খ্রীষ্টের দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষা
অধার্মিকতার ধন দ্বারা মিত্র লাভ করা
লূক ১৬:১-৯ পদের উপর ভিত্তি করে রচিত
খ্রীষ্টের আগমন প্রচণ্ডজাগতিকতার সময় হয়েছিল। মানুষ সম্পূর্ণ ভাবে নিজেকে সাংসারিক এবং জাগতিকতার কাছে সমর্পণ করেছিল। তারা পার্থিব বিষয়ের অধিনস্ত হয়ে পড়েছিল। তারা অলীকতাকে বাস্তব ও বাস্তবকে অলীক বলে মনে করেছিল। তারা অদৃশ্য জগতকে বিশ্বাসের সঙ্গে দেখেনি। শয়তান এই জীবনের অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রলুব্ধকারী এবং সর্বগ্রাসীর মত বিষয়গুলো তাদের সামনে তুলে ধরেছিল। আর তারা তার প্রলোভনের দিকে মনোযোগ করেছিল। COLBen 352.1
খ্রীষ্ট এই বিষয়গুলোর পদ্ধতি পরিবর্তন করতে এসেছিলেন। তিনি এই সম্মোহনীয় অবস্থাকে ভাঙতে চেষ্টা করেছিলেন, যা মানুষকে বুদ্ধিভ্রষ্ট করেছিল এবং তাদের ফাঁদে ফেলেছিল। তাঁর শিক্ষায় তিনি, স্বর্গ ও পৃথিবীর দাবীকে সুবিন্যস্ত করার, মানুষের চিস্তাকে বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের দিকে ফেরাবার চেষ্টা করেছিলেন। অভিষ্ট বিষয় লাভের জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং তৎপরতা থেকে তাদের ফেরাবার চেষ্টায় তিনি তাদেরকে আহবান জানিয়েছিলেন যেন তারা অনন্ত জীবনের আর্শীবাদ লাভের জন্য সুযোগ গ্রহণ করে। COLBen 352.2
“একজন ধনবান লোক ছিল”, তিনি বললেন, “তাহার একজন দেওয়ান ছিল; সে তাহার ধন অপচয় করিতেছে বলিয়া তাহার নিকট অপবাদিত হইল।” ধনী লোকটি তার সমস্ত বিষয় সম্পত্তি এই দেওয়ানের হাতে সমর্পন করেছিল। কিন্তু সেই দেওয়ান ছিল অবিশ্বস্ত এবং তার মালিকের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছিল যে এই দেওয়ানটি তার ধন সম্পদ যে কোন উপায়ে চুরি করেছে। সে দৃঢ় সংকল্প নিল যে, এখন থেকে তাকে আর ঐ পদে বহাল রাখবে না। ধনী লোকাটি সেই দেওয়ানের হিসেব তদন্তের জন্য তাকে ডাকল। “তোমার বিষয়ে” সে বলল, “এ কি কথা শুনিতেছি? তোমার দেওয়ানী পদের হিসাব দেও, কেননা তুমি আর দেওয়ান থাকিতে পারিবে না”। COLBen 352.3
তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার আগে সে ভবিষ্যত সম্পর্কে চিন্তা করল, সেই দেখতে পেল বেছে নেয়ার জন্য তার সামনে তিনটি পথ খোলা আছে। তাকে অবশ্যই মজুরের কাজ করতে হবে, অথবা ভিক্ষা করতে হবে কিংবা অনাহারে থাকতে হবে। আর সে মনে মনে বলল, “কি করিব? আমার প্রভু তো আমার নিকট হতে দেওয়ানী পদ লইতেছেন; মাটি কাটিবার বল আমার নাই, ভিক্ষা করিতে আমার লজ্জা হয়। আমার দেওয়ানী পদ গেলে লোকে যেন আমাকে আপন আপন গৃহে গ্রহণ করে, এই জন্য যাহা করিব তাহা বুঝিলাম। পরে সে আপন প্রভুর প্রত্যেক ঋণীকে ডাকিয়া প্রথম জনকে বলিল, তুমি আমার প্রভুর কত ধার? সে কহিল, একশত মণ তৈল। তখন সে তাহাকে কহিল, তোমার ঋণপত্র লও, এবং শ্রীঘ্র বসিয়া পঞ্চাশ লেখ। পরে সে আর একজনকে কহিল, তুমি কত ধার? সে বলিল, একশত বিশ গম। তখন সে কহিল, তোমার ঋণপত্র লইয়া আশী লেখ। COLBen 353.1
