মহা বিবাদ

22/44

১৯শ অধ্যায় - দুর্দশায় অনন্ত জীবন নয়, মৃত্যু

শয়তান এদোনে তার প্রতারণা শুরু করে। সে হবার উদ্দেশে বলে, তুমি কোনো ক্রমেই মরিবে না। আত্মার অমরত্বের বিষয় এই ছিল শয়তানের প্রথম পাঠ আর এই প্রতারণা সে সেই সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত চালিয়ে এসেছে, আর তা চালিয়ে নিয়ে যাবে যাবৎ না ঈশ্বরের সন্তানদের বন্দিত্ব ফেরানো হবে। আমাকে এদোনে আদম ও হবার পানে নির্দিষ্ট করা হয়। তারা নিষিদ্ধ বৃক্ষর বিষয়ে অংশগ্রহণ করেন, আর তখন জীবন-বৃক্ষের চর্তুদিকে জ্বলন্ত তরবারি রাখা হয়, আর তাদেরকে উদ্যান থেকে বহিস্কৃত করা হয়, পাছে তারা জীবন বৃক্ষর অংশগ্রহণ করেন ও অমর পাপী হয়ে যান। জীবন-বৃক্ষ ছিল অমরত্ব স্থায়ী করতে। আমি শুনি একজন দূত জিজ্ঞেস করেন, আদমের পরিবারের কে সেই জ্বলন্ত তরবারি অতিক্রম করেছে ও জীবন বৃক্ষর অংশগ্রহণ করেছে? আমি অপর দূতগণকে উত্তর দিতে শুনি, আদমের পরিবারে কেউই সেই জ্বলন্ত তরবারি অতিক্ৰম করে নি, ও সেই বৃত্বের অংশগ্রহণ করে নি। তাই কোনো অমর পাপী নেই। যে আত্মা পাপ করে সে এক চিরস্থায়ী মৃত্যু মরবে এক মৃত্যু যা চিরকাল স্থায়ী হবে, যেখানে কোনো পূনঃউত্থানের আশা থাকবে না, আর তখন ঈশ্বরের ক্রোধ শান্ত হবে। GCBen 45.1

তা আমার কাছে এক বিস্ময় ছিল যে শয়তান এত ভালভাবে মনুষ্যকে ঈশ্বরের সেই বাক্যের, যে আত্মা পাপ করে সে অবশ্যই মরিবে, এই অর্থ বিশ্বাস করাতে সফল হবে যে যে আত্মা মনুষ্য পাপ করে সে অবশ্যই মরবে না, কিন্তু অনন্তকাল ধরে দুর্দশায় বেঁচে থাকবে। দূত বলেন, জীবন হচ্ছে জীবনই, তা দৈহিক যন্ত্রণাতেই হোক বা সুখেই হোক। মৃত্যু হচ্ছে কষ্ট-দুঃখ ছাড়া, আনন্দ ছাড়া, বিদ্বেষ ছাড়া। GCBen 45.2

