খ্রীষ্টের দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষা

60/61

অনুগ্রহের পুরস্কার

মথি ১৯:১৬-৩০; ২০:১-১৬; মার্ক ১০:১৭-৩১; লূক ১৮:১৮-৩০ পদের উপর ভিত্তি করে রচিত

ঈশ্বরের অনুগ্রহ দানের সত্য যিহূদীদের দৃষ্টিতে প্রায় হারিয়ে যাচ্ছিল। যিহূদী ধর্মগুরুরা শিক্ষা দিত যে, ঈশ্বরের অনুগ্রহ অর্জন করতে হয়। তারা এই আশা করত যে, তাদের নিজেদের কাজের দ্বারা ধার্মিকতার পুরস্কার লাভ করতে সক্ষম হবে। এইভাবে তাদের উপাসনা অর্থ আয় এবং ব্যবসায়িক চিন্তা দ্বারা চালিত হচ্ছিল। এই চিন্তা থেকে খ্রীষ্টের শিষ্যরাও মুক্ত ছিলেন না। আর মুক্তিদাতা প্রভু প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদেরকে নিজেদের ভুল ধরিয়ে দেবার চেষ্টা করছিলেন। মজুরদের দৃষ্টান্তমূলক গল্প বলার ঠিক আগে এমন একটি বিষয় উপস্থিত হয়েছিল যে, যথার্থ নীতি উপস্থাপন করার জন্য তাঁর সামনে পথ খুলে গেল। COLBen 376.1

তিনি পথ দিয়ে যাবার সময় একজন যুবক নেতা দৌড়ে এসে তাঁর সামনে হাঁটু পেতে অত্যন্ত ভক্তির সঙ্গে তাকে অভিবাদন জানাল। সে বলল “হে সদ্গুরু,”, “অনন্ত জীবনের অধিকারী হইবার জন্য আমি কি করিব?” COLBen 376.2

এই নেতাটি খ্রীষ্টকে কেবল গুরু বলে সম্মান জানিয়েছিল, কিন্তু তাঁকে ঈশ্বরের পুত্র বলে স্বীকার করে নেয় নি। মুক্তিদাতা বললেন, “আমাকে সৎ কেন বলিতেছ? একজন ব্যতিরেকে সৎ আর কেহ নাই, তিনি ঈশ্বর।” কোন ভিত্তিতে তুমি আমাকে সৎ বলছ? একমাত্র ঈশ্বরই সৎ। যদি তুমি আমাকে সৎ বলে স্বীকৃতি দিয়ে থাক তাহলে অবশ্যই আমাকে ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে এবং তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। COLBen 376.3

“কিন্তু তুমি যদি জীবনে প্রবেশ করিতে ইচ্ছা কর,” তিনি এই কথার সঙ্গে যোগ করে বললেন, “তবে আজ্ঞা সকল পালন কর।” ঈশ্বরের চরিত্র তাঁর ব্যবস্থার মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে এবং যথাযথভাবে ঈশ্বরের ঐক্য রক্ষার জন্য এটি তোমাকে দেয়া হয়েছে। তাঁর ব্যবস্থার সমস্ত নিয়ম তোমার প্রতিটি কার্যকলাপে প্রকাশ করতে হবে। COLBen 376.4

খ্রীষ্ট ব্যবস্থার দাবিকে খাটো করেন নি। অনন্ত জীবনের শর্ত হিসেবে সুস্পষ্ট ভাষায় এর প্রতি বাধ্যতার কথা প্রকাশ করা হয়েছে - আদমের পতনের আগে তারও একই শর্ত পালনের জন্য আবশ্যকতা ছিল। এদন উদ্যানে মানুষের কাছে ঈশ্বর যা প্রত্যাশা করেছিলেন, অর্থাৎ যথার্থ বাধ্যতা, নির্দোষ, ধার্মিকতা, বর্তমানে মানুষের কাছে এর চেয়ে কম প্রত্যাশা করেন না। অনুগ্রহের চুক্তির আবশ্যকতা ছিল ঠিক এদনের আবশ্যকতার মত - ঈশ্বরের ব্যবস্থার সঙ্গে ঐক্য, যা পবিত্র, ন্যায্য, এবং উত্তম। COLBen 377.1

“আজ্ঞা সকল পালন কর,” এই কথায় যুবকটি উত্তর দিল, “কোন কোন আজ্ঞা?” সে মনে করেছিল যে, খ্রীষ্ট হয়তো ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের বিষয়ে বলতে চেয়েছেন। কিন্তু খ্রীষ্ট সীনয় পর্বত থেকে পাওয়া ব্যবস্থা সম্পর্কে কথা বলেছিলেন। তিনি দশ আজ্ঞার দ্বিতীয় অংশ থেকে বিশেষ আজ্ঞার কথা উল্লেখ করেছিলেন। যে আদেশগুলো এর মধ্যে নিহিত আছে, “তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।” COLBen 377.2

ব্যবস্থা সম্পর্কে তার ধারণা ছিল বাহ্যিক এবং ভাসা ভাসা। মানবীয় চিন্তা দ্বারা বিচার করে সে তার নিষ্কলঙ্ক চরিত্রকে রক্ষা করতে চেয়েছিল। সে ভেবেছিল তার বাহ্যিক জীবনের উচ্চ পদ সমস্ত দোষ থেকে তাকে মুক্ত রাখবে। সে বাস্তবিক ভেবেছিল যে, তার বাধ্যতায় কোন খুঁত নেই। তবুও তার মনে একটা গোপন ভয় কাজ করছিল যে, ঈশ্বর এবং তার আত্মার মধ্যে এই সব কিছুই যথার্থ নয়। তাই এই প্রশ্নটির আবার সে উচ্চারণ করল, “এখন আমার কি ত্রুটি আছে?” COLBen 377.3

খ্রীষ্ট তাকে বললেন “যদি সিদ্ধ হইতে ইচ্ছা কর,” “তবে চলিয়া যাও, তোমার যাহা যাহা আছে, বিক্রয় কর, এবং দরিদ্রদিগকে দান কর, তাহাতে স্বর্গে ধন পাইবে; আর আইস, আমার পশ্চাদ্গামী হও। কিন্তু এই কথা শুনিয়া সেই যুবক দুঃখিত হইয়া চলিয়া গেল, কারণ তাহার বিস্তর সম্পত্তি ছিল।” COLBen 377.4

