলার চেষ্টা করবেন । এতে দুটো আশীর্বাদ বয়ে আনবে। ছাত্রগণ যখন সৌন্দর্য বাড়ানাের চেষ্টা করবে তখন তারা চাবে না যে ঐ সৌন্দর্য নষ্ট হয় বা মুছে যায়। একটি পরিমার্জিত রুচি, শৃঙ্খলানুরাগ এবং যত্নবান হবার একটি ইচ্ছা জাগিয়ে তুলবে; এবং সহভাগিতা এবং সহযােগিতা পেলে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তা জীবনব্যাপী একটি আশীর্বাদ বলে প্রমাণিত হবে। EdBen 198.1

বাগানে অথবা ক্ষেতে বা বনানীর মধ্যে প্রমােদ ভ্রমণে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের স্মরণ করবে যারা এসব মনােরম স্থান সমূহ হতে বঞ্চিত ছিল, এবং । তাদেরকে এই সুন্দর বিষয়গুলাে সম্পর্কে বলবে। EdBen 198.2

সতর্ক শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রী, ছাত্র-ছাত্রীদের উপকারাৰ্থক কাজে পরিচালনার অনেক সুযােগ পাবেন। ছােট ছােট ছেলে-মেয়েরা বিশেষ করে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে অশেষ প্রত্যাশা রাখে এবং শ্রদ্ধা করে। ঘরে সাহায্য করার জন্য, প্রাত্যহিক কাজে বিশ্বস্ততা প্রমাণ করতে, অসুস্থ ও দরিদ্রদের পরিচর্যা কাজের জন্য শিক্ষক যে উপদেশ দিবেন, তা তারা কোন মতে নিষ্ফল করার চেষ্টা করবে না। আর এভাবে তা পুনরায় একটি দ্বিগুণ আশীর্বাদ বয়ে আনবে। সদয় মনােভাব নিয়ে পরামর্শ দিলে, পরামর্শ দাতার প্রতি সুফল ফিরে আসবে। বাবা-মায়ের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং সহযােগিতা শিক্ষকের বােঝা হাল্কা করবে, এবং তার পথকে সমুজ্জ্বল করবে EdBen 198.3

চিত্ত বিনােদন এবং শরীর চর্চার প্রতি মনােযােগ ভবিষ্যতে নিঃসন্দেহে, বিদ্যালয়ের নিয়মিত কর্মসূচীতে বাধা সৃষ্টি করবে; কিন্তু এই বাধা বাস্তবিক পক্ষে কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে না। মন ও শরীরকে সজীব করণে, একটি নিঃস্বার্থ মনােভাব, এবং শিক্ষক ছাত্রদের বাধ্যবাধকতাপূর্ণ সম্মিলন সাধারণ আগ্রহ বন্ধুত্বপূর্ণ মেলামেশা, সময় ব্যয়, এবং প্রচেষ্টা শতগুণ পুরস্কার দান করবে। এই নিরবসর শক্তির জন্য একটি আশীর্বাদযুক্ত নির্গম পথের ব্যবস্থা হবে যা প্রায়ই যুবক-যুবতিদের পক্ষে বিপদের উৎস স্বরূপ। মন্দতার বিরুদ্ধে একটি চাবিকাঠি হিসেবে ভালাের দিকে মনের প্রস্তুতি, অসংখ্য শৃঙ্খলা এবং আইনের চেয়ে মূল্যবান। EdBen 199.1