শয়তান তার দূতগণকে এদোন হবার কাছে প্রথম পুর্নবার বলা, তুমি অবশ্যই মরিবেনা, এই প্রতারণাটি ছড়াতে এক বিশেষ চেষ্টা চালাতে বলে। আর যেমন ভুলটি লোকদের দ্বারা গৃহীত হয়, আর তারা বিশ্বাস করে যে মানুষ অমর, শয়তান তাদেরকে আরো বিশ্বাস করতে চালিত করে যে পাপী অনন্ত দুদৰ্শায় থেকে বেঁচে থাকবে। তখন তার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে লোকদের সাক্ষাতে ঈশ্বরকে এক প্রতিহিংসাপরায়ণ উৎপীড়ক রূপে (অভিমত) করতে, শয়তানের পথে এক রাস্তা প্রস্তুত হয়।যে যারা তাকে সন্তুষ্ট করে না তিনি নরকে নিক্ষেপ করবেন, ও চিরকাল তার ক্রোধ অনুভব করা ঘটাবেন।আর যে তারা অব্যক্ত মনস্তাপ সহ্য করবে, যখন তিনি তাদের দিকে নীচে পরিতৃপ্তির সঙ্গে তাকাবেন, যেমন তারা ভয়ানক দুর্দশা ও অনন্ত শিখায় ভীষণ কষ্ট পায়। শয়তান জানে যে এই ভ্ৰান্তিটি যদি গৃহীত হয়,ঈশ্বর অনেকেরই দ্বারা ভালবাসা ও শ্ৰদ্ধা-ভক্তি পাবার পরিবর্তে ভয়ের বস্তু ও ঘৃণিত হবেন। আর অনেক জনে বিশ্বাস করতে চালিত হবে যে ঈশ্বরের বাক্যের ভয় প্রদর্শনগুলি আক্ষরিকভাবে পূর্ণ হবে।কারণ তা হবে তাঁর চরিত্রের উপচিকীর্ষা ও প্রেমের বিরুদ্ধে। সেইসব প্রাণীকে অনন্ত উৎপীড়নে নিক্ষেপ করা যাদেরকে তিনি সৃষ্টি করেছিলেন। শয়তান তাদেরকে আরেক চরমে, সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের ন্যায়বিচার ও তাঁর বাক্যে ভয়প্রদর্শনগুলি উপেক্ষা করতে, ও তাকে সর্বোতোভাবে করুণাময়, ও যে একজনও নাশ হবে না কিন্তু সবাই, ধার্মিক ও পাপী উভয়েই, অবশেষে তাঁর রাজ্যে রক্ষা পাবে বলে ভাবতে চালিত করেছে। আত্মার অমরত্বের, ও সীমাহীন করুণা সম্বন্ধে প্রচলিত ভ্রান্তির পরিনামে, শয়তান আরেক শ্রেণীর লোকদের ওপরে সুবিধে নেয়, ও বাইবেলকে অপ্রত্যদিষ্ট গ্রন্থ বলে বিবেচনা করতে চালিত করে। তারা মনে করে তা অনেক ভাল ভাল বিষয় শেখায় তবে তারা তার ওপরে নির্ভর করতে ও তা ভালবাসতে পারে না।কারণ তাদেরকে শেখানো হয় যে তা অনন্ত দুদৰ্শার শিক্ষা বিবৃত করে। GCBen 45.3

শয়তান এমন কি আরেকটি শ্রেণীর বিশেষ সুযোগ নেয়, ও তাদেরকে ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করতে আরো অধিকতর দূরে চালিত করে। বাইবেলের ঈশ্বরের চরিত্রে তারা কোনো স্থিরতা সামঞ্জস্য দেখতে পায় না, যদি তিনি মানব পরিবারের এক অংশকে সমস্ত অনন্তকালধরে উৎপীড়ন করবেন। আর তারা বাইবেল ও তাঁর প্রণেতাকে অস্বীকার করে, আর মৃত্যুকে এক অনন্ত নিদ্রা বলে বিবেচনা করে। GCBen 45.4

পুনরায় শয়তান আরেক শ্রেণীকে চালিত করে যারা পাপ করতে ভীত ও ভীরু আর তাদের দ্বারা পাপ করার পরে সে তাদের সামনে তুলে ধরে যে পাপের বেতন মৃত্যু নয়, কিন্তু ভয়ানক পীড়নে এক অনন্ত জীবন, যা অনন্তকালের অন্তহীন যুগ যুগ ধরে সহ্য করতে হবে। শয়তান সুযোগটির সদব্যবহার করে, ও তাদের মনের সামনে অতিরঞ্জিত করে এক অন্তহীন নরকের ভয়াবহতা গুলিকে, ও তাদের মনের কতৃত্ব নেয়, আর তারা তাদের বিচার বুদ্ধি হারায়। তখন শয়তান ও তার দূতেরা উল্লসিত হয়, আর সংশয়বাদী ও নাস্তিক খ্ৰীষ্টধর্মের উপরে অখ্যাতি নিক্ষেপ করতে যোগ দেয়। এই প্রচলিত বিশুদ্ধ ধর্মমত গ্রহণের এইসব মন্দ পরিণামগুলিকে বাইবেল ও তাঁর প্রনেতাঁর বিশ্বাসের স্বাভাবিক ফলাফল বলে বিবেচনা করে। GCBen 45.5

