স্বাস্থ্য এবং সুখ

90/269

১৪ - ধনীদের প্রতি পরিচর্যা

“যেন তারা অনিশ্চিত ধনে
নির্ভর না করে।”

রোমীয় সেনাপতি কর্ণীলিয় ছিলেন একজন ধনী ব্যক্তি এবং উ‪চ্চবংশ জাত। তিনি দায়িত্বপূর্ণ এবং সম্মানিত পদে কাজ করতেন। জন্মসূত্রে একজন পে․ত্তলিক, যিহূদীদের সঙ্গে ওঠা-বসার মাধ্যমে, প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষা লাভ করে, ঈশ্বর সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছিলেন, এবং তাঁর আরাধনা করতেন এবং তিনি দরিদ্রের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের মাধ্যমে তার সরল বিশ্বাস প্রদর্শন করতেন। “তিনি লোকদিগকে বিস্তর দান করিতেন, এবং সর্বদা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করিতেন।”(প্রেরিত ১০:২)।‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬ MHBen 193.1

কর্ণীলিয় খ্রীষ্টের জীবন এবং মৃত্যুতে প্রকাশিত সুসমাচার জ্ঞাত ছিলেন না। তাই ঈশ্বর সরাসরি স্বর্গ থেকে তার কাছে বার্তা পাঠালেন এবং আরো একটা বার্তা দ্বারা পিতরকে তার কাছে পাঠানো হল যেন তিনি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাকে শিক্ষা দেন। কর্ণীলিয়াস যিহূদী মÐলীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি, এবং যিহূদীরা তাকে একজন পৌত্তলিক এবং অশুচি লোক হিসেবে দেখতো; কিন্তু ঈশ্বর তার হৃদয়ের নিষ্কপটতা পাঠ করতেন, এবং তাঁর সিংহাসন থেকে বার্তাবাহকদের পাঠালেন যেন পৃথিবীকে তাঁর দাসের সাথে যোগাযোগ রাখেন এবং এই রোমীয় প্রধান কর্মকর্তাকে সুসমাচার শিক্ষা দেন। MHBen 193.2

সুতরাং অদ্য ঈশ্বর উ‪চ্চ এবং নিচু শ্রেণীর লোকদের মধ্যে আত্মাগণের অন্বেষণ করছেন। কর্ণীলিয়ের ন্যায় অনেকেই রয়েছেন, যাদের তিনি আশা করেন যেন তারাও তাঁর মণ্ডলীতে যোগদান করে। প্রভুর লোকদের সঙ্গে তাদের সহৃদয়তা। যে বন্ধন তাদেরকে জগতের সঙ্গে বন্ধন করে, তা তাদের দৃঢ়ভাবে ধরে রাখে। তাদের পদমর্যাদাসহ এই নীচ শ্রেণীর লোকেদের সংস্পর্শে আসার জন্য তাদের নৈতিক সাহসের প্রয়োজন। এই আত্মাদের নিমিত্ত বিশেষ শ্রম দিতে হবে, যারা তাদের কর্মদায়িত্ব এবং মেলামেশা হেতু তারা মহা বিপদের মধ্যে রয়েছে। ‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬ MHBen 195.1

অবহেলিত দরিদ্রদের প্রতি আমাদের কর্তব্য সম্পর্কে অনেক কিছু বলা হয়েছে; তবে অবহেলিত ধনীদের প্রতি কি কিছু মনোযোগ প্রদান করা উচিত হবে না? অনেকে এই শ্রেণীর লোকদের অকেজো বা অকর্মণ্য বিবেচনা করে দেখেন, এবং তারা ঐ লোকদের চোখ খুলে দেবার ক্ষেত্রে খুব অল্পই কাজ করে, যারা, পার্থিব গৌরবের আড়ম্বর দ্বারা অন্ধীভূত এবং হতবুদ্ধি হয়েছে। তারা তাদের হিসেবের খাতা থেকে অনন্তকাল হারিয়েছে। সহস্র সহস্র ধনী ব্যক্তিগণ বিপদ এবং অমঙ্গলের পূর্ব সংকেত না পেয়েই তাদের কবরে চলে গেছে। কিন্তু একটা বৈষম্য হল এই যে, ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে আত্মাগণের নিমিত্ত ভারগ্রস্ত। “যে ব্যক্তি রৌপ্য ভালবাসে, সে রৌপ্যে তৃপ্ত হয় না; আর যে ব্যক্তি ধনরাশি ভালবাসে, সে ধনা-গমে তৃপ্ত হয় না।”উপদেশক ৫:১০। যে ব্যক্তি উত্তম সুবর্ণকে বলে, “তুমি মম আশ্রয়,” তবে সে “ঊর্ধ্ববাসী ঈশ্বরকে অস্বীকার করছে।”ইয়োব ৩১:২৪, ২৮। “তাহাদের মধ্যে কেহই কোন মতে ভ্রাতাকে মুক্ত করিতে পারে না, কিম্বা তাহার প্রায়শ্চিত্তের জন্য ঈশ্বরকে কিছু দিতে পারে না; কেননা তাহাদের প্রাণের মুক্তি দুর্মূল্য, এবং চিরকালেও অসাধ্য।”(গীত ৪৯:৭,৮)। MHBen 195.2