আত্মপ্রেমিক, অর্থাৎ যারা নিজেকে কেবল ভালবাসে, তারা ব্যবস্থার লঙ্ঘনকারী। যীশু যুবকটির কাছে এই কথা প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন এবং তিনি তার একটি পরীক্ষা করেছিলেন যাতে তার হৃদয়ের স্বার্থপরতা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। তিনি তাকে দেখালেন যে, তার চরিত্রে মহামারী রোগের মত খুঁত রয়েছে। যুবকটি আর বেশি আলো পেতে চাইল না। সে তার প্রতিমাকে লালন করছিল; তার কাছে জগতই ছিল ঈশ্বর। সে উল্লেখ করেছিল যে, সে আজ্ঞাগুলো পালন করে আসছে। কিন্তু একটি নীতির অভাব তার মধ্যে ছিল, যে নীতির যার মধ্যে আত্মা এবং জীবনের সব কিছু রয়েছে। ঈশ্বর এবং মানুষের প্রতি সে তার প্রকৃত ভালবাসা দেখাতে পারে নি। এই অভাব ছিল সব কিছুরই অভাব যা তাকে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করার জন্য যোগ্য করত। নিজেকে ভালবাসার জন্য এবং জাগতিক ভাবে অর্জন ও লাভবান হয়েছিল বলে সে স্বর্গের নিয়মের সঙ্গে ঐক্য থেকে নিজেকে বাইরে রেখেছিল COLBen 377.5

যখন যুবক নেতাটি যীশুর কাছে এসেছিল, তখন তার সরলতা ও আন্তরিকতা মুক্তিদাতার অন্তরকে জয় করেছিল। তিনি “তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া তাহাকে ভালবাসিলেন।” তিনি এই যুবকটির মধ্যে এমন একজনকে দেখতে পেলেন যে ধর্ম প্রচারের কাজ করতে পারে। তিনি তার গুণাবলী গ্রহণ করলেন এবং সম্ভ্রান্ত যুবকটিকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করলেন, ঠিক যেভাবে তিনি গরীব জেলেদের গ্রহণ করেছিলেন, যারা তাঁকে অনুসরণ করেছিল। যদি এই যুবকটি আত্মা জয়ের কাজে তার যোগ্যতা ও সামর্থ উৎসর্গ করত, তাহলে সে খ্রীষ্টের পক্ষে একজন পরিশ্রমী এবং সার্থক পরিচর্যাকারী হতে পারত। COLBen 378.1

কিন্তু প্রথমেই তাকে শিষ্যত্বের শর্ত গ্রহণ করতে হত। তাকে অবশ্যই ঈশ্বরের কাছে নিজেকে অকপটে সমর্পণ করতে হবে। যোহন, পিতর, মথি, এবং তাদের সঙ্গীদের ত্রাণকর্তা যখন আহ্বান করেছিলেন, তখন তারা “সকলই পরিত্যাগ করিয়া, উঠিয়া তাঁহার পশ্চাৎ গমন করিলেন।” যুবক নেতাটির একই রকম ভাবে নিজেকে উৎসর্গ করার আবশ্যকতা ছিল। খ্রীষ্ট নিজে যে ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন, এর চেয়ে মহৎ কোন ত্যাগ স্বীকার তিনি তার কাছে চান নি। “তিনি ধনবান হইলেও তোমাদের নিমিত্ত দরিদ্র হইলেন, যেন তোমরা তাঁহার দরিদ্রতায় ধনবান হও।” ২ করিন্থীয় ৮:৯। খ্রীষ্ট যে পথে তাকে পরিচালনা করতেন, যুবকটিকে কেবল সেই পথেই যেতে হত। COLBen 378.2

খ্রীষ্ট যুবকটির দিকে তাকালেন এবং তার হৃদয় লাভ করার জন্য আকুলভাবে আকাঙ্ক্ষিত হলেন। মানুষকে আশীর্বাদ করার দূত হিসেবে তাকে বাইরে লোকদের কাছে পাঠাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাঁর মনে জেগে উঠল। এই অবস্থায় তিনি তাকে আত্মসমর্পণ করার যে আহ্বান জানিয়েছেন, তাতে তিনি তাকে তাঁর সাহচার্য লাভ করার সুযোগ গ্রহণ করার জন্য প্রস্তাব দিলেন। তিনি বললেন, “আমার পশ্চাদ্গামী হও।” এই সুযোগ গ্রহণ করে পিতর, যাকোব ও যোহন আনন্দ লাভ করেছিলেন। যুবকটি অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে খ্রীষ্টের দিকে তাকাল। তার হৃদয় খ্রীষ্টের দিকে আকর্ষিত হল। কিন্তু সে খ্রীষ্টের ত্যাগ স্বীকারের নীতি গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত ছিল না। সে খ্রীষ্টের চেয়ে তার ধন সম্পদকে অধিক প্রাধান্য দিয়েছিল। সে অনন্ত জীবন লাভ করতে চেয়েছিল। কিন্তু সে তার হৃদয়ে সেই নিঃস্বার্থ ভালবাসা গ্রহণ করে নি, যা একমাত্র অনন্ত জীবন দিতে পারে, এবং সে অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে খ্রীষ্টের দিক থেকে নিজেকে সরিয়ে নিল। COLBen 379.1

যুবকটি চলে যাওয়ার পর যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “যাহাদের ধন আছে তাহাদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা কেমন দুস্কর!” এই কথাটি শিষ্যদের অবাক করেছিল। তাঁরা ধনীদের দিকে তাকিয়ে মনে করতেন যে, তারা স্বর্গের সুবিধা ভোগী এবং প্রিয় পাত্র। তারা মনে করত যে, তারা তাদের জাগতিক ক্ষমতা এবং ধন সম্পদের কারণে স্বর্গ রাজ্যে গৃহীত হবে; যদি ধনীরা ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে অবশিষ্ট লোকেরা কি আশা করতে পারে? COLBen 379.2

“কিন্তু যীশু পুনর্বার তাঁহাদিগকে কহিলেন, বৎসগণ, যাহারা ধনে নির্ভর করে, ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা তাহাদের পক্ষে কেমন দুষ্কর! ঈশ্বরের রাজ্যে ধনবানের প্রবেশ করা অপেক্ষা বরং সূচের ছিদ্র দিয়া উটের যাওয়া সহজ।” এর পর তারা বুঝতে পারলেন যে, এই আত্মিক সতর্ক বার্তায় তারাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। মুক্তিদাতার কথার আলোকে তাদের জাগতিক ক্ষমতা লাভের এবং ধন সম্পদের অধিকারী হওয়ার গোপন আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেল। নিজেদের আশঙ্কা এবং সন্দেহের কারণে তাঁরা বিস্মিত হয়ে বললেন, “তবে কাহার পরিত্রাণ হইতে পারে?” COLBen 379.3