আমি দেখি যে শয়তানের এই সাহসী কার্যে স্বর্গীয় বাহিনী ঘৃণা-মিশ্ৰিত ক্ৰোধে পূর্ণ হয়। আমি জানতে চাই মনুষ্যদের মনে এইসব প্রবঞ্চনা প্রভাব বিস্তার করতে কেন দেয়া হবে, যখন ঈশ্বরের দূতগণ ক্ষমতাশালী, ও যদি ভারাৰ্পিত হন, সহজেই শত্ৰুর ক্ষমতা খন্ডন করতে পারেন। তখন আমি দেখি যে ঈশ্বর জানতেন মনুষ্যদের বিনষ্ট করতে শয়তান প্রতিটি কলা-কৌশল পরীক্ষণ করবে সুতরাং তিনি তাঁর বাক্যকে লিখিত হওয়া ঘটিয়ে ছিলেন, ও মনুষ্যের কাছে তাঁর অভিসন্ধি এতই সরল করেছিলেন যে দুর্বলতমের ভুল করার প্রয়োজন হয় নি। তারপরে, মনুষ্যের কাছে তাঁর বাক্য দেয়া হলে পরে, তিনি সাবধানের সঙ্গে তা সংরক্ষণ করেছিলেন, যেন শয়তান ও তার দূতেরা, কোনো মাধ্যম বা প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তা বিনষ্ট করতে না পারে। যখন অন্যান্য পুস্তক বিনষ্ট করা যেতে পারে, এই পবিত্ৰ পুস্তক অমর হবে। আর সময়ের প্রায় শেষ পর্যন্ত, যখন শয়তানের প্রবঞ্চনাগুলি বৃদ্ধি পাবে, বাইবেলের প্রতিলিপিগুলি সংখ্যাধিক হবে, যাতে যারা তাঁর বাসনা করে মানবের প্রতি ঈশ্বরের প্রকাশিত ইচ্ছের এক প্রতিলিপি পেতে পারে, আর তারা যদি চায়, শয়তানের প্রবঞ্চনা ও মিথ্যা বিস্ময়গুলির বিরুদ্ধে আপনাকে অস্ত্র দ্বারা সজ্জিত করতে পারে। GCBen 45.6

আমি দেখি যে ঈশ্বর বিশেষভাবে বাইবেলকে রক্ষা করেছিলেন, তথাপি পন্ডিত ব্যক্তিগণ, যখন প্রতিলিপিগুলি অল্প ছিল, কোনো কোনো ব্যাপারে কথাগুলিকে বদলি করেছিল, এটা ভেবে যে তারা তা আরো সরল করছিল, যখন তারা তা দুর্ঞ্জেয় করছিল যা সরল ছিল, পরম্পরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে, তাদের প্রতিষ্ঠিত মতামতের প্রতি তাকে আনত হওয়া ঘটাচ্ছিল। তবে আমি দেখি যে ঈশ্বরের বাক্য মোটামটি হচ্ছে এক সিদ্ধ শৃঙ্খল, শাস্ত্রের একটি অংশ অন্যটিকে ব্যাখ্যা করছে। সত্যের প্রকৃত অন্বেষণকারীর ভুল করার প্রয়োজন নেই কারণ ঈশ্বরের বাক্য জীবনের পথ বিবৃত করতে শুধু সরল ও সহজই নয়, কিন্তু তাঁর বাক্যে প্রকাশিত জীবনের পথ বুঝতে পবিত্র আত্মাকে দেয়া হয়েছে। GCBen 46.1

আমি দেখি যে ঈশ্বরের দূতেরা কখনোই ইচ্ছে নিয়ন্ত্রণ করেন না। মনুষ্যের সাক্ষাতে ঈশ্বর জীবন ও মৃত্যু স্থাপন করেন। সে তাঁর পছন্দ রাখতে পারে। অনেকেই জীবনের বাসনা করে, তবে প্রশস্ত পথে চলা চালিয়ে যায়, কারণ তারা জীবন মনোনয়ন করে নি। GCBen 46.2

অপরাধী মনুষ্যের জন্যে তাঁর পুত্রকে প্রদান করায় আমি ঈশ্বরের করুণা ও অনুকম্পা দেখি। যারা সেই পরিত্রাণ গ্রহণ করা বেছে নেবে না যা এমন বহুমূল্যে ক্রয় করা হয়েছে, অবশ্যই শাস্তি পাবে। সেই প্রাণীরা যাদেরকে ঈশ্বর সৃষ্টি করেন তাঁর শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা মনোনয়ন করেছে কিন্তু আমি দেখি যে ঈশ্বর অন্তহীন দুর্দশা সহ্য করতে তাদেরকে আবদ্ধ করেন নি। তাদেরকে তিনি স্বর্গে নিতে পারতেন না।কারণ বিশুদ্ধ ও পবিত্রদের দলে আনা তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে শোচনীয় হওয়া ঘটাবে। তিনি তাদেরকে একেবারে বিনষ্ট করবেন, আর তাদেরকে এমন ঘটাবেন যে তারা ছিল না, আর তাহলে তাঁর ন্যায়বিচার তৃপ্ত হবে। মনুষ্যকে তিনি মৃত্তিকার ধূলি থেকে গঠন করেন, আর অবাধ্য ও অপবিত্রেরা অগ্নি দ্বারা গ্রাস হবে, ও পুনরায় ধূলিতে প্রত্যাবর্তন করবে। আমি দেখি যে এতে ঈশ্বরের উপচিকীর্ষা ও অনুকম্পা, সকলকে তাঁর চরিত্র শ্রদ্ধার চোখে দেখতে ও তাঁকে তীব্রভাবে ভালবাসতে, চালিত করবে। আর পৃথিবী থেকে দুষ্টদের বিনাশ হয়ে গেলে পরে, সমগ্র স্বর্গীয় বাহিনী বলবে, আমেন! GCBen 46.3

শয়তান তাদের ওপরে মহা সন্তোষে তাকায় যারা খৃষ্টের নাম প্রকাশ্যে ব্যক্ত করে, ও তাঁর দ্বারা রচিত এইসব প্রবঞ্চনার প্রতি ঘনিষ্টভাবে অনুগত থাকে। তার কাজ হচ্ছে এখনো নতুন নতুন প্ৰবঞ্চনা গঠন করা। তার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, আর সে আরো চতুর হয়ে ওঠে। সে তার প্রতিনিধিগণকে, পোপ ও পুরোহিতগণকে, আপনাদেরকে প্রশংসিত করতে, ও তাদেরকে নির্মমভাবে তাড়না করতে লোকদেরকে উত্তেজিত করতে চালিত করে যারা ঈশ্বরকে প্রেম করে, ও তাদের মাধ্যমে প্রবর্তন করা, তাঁর প্রবঞ্চনাগুলির প্রতি সমৰ্পিত হয়ে ইচ্ছুক ছিল না। খৃষ্টে অনুরক্ত অনুগামীদেরকে বিনষ্ট করতে শয়তান তার সহায়কদের ওপরে অগ্রসর হয়, ও দুঃখভোগ ও দারুণ মনস্তাপ যা তারা ঈশ্বরের প্রিয় পাত্রদেরকে সহ্য করায় দূতগণ এ সবের এক বিশ্বস্ত লেখ্য রেখেছেন। তবে শয়তান ও তার মন্দ দূতেরা উল্লসিত হয়, ও সেই দূতগণকে বলে যারা নির্বাহ করেন, এবং সেই দুঃখভোগকারী ধার্মিকগণকে সবল করেন, যে তারা তাদেরকে বধ করবে, যে পৃথিবীর ওপরে কোনো প্রকৃত খৃষ্টান অবশিষ্ট না থাকে। আমি দেখি যে ঈশ্বরের মন্ডলী তখন শুদ্ধ ছিল। তখন ঈশ্বরের মন্ডলীর মধ্যে নীতিহীন হৃদয়ের লোকদের আসবার কোনো আশঙ্কা ছিল না, কারণ প্রকৃত খৃষ্টান, যে তার বিশ্বাস বিবৃত করায় সাহস করে, যন্ত্রণা দেবার যন্ত্রবিশেষ, মারণের খোঁটার, প্রতিটি উৎপীড়ণ যা শয়তান ও তার দূতেরা আবিস্কার করতে পারতো, ও মানবের মনের মধ্যে স্থাপন করতে পারতো তাঁর আশঙ্কায় ছিল। GCBen 46.4

______________________________________
আদি পুস্তক ও অধ্যায়( উপদেশক ৯:৫( ১২:৭( লূক ২১:৩৩( যোহন ৩:১৬, ২ তীমথীয় ৩:১৬( প্রকাশিত বাক্য ২০:১৪,১৫, ২১:১( ২২:১২-১৯ দেখুন।
GCBen 46.5