স্বাস্থ্য এবং সুখ
৩ - প্রকৃতির সাথে এবং ঈশ্বরের সাথে
সবুজ উপত্যকায়, বনে জঙ্গলে, পর্বত পার্শ্বে যীশু
তাঁর স্বর্গীয় বাবার সাথে যোগাযোগ করতেন।
পৃথিবীতে ত্রাণকর্তার জীবন ছিল প্রকৃতি ও ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ ও আলাপনের জীবন। এই যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি আমাদের কাছে শক্তিসম্পন্ন জীবনের রহস্য প্রকাশ করেছেন। MHBen 34.1
যীশু একজন সৎ ও বিরামহীন কর্মী ছিলেন। মানব সন্তানদের মাঝে তাঁর মত দায়িত্বে পূর্ণ আর কোন মানুষ ছিল না। পৃথিবীর দুঃখব্যথা ও পাপের ভারী বোঝা তাঁর অপেক্ষা অন্য আর কেউ কখনও বহন করেন নি। কখনও তাঁর মত অন্য কোন ব্যক্তি আত্ম-বিসর্জনের আগ্রহ নিয়ে মানুষের কল্যাণে এ ধরনের পরিশ্রম করেননি। তবুও তাঁর জীবন ছিল স্বাস্থ্য সম্মত। জাগতিক ও আত্মিকভাবে তিনি বলির “নির্দোষ ও নিখুঁত” মেষ শাবকের প্রতীক ছিলেন (১ পিতর ১:১৯)। তিনি ছিলেন যেমন আত্মায় ও দেহে ঈশ্বরের নিয়মের বাধ্যতা প্রযুক্ত সকল মানব কুলের জন্য ঈশ্বরের পরিকল্পনার এক নমুনা। MHBen 34.2
যেমন লোকেরা যীশুর দিকে তাকাত, তারা এমন একটা মুখমণ্ডল দেখতে পেত, যেখানে সচেতন শক্তির সাথে ঐশী সহানুভূতি সংমিশ্রিত ছিল। তাঁকে মনে হত যেন তিনি আধ্যাত্মিক জীবনের পরিবেশ দ্বারা বেষ্টিত। যেহেতু তাঁর আদব-কায়দা ছিল ভদ্র ও অকৃত্রিম, তাই তাঁর অন্তনির্হিত অনুভূতি শক্তিদ্বারা তিনি লোকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতেন, যদিও তাঁর অনুভূতি শক্তি সম্পূর্ণ গুপ্ত থাকত না। তাঁর সেবা কাজের সময়ে ফরীশী ও ভন্ড লোকেরা তাঁর জীবনের ভুল ধরার জন্য অবিরত তাকে অনুসরণ করে বেড়াত। গুপ্তচরেরা তাঁর পায়ে পায়ে চলত। তাঁর কথাবার্তার প্রতি নজর রাখত, তাঁর বিরুদ্ধে দোষ দেয়ার সুযোগ খুঁজত। রাজ্যের সবচেয়ে তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন ও সর্বোচ শিক্ষিত লোকেরা বিতর্ক ও দ্বন্দ্বের মাধ্যমে তাঁকে পরাভূত করতে সুযোগ খোজ করত। কিন্তু এধরনের সুযোগ সুবিধা তারা কখনও পায়নি। তারা মাঠ থেকেই গালীলের বিনয়ী গুরুর দ্বারা পরাভূত ও লজ্জিত হয়ে বিদায় নিয়েছে। ত্রাণকর্তার শিক্ষায় এমন সতেজতা ও প্রাণশক্তি ছিল যা আগে কখনও লোকেরা দেখেনি ও জানেনি। এমন কি তাঁর শত্রুরাও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে, ” এ ব্যক্তি যেরূপ কথা বলেন, কোন মানুষে কখনও এরূপ কথা কহে নাই।” (যোহন ৭:৪৬)। MHBen 34.3
দারিদ্রতায় অতিবাহিত যীশুর বাল্যকাল অভ্যাসের ফলে কলুষিত যুগেও নিষ্কলুষ ছিলেন। কাঠ-মিস্ত্রীর বেঞ্চিতে কাজ করে, সংসার জীবনের বোঝা বয়ে নিয়ে, বাধ্যতা ও পরিশ্রমের কথা শিক্ষা করে, তিনি প্রকৃতির বৈচিত্রময় দৃশ্যের মাঝে অবসর বিনোদন খুঁজে পেয়েছেন। যেমন তিনি প্রকৃতির রহস্য বুঝার চেষ্টায় জ্ঞান অর্জন করেছেন। তিনি ঈশ্বরের পবিত্র বাক্য অধ্যয়ন করেছেন; আর তিনি সর্বাপেক্ষা সুখময় সময় অতিবাহিত করেছেন যখন তাঁর কর্মব্যস্ততাসেরে তিনি প্রান্তরে, নির্জন উপত্যকায় ধ্যান করতে পারতেন, পাহাড় পর্বতের পাশে অথবা বনে গাছের নীচে বসেও ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ করতে পারতেন। ভোরের আগে কোন নির্জন স্থানে তাঁকে দেখা যেত ধ্যান বা পবিত্র বাক্য পড়ছেন অথবা প্রার্থনায় সময় কাটাচ্ছেন। প্রশংসা গানের সুরে তিনি ভোরের আলোকে স্বাগত জানাতেন। ধন্যবাদের গান দ্বারা তিনি তাঁর কাজের সময়টা আনন্দে অতিবাহিত করতেন, এবং শ্রান্ত ও নিরুৎসাহিতদের কাছে স্বর্গীয় সুখ-আনন্দ আনয়ন করতেন। MHBen 35.1