ঐশ্বর্য এবং জাগতিক সম্মান আত্মাকে তৃপ্ত করতে পারে না। ধনী লোকদের মধ্যে অনেকে ঐশ্বরিক নিশ্চয়তার আশা করছে, এবং আত্মিক প্রত্যাশা লাভের কথা ভাবছে। অনেকে এমন কিছুর আশা করছে যা তাদের লক্ষ্যহীন জীবনের একঘেয়েমির পরিসমাপ্তি ঘটাবে। অনেকে তাদের সরকারী পদে কর্ম জীবনে এমন কিছুর অভাব সম্পর্কে চিন্তাকরে যা তাদের নেই। তাদের মধ্যে কেউ কেউ গীর্জায় যায়; কেননা তারা উপলব্ধি করে যে, সামান্যই সুবিধা তা উপকার লাভ করে। তারা যে শিক্ষা পায় তাদের অন্তঃকরণ স্পর্শ করে না। আমরা কি তাদেরকে ব্যক্তিগত আবেদন জানাব না? MHBen 195.3

যারা অভাব এবং পাপের শিকার তাদের মধ্যে তারাই রয়েছে যারা একবার সম্পদের অধিকার ছিল। জীবনে বিভিন্ন দক্ষতা এবং বিভিন্ন অবস্থানের মানুষেরা পৃথিবীর দূষণ দ্বারা কড়া পানীয়ের ব্যবহার দ্বারা, লোভের বশবর্তী হওনের দ্বারা পরাজিত হয়েছে এবং পরীক্ষায় পতিত হয়েছে। যখন এই সকল পতিতব্যক্তিরা দয়া এবং সাহায্যের দাবি করে, তখন কেউ কি তাদের প্রতি মনোযোগ প্রদান করবে না যারা এখনো এই গভীর স্থানসমূহে নেমে যায়নি, যারা একই পথে তাদের পা ফেলছে? MHBen 196.1

সহস্র সহস্র লোক যারা দায়িত্ব এবং সম্মানের অধিকারী, তারা মন্দ অভ্যাসের বশবর্তী, যার অর্থ আত্মা ও শরীরের ধ্বংস। সুসমাচার প্রচারক, রাষ্ট্রীয় নেতৃবৃন্দ, লেখকগণ, ঐশ্বর্য এবং তালন্তের অধিকারী, বিশাল ব্যবসায়ী এবং ক্ষমতার অধিকারী, তারা প্রকৃত পক্ষেই মারাত্মকভাবে সংকটের মধ্যে রয়েছে, কেননা তারা সর্ব বিষয়ের মধ্যে আত্ম-নিয়ন্ত্রণের আবশ্যকতা লক্ষ্য করে না। তাদের মিতাচার নীতিমালার প্রতি মনোযোগ প্রদান করতে হবে, একটি সংকীর্ণ বা বিধিবহির্ভূত মনে নয় কিন্তু, মানব জাতির নিমিত্ত ঈশ্বরের মহৎ উদ্দেশের মধ্যে। যদি তাদের সম্মুখে প্রকৃত মিতাচার নীতি তুলে ধরা যেত, তাহলে উ‪চ্চ শ্রেণীর অনেকে তাদের মূল্য উপলব্ধি করতে পারত এবং তাদের একটা আন্তরিক সমর্থন দিতে পারত। ‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬ MHBen 196.2

আমাদের এই লোকদেরকে ক্ষতিকারক অভ্যাস চরিতার্থ করার পরিণাম দেখিয়ে দেয়া উচিত, যা শারীরিক, মানসিক এবং ক্সনতিক শক্তি হ্রাস করে। তাদের সাহায্যের করুন যেন তারা ঈশ্বরের দানসমূহের অধ্যক্ষরূপে তাদের দায়িত্ব উপলব্ধি করতে পারে। তাদের দেখিয়ে দিন যে, তারা তাদের অর্থ দিয়ে যে সৎকাজ করতে পারত, যা দিয়ে এখন তারা ক্ষতিকর কাজটা করছে। সম্পূর্ণ মিতাচারের অঙ্গীকার উপস্থাপন করুন, তাদের বলুন যে, যে অর্থ তারা মদ, তামাক বা একই রূপ মন্দ অভ্যাস চরিতার্থ করায় ব্যয় করে, তা অসুস্থ লোকদের রোগ নিরাময় কাজে ব্যবহার করা হোক, যেন জগৎ উপকৃত হতে পারে। এরূপ একটা আবেদন অনেকেই শুনতে অবহেলা করবে না। MHBen 196.3

ধনী লোকেরা বিশেষ করে আরো একটা বিপদের সম্মুখীন হয়ে থাকেন, এবং চিকিৎসা বিভাগের মিশনারীদের জন্যও একটা ক্ষেত্র রয়েছে। অগণিত লোক যারা পৃথিবীতে উন্নতি লাভ করে এবং তারা মহা অন্যায় করতেও পিছ পা হয় না, তথাপি তারা ধন-লালসার মাধ্যমে বিনষ্ট হয়। শূন্য পেয়ালা বহনে খুব কষ্ট হয় না, কিন্তু কানায় কানায় ভরা পেয়ালা বহনে অধিক কষ্ট হয়। উৎপীড়ন এবং দুর্দশা নিরুৎসাহ এবং দুঃখ আনয়ন করে; কিন্তু উন্নতি এবং সাফল্য আত্মিক জীবনকে অধিক বিপদ্গ্রস্ত করে। MHBen 197.1

যারা বিরোধমূলক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দুঃখ ভোগ করছে তারা সেই ঝোঁপের প্রতীক যা মোশি মরুভূমিতে দেখেছিলেন, যদিও জ্বলছিল, তথাপি পুড়ে শেষ হয়ে যায়নি। সুতরাং ক্ষতি, বিয়োগ ব্যথা, উৎপীড়নের মধ্যে অদৃশ্য ব্যক্তির উপস্থিতির উজ্জ্বলতা আমাদের সান্ত্বনা দিতে এবং ধরে রাখতে আমাদের সঙ্গে বর্তমান। যারা ব্যাধি পীড়ায় অথবা দুর্দশার মধ্যে কষ্ট পা‪চ্ছে, তাদের জন্য আমরা প্রায়ই প্রার্থনা করে থাকি; কিন্তু আমাদের প্রার্থনার সর্বাধিক আবশ্যক সম্পদশালী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জন্য। মানুষ অবমানিত স্থানে এসে তাদের অভাবটা উপলব্ধি করতে পারে, এবং ঈশ্বরের পরিচালনায় নির্ভর করে, আর তুলনামূলকভাবে ওটাই নিরাপদ। কিন্তু যারা সুউ‪চ শিখরে দাঁড়িয়ে থাকে এবং যারা তাদের উ‪চ্চ পদ হেতু, মনে করে, তারা মহাজ্ঞানের অধিকারী, তারা মহা সংকটের মধ্যে রয়েছে। এরূপ ব্যক্তিবর্গ যদি ঈশ্বরে তাদের আস্থা না রাখে তবে, অবশ্যই তারা পতিত হবে।‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬ MHBen 197.2

বাইবেল ধনী হবার জন্য কোন ব্যক্তিকে দোষী করেন না, যদি সে সদুপায়ে তার ধন উপার্জন করে থাকে। ধন নয় কিন্তু ধনাশক্তিই সর্বপ্রকার মন্দের মূল। ঈশ্বরই মানুষকে ঐশ্বর্য লাভের ক্ষমতা দেন; এবং যিনি ঈশ্বরের ধনাধ্যক্ষরূপে কাজ করেন, নিঃস্বার্থভাবে তার অর্থ ব্যবহার MHBen 198.1