এই অবিশ্বস্ত দেওয়ান এমন কাজ করল যে, অন্যদেরকেও তার মত অসাধ্য এবং প্রতারণামূলক কাজের জন্য অংশী করল। সে তাদের উপকার করে তাদের মালিকের সঙ্গে প্রতারণা করল এবং এই উপকার গ্রহণ করার ফলে তারা তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে তাদের নিজেদের ঘরে আশ্রয় দিতে বাধ্য। COLBen 353.2
“তাহাতে সেই প্রভু সেই অধার্মিক দেওয়ানের প্রশংসা করল। কারণ সে বুদ্ধিমানের কাজ করেছিল”। জাগতিক মানুষ সেই মানুষের প্রশংসা করল, যে তার সঙ্গে প্রতারণা করেছিল। কিন্তু ধনী লোকটির প্রশংসা ঈশ্বরের প্রশংসা ছিল না। COLBen 353.3
খ্রীষ্ট অধার্মিক ধনাধ্যক্ষের প্রশংসা করেন নি। কিন্তু তিনি অত্যন্ত সুপরিচিত ঘটনাকে ব্যাখ্যা করে শিক্ষা দিতে চাইলেন। “আপনাদের জন্য অধার্মিকতার ধন দ্বারা মিত্র লাভ কর”, তিনি বললেন, “যেন উহা শেষ হইলে তাহারা তোমাদিগকে সেই অনন্ত আবাসে গ্রহণ করে।” COLBen 353.4
করগ্রাহী ও পাপীদের সঙ্গে মেলামেশা করার জন্য মুক্তিদাতা ফরীশীদের দ্বারা নিন্দিত হয়েছিলেন। কিন্তু তাদের প্রতি তাদের আগ্রহ কমে যায়নি, কিংবা তাদের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখেন নি। তিনি দেখতে পেলেন যে তাদের কাজ তাদেরকে প্রলোভনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তারা মন্দ প্রলোভনের দ্বারা বেষ্টিত হয়েছিলেন। প্রথম ভুল পদক্ষেপ ছিল খুব সহজ এবং খুব দ্রুত চরম অসাধুতা এবং অপরাধের বৃদ্ধি ঘটার ফলে তারা নিচে নেমে গিয়েছিল। খ্রীষ্ট চেয়েছিলেন যেন তাঁর শিক্ষার মধ্য দিয়ে তারা উচ্চ এবং উন্নত লক্ষ্য নির্ধারণ করে এবং উন্নত নীতি গ্রহণ করে। এই উদ্দেশ্যে তিনি অবিশ্বস্ত দেওয়ানের গল্পটি বলার জন্য ইচ্ছুক হলেন। সেখানে কিছু করগ্রাহীরাও উপস্থিত ছিল, যারা এই রকম কাজে লিপ্ত ছিল, যা এই দৃষ্টান্ত মূলক গল্পে উপস্থিত হয়েছিল। তারা খ্রীষ্টের ব্যাখ্যাদানের মধ্য দিয়ে তাদের নিজেদের কার্যকলাপ চিহ্নিত করতে পারল। তাদের মনোযোগ আকর্ষিক হল এবং তাদের নিজেদের অসৎ কার্যকলাপের চিত্র থেকে অনেকে আত্মিক সত্যের বিষয়ে শিক্ষা করল। COLBen 354.1
কিন্তু এই দৃষ্টান্তটি তিনি সরাসরি তাঁর শিষ্যদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন। তাঁদেরকে প্রথম সত্যের প্রভাব সম্পর্কে জ্ঞাত করলেন এবং তাদের মধ্য দিয়ে অন্যদের কাছেও এই শিক্ষা পৌঁছে দিলেন। খ্রীষ্টের অধিকাংশ শিক্ষাই শিষ্যরা প্রথমে বুঝতে পারত না এবং প্রায়ই মনে হতো তারা তাঁর শিক্ষা ভুলে গেছে। কিন্তু পবিত্র আত্মার দ্বারা পরে তারা এই COLBen 354.2
-------------------------------