তাঁর সেবাকাজের সময়ে যীশু বাইরে বাইরে অধিক সময় অতিবাহিত করতেন । এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় তিনি পায়ে হেঁটে যেতেন এবং অধিকাংশই সময়েই তিনি খোলা আকাশের নীচে উপদেশ দিতেন। তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দেয়ার সময়ে তিনি প্রায়ই নগরের হৈ-চৈ থেকে বের হয়ে বাক্যের সরলতা, বিশ্বাস এবং যে আত্ম-ত্যাগ তিনি শিক্ষা দিতে চাইতেন তার সঙ্গে মিল রেখে নির্জন ক্ষেত্রে নিয়ে যেতেন। গালীল সমুদ্রের অদূরে পর্বত পাশে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে তিনি তাঁর বারোজন শিষ্যকে প্রেরিত পদে নিযুক্ত করেছিলেন এবং পর্বতের ওপরে উপদেশটি প্রচার করেছিলেন। MHBen 35.2
যীশু তাঁর চারদিকে নীল আকাশের নীচে ঘাসে ঢাকা পাহাড়ের পাশে বা হ্রদের পাশে ক্সসকতে লোকদেরকে সংগ্রহ করতে পছন্দ করতেন। সেখানে কৃত্রিমতা বর্জন করে তিনি তাঁর নিজের সৃষ্ট পরিবেশে তাদের চিন্তাধারা প্রকৃতির দিকে ফিরাতে পারতেন। প্রকৃতির উৎপাদন ও বৃদ্ধির মাঝে তিনি তাঁর রাজ্যের মূলমন্ত্র প্রকাশ করেছিলেন। যেমন লোকেরা ঈশ্বরের পাহাড়ের দিকে নজর দিত এবং তাঁর হাতের অলৌকিক কাজ দেখত, তারা ঈশ্বরের সত্য বিষয়ক মূল্যবান কথা শিক্ষা করতে পারত। আগামী দিনগুলোতে প্রাকৃতিক বস্তুগুলো ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা স্বর্গীয় শিক্ষকের দেয়া কথাগুলো আবার বলবে। মনের উন্নতি লাভ করবে এবং অনন্ত বিশ্রাম পাবে। MHBen 36.1
তাঁর শিষ্যরা যারা তাঁর কাজে তাঁর সাথে যুক্ত হয়েছিলেন, যীশু প্রায়ই তাদেরকে কিছু সময়ের জন্য ছুটি দিতেন, যেন তাঁরা তাদের বাড়ী যেতে ও বিশ্রাম নিতে পারেন, কিন্তু তাঁর কাজ থেকে তাঁকে দূরে বিশ্রামের জন্য তাদের নিয়ে যাবার প্রচেষ্টা বিফল হত। সারা দিনভর তিনি তাঁর কাছে আগত বিশাল জনতার সেবা কাজ করতেন, এবং সন্ধ্যার পরে কিম্বা ভোরের আগে তিনি পাহাড়ের নির্জনস্থানে যেতেন তাঁর স্বর্গীয় পিতার সাথে আলাপ করতে। MHBen 36.2
প্রায়ই তিনি অবিরাম পরিশ্রম ও ধর্মগুরুদের ভূল শিক্ষার ও শত্রুতার দ্বন্দ্ব প্রযুক্ত এমন চরমভাবে ক্লান্ত হতেন যে তাঁর প্রাণই হয়তো শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু ব্যস্ততম দিনের শেষে প্রার্থনা শেষ করে যখন তিনি ফিরে আসতেন তখন তারা তাঁর মুখমণ্ডলে শান্তি দেখতে পেতেন, যেন মনে হত তার সমস্ত দেহে সতেজতা, জীবন ও শক্তি পরিব্যাপ্ত হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তিনি ঈশ্বরের সাথে একাকী অতিবাহিত করতেন। তিনি প্রতি ভোরে আসতেন মানুষের জন্য স্বর্গীয় আলো নিয়ে আসার জন্য। MHBen 36.3