“যীশু তাঁহাদের প্রতি দৃষ্টি করিয়া কহিলেন, ইহা মনুষ্যের অসাধ্য বটে, কিন্তু ঈশ্বরের অসাধ্য নয়, কারণ ঈশ্বরের সকলই সাধ্য।” COLBen 380.1

একজন ধনী লোক এই ভাবে স্বর্গে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে না। এই ধন সম্পদ তাকে ধার্মিকতার উত্তরাধিকারী হওয়ার খেতাব লাভের জন্য কোনো আলো দেখাতে পারবে না। COLBen 380.2

এটি কেবল অযোগ্য হলেও খ্রীষ্টের অনুগ্রহের মাধ্যমে সম্ভব, যা, যে কোন মানুষ গ্রহণ করে ঈশ্বরের নগরে প্রবেশ করতে পারবে। COLBen 380.3

ধনীদের প্রতি এবং দরিদ্রদের প্রতি পবিত্র আত্মার এই কথা বলা হয়েছে, “আর তোমরা নিজের নও, কারণ মূল্য দ্বারা ক্রীত হইয়াছ।” ১ করিন্থীয় ৬:১৯-২০। যখন মানুষ এটি বিশ্বাস করবে, তখন তাদের সম্পত্তি ঈশ্বরের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করবে। যা ঈশ্বরের নির্দেশনায় ব্যবহার করবে, যারা হারিয়ে গেছে তাদের রক্ষা করার জন্য এবং দুঃখ কষ্ট ভোগকারী অসুস্থএবং দরিদ্রদের শান্তি, সান্ত্বনা, ও মঙ্গলের জন্য ব্যবহার করবে। মানুষের পক্ষে এটি অসম্ভব, কারণ তার অন্তর জাগতিক ধন সম্পদের প্রতি আকর্ষিত হয়ে তা আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছে। যে ধন সম্পদ মানুষের মঙ্গলের জন্য ব্যবহার করা উচিত, মানুষ তা করছে না। যারা দুঃখ কষ্ট ভোগ করছে, যারা দুর্দশাগ্রস্ত ও দরিদ্র, তারা সাহায্য লাভের আশায় যে চিৎকার করছে তা শোনার জন্য তারা তাদের কান বন্ধ করে রেখেছে। কিন্তু ঈশ্বরের পক্ষে সবই সম্ভব। খ্রীষ্টে অতুলনীয় ভালবাসার দিকে তাকানোর মধ্য দিয়ে মানুষের স্বার্থপর অন্তর নমনীয় এবং কোমল হয়। ধনী লোক, ফরীশী পৌলের মত বলবে, “কিন্তু যাহা যাহা আমার লাভ ছিল, সেই সমস্ত খ্রীষ্টের নিমিত্ত ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিলাম। আর বাস্তবিক আমার প্রভু খ্রীষ্ট যীশুর জ্ঞানের শ্রেষ্ঠতা প্রযুক্ত আমি সকলই ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিতেছি; তাঁহার নিমিত্ত সমস্তেরই ক্ষতি সহ্য করিয়াছি, এবং তাহা মলবৎ গণ্য করিতেছি, যেন খ্রীষ্টকে লাভ করি।” ফিলিপীয় ৩:৭-৮। তাহলে তারা আর কোনো কিছু নিজের বলে দাবী করবে না। তারা ঈশ্বরের বহু রকম অনুগ্রহের ধনাধ্যক্ষ বিবেচনা করে আনন্দ করবে এবং তাঁর উদ্দেশ্যে সমস্ত মানুষের সেবা কাজ করবে। মুক্তিদাতার কথায় পিতরের মনে প্রথমে তাঁর গোপন বিশ্বাস জেগে উঠল। তিনি এই ভেবে সন্তুষ্ট হলেন যে, তিনি এবং তাঁর ভাইয়েরা সব ত্যাগ করে প্রভুর উপরে সব ভার ছেড়ে দিয়েছেন। “দেখুন,” তিনি বললেন, “আমরা সমস্তই পরিত্যাগ করিয়া আপনার পশ্চাৎগামী হইয়াছি।” যুবক নেতাটিকে বলা শর্তযুক্ত প্রতিজ্ঞার কথা তিনি স্মরণ করলেন, “তাহাতে স্বর্গে ধন পাইবে।” তিনি এখন জানতে চাইছেন যে, তিনি এবং তাঁর সঙ্গীরা তাঁদের ত্যাগ স্বীকারের জন্য কী পুরস্কার লাভ করবেন। COLBen 380.4

মুক্তিদাতার উত্তর এই গালীলীয় জেলেদের অন্তর রোমাঞ্চিত হল। এটি তাদের সেই মহান স্বপ্নের পূর্ণতাকে সম্মান করল: “আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তোমরা যত জন আমার পশ্চাদ্গামী হইয়াছ, পুনঃসৃষ্টিকালে, যখন মনুষ্যপুত্র আপন প্রতাপের সিংহাসনে বসিবেন, তখন তোমরাও দ্বাদশ সিংহাসনে বসিয়া ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশের বিচার করিবে।” তিনি আরও যোগ করে বললেন, “আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, এমন কেহ নাই, যে আমার নিমিত্ত ও সুসমাচারের নিমিত্ত বাটী কি ভ্রাতৃগণ কি ভগিনী কি মাতা কি পিতা কি সন্তানসন্ততি কি ক্ষেত্র ত্যাগ করিয়াছে, কিন্তু এখন ইহকালে তাহার শতগুণ না পাইবে; সে বাটী, ভ্রাতা, ভগিনী, মাতা, সন্তান ও ক্ষেত্র, তাড়নার সহিত এই সকল পাইবে, এবং আগামী যুগে অনন্ত জীবন পাইবে।” COLBen 381.1

“আমরা তবে কি পাইব?” পিতরের এই প্রশ্নটির দ্বারা তিনি যে মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন তা যথার্থ ছিল না। এটি শিষ্যদের খ্রীষ্টের পক্ষে দূত হওয়ার জন্য অনুপযুক্ততা প্রকাশ করে। কারণ এটি হল কাজের বিনিময়ে বেতন পাওয়ার মনোভাব। যখন শিষ্যরা খ্রীষ্টের ভালবাসা দ্বারা আকর্ষিত হয়েছিল, শিষ্যরা তখনও ফরীশীতন্ত্র থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হতে পারে নি। তারা তখনও এই চিন্তা করে কাজ করে যাচ্ছিল যে, তারা তাদের যোগ্যতা এবং পরিশ্রমের সমানুপাতে পুরস্কার পাবে। তারা আত্মগৌরব COLBen 381.2

-------------------------------

“যাহা কিছু কর, প্রাণের সহিত কার্য কর, মনুষ্যের কর্ম নয়, কিন্তু প্রভুরই কর্ম বলিয়া কর; কেননা তোমরা জান, প্রভু হইতে তোমরা দায়াধিকাররূপ প্রতিদান পাইবে।” কলসীয় ৩:২৩-২৪। “দেখ, আমি শীঘ্র আসিতেছি; এবং আমার দাতব্য পুরস্কার আমার সহবর্তী, যাহার যেমন কার্য, তাহাকে তেমন ফল দিব।” প্রকাশিত বাক্য ২২:১২। এবং আত্মতুষ্টির মনোভাব লালন করেছিলেন এবং তারা পরস্পরের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করেছিলেন। যখন তাদের মধ্যে কেউ কোন বিষয়ে ব্যর্থ হতেন তখন তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠতা এবং উৎকৃষ্টতার কথা ভেবে আত্মতুষ্টি লাভ করতেন। COLBen 381.3

পাছে শিষ্যরা সুসমাচারের নীতির দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেন এই জন্য খ্রীষ্ট এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটি দৃষ্টান্তমূলক গল্পে একটি নীতি ব্যাখ্যা করলেন, যার মাধ্যমে ঈশ্বর তাঁর সেবাকারীদের সঙ্গে কাজ করেন এবং যার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সেবাকারীরা তাঁর পক্ষে কাজ করবে, এটা তাঁর ইচ্ছা। COLBen 382.1

“তিনি বললেন, স্বর্গ রাজ্য”, “এমন এক জন গৃহকর্তার তুল্য, যিনি প্রভাত কালে আপন দ্রাক্ষাক্ষেত্রে মজুর লাগাইবার জন্য বাহিরে গেলেন। তিনি মজুরদের সহিত দিনে এক সিকি বেতন স্থির করিয়া তাহাদিগকে আপন দ্রাক্ষাক্ষেত্রে প্রেরণ করিলেন।” একটি প্রা ছিল যে, লোকেরা কাজের আশায় বাজারে গিয়ে অপেক্ষা করত এবং কাজে নিয়োগ দানের জন্য আগ্রহী লোক মজুর পাওয়ার জন্য সেখানে যেত। দৃষ্টান্ত মূলক এই গল্পে বর্ণনা করা হয়েছে যে, লোকটি বিভিন্ন সময় মজুরদের কাজে লাগাবার জন্য বাইরে গিয়েছিল। যারা সকালে নিযুক্ত হয়েছিল তারা নিরূপিত মূল্যে কাজ করার জন্য রাজি হয়েছিল। যারা এর পরে নিযুক্ত হয়েছিল তারা তাদের মজুরীর বিষয়টি গৃহকর্তার বিবেচনার উপর ছেড়ে দিয়েছিল। COLBen 382.2

“পরে সন্ধ্যা হইলে সেই দ্রাক্ষাক্ষেত্রের কর্তা আপন দেওয়ানকে কহিলেন, মজুরদিগকে ডাকিয়া মজুরী দেও, শেষ জন হইতে আরম্ভ করিয়া প্রথম জন পর্যন্ত দেও। তাহাতে যাহারা এগার ঘটিকার সময়ে লাগিয়াছিল, তাহারা আসিয়া এক এক জন এক এক সিকি পাইল। পরে যাহারা প্রথমে লাগিয়াছিল, তাহারা আসিয়া মনে করিল, আমরা বেশী পাইব; কিন্তু তাহারাও এক এক সিকি পাইল।” COLBen 382.3

এই গৃহকর্তার দ্রাক্ষাক্ষেত্রে তার মজুরদের সঙ্গে আচরণ মানব জাতির সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণকে প্রকাশ করে। লোকদের মধ্যে বহুল প্রচলিত প্রার এটি বিরুদ্ধে। জাগতিক কাজে কাজ শেষ করার উপর ভিত্তি করে মজুরী দেয়া হয়। মজুররা যা তাদের আয় কেবল তা-ই প্রত্যাশা করতে পারে। কিন্তু এই উপমায় খ্রীষ্ট তাঁর রাজ্যের নীতির ব্যাখ্যা করেছেন - এই রাজ্য, যা এই জগতের নয়। তিনি কোন মানবীয় মানদণ্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নন। সদাপ্রভু ঈশ্বর বলেছেন, “আমার সঙ্কল্প সকল ও তোমাদের সঙ্কল্প সকল এক নয়, এবং তোমাদের পথ সকল ও আমার পথ সকল এক নয়। কারণ ভূতল হইতে আকাশম-ল যত উচ্চ, তোমাদের পথ হইতে আমার পথ, ও তোমাদের সঙ্কল্প হইতে আমার সঙ্কল্প তত উচ্চ।” যিশাইয় ৫৫:৮, ৯। COLBen 382.4

দৃষ্টান্ত মূলক গল্পে প্রথম মজুররা একটি নির্দিষ্ট হারে মজুরীতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল এবং তারা নির্দিষ্ট পরিমাণে মজুরী পেয়েছিল, এর চেয়ে বেশি নয়। যাদের পরে দ্রাক্ষাক্ষেত্রে কাজ করার জন্য ভাড়া করা হয়েছিল তারা গৃহকর্তার প্রতিজ্ঞায় বিশ্বাস রেখেছিল, “যাহা ন্যায্য তোমাদিগকে দিব।” মজুরীর বিষয়ে কোনো প্রশ্ন না করে তারা তাঁর উপর তাদের আস্থা রেখেছিল। তারা তার ন্যায় বিচার এবং নিরপেক্ষতার উপর বিশ্বাস রেখেছিল। তারা পুরস্কার পেয়েছিল, তবে তা তাদের পরিশ্রমের পরিমাণ অনুযায়ী নয়, কিন্তু তার দয়াপূর্ণ ইচ্ছা অনুযায়ী। COLBen 383.1

একই ভাবে আমাদের কাছে ঈশ্বর প্রত্যাশা করেন যেন আমরা তাঁর উপরে বিশ্বাস রাখি, যিনি পাপীদের প্রতি ন্যায় আচরণ করেন। আমাদের যোগ্যতা বা গুণ অনুযায়ী তিনি আমাদের পুরস্কার দেন না, কিন্তু তাঁর নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী দিয়ে থাকেন। “যে সঙ্কল্প তিনি আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুতে করিয়াছিলেন।” ইফিষীয় ৩:১১। “তিনি আমাদের কৃত ধর্মকর্ম হেতু নয়, কিন্তু আপনার দয়ানুসারে আমাদিগকে পরিত্রাণ করিলেন।” তীত ৩:৪,৫। আর যারা তাঁর উপর নির্ভর করে, তিনি তাদের জন্য “আমাদের সমস্ত যাচ্ঞার ও চিন্তার অতীত অতিরিক্ত” কর্ম করিতে পারেন,” ইফিষীয় ৩:২০। COLBen 383.2

পরিশ্রম করে সম্পাদিত কাজের পরিমাণ নয়, কিংবা এর দৃশ্যমান ফলাফলে নয়, কিন্তু যে উৎসাহ নিয়ে সেই কাজ সম্পাদিত হয় ঈশ্বর সেই কাজের মূল্যায়ন করেন। যারা শেষ বেলায় দ্রাক্ষাক্ষেত্রে এসেছিল তারা কাজ করার সুযোগ লাভের জন্য কৃতজ্ঞ ছিল। যে ব্যক্তি তাদের গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছিল, তার প্রতি তাদের হৃদয় কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ হয়েছিল এবং দিনের শেষে যখন গৃহকর্তা পূর্ণ দিনের মজুরী তাদের দিলেন তখন তারা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। তারা জানতো যে, এই মজুরী তারা আয় করে নি। তাদের নিয়োগকর্তার মুখমণ্ডলে দয়াশীলতার মনোভাব প্রকাশ পেয়েছিল, আর তা দেখে তাদের হৃদয় আনন্দে পরিপূর্ণ হয়েছিল। তারা গৃহকর্তার এই দয়াশীলতার কাজ কিংবা উদারতার যে পরিচয় লাভ করেছে, তা কখনো ভুলে যাবে না। একই ভাবে এটি পাপীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যারা জানে তারে অযোগ্যতা এবং অনুপযুক্ততা, যারা বেলা পাঁচটার সময়ে খ্রীষ্টের দ্রাক্ষাক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে। ত্রা কাজের সময় খুব কম বলে প্রতীয়মান হয়েছে। সে মনে করেছে যে, সে পুরস্কার পাওয়ার জন্য অনুপযুক্ত। কিন্তু সে আনন্দে পূর্ণ হবে যে, ঈশ্বর তাকে সম্পূর্ণ ভাবে গ্রহণ করেছেন। খ্রীষ্টের সঙ্গে সহকর্মী হিসেবে কাজ করার সুযোগ লাভের জন্য সে নম্রতার সঙ্গে উৎসাহ উদ্দীপনা এবং কৃতজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করেছে। এই কর্ম তৎপরতাকে ঈশ্বর সম্মানিত করে আনন্দ লাভ করেন। COLBen 383.3

ঈশ্বর চান যেন আমরা আমাদের পুরস্কারের পরিমাণ নিয়ে কোন প্রকার প্রশ্ন না করে সব ভার তাঁর উপর ছেড়ে দিই। খ্রীষ্ট যেহেতু আমাদের অন্তরে বাস করছেন, তাই পুরস্কার নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। আমাদের কাজে এটি প্রয়োগ করা হোক এটি আমাদের উদ্দেশ্য নয়। এ কথা সত্য যে, যদি আমরা ঈশ্বরের অধীনতায় চলি তাহলে পুরস্কারের প্রতিদানের প্রতি আমাদের সম্মান থাকবে। ঈশ্বর চান যেন আমরা তাঁর প্রতিজ্ঞাত আশীর্বাদের জন্য কৃতজ্ঞ থাকি। তিনি আমাদের প্রতিটি কাজেই পুরস্কার দেবার জন্য উৎসুক থাকেন না কিংবা প্রতিটি কাজে আমরা বিশেষ আশীর্বাদ লাভ করব না। যা সঠিক তা সম্পন্ন করে এবং সব কিছু নির্বিচারে লাভ করার ব্যাপারে আমরা যেন উদ্বিগ্ন না থাকি। আমাদের উদ্দেশ্য হবে ঈশ্বরকে ভালবাসা এবং আমাদের প্রতিবাসীকে ভালবাসা। COLBen 384.1

“অতএব রোপক কিছু নয়, সেচকও কিছু নয়, বৃদ্ধিদাতা ঈশ্বরই সার। আর রোপক ও সেচক উভয়েই এক, এবং যাহার যেরূপ নিজের শ্রম, সে তদ্রুপ নিজের বেতন পাইবে। কারণ আমরা ঈশ্বরেরই সহকার্যকারী; . . . কেননা কেবল যাহা স্থাপিত হইয়াছে, তাহা ব্যতীত অন্য ভিত্তিমূল কেহ স্থাপন করিতে পারে না, তিনি যীশু খ্রীষ্ট। . . . তবে প্রত্যেক ব্যক্তির কর্ম সপ্রকাশ হইবে। . . . যে যাহা গাঁথিয়াছে, তাহার সেই কর্ম যদি থাকে, তবে সে বেতন পাইবে।” ১ করিন্থীয় ৩:৭-১৪। COLBen 384.2

এই দৃষ্টান্তে যারা প্রভুর দ্রাক্ষাক্ষেত্রে কাজ করার জন্য প্রথমে ডাক পেয়েছিল শুধু তাদের নয়, কিন্তু যারা প্রভুর দ্রাক্ষাক্ষেত্রে ঢুকতে অবহেলা করেছিল, তাদেরও ঈশ্বর ক্ষমা করেন নি। যখন গৃহকর্তা শেষবেলায় বাজারে গিয়েছিলেন এবং মজুরদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন, তিনি তখন তাদের বলেছিলেন, “কি জন্য সমস্ত দিন এখানে নিষ্কর্মে দাঁড়াইয়া আছ?” এই প্রশ্নের উত্তর ছিল, “কেহই আমাদিগকে কাজে লাগায় নাই।” সকালে যখন কেউ তাদের কাজের জন্য ডাকে নি সেক্ষেত্রে দিনের শেষে কারও ডাকার কথা নয়। তাই তারা গৃহকর্তার ডাক প্রত্যাখ্যান করে নি। যারা প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং পরে অনুশোচনা করেছিল তারা খুব ভালো করেই অনুশোচনা করেছিল। কিন্তু দয়ার প্রথম ডাক তুচ্ছ করার কারণে এই অনুশোচনা তাদের রক্ষা করতে পারবে না। COLBen 385.1

দ্রাক্ষাক্ষেত্রের মজুররা যখন প্রত্যেকে “এক এক সিকি” করে পেল, তখন যারা সকালে দ্রাক্ষাক্ষেত্রে কাজে যোগ দিয়েছিল তারা অসন্তুষ্ট হল। তারা কি বার ঘণ্টা কাজ করে নি? তারা একই মজুরি পেয়েছে। অথচ যারা দিনের ঠা-ার সময়ে মাত্র এক ঘণ্টার জন্য কাজ করেছে তাদের চেয়ে আরও বেশি মজুরি পাওয়া কি তাদের ন্যায্য নয়? ” COLBen 385.2

“শেষের ইহারা ত এক ঘণ্টা মাত্র খাটিয়াছে,” তারা বলল, “আমরা সমস্ত দিন খাটিয়াছি ও রৌদ্রে পুড়িয়াছি।” COLBen 385.3

“হে বন্ধু,” গৃহকর্তা তাদের মধ্যে একজনকে উত্তর দিয়ে বললেন, “আমি তোমার প্রতি কোন অন্যায় করি নাই; তুমি কি আমার নিকটে এক সিকিতে স্বীকার কর নাই? তোমার যাহা পাওনা, তাহা লইয়া চলিয়া যাও; আমার ইচ্ছা, তোমাকে যাহা, ঐ শেষের জনকেও তাহাই দিব। আমার নিজের যাহা, তাহা আপনার ইচ্ছামত ব্যবহার করিবার অধিকার কি আমার নাই? না আমি দয়ালু বলিয়া তোমার চক্ষু টাটাইতেছে?” COLBen 385.4

“এইরূপে যাহারা শেষের, তাহারা প্রথম হইবে, এবং যাহারা প্রথম, তাহারা শেষে পড়িবে।” COLBen 385.5

দৃষ্টান্তে বর্ণিত প্রথম মজুরেরা তাদের উপস্থাপন করেছে যারা তাদের কাজের কারণে অন্যদের চেয়ে নিজেদেরকে বেশি গুরুত্ব পাবার দাবী করে। তারা নিজেদের প্রশংসা লাভের জন্য কাজ গ্রহণ করে, কিন্তু তারা তাদের কাজে আত্মত্যাগ এবং নিজেকে সম্পূর্ণ নিবেদন করে না। তারা ঘোষণা দেয় যে, তারা তাদের সারা জীবন ঈশ্বরের সেবা করবে; তাদের কষ্ট, অভাব এবং পরীক্ষা সমস্ত কিছু সহ্য করবে। আর এই কারণেই তারা তাদের জন্য বড় পুরস্কার লাভের চিন্তা করে। তারা খ্রীষ্টের পরিচর্যাকারী হওয়ার সুযোগ লাভ করার চেয়ে আরও বেশি পুরস্কার পাওয়ার কথা চিন্তা করে। তাদের দৃষ্টিতে তাদের পরিশ্রম এবং স্বার্থত্যাগ তাদেরকে অন্যদের চেয়ে বেশি সম্মান লাভের যোগ্য করে। আর যেহেতু তাদের এই দাবী গ্রাহ্য করা হয় না, তাই তারা অসন্তুষ্ট হয়। তারা কি তাদের কাজে ভালবাসার প্রকাশ ঘটাতে পেরেছে? তারা সব সময় প্রথমে থাকতে চায়। কিন্তু তাদের অসন্তুষ্ট ভাব, অভিযোগ করার প্রবণতা হল অখ্রীষ্টিয় স্বভাবের পরিচায়ক, এবং তা প্রমাণ করে যে, তারা সম্পূর্ণ ভাবে অযোগ্য। তারা তাদের নিজেদের উন্নতি ঘটাবার ইচ্ছাকে প্রকাশ করে, তাদের কাজে প্রকাশ পায় যে, ঈশ্বরের প্রতি তাদের বিশ্বাস নেই, একই সঙ্গে তাদের হিংসা, তাদের ভাইদের প্রতি তাদের ঘৃণার মনোভাবকেও প্রকাশ করে। ঈশ্বরের দয়াশীলতা এবং উদারতা তাদের কাছে কেবল বিরক্তিকর বিষয় বলে মনে হয়। এভাবে তারা দেখায় যে, তাদের হৃদয় এবং ঈশ্বরের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। প্রভুর কার্যকারীদের সঙ্গে সহযোগিতার আনন্দ কি তারা তারা জানে না। COLBen 386.1

এই রকম সঙ্কীর্ণ মনোভাব এবং কেবল নিজের উন্নতি ও মঙ্গলের চেষ্টার তীব্র আকাঙ্ক্ষার মনোভাবের চেয়ে বেশি অসন্তোষের কিছু আর ঈশ্বরের কাছে নেই। যে এই রকম বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করবে ঈশ্বর তার সঙ্গে কাজ করতে পারেন না। তাঁর আত্মার কাজকে তারা অকার্যকর করার চেষ্টা করে। COLBen 386.2

যিহূদীদের প্রথমে প্রভুর দ্রাক্ষাক্ষেত্রে আহ্বান করা হয়েছিল। আর এই কারণে তারা গর্বিত ছিল এবং নিজেদের ধার্মিক বলে মনে করত। সুদীর্ঘ বছর তারা কাজ করেছিল বলে তারা ভেবেছিল যে, অন্যদের চেয়ে তারা বড় পুরস্কার পাওয়ার অধিকারী। ঈশ্বরের বিষয়ে তাদের সঙ্গে পরজাতীয়রাও সমভাবে অংশগ্রহণ করতে পারছে তাদের কাছে এর চেয়ে বিরক্তিকর সংবাদ আর কিছুই ছিল না। COLBen 386.3

শিষ্যদের মধ্যে যারা প্রথমে আহ্বান পেয়ে খ্রীষ্টকে অনুসরণ করেছিলেন, তিনি তাদের সতর্ক করলেন, পাছে একই মন্দতা তাদের মধ্যে দেখা দেয়। মণ্ডলীর দুর্বলতা, মণ্ডলীর অভিশাপ এইগুলো আত্মধার্মিকতার মনোভাব, এই সব কিছু খ্রীষ্ট দেখতে পেয়েছিলেন। তারা এই কল্পনা করে যখন তারা কোনো পদোন্নতি লাভ করবে তখন ঈশ্বর তাদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসবেন। এই ভাবে তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত আশীর্বাদ লাভ করতে পারবে। অনেকে আবার ছোট পদোন্নতি লাভ করে গর্বে স্ফীত হয়ে উঠবে এবং মনে করবে তারা অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তারা তোষামোদের জন্য খুব আগ্রহী হবে। খ্রীষ্ট এই বিপদ থেকে তাঁর শিস্যদের রক্ষা করতে চাইলেন। COLBen 387.1

আমাদের গুণের এবং যোগ্যতার সমস্ত দাম্ভিকতা দূরে সরিয়ে দিতে হবে। “জ্ঞানবান আপন জ্ঞানের শ্লাঘা না করুক, বিক্রমী আপন বিক্রমের শ্লাঘা না করুক, ধনবান আপন ধনের শ্লাঘা না করুক। কিন্তু যে ব্যক্তি শ্লাঘা করে, সে এই বিষয়ের শ্লাঘা করুক যে, সে বুঝিতে পারে ও আমার এই পরিচয় পাইয়াছে যে, আমি সদাপ্রভু পৃথিবীতে দয়া, বিচার ও ধার্মিকতার অনুষ্ঠান করি, কারণ ঐ সকলে আমি প্রীত, ইহা সদাপ্রভু কহেন ।” যিরমিয় ৯:২৩, ২৪। COLBen 387.2

পুরস্কার কাজের জন্য নয়, পাছে কোন মানুষ গর্ব করে। কিন্তু এর সব কিছুই হল অনুগ্রহ। “তবে কি বলিব? মাংসের সম্বন্ধে আমাদের আদিপিতা যে অব্রাহাম, তিনি কি প্রাপ্ত হইয়াছেন? কারণ অব্রাহাম যদি কার্য হেতু ধার্মিক গণিত হইয়া থাকেন, তবে শ্লাঘার বিষয় তাঁহার আছে; কিন্তু ঈশ্বরের কাছে নাই; কেননা শাস্ত্রে কি বলে? ‘‘অব্রাহাম ঈশ্বরে বিশ্বাস করিলেন, এবং তাহা তাঁহার পক্ষে ধার্মিকতা বলিয়া গণিত হইল।” যে কার্য করে, তাহার বেতন ত তাহার পক্ষে অনুগ্রহের বিষয় বলিয়া নয়, প্রাপ্য বলিয়া গণিত হয়। কিন্তু যে ব্যক্তি কার্য করে না- তাঁহারই উপরে বিশ্বাস করে, যিনি ভক্তিহীনকে ধার্মিক গণনা করেন- তাহার বিশ্বাসই ধার্মিকতা বলিয়া গণিত হয়।” রোমীয় ৪:১-৫। সুতরাং অন্যের চেয়ে বেশি গৌরব পেয়েছে বলে মনে করার এবং অন্যদের হিংসার চোখে দেখার কোন কারণ নেই। কেউ অন্যদের চেয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলার সুযোগ পেতে পারে না। কেউ এই দাবী করতে পারবে না যে, তার পুরস্কার পাওয়ার অধিকার এবং যোগ্যতা আছে। COLBen 387.3

প্রথম ও শেষের যারা তারা মহান, চিরস্থায়ী পুরস্কারের অংশী হবে এবং যারা প্রথমের তাদের শেষের লোকদেরকে আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। যে অন্যদের পুরস্কারকে হিংসার চোখে দেখে, সে ভুলে যায় যে, কেবল মাত্র অনুগ্রহেই সে পরিত্রাণ পেয়েছে। মজুরদের দৃষ্টান্ততে সমস্ত হিংসা ও অবিশ্বাসের মনোভাবকে তিরস্কার করা হয়েছে। ভালবাসা সত্য আনন্দ করে এবং কোনো পরশ্রীকারতার তুলনা শিক্ষা দেয় না। যে ভালবাসার আধিকারী হয়েছে কেবল তার নিজের ত্রুটিপূর্ণ চরিত্রের সঙ্গে খ্রীষ্টের সৌন্দর্যের তুলনা করতে পারে। তাহলে সে পার্থক্য দেখতে পাবে। এই দৃষ্টান্ত মূলক গল্পে সমস্ত মজুরদের সতর্ক করা হয়েছে। COLBen 388.1

যত দীর্ঘ সময় ধরে তারা কাজ করুক না কেন, তাদের পরিশ্রম যত বেশিই হোক না কেন, তাদের ভাইদের প্রতি যদি ভালবাসা না থাকে, ঈশ্বরের সামনে যদি নিজেকে নত, নম্র না করে, তবে সে কিছুই নয়। আত্ম-সিংহাসনে কোন ধর্ম বিশ্বাস থাকে না। যে আত্মগৌরব করে, সে অনুগ্রহের কাছে নিজেকে সর্বস্বান্ত দেখতে পাবে, কেবল এটাই খ্রীষ্টের কাজের জন্য তাকে যোগ্য করে তুলবে। যখনই অহঙ্কার এবং আত্মতৃপ্তিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে তখন সেই কাজ নষ্ট হয়ে যাবে। COLBen 388.2

আমরা কত দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেছি তা নয়, কিন্তু স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে কাজ করা এবং কাজে বিশ্বস্ততাই কেবল ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। আমাদের সমস্ত কাজে যেন আত্মত্যাগ থাকে, এটা ঈশ্বর চান। স্বার্থ সাধনের বড় কাজ নষ্ট হওয়ার চেয়ে ছোট কাজে আন্তরিকতা এবং আত্মনিবেদন ঈশ্বরের কাছে আরও বেশি আনন্দের বিষয়। তিনি আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখতে চান আমরা খ্রীষ্টের আত্মা আমাদের হৃদয়ে কতটুকু লালন করেছি এবং আমাদের কাজে খ্রীষ্টকে কতটুকু প্রকাশ করেছি। আমরা যে কাজ করি, তার পরিমাণ কতুটুক তার চেয়ে আমাদের কাজে ভালবাসা এবং বিশ্বস্ততা তিনি আরও বেশি সম্মানের চোখে দেখেন। যখন স্বার্থপরতার মৃত্যু ঘটে, যখন শ্রেষ্ঠত্বের আসন লাভের বিবাদ ও শত্রুতাকে বিতাড়িত করা হয়, তখন কৃতজ্ঞতায় হৃদয় পূর্ণ হয় এবং ভালবাসা জীবনকে সুরভিত করে - কেবল তখনই খ্রীষ্ট হৃদয়ে বাস করেন এবং আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে একত্রে কার্যকারী হিসেবে কাজ করার স্বীকৃতি লাভ করি। COLBen 388.3

তাদের কাজ যতই কঠিন হোক, প্রকৃত কার্যকারী এটি মজুরগিরি বলেই বিবেচনা করে। এই কাজে নিজেকে ব্যয় করতে সে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত থাকে। কিন্তু এটি খুব আনন্দপূর্ণ কাজ যা আনন্দপূর্ণ হৃদয়ে করা হয়। ঈশ্বরের আনন্দ খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। তাদের আনন্দ খ্রীষ্ট পূর্বেই প্রস্তুত করে রেখেছেন। “যেন তাঁহার ইচ্ছা পালন করি ও তাঁহার কার্য সাধন করি।” যোহন ৪:৩৪। তারা গৌরবের ঈশ্বরের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্কে আবদ্ধ রয়েছে। এই চিন্তা কঠোর পরিশ্রমকে মিষ্টতায় পরিণত করে, ইচ্ছা শক্তিকে দৃঢ় করে। যে ঘটনাই ঘটুক তাদের সাহসকে এটি দৃঢ় করে। খ্রীষ্টে দুঃখভোগের অংশী হওয়ার দ্বারা উন্নত করে, তার সমবেদনার অংশী করে এবং তাঁর সঙ্গে তাঁর কাজে সহযোগিতা করে, তাঁর আনন্দকে আরও বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে এবং তাঁর মর্যাদা পূর্ণ নামের প্রশংসা বয়ে আনে। COLBen 389.1

এটি ঈশ্বরের পক্ষে সমস্ত প্রকৃত কাজের শক্তি ও উদ্যম। এই শক্তি ও উদ্যমের অভাবে প্রথমে উপস্থিত হলেও পরে তারা শেষে পড়ে। যখন কেউ এই শক্তি ও উদ্যমকে ধরে রাখে সে শেষে উপস্থিত হলেও প্রথমে চলে আসবে। COLBen 389.2

অনেকে আছে যারা প্রভু যীশুর কাছে নিজের জীবন দিয়েছে, তথাপি তারা মহৎ কোনো কাজ করার কিংবা মহা ত্যাগ স্বীকার করার মত কোন সুযোগ দেখতে পায় না বা খুঁজে পায় না। তারা হয়তো আরামে আয়েশে কাজ করার কথা ভাবতে পারে, তারা মনে করতে পারে সাক্ষ্যমর হওয়ার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করার কোনো আবশ্যকতা নেই, যা ঈশ্বরের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য। তারা হয়তো ভাবতে পারে, প্রচার কাজে প্রতিদিন বিপদের সম্মুখীন হওয়ার কিংবা আশঙ্কা থাকে এমন পরিস্থিতির মোকাবেলা করা প্রচার কাজ নয়, যা প্রকৃত পক্ষে অত্যন্ত মহৎ বিষয় হিসেবে স্বর্গে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে। যে খ্রীষ্টিয়ান তার ব্যক্তিগত জীবনে এই রকম, যেমন: যে প্রতি দিন নিজেকে ঈশ্বরের কাছে সঁপে দেয়, সঙ্কল্পে আন্তরিক এবং বিশুদ্ধ ভাবে চিন্তা করে, খুব ছোট বিষয়েও বিশ্বস্ত, রাগের পরিস্থিতির উদ্ভব হলেও নম্র থাকে যে বিশ্বাসী ও ঈশ্বরভক্ত, সে এমন একজন মানুষ যে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে খ্রীষ্টের চরিত্রকে প্রকাশ করে। এই রকম ব্যক্তি ঈশ্বরের চোখে বিশ্বখ্যাতি সম্পন্ন মিশনারি কিংবা সাক্ষ্যমরের চেয়েও আরও বেশি মূল্যবান হিসেবে বিবেচিত হন। COLBen 389.3

আহ্, যার দ্বারা ঈশ্বর এবং মানুষ চরিত্রের মান পরিমাপ করে তার মধ্যে কত পার্থক্য। ঈশ্বর অনেককেই জগতের প্রলোভনকে প্রতিহত করতে দেখেন। তার খুব কাছের বন্ধুরাও কখনো জানতে পারে না যে, সে তার ঘরের এবং হৃদয়ের প্রলোভন প্রতিরোধ করে। মানুষের নম্রতা হল তার দৃষ্টিতে দুর্বলতা। চিন্তায় মন্দতা থাকলেও আন্তরিক ভাবে অনুতাপের বিষয়টি তিনি দেখতে পান। তাঁর কাজে আন্তরিক ভাবে নিবেদিত হওয়ার বিষয়টিও তাঁর দৃষ্টিগোচর রয়েছে। নিজের সঙ্গে কঠোর যুদ্ধ করার বিষয়টির প্রতি তিনি লক্ষ রাখেন - যে যুদ্ধে সে জয় লাভ করে। এই সব কিছুই ঈশ্বর এবং স্বর্গদূতগণ জানেন। ঈশ্বরের সামনে স্মরণ পুস্তকে তাদের পক্ষে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। COLBen 390.1

যা আমাদের সফলতার রহস্যের ভিত্তি তা আমাদের শিক্ষাগত যোগতা নয়, আমাদের সামাজিক মর্যাদা নয়, আমাদের সংখ্যা কিংবা গুণাবলি ও যোগ্যতায় নয়, মানুষের ইচ্ছায় নয়। আমাদের অক্ষমতার কথা উপলব্ধি করে, আমাদের খ্রীষ্টের কথা গভীর ভাবে চিন্তা করতে হবে এবং যিনি সমস্ত শক্তির শক্তি, সমস্ত চিন্তার চিন্তা, তাঁর মধ্যে দিয়ে যদি আমরা কাজ করতে সম্মত থাকি এবং বাধ্য হই, তাহলে বিজয়ের পর বিজয় লাভ করতে সক্ষম হব। COLBen 390.2

আমাদের কার্যকাল যতই কম হোক না কেন কিংবা কাজের সংখ্যা যতই কম হোক না কেন, যদি আমরা সরল বিশ্বাসে খ্রীষ্টকে অনুসরণ করি, তাহলে আমরা পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হব না। যা শ্রেষ্ঠ বিষয় এবং জ্ঞানপূর্ণ বিষয় দিয়ে অর্জন করা যায় না, তা সরলতা এবং নম্রতার মধ্য দিয়ে গ্রহণ করা যায়। যারা আত্ম গৌরব করে তাদের জন্য স্বর্গের স্বর্ণ তোরণ খোলা থাকবে না। যারা গর্বিতমনা তাদের জন্য এই তোরণ তোলা হবে না। কিন্তু একজন শিশুর কম্পিত হাতের স্পর্শে এই তোরণ প্রশস্ত ভাবে খুলে দেয়া হবে। যে ঈশ্বরের জন্য বিশ্বাস এবং ভালবাসার সরলতায় গঠিত হয়েছে তাকে আশীর্বাদ হিসেবে অনুগ্রহের পুরস্কার দেয়া হবে। COLBen 390.3