করেন, ইহার আধিকারিক এবং জগতের কাছে ধন আশীর্বাদ স্বরূপ। কিন্তু অনেকে, যারা তাদের স্বার্থে পার্থিব ধনের মধ্যে ডুবে আছে, তারা ঈশ্বরের দাবিসমূহ এবং তাদের সহমানবের অভাবসমূহ সম্পর্কে অচেতন। তারা মনে করে, তাদের ধনই তাদের গৌরব। তারা একটার পর একটা গৃহনির্মাণ করছে জমির পর জমি ক্রয় করছে; তাদের বাড়ীঘর বিলাসবহুল জিনিস দ্বারা পূর্ণ করছে, পক্ষান্তরে তাদের পাশেই রয়েছে দুঃখ, দন্ডনীয় অপরাধী, ব্যাধি ও মৃত্যুযাত্রী। যারা এভাবে তাদের জীবন নিজের সেবায় যাপন করছে, তারা তাদের মধ্যে ঈশ্বরীয় গুণাবলি নয়, কিন্তু জঘন্য পাপীর গুণাবলী ধারণ করছে। এই লোকদের সুসমাচারের অভাব রয়েছে। তাদের দৃষ্টি জাগতিক বিষয়সমূহ থেকে সরিয়ে নিয়ে স্থায়ী ধনসম্পদের দিকে নিবদ্ধ রাখতে হবে। তাদের দান করার এবং ঈশ্বরের সঙ্গে সহকার্যকারী হবার আনন্দ কি তা জানাতে হবে। MHBen 198.2

প্রভু আমাদের আহ্বান করেছেন, “যাহারা এই যুগে ধনবান, তাহাদিগকে এই আজ্ঞা দেও, যেন তারা গর্বিতমনা না হয়, এবং ধনের অস্থিরতার উপরে নয়, কিন্তু যিনি ধনবানের ন্যায় সকলই আমাদের ভোগার্থে যোগাইয়া দেন, সেই ঈশ্বরেরই ওপরে প্রত্যাশা রাখে, যেন পরের উপকার করে, সৎ ক্রিয়ারূপ ধনে ধনবান হয় দানশীল হয়, সহভাগীকরণে তৎপর হয়; এইরূপে তাদ্বারা আপনাদের নিমিত্ত ভাবীকালের জন্য উত্তম ভিত্তিমূলস্বরূপ নিধি প্রস্তুত করুক; যেন, যাহা প্রকৃতরূপে জীবন, তাহাই ধরিয়া রাখিতে পারে।”১তীম ৬:১৭-১৯। MHBen 198.3

এটা কোন সাময়িক বা আকস্মিক স্পর্শ নয় যে, ধনী, জগৎপ্রিয়, জগৎসেবী আত্মাদেরকে খ্রীষ্টের নিকটে আকর্ষণ করতে পারে নি। এইরূপ ব্যক্তিদের কাছে পৌছান প্রায়ই কষ্টকর। নর-নারীদের কর্তৃক তাদের জন্য ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে, যা মিশনারী আত্মায় অনুপ্রাণিত, যারা ব্যর্থ হবে না অথবা নিরুৎসাহিত হবে না। MHBen 198.4

কোন কোন লোক উ‪চ্চ শ্রেণীর লোকদের কাছে পৌছানোর জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত। এই লোকেরা ঈশ্বরের কাছ থেকে জ্ঞান চেয়ে নেবে যেন তারা জানতে পারে কিভাবে লোকদের কাছে পৌছতে হবে, কেবল মাত্র তাদের সঙ্গে সাময়িক পরিচিত নয়, কিন্তু ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা, এবং জীবন্ত বিশ্বাস দ্বারা আত্মার অভাবসমূহ সম্পর্কে তাদের সজাগ করতে এবং যীশুতে যে সত্য নিহিত আছে, সে সম্পর্কে একটি জ্ঞান লাভে পরিচালনা দিতে পারে। ‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬ MHBen 199.1

অনেকে মনে করে যে, উ‪চ্চ শ্রেণীতে পৌছতে হলে জীবনের আদব কায়দা এবং কর্মপদ্ধতি এমন হতে হবে যা তাদের রুচি স্বাদের সঙ্গে খাপ খাবে। ঐশ্বর্যের একটা বৈলক্ষণ্য, নামী-দামী ইমারত, ব্যয়বহুল পোশাক-আশাক, সাজসজ্জা এবং পরিবেশ, জাগতিক রীতিনীতির সঙ্গে অনুরূপতা, আদবকায়দা কব্জা করা, সমাজের কৃত্রিম লেপন, উ‪চ্চ কৃষ্টি, বক্তৃতার মাধুর্য, এই সকল অপরিহার্য বলে মনে হয়। এটা একটা ভ্রান্ত। উ‪চ্চতর শ্রেণীতে পৌছতে হলে বিরামহীন জাগতিক নীতি ঈশ্বরের পথ নয়। খ্রীষ্টের সুসমাচারের বিরামহীন নিঃস্বার্থ উপস্থাপনই ঐ সকলেতে পৌছবার জন্য হবে ফলপ্রসূ উপায়।‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬ MHBen 199.2

আথিনীর দর্শনশাস্ত্রের মুকাবিলা করতে পৌলের অভিজ্ঞতায় আমাদের জন্য একটা শিক্ষা রয়েছে। আরিওপারের আদালতের সম্মুখে সুসমাচার প্রচারে, পৌল যুক্তির সঙ্গে যুক্তি, বিজ্ঞানের সঙ্গে বিজ্ঞান, দর্শন শাস্ত্রের সঙ্গে দর্শন শাস্ত্রের মুকাবিলা করেছিলেন। তার শ্রোতাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ব্যক্তিরা আশ্চর্যান্বিত এবং নির্বাক হয়েছিলেন। তার কথার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বলেনি। কিন্তু এ চেষ্টায় তেমন ফল হয়নি। শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক লোক সুসমাচার গ্রহণ করেছিল। তখন থেকেই পৌল তার শ্রমের ভিন্ন কৌশল ব্যবহার করেছিলেন। তিনি যুক্তিমতবাদের বাক্যাড়ম্বর এবং আলোচনা এড়িয়ে চলতেন, এবং সহজ সরলভাবে নরনারীদেরকে খ্রীষ্টকে পাপীদের ত্রাণকর্তারূপে দেখিয়ে দিয়েছেন। তার কাজ সম্পর্কে করিন্থীয়বাসীদের কাছে লিখতে গিয়ে তিনি বলেছেন: MHBen 199.3

“আর, হে ভ্রাতৃগণ, আমি যখন তোমাদের নিকটে গিয়াছিলাম, তখন গিয়া বাক্যের কি জ্ঞানের উৎকৃষ্টতা অনুসারে তোমাদিগকে যে ঈশ্বরের সাক্ষ্য জ্ঞাত করিতেছিলাম, তাহা নয়। কেননা আমি মনে স্থির করিয়াছিলাম, তোমাদের মধ্যে আর কিছুই জানিব না, কেবল যীশু খ্রীষ্টের এবং তাঁকে ক্রুশে হত বলিয়াই, জানিব। ...আর আমার বাক্য ও আমার প্রচার জ্ঞানের প্ররোচক বাক্যযুক্ত ছিল না, বরং আত্মার ও পরাক্রমের প্রদর্শনযুক্ত ছিল, যেন তোমাদের বিশ্বাস মনুষ্যদের জ্ঞানযুক্ত না হইয়া ঈশ্বরের পরাক্রমযুক্ত হয়।”(১করি ২:১-৫)। MHBen 200.1

পুনরায় রোমীয়দের প্রতি পত্রে তিনি বলেছিলেন: MHBen 200.2

“কেননা আমি সুসমাচার সম্বন্ধে লজ্জিত নহি; কারণ উহা প্রত্যেক বিশ্বাসীর পক্ষে পরিত্রাণার্থে ঈশ্বরের শক্তি; প্রথমতঃ যিহূদীর পক্ষে, আর গ্রীকেরও পক্ষে।”(রোমীয় ১:১৬)। MHBen 200.3

যারা উ‪চ্চ শ্রেণীর লোকদের জন্য কাজ করে, তারা প্রকৃত মর্যাদা বহন করুক, তাদের মনে রাখতে হবে যে, দূতগণ তাদের সঙ্গী। তারা মন এবং আত্মার ধনাগার এই বাক্য দ্বারা ভরপুর রাখুক, “কেননা লেখা আছে।”স্মৃতিকোটায় খ্রীষ্টের অমূল্য বাক্য এঁকে রাখ। ঐ সকল স্বর্ণ বা রৌপ্য অপেক্ষা অধিক মূল্যবান। ‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬ MHBen 200.4

খ্রীষ্ট বলেছেন যে, সূচের ছিদ্র দিয়ে একটা উটের প্রবেশ করা সহজ কিন্তু একজন ধনী লোকের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা দুঃসাধ্য। এই শ্রেণীর লোকদের নিমিত্ত কাজের মধ্যে অনেক নিরুৎসাহ এসে দানা বাঁধবে, অনেক আত্মপীড়নকারী রহস্য সৃষ্টি হবে। কিন্তু ঈশ্বরে সবই সম্ভব। তিনি মানব প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সে সব মানব মনের ওপরে কাজ করতে পারেন এবং করবেন যাদের জীবন অর্থলাভের উদ্দেশে নিবেদিত হয়েছে। MHBen 200.5

নিষ্কপট মন পরিবর্তনের মধ্যে অলৌকিক কাজ করতে হবে, যে অলৌকিক কাজ এখন দৃষ্ট হয় না। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানবেরা আশ্চর্য কাজ সাধনকারী ঈশ্বরের ক্ষমতার বাইরে নয়। যারা তার সঙ্গে সহকার্যকারী, সাহস এবং বিশ্বস্তভাবে তাঁর পক্ষে কাজ করে ঈশ্বর সেই লোকদের মন পরিবর্তন করবেন, যারা দায়িত্বপূর্ণ স্থানসমূহ অধিকার করে আছেন, যারা বুদ্ধিবৃদ্ধি সম্পন্ন এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি। পবিত্র আত্মার শক্তির মাধ্যমে, অনেকে ঐশ্বরিক নীতিমালা গ্রহণে পরিচালিত হবে। MHBen 200.6

যখন এটা পরিষ্কাররূপে বুঝিয়ে দেয়া যায় যে, প্রভু তাদের কাছে প্রত্যাশা করেন যে, তাঁর প্রতিনিধিরূপে তারা যেন দুঃখভোগী মানব গোষ্ঠির দুঃখ লাঘব করে, তাহলে অনেকে সাড়া প্রদান করবে, এবং তাদের অর্থ দান করবে এবং দরিদ্রদের উপকারার্থে তাদের সহানুভূতি ব্যক্ত করবে। যদি তাদের মন এভাবে তাদের নিজেদের স্বার্থ থেকে দূরে নীত হয়, তাহলে অনেকে খ্রীষ্টের কাছে তাদের আত্মসমর্পণ করবে। তাদের প্রভাবরূপ তালন্তএবং অর্থ দিয়ে হৃষ্ট চিত্তে, বিনম্র মিশনারীদের সঙ্গে হিতকার্যে যোগদান করবে, যারা তাদের মন পরিবর্তনে ঈশ্বরের প্রতিনিধি ছিলেন। তাদের পার্থিব ধনের উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে তারা, “স্বর্গে আপনাদের জন্য ধন সঞ্চয় কর; সেখানে কীটে ও ম‪র্চায় ক্ষয় করে না। সেখানে চোরেও সিঁধ কাটিয়া চুরি করে না।” MHBen 201.1

খ্রীষ্টকে গ্রহণ করে, অনেকে তাদের শ্রেণীর অন্য লোকদের জন্য কাজ করার লক্ষ্যে ঈশ্বরের হাতের প্রতিনিধিরূপে গণ্য হবে। তারা উপলব্ধি করবে যে, তারা মনে করে পৃথিবীই তাদের সবকিছু তাদের জন্য সুসমাচার বণ্টনের দায়িত্ব তাদের কাছে অর্পন করা হয়েছে। সময় এবং অর্থ ঈশ্বরের নিকটে উৎসর্গ করা হবে, তালন্তএবং প্রভাব খ্রীষ্টের নিকট সাক্ষ্য দানের কার্যের জন্য উৎসর্গীকৃত হবে। এই প্রকার পরিচর্যা কার্য দ্বারা যা সম্পাদিত হয়েছে, কেবল মাত্র অনন্তকালই তা প্রকাশ করবে, কতগুলো আত্মা, সন্দেহ কাতর জাগতিকতা এবং অস্থিরতা দ্বারা ক্লান্ত, মহান পুনরুদ্ধারকারীর কাছে আনিত হয়েছে, যিনি চান যেন যারা তাঁর কাছে আসে, তাদের প্রত্যেকেই রক্ষা পায়। খ্রীষ্ট একজন পুনরুত্থিত ত্রাণকর্তা, এবং পক্ষপুটে আরোগ্য রয়েছে। MHBen 201.2

*****