“ঐশ্বর্যের বাহুল্য হইলে তাহাতে মন দিও না” গীত ৬২:১০। “তুমি কি ধনের দিকে চাহিতেছ? তাহা আর নয়; কারণ ঈগল যেমন আকাশে উড়িয়া যায়, তেমনি ধন আপনার জন্য নিশ্চয়ই পক্ষ প্রস্তুত করে।” হিতোপদের ২৩:৫। “যাহারা আপনাদের ধনে নির্ভর করে, আপনাদের সম্পত্তির বাহুল্যে শ্লাঘা করে, তাহাদের মধ্যে কেহই কোন মতে ভ্রাতাকে মুক্ত করিতে পারে না, কিংবা তাহার প্রায়শ্চিত্তের জন্য ঈশ্বরকে কিছু দিতে পারে না।” গীত ৪৯: ৬,৭। বিষয়ে সুস্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারত। আর শিষ্যদের মধ্য দিয়ে এই শিক্ষা লোকদের কাছে সুস্পষ্ট ভাবে উপস্থাপিত হয়। আর অনেকে বিশ্বাস করে প্রভুর মণ্ডলীর মঙ্গে যুক্ত হয়েছিল।
মুক্তিদাতা ফরীশীদের কাছেও কথা বলেছিলেন। তাঁর কথার তাৎপর্য তারা উপলব্ধি করতে পেরে তাহা তা গ্রহণ করবে, এই আশা তিনি ছেড়ে দেন নি। অনেকে ছিল যারা দোষী হিসেবে প্রতিপন্ন হয়েছিল, যদি তারা পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় সেই সত্যের বাণী শুনত তাহলে প্রভু যীশুর উপর যারা বিশ্বাস স্থাপন করত তাদের সংখ্যা একেবারে কম হত না। COLBen 355.1
খ্রীষ্ট করগ্রাহী এবং পাপীদের সঙ্গে মেলামেশা করেন, এই দোষারোপ করে ফরীশীরা খ্রীষ্টের দূর্নাম রটানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। এখন খ্রীষ্ট উল্টো অভিযোগকারীদের তীব্র তিরস্কার করলেন। তারা তাঁর স্থান করগ্রাহী এবং পাপীদের মধ্যে নিরুপণ করেছিলেন। কিন্তু খ্রীষ্ট তাদের কার্যকলাপ ফরীশীদের সামনে তুলে ধরেছিলেন এবং তাদের দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে, তাদের অন্যায় থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য কেবল একটি পথ আছে। COLBen 355.2
অবিশ্বস্ত দেওয়ানকে তার মালিকের সম্পত্তির দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল যেন সে তা দিয়ে মানুষের উপকার করতে পারে। কিন্তু সে ঐ সম্পত্তি নিজের উপকারের জন্য ব্যয় করেছিলেন। ইস্রয়েলরাও ছিল একই রকম। ঈশ্বর অব্রাহামের বংশধরদের বেছে নিয়েছিলেন। তিনি তাঁর শক্তিশালী এবং উন্নত বাহু দ্বারা তাদের মিসরের বন্দিত্ব থেকে মুক্ত করেছিলেন। জগতকে আর্শীর্বাদ করার জন্য তিনি তাদের পবিত্র সত্যের ভাণ্ডারস্বরুপ করেছিলেন। তিনি তাদের জীবন্ত দৈববাণী হওয়ার জন্য দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন যেন তারা লোকদের কাছে আলো প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু তাঁর ধনাধ্যক্ষরা এই দানসমূহ তাদের নিজেদেরকে ধনবান এবং উন্নত করার জন্য ব্যবহার করেছিল। COLBen 355.3
ফরীশীরা আত্মগৌরব এবং আত্মধার্মিকতার দ্বারা পূর্ণ ছিল, কিন্তু ঈশ্বর তাদের তাঁর যে সম্পদ তাদের ধার দিয়েছিলেন যেন তারা তাঁর গৌরবের জন্য সেগুলো ব্যবহার করে; তারা সেই সম্পদের অপব্যবহার করেছিল। COLBen 355.4
দৃষ্টান্তমূলক গল্পে বর্ণিত সেই দেওয়ানের ভবিষ্যতের কোন ব্যবস্থা ছিল না, যে সম্পদ অন্যদের উপকারের জন্য তার উপর অর্পন করা হয়েছিল, তা সে নিজের জন্য ব্যবহার করেছিল; কিন্তু সে কেবল বর্তমানকে নিয়েই চিন্তা করেছিল। যখন তার কাছ থেকে দেওয়ানী পদ নিয়ে যাওয়া হল তখন তার কাছে নিজের বিষয় সম্পত্তি বলে আর কোন কিছু ছিল না। কিন্তু তখন তার মালিকের বিষয় সম্পত্তি তার হাতে ছিল এবং সে সংকল্প নিল তার মালিকের সম্পত্তি সে এমন ভাবে ব্যবহার করবে যাতে ভাবিষ্যতে যখন সে অভাবে পড়বে তখন এই সব তাকে রক্ষা করবে। এটি করার জন্য একটা নতুন পরিকল্পনায় কাজ করতে হবে। নিজের জন্য সব কিছু সংগ্রহ করার পরিবর্তে সে অন্যদের অবশ্যই এর অংশ প্রদান করতে হবে। এভাবে সে তার জন্য বন্ধুদের লাভ করতে পারবে, যখন তাকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হবে তখন তারা তাকে সাদরে গ্রহণ করবে। ফরীশীদের অবস্থাও একই রকম। খুব শীঘ্র তাদের কাছ থেকে তত্ত্বাবধকের দায়িত্ব নেয়া হবে এবং তাদের ভবিষ্যতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ডাকা হবে। কেবল অন্যদের মঙ্গল এবং উপকারের জন্য চেষ্টা করার দ্বারা নিজেরা উপকৃত হতে পারত। কেবল মাত্র এই জীবনে ঈশ্বরের দানসমূহ সঠিক ভাবে ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে তারা অনন্ত জীবনের জন্য ব্যবস্থা করে রাখতে পারে। COLBen 356.1
দৃষ্টান্তটির শেষে খ্রীষ্ট এ সম্পর্কে বলেন, “বাস্তবিক এই যুগের সন্তানেরা নিজ জাতির সম্বন্ধে দীপ্তির সন্তানগণ অপেক্ষা বুদ্ধিমান”। এর অর্থ হল, “ঈশ্বরের সন্তানেরা তাদের কাজের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের প্রতি যতটা আন্তরিকতা দেখাতে পারে, সাংসারিক জ্ঞান সম্পর্কে লোকেরা তাদের নিজেদের সেবা করার ব্যাপারে ঈশ্বরের সন্তানদের চেয়ে আরও বেশি প্রজ্ঞা দেখাতে পারে এবং আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে পারে। খ্রীষ্টের সময় এই রকম অবস্থা ছিল। এখনও একই অবস্থা বিরাজ করছে। যারা নিজেদের খ্রীষ্টান বলে দাবী করে তাদের অনেকের জীবনের দিকে তাকিয়ে দেখুন । ঈশ্বর তাদের সামর্থ্য, শক্তি, এবং বিভিন্ন গুণ দিয়ে ভূষিত করেছেন; তিনি তাদের অর্থ প্রদান করেছেন যেন তারা মহা পরিত্রাণ কাজে তাঁর সহকর্মী হতে পারে। তাঁর সমস্ত দান মানুষের মঙ্গলের জন্য, দুঃখ কষ্ট ভোগকারী, এবং অভাবীদের সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করতে হবে। যারা অনাহারে আছে তাদেরকে আমাদের খাবার দিতে হবে, বস্ত্রহীনদের বস্ত্র দিতে হবে, অনাথ এবং বিধবাদের প্রতিপালন করতে হবে, যারা দুর্দশাগ্রস্থএবং অত্যাচারিত তাদের সেবা করতে হবে। পৃথিবীতে সূদুর প্রসারী দুর্দশা অবস্থিতি করুক এটা ঈশ্বর কখনো চান না। তাঁর উদ্দেশ্য এটা নয় যে, যখন অন্যদের সন্তানেরা খাবারের জন্য চিৎকার করে তখন একজন মানুষ প্রাচুর্যে পূর্ণ হয়ে বিলাসীতায় জীবন যাপন করুক। জীবনের প্রকৃত প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ মানুষকে ঈশ্বর দিয়ে থাকেন, যেন সে তা দিয়ে মানুষের জন্য মঙ্গলজনক কাজ করে, তাদের উপকার করে। প্রভু বলেছেন, “তোমাদের যাহা আছে, বিক্রয় করিয়া দান কর”। লূক ১২:৩৩। “যেন পরের উপকার করে, সৎ ক্রিয়ারূপ ধনে ধনবান হয়, দানশীল হয়, সহভাগীকরণে তৎপর হয়।” ১ম তীমথীয় ৬:১৮। “কিন্তু তুমি যখন ভোজ প্রস্তুত কর, তখন দরিদ্র, নুলা, খঞ্জ ও অন্ধ দিগকে নিমন্ত্রণ করিও।” লূক ১৪:১৩। “দুষ্টতার গাঁট সকল খুলিয়া দেওয়া,” “যোয়ালির খিল মুক্ত করা,” “দলিত লোকদিগকে স্বাধীন করিয়া ছাড়িয়া দেওয়া’, “প্রত্যেক যোঁয়ালি ভগ্ন করা”, “ক্ষুধিত লোকদের মধ্যে খাদ্য বন্টন”, “তাড়িত দুঃখীদিগকে গৃহে আশ্রয় দেওয়া”, “উলঙ্গকে দেখলে তাহাকে . . . বস্ত্র দান করা।” “দুঃখার্ত প্রাণীকে দেখিলে তাহকে আপ্যায়িত করা”। যিশাইয় ৫৮:৬, ৭, ১০। “তোমরা সমুদয় জগতে যাও, আমার সৃষ্টির নিকটে সুসমাচার প্রচার কর”। মার্ক ১৬:১৫। এই সমস্ত প্রভু ঈশ্বরের আদেশ। যারা নিজেকে খ্রীষ্টান বলে দাবী করে তারা কি এই সব কাজ করে? COLBen 356.2
হায়! কতজন যথাযথ ভাবে ঈশ্বরের দান ব্যবহার করে! কতজন বাড়ির পর বাড়ি, জমির পর জমি, নিজ সম্পত্তির সঙ্গে যুক্ত করে। কতজন তাদের আমোদ প্রমোদের জন্য, আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার জন্য, তাদের ঘর, আসবাবপত্র, এবং পোশাকের জন্য তাদের টাকা অপচয় করছে। তাদের আশে পাশে বাসকারী লোকদের অস্তিত্ব হয়ত মহা দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় এবং শোচনীয় অবস্থার মধ্যে রয়েছে। অসুস্থতা ভোগ করছে, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। শুধু একটি দায়িত্বপূর্ণ দৃষ্টির অভাবে অগণিত লোক ধ্বংস হচ্ছে, একটি সহানুভূতিপূর্ণ কথা এবং কাজের অভাবে তারা হারিয়ে যাচ্ছে। COLBen 357.1
মানুষ ঈশ্বরকে ঠকানোর জন্য অপরাধী। গৌরবময় ঈশ্বরের সম্পদ তারা স্বার্থপর ভাবে ব্যবহার করে তাঁকে ঠকাচ্ছে যা দুঃখভোগকারী মানুষের যন্ত্রণার লাঘব এবং আত্মার পরিত্রাণ তার কাছে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসতে পারে। COLBen 358.1
খ্রীষ্টের শেষ আদেশ, “তোমরা সমুদয় জগতে যাও, সমস্ত সৃষ্টির নিকটে সুসমাচার প্রচার কর”। COLBen 358.2
তারা তাঁর অর্পিত ধন সম্পদ অন্যায় ভাবে আত্মসাৎ করছে। তিনি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করছেন, “আর আমি বিচার করিতে আসিব এবং তাহার বিরুদ্ধে আমি সত্ত্বর সাক্ষি হইব. . . যাহারা বেতনের বিষয়ে বেতনজীবির প্রতি এবং বিধবা ও পিতৃহীন লোকের প্রতি অত্যাচার করে, বিদেশীদের প্রতি অন্যায় করে ও আমাকে ভয় করে না, তাদের বিরুদ্ধে আমি সত্ত্বর সাক্ষি হইব”। COLBen 358.3
“মনুষ্য কি ঈশ্বরকে ঠকাইবে? তোমরা ত আমাকে ঠকাইয়া থাক। কিন্তু তোমরা বলিতেছ, কিসে তোমাকে ঠকাইয়াছি? দশমাংশ এবং উপহারে। তোমরা অভিশাপে শাপগ্রস্থ; হা, তোমরা এই সমস্ত জাতি আমাকেই ঠকাইতেছ।” মালাখি ৩:৫, ৮, ৯। “এখন দেখ হে ধনবানেরা . . . তোমাদের ধন পচিয়া গিয়াছে ও তোমাদের বস্ত্র সকল কীট ভক্ষিত হইয়াছে; তোমাদের স্বর্ণ এবং রৌপ্য কলঙ্কিত হইয়াছে; আর তাহার কলঙ্ক তোমাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে. . . তোমরা শেষ কালে ধন সঞ্চয় করিয়াছ।” “তোমরা পৃথিবীতে সুখভোগ এবং বিলাসিতা করিয়াছ।” “দেখ, যে মজুরেরা তোমাদের ক্ষেতের শস্য কাটিয়াছে তারা তোমাদের দ্বারা যে বেতনে বঞ্চিত হইয়াছে, তাহা চিৎকার করিতেছে এবং সেই শস্যচ্ছেদকের আর্তনাদ বাহিনীগণের প্রভুর কর্ণে প্রবিষ্ট হইয়াছে।” যাকোব ৫:১-৩, ৫, ৪। COLBen 358.4
প্রত্যেকেই যেন তাদের উপর অর্পিত ঈশ্বরের দান অবশ্যই ফিরিয়ে দেয়। শেষ বিচারের দিনে মানুষের ধন সম্পদের ভাণ্ডার তার কাছে মূল্যহীন বলে গণ্য হবে। তাদের কিছুই থাকবে না যা তারা নিজেদের বলে দাবী করতে পারে। COLBen 358.5
যারা জাগতিক সম্পদ জমা করতে গিয়ে কম বিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে এবং কম চিন্তা করেছে এবং চিরকালের সুখ সমৃদ্ধির জন্য মনোযোগ দিয়েছে, তারা পরে অসৎ দেওয়ানের মত জাগতিক সম্পদের সাহায্য নিয়ে কাজ করবে। এই যুগের সন্তানেরা নিজ জাতির সম্বন্ধে আলোর সন্তানদের চেয়েও বুদ্ধিমান। এরা হয় তারাই যাদের সম্বন্ধে মহা বিচার দিনের দর্শন অনুসারে ভাববাদী ঘোষণা করেছেন, “সেই দিন মনুষ্য ভজনার্থে নির্মিত আপনার রৌপ্যময় প্রতিমা এবং স্বর্ণময় প্রতিমা সকল ইঁদুরের এবং চামচিকার কাছে নিক্ষেপ করিবে। আর গিরিগহ্বরে এবং শৈলগণের ফাটলে পড়িবে, সদাপ্রভুর ভয়ানকত্ব প্রযুক্ত ও তাঁহার মহিমার আদরণীয়তা প্রযুক্ত, যখন তিনি পৃথিবীকে বিকম্পিত করিতে উঠিবেন”। যিশাইয় ২:২০-২১। COLBen 358.6
“আপনাদের জন্য ধার্মিকতার ধন দ্বারা মিত্র লাভ কর”, খ্রীষ্ট বলছেন, “যেন উহা শেষ হইলে তাহারা তোমাদিগকে সেই অনন্ত আবাসে গ্রহণ করে”। ঈশ্বর, খ্রীষ্ট, এবং স্বর্গের দূতগণ তাঁরা সবাই যারা রোগগ্রস্থ, দুঃখার্ত এবং পাপী তাদের সেবা প্রদান করে থাকেন। এই কাজের জন্য আপনি নিজেকে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করুন, এই উদ্দেশ্যে তাঁর দেয়া দান ব্যবহার করুন এবং আপনি স্বর্গীয় অনুগ্রহের অংশীদারিত্বের মধ্যে প্রবেশ করুন। তাদের জন্য সহানুভূতিতে আপনার হৃদয় স্পন্দিত হবে। চরিত্রে আপনি তাদের সঙ্গে এক হয়ে যাবেন। অনন্ত আবাসে বাসকারী এই সব লোকেরা আপনার কাছে অপরিচিত বলে মনে হবে না। যখন জাগতিক বিষয়গুলো শেষ হয়ে যাবে, কিংবা চলে যাবে, তখন স্বর্গের পাহারাদার স্বর্গের দরজায় আপনাকে স্বাগতম জানাবার জন্য অপেক্ষা করবেন। COLBen 359.1
আর অন্যদের মঙ্গলের জন্য সম্পদ ব্যবহার করলে তা ফেরত আসবে। সম্পদের যথার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে মহা মঙ্গলজনক কাজ সম্পন্ন হবে। মানুষকে খ্রীষ্টের জন্য জয় লাভ করা যাবে। যারা খ্রীষ্টের জীবনের পরিকল্পনা অনুসারে চলে, তারা ঈশ্বরের প্রাসাদে সেই সব লোকদের দেখতে পাবে, যাদের জন্য সে এই জগতে পরিশ্রম এবং উৎসর্গ করেছিল। যারা মূল্য দ্বারা উদ্ধার পেয়েছে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তাদের কথা স্মরণ করবে যাদের সাহায্যে তারা পরিত্রাণ লাভ করেছে। যারা আত্মার পরিত্রাণের কাজে বিশ্বস্ত ছিল তারা মহামূল্যবান হিসেবে গণিত হবে। COLBen 359.2
এই দৃষ্টান্তের শিক্ষা সকলের জন্য। খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে তাকে যে অনুগ্রহ দেয়া হয়েছে তা রক্ষা করার জন্য প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে। পবিত্রভাবে জীবন যাপন করার জন্য জাগতিক কিংবা অস্থায়ী বিষয়গুলো বর্ণন করতে হবে। ঈশ্বরের ইচ্ছা যেন অন্যদেরকে আমাদের অংশী করি, যেন তা অনন্তকালীন এবং অদৃশ্য অন্যদেরকে অংশী করে। COLBen 359.3
প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানবাত্মা সতর্কতার অভাবে এবং অপরিত্রাণ প্রাপ্ত অবস্থায় চিরকালের মত হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতি ঘণ্টায় আমাদের জীবনের বিভিন্ন অবস্থায় লোকদের কাছে পৌঁছানো এবং তাদের পরিত্রাণ করার সুযোগ আমাদের কাছে উন্মুক্ত রয়েছে। এই সুযোগ আসছে এবং চলেও যাচ্ছে। ঈশ্বর চান আমরা যেন সর্বোত্তমভাবে এই সুযোগ কাজে লাগাই। দিন, সপ্তাহ, এবং মাস অতিবাহিত হচ্ছে। যে কাজ আমরা করব তার সময় হয়ত এক দিন, এক মাস বা এক সপ্তাহ কম পেতে পারি। আমাদের হাতে হয়ত অল্প কয়েক বছর রয়েছে, কিন্তু একটি কণ্ঠস্বর শুনে, সেই কথার উত্তর উপেক্ষা করার ক্ষমতা আমাদের নেই, তা হল, “তোমরা দেওয়ানী পদের হিসাব দেও।” COLBen 360.1
খ্রীষ্ট সকলকে বিবেচক হতে বলেছেন। বিশ্বস্তভাবে হিসেব দিতে হবে। যীশুর মানদণ্ডে সব রাখতে হবে, যার অর্থ চিরস্থায়ী সম্পদ, জীবন, সত্য স্বর্গ, এবং মানুষের পরিত্রাণে প্রভু যীশুর আনন্দ। জগত আপনাকে যা দেবার জন্য আকর্ষিত করে তা প্রভুর কাছে সমর্পণ করুন। আপনার নিজের আত্মার হারানো সম্পদ প্রভুর পাল্লায় রাখুন, সঁপে দিন আপনি হয়তো যে আত্মাগুলো জয় করতে পারতেন, অন্যদের ও তাদের জন্য পারতেন যা ঈশ্বরের সাথে পরিমাপ করা যাবে। পরিমাপ সময় এবং অনন্তকালের জন্য। আপনি যদি জাগতিক বিষয় লাভ করার জন্য আকাঙ্ক্ষিত হন তাহলে খ্রীষ্ট এই কথা আপনার উদ্দেশ্যে বলেছেন, “বস্তুত মনুষ্য যদি সমুদয় জগত লাভ করিয়া নিজ প্রাণ হারায় তাহলে কি লাভ হইল?” মার্ক ৮:৩৬। COLBen 360.2
ঈশ্বর চান আমরা যেন পার্থিব স্থানের বদলে স্বর্গীয় স্থানকে পছন্দ করি। তিনি আমাদের সামনে স্বর্গীয় বিনিময়ের সমস্ত সম্ভাবনা উন্মুক্ত করে রাখেন। তিনি আমাদের অতি উন্নত লক্ষ্যকে উৎসাহিত করবেন, আমাদের মনোনীত ধনসম্পদকে নিরাপত্তা দান করবেন । তিনি ঘোষণা করেছেন, “আমি উত্তম সুবর্ণ হইতে মর্ত্ত্যকে, ওফীরের কাঞ্চন হইতে মনুষ্যকে দুর্লভ করিব।” যিশাইয় ১৩:১২। পার্থিব ধন সম্পদ পোকায় খেলে এবং মরিচায় নষ্ট করলে ঝাঁটা দিয়ে দূর করে দেয়া হয় কিন্তু খ্রীষ্টের অনুসারীরা তাদের স্বর্গীয় ধন, স্বর্গীয় সম্পদ নিয়ে আনন্দ করতে পারবে কারণ তা অবিনশ্বর এবং চিরস্থায়ী। COLBen 360.3
জগতের সমস্ত বন্ধুত্বের চেয়ে খ্রীষ্টের মুক্তির বন্ধুত্ব আরও উত্তম। এই জগতের অভিজাত সুরম্য অট্টালিকার অধিকারীর চেয়ে আমাদের প্রভুর বাসভবনের অধিকারী হওয়া উত্তম, যে বাসভবনের প্রস্তুতি চলছে। জাগতিক সমস্ত প্রশংসার বাক্যের চেয়ে, তাঁর বিশ্বস্ত কার্যকারীদের উদ্দেশ্যে খ্রীষ্টের উচ্চারিত বাক্য আরও উত্তম, “আইস আমার পিতার আর্শীবাদ - পাত্রেরা, জগতের পাত্তনাবধি যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহার অধিকারী হও”। মথি ২৫:৩৪। COLBen 361.1
যারা তার সম্পদ অপব্যবহার করছে, খ্রীষ্ট তবুও তাদের স্থায়ী সম্পদ দেবার সুযোগ দিচ্ছেন, “দেও তাহাতে তোমাদের দেওয়া যাইবে”। “আপনাদের জন্য এমন থলি প্রস্তত করো যাহা জীর্ণ হয় না, স্বর্গে অক্ষয় ধন সঞ্চয় কর, সেখানে চোর নিকটে আইসে না, কীটেও ক্ষয় করে না।” লূক ৬:৩৮; ১২:৩৩। “যাহারা এই যুগে ধনবান তাহাদের এই আজ্ঞা দেও, যেন তাহারা গর্বিত মনা না হয় এবং ধনের অস্থিরতার উপরে নয়, কিন্তু যিনি ধনবানের ন্যায় সকলই আমাদের ভোগার্থে যোগাইয়া দেন, সেই ঈশ্বরেরই উপরে প্রত্যাশা রাখে; যেন পরের উপকার করে, সৎক্রিয়ারূপ ধনে ধনবান হয়, দানশীল হয়, সহভাগীকরণে তৎপর হয়। এইরূপে তাহারা আপনাদের নিমিত্তে ভাবীকালের জন্য উত্তম ভিত্তিমূল স্বরুপ নিধি প্রস্তুত করুক, যেন, যাহা প্রকৃতরূপে জীবন, তাহাই ধরিয়া রাখিতে পারে।” ১ তীমথিয় ৬:১৬-১৯। COLBen 361.2
নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আপনার সম্পদকে স্বর্গে যেতে দিন। আপনার ধন ভাণ্ডার ঈশ্বরের সিংহাসনের সামনে জমা রাখুন। আপনার, খ্রীষ্টের অসীম ধনের অধিকারী হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করুন। “আপনাদের জন্য অধার্মিকতার ধন দ্বারা মিত্র লাভ কর, যেন উহা শেষ হলে, তাহারা তোমাদিগকে সেই অনন্ত আবাসে গ্রহণ করে। COLBen